অনার্স প্রথম বর্ষের কথা। মৌলানা ভাসানী হল।
হলের ১১৬ নাম্বার রুমে উঠেছি। গণ রুম যাকে বলে। মনে পড়ে - তখন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন মিলে উঠেছিলাম সেই রুমে। অনেক রাত জাগা,আর অনেক আড্ডাবাজির পর রাত দুইটা - আড়াইটার দিকে পুরো হল ই তখন নিস্তব্ধপ্রায়। আমিও এপাশ ওপাশ করছিলাম। অনেকক্ষণ যাবৎ বেজে যাওয়া কোনো এক বড় ভাইর রুম থেকে ভেসে আসা গানটাও বন্ধ হয়ে গেল। একটুপর ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠতে হলো। তখন হলে নতুন , মাত্র এক দিন আগেই উঠেছি হলে। তারপর ও রুম গুনে গুনে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফিরে আসার সময় চারিদিকের নিস্তব্ধ পরিবেশে গা টা ছম ছম করে উঠলো। মনে পড়লো গতদিন একজন বলছিলো হলের পেছনের সেই অশ্বথ গাছটার কথা, সাথে সাথে একটা গরম হাওয়া যেন মুখের মধ্যে ঝাপটা দিয়ে গেলো। যাই হোক তাড়াহুড়ো করে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
রুমের সামনে এসে দেখি - রুমের দরজা বন্ধ। ভাবলাম কে আবার দরজাটা বন্ধ করে দিল !নক করলাম , বেশ জোরেই আবার নক করলাম।
কিন্তু এ কি ! আমার রুমটাতে ঝুলছে বিশাল এক তালা !
আমার মাথা তখন ঘুরছে , মাথার ওজন মনে হচ্ছিল বেড়ে গেছে দশ গুন। আমি কিছুতেই রহস্যের কিনারা করতে পারছিলাম না। দাড়িয়েছিলাম কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার , রুমের তালাটি একদম পুরনো , মনে হয় বহু বছর ধরে কেউ ছুয়েও দেখেনি। অন্ধকার রুমের ভেতরে দেখলাম পুরোনো আসবাবপত্র রাখার কিছু এলোমেলো অবয়ব। একসময় উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা রুম নাম্বার ১২০ !
তখন-ই দে ছুট ,... খুঁজে পেলাম আমার গণ রুম ১১৬।
এর পরদিন এক বড় ভাইর কাছে থেকে জানতে পারলাম - সেই ১২০ নাম্বার রুমে বেশ কিছুদিন আগেই একজন ছাত্র মারা যায়। খুব সম্ভবত তা সুইসাইড / মার্ডার ছিল। এর পর থেকে সেই রুমটাতে যারাই থাকতো বিভিন্ন ভৌতিক ঘটনার শিকার হতো। হল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে একপর্যায়ে রুমটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঘটনা শুনে আমি তো পুরাই বোকা --- হয়ে গেলাম ! মনে মনে ভাবলাম - এত রাতের বেলায় ভুত বাবাজির দরজায় নক করে তার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে গেলামনা তো !
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৫