মোবাইল ফোন আমাদের অতি পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় বস্তু। আধুনিক যাপিত জীবনে মোবাইল ফোনের আনুষঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। এই মোবাইল ফোন কিভাবে এলো? এর পেছনে কি কোন ইতিহাস আছে? আসুন আমরা সেটা জানার চেষ্টা করি। শুরু থেকেই শুরু করা যাক। ১৯০৮ সালে প্রফেসর আলবার্ট ঝাঙ্কে এবং দ্যা ওকল্যান্ড ট্রান্সকন্টিনেটাল এরিয়াল টেলিফোন এন্ড পাওয়ার কোম্পানী তারহীন টেলিফোন উদ্ভাবনের দাবী করে। কিন্তু একশ্রেনীর মানুষ আছে যারা সব সময় নতুনকে ভয় পায়। তাদেরই একজন মামলা ঠুকে দিলো এদের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে অব্যহতি দেওয়া হলেও তারহীন টেলিফোন উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয় নাই। ১৯১৮ সালে জার্মান রেইলরোড সিস্টেম বার্লিন এবং জোসেনের মধ্যে চলাচলকারী মিলিটারী ট্রেইনে ওয়্যারলেস টেলিফোনি সিস্টেমের উপর পরীক্ষা করে। ১৯২৫ সালে টেলিফোনি উপকরণ সরবরাহের জন্য জুগটেলিফোনি এ.জি. নামক কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২৬ সালে হামবুর্গ ও বার্লিনের মধ্যকার চলাচলকারী ডয়েশে রিশবান ও জার্মান মেইল সার্ভিসের প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের মধ্যে টেলিফোন সুবিধা প্রদান করা হয়।
১৯০৭ সালে ইংরেজ ক্যারিকাচারিস্ট লুইস বামার পাঞ্চ ম্যাগাজিনে একটি কার্টুন প্রকাশ করেন। সেখানে দেখা যায় লন্ডনের হাইড পার্কে আলাদাভাবে একজন পুরুষ ও নারী তারহীন টেলিফোন সামগ্রী ব্যবহার করে জুয়া ও ডেটিংয়ে অংশ নিচ্ছে। ১৯২৬ সালে চিত্রশিল্পী কার্ল আর্নল্ড রাস্তায় তারহীন টেলিফোন ব্যবহারের কল্পিত ছবি আঁকেন। ''তারহীন টেলিফোন'' শিরোনামে ছবিটি স্যাটরিক্যাল জার্মান ম্যাগাজিন সিমপিলিসিসসিমাস এ প্রকাশিত হয়।
মোবাইল ফোন সম্পর্কে প্রথম স্বার্থক ধারণা পাওয়া যায় ১৯৩১ সালে প্রকাশিত এরিখ কাস্টনারের শিশুতোষ গ্রন্থ দ্যা ৩৫থ মে, অর কনর্যাডস রাইড টু দ্যা সাউথ সি। কি লিখেছিলেন কাস্টনার। আসেন প্যারাটুকু পড়া যাক। "ভদ্রলোক যিনি তাদের সাথে যাচ্ছিলেন, সহসা থামলেন, কোটের পকেট থেকে একটা ফোন বের করলেন, এর মধ্যে একটা নাম্বার বলে চিৎকার করে বললেনঃ গারট্রুড, শোনো, দুপুরের খাবার খেতে আসতে আমার একঘন্টা দেরী হবে কারণ আমি আমি ল্যাবরেটরীতে যেতে চাচ্ছি। শুভবিদায় প্রিয়তমা।"
মোবাইল ফোন আবিষ্কারের আগেই এমন দূরদর্শী কল্পনাকে স্যালুট না করে পারা যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রেডিও টেলিফোনি সিস্টেমের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৪০ সাল থেকে বহনযোগ্য রেডিও ট্রান্সিভার্সের ব্যাবহার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহে এই ধরণের ডিভাইসের ব্যবহার দেখা যায়। এই সময়ে অটোমোবাইলে মোবাইল টেলিফোন সুবিধা চালু হয়। কিন্তু এর আকার অনেক বড় ছিলো এবং প্রচুর পাওয়ার কনজিউম করতো।
এরপরে মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পথে হাজারো ব্যক্তির হাজারো প্রচেষ্টা অব্যহত থাকে। ৩ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে মার্টিন কুপার, মটোরোলা কোম্পানীর একজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী তার প্রতিদ্বন্দী কোম্পানীকে ফোন করে বলেন যে তিনি মোবাইল ফোনের সাহায্যে কথা বলছেন। কুপারের আবিষ্কৃত ফোনের ওজন ছিলো ১.১ কেজি যার আকার ছিলো 228.6x127x44.4mm । প্রোটো টাইপ এই ডিভাইস দিয়ে একনাগাড়ে ৩০ মিনিট কথা বলা যেতো কিন্তু যন্ত্রটি চার্জ হতে সময় নিতো প্রায় ১০ ঘন্টা।
১৯৮৩ সালে মটোরোলা প্রথম তাদের বাণিজ্যিক ভাবে Motorola DynaTAC 8000X মডেলের মোবাইল ফোন বাজারজাত করে। ফোনের স্পেসিফিকেশান ছিলো, ৩০ মিনিট কথা বলার ক্ষমতা, ৬ ঘন্টা স্ট্যান্ড বাই এবং ৩০ টি ফোন নম্বর সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এর দাম কত হতে পারে? মাত্র £2639 ($3995)। টাকায় কত আসে নিজেই হিসেব করে নাও।
প্রথম জমানার মোবাইল ফোন মানে অনেকের মাথায় আসে নোকিয়ার নাম। এখানে নোকিয়া সম্পর্কে একটা তথ্য দেওয়া যাক। ২৫০ মিলিয়নের বেশী নোকিয়া ১১০০ মডেলের ডিভাইস বিক্রি হয়েছে যা এখনো পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক্যাল গ্যাজেট বেস্টসেলিংয়ের রেকর্ড।
অনেকদিন পরে লিখতে বসলাম। পড়তে পড়তে বোর হয়ে যাচ্ছো কিনা জানিনা। লেখা শেষ করে দেই। আরেকদিন না হয় শোনাবো মোবাইল ফোন থেকে স্মার্ট ফোন হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনী। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীতে মাথাপ্রতি মানুষের হিসাবে টয়লেটের তুলনায় মোবাইল ফোনের সংখ্যা বেশী। আরেকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে একজন স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী গড়ে প্রতিদিন ১১০ বার তার ফোন আনলক করে। তুমি কতবার করো?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯