মনের অজান্তেই বেশ অনেক্ষন ধরে হাসছিলাম। কারণ - মনের ভেতরের ভাবনাগুলো টেনে হিচড়ে এমন কিছু পুরোনো স্মৃতি কে ধরে এনেছে তা আসলেই অসাধারণ।
"কোইয়া গাছের গোইয়া থেকে নতুন কোইয়া চারা জন্মে "
তখন ক্লাস ফোরে পড়ি সম্ভবত। হাসনা অপার বিজ্ঞান ক্লাস চলছে। হটাৎ ই ইয়াকুব কে বলা হলো - একটা নির্দিষ্ট চ্যাপ্টার রিডিং পড়ার জন্য - আর তখন ই পড়ার এক পর্যায়ে একটা লাইন আসে এমন -(কলা গাছের গোড়া থেকে নতুন কলা চারা জন্মে ) আর এখানেই তার এই উচ্চারণ। হাসনা আপা তাকে থামিয়ে দিয়ে রীতিমতো একটা উচ্চারণ ক্লাস নিয়ে নিলেন , কিন্তু অনেক্ষন প্রচেষ্টার পর তিনি বুঝতে পারলেন যে ইয়াকুব "ল" উচ্চারণ করতে পারে না।
ইয়াকুবের এই উচ্চারণ প্রতিবন্ধকতা যদিও পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায় - তার পর ও আমরা অনেক দিন তাকে এই লাইন টি বলে বলে খেপাতাম।
আসলে ক্লাসে এক একজনের পড়া বলার স্টাইল ছিল এক এক রকম। যেমন শাহীন পড়া বলতো দুই হাত দিয়ে নিজের শরীরের পুরো ভর বেঞ্চ এর উপর দিয়ে উপুড় হয়ে। পড়া বলার সময় মনে হতো বুক ডন দেওয়ার মতো শারীরিক কসরত করে যাচ্ছে।
আমার জীবনে সবচেয়ে আস্তে পড়া বলা মানুষ দেখেছি রায়হান কে আর ইয়াসমিন(জিনারু রুগী){দিলীপ স্যার এর দেয়া নাম } কে । প্রবল কম্পন নিয়ে তার ঠোঁট দুটো অনবরত নড়তো কিন্তু তার পাশের জন তা শুনতে পেতো কিনা সন্দেহ।
পিপলুর কণ্ঠ ছিল চিকন। কিন্তু তার এই চিকন কণ্ঠ দিয়ে সে যে পরিমান বোমা চালাতো তা অবিশ্বাস্য ! স্যার রা বোধয় তার চিৎকার চেঁচামেচি মূলক পড়া বলার স্টাইলেই সন্তুষ্ট হয়ে যেতেন তা সে পড়ায় যা ই বলুক না কেন।
দীপক যখন পড়া বলতো তখন মনে হতো তার কণ্ঠনালী ধরে কেউ ঝাকুনি দিচ্ছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ কাকে বলে তা বোধয় আমরা সবাই তখন বুঝতে পারতাম।
রকি তার ষণ্ডা মার্কা ভাব ভঙ্গি দিয়েই পড়া না পারলেও পড়া বলে ফেলতো।
সবশেষে এক বিশেষ পড়া বলার স্টাইল নিয়ে কথা বলবো। এ পড়া বলায় একটি অতি আশ্চর্য জনক শব্দ ব্যবহৃত হতো আর তা হলো " গেদা ",....
বন্ধুসকল সবাই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছে আমি কার কথা বলছি। হুম সে হচ্ছে "সোহেল "
ডেইজি আপা শত চেষ্টা করেও তার পড়া বলার মধ্যকার এই গেদা শব্দ টি বাদ দেওয়াতে পারলো না।
যেমন : " সুজলা সুফলা আমাদের দেশ বাংলাদেশ। ...গেদা। ..এ দেশ। ..এ গেদা নদী মাত্রিক দেশ.......
সে বোধয় এক পর্যায় ভেবেছিলো যে পড়া তাড়াতাড়ি বললে হয়তো এই গেদা দোষ দূর হবে। কিন্তু হলো না। পড়া তাড়াতাড়ি বলতে গেলে সেই "গেদা" উচ্চারিত হতো "গেদে" হিসেবে। আর সেই সুবাদে আমাদের ক্লাসে একাধিক সোহেল থাকায় তার নাম হয়ে গেলো "গেদা সোহেল "
আরো হয়তো অনেক ইন্টারেষ্টিং পড়া বলার স্টাইল অনেকেরই ছিল কিন্তু মনে পড়ছে না। তোদের কারো মনে থাকলে বলিস। আসলেই স্কুল লাইফ ছিল অসাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৭