ঊজ্জ্বল সাকিকে ফোন দিলো , "কই তুই?"
সাকি জানালো সে আসছে। মহাখালী ফ্লাই ওভারের নিচে।
উজ্জ্বল, সাকি, বিন্দু কেউই আপন ভাই বোন নয় কিন্তু সম্পর্কটা আপন ভাইবোনের মত। অনেক দিন আগে ঊজ্জ্বলের সাথে বিন্দুর পরিচয় হয় ফেসবুকে। বিন্দুর ভাই নেই, ঊজ্জ্বলের বোন নেই। তাই দুজনে ভাই বোন পাতিয়ে নেয়। সাকির ভাই বোন দুটোই আছে। সে বড়। তাই সবসময় একজন বড় ভাইকে মিস করেছে। উজ্জ্বলকে সে বড় ভাই ডাকে।
চাকরী সূত্রে সাকিকে চট্টগ্রাম থেকে কিছুদিনের জন্য ঢাকা আসতে হয়েছে। উজ্জ্বল এসেছে সাকিকে হোটেল ঠিক করে দিয়ে ফিরে যাবে। বিন্দু আপাও বায়না ধরেছে ঊজ্জ্বলকে ঢাকা আসার জন্য। অগত্যা আসতেই হলো। সাকি কিছুটা সহজ সরল আমরা খাঁটি বাংলায় যাকে বোকা বলি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সাকিকে না আসতে দেখে সে আবার ফোন দিলো। সাকিকে একটা বড় তীর চিহ্নের মাঝে বড় বড় করে লেখা শাহিন হল এর নিচে এসে দাঁড়াতে বললো। বিন্দুকে বললো চলো আপা আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখি কি করে ওরা! ওরা বলতে সাকি আর তার এক কলিগ। গুলশান থেকে সেই কলিগের সাথে হেঁটে আসছে। যাক বুদ্ধি খাঁটিয়ে হেঁটে আসছে। জ্যামে সব গাড়ি স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওভার ব্রিজ থেকে সাকিকে নামতে দেখা গেলো। লম্বা লম্বা পা ফেলে নামছে। ইতি উতি তাকিয়ে আমাদেরকে খুঁজছে। আর একপাশের দেয়ালের আঁড়ালে দাঁড়িয়ে বিন্দু আপা আর উজ্জ্বল হা হা করে হাসছে।
একটা সময় দুজন বেরিয়ে এলো। উজ্জ্বল সাকির ফ্রেন্ডের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। ভদে ছেলে। তার বাসা সাইন্স ল্যাবের মোড়। জ্যাম ঠেলে যেতে হবে বলে সে দ্রুত বিদায় নিলো। বিন্দু আপা প্রস্তাব করলো মার্কেটের ওদিকে গিয়ে একটা ফার্স্টফুড শপে বসা যাক। এরই মধ্যে সাকি টপাক করে ভাই আর আপুকে সালাম করে নিলো। ঊজ্জ্বল এগুলোর সাথে পূর্ব পরিচিত। সে পা স্থির রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হাসতে লাগলো। ওদিকে বিন্দু আপাকে সালাম করতে গেলে সে প্রায় এক হাত লাফিয়ে উঠলো। "আরে এগুলা কি!" এখনকার ছেলে পেলে বড় ভাই বোনকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে সেটা কল্পণা কেন কল্পণার বাপও আশা করতে পারেনা।
ফার্স্টফুডের দোকানে বসলো তিনজন। সাকি হড়বড় করে কথা বলে যেতে লাগলো। উত্তেজনায় তার সারা শরীর কাঁপছে। বিন্দু আর উজ্জ্বল কিছুটা অবাক হলো। ওয়েটার মেনুকার্ড নিয়ে এলো। সাকি বললো সে কিছুই খাবে না। উজ্জ্বল বললো, তুই খাস আর না খাস আমরা কিন্তু ঠিকই খাবো।
উজ্জ্বল আর বিন্দু অনেকক্ষণ জরিপ করে একটা খাবারের অর্ডার করলো। ওয়েটার বলল, স্যার এই আইটেমটা আমাদের এখানে আজ হবে না। কেমন বিরক্তিকর! উজ্জ্বল জানতে চাইলো কোন কোন আইটেম হবে দেখিয়ে দেন তারপর সিলেক্ট করি।
ওয়েটার দেখিয়ে দেয়ার পরে তারা উনত্রিশ নম্বর আইটেমটি পছন্দ করলো। চিকেন নুডুলস উইথ সালাদ। দুই ডিশ। খাবার সার্ভ করতে বেশ সময় নিলো। এরই মধ্যে উজ্জল সাকিকে জানালো সে সাকিকে হোটেলে তুলে চলে যাবে। সাকি বয়স আর উচ্চতার কথা ভূলে বায়না ধরলো, "না ভাইয়া আজ তোমাকে থাকতেই হবে। আমরা দুই ভাই মিলে সারা রাত গল্প করবো বলে ঠিক করে রেখেছি।"
ঊজ্জ্বল বোঝায়, বিন্দু বোঝায়। সাকি বুঝতে চায় না। তার কাঁপাকাঁপির পরিমান বেড়েই চলেছে।