দীর্ঘদিন পলাতক থাকা অবস্থায় অবশেষে মুখ খুললেন ৯ এপ্রিল রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার প্রধান সাক্ষী গাড়িচালক আজম খান। রেলের বহুল আলোচিত অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে দফতরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খান বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন সে রাতে (৯ এপ্রিল) গাড়িতে থাকা ৭৪ লাখ মন্ত্রী সুরঞ্জিতের বাসার দিকেই যাচ্ছিলো। গাড়িতে করে নিয়োগ বাণিজ্যের অনেক টাকাই যেতো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শুক্রবার প্রচারিত আরটিভির সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “টাকা তো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়িতে যাচ্ছিল। ওদিকে যাওয়ার পথেই আমি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি। এর আগেও কয়েকবার টাকা গেছে।”
এদিকে আজমের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুরঞ্জিতের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমকে ঢেকে বুধবার তিনি বিস্তারিত জানাবেন।
সুরঞ্জিতের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “এ নিয়ে তিনি (সুরঞ্জিত) সব গণমাধ্যমের সঙ্গে বুধবার কথা বলবেন।” এ মুহূর্তে পাঁচদিনের সফরে নিজ এলাকায় আছেন বলে জানান তিনি।
গত ৯ এপ্রিল রাতে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঝিগাতলা গেট দিয়ে একটি গাড়ি ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওই গাড়িটি ওমর ফারুকের আর সেটি চালাচ্ছিলেন আজম খান। গাড়ির যাত্রী ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা, তাঁর নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেলওয়ের কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ও রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার। এসব কর্মকর্তা বর্তমানে বরখাস্ত।
রেলের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে মেজর মশিউর রহমান নামের একজন জড়িত ছিলেন বলেও আজম খান দাবি করেন। সাক্ষাৎকারে আজম বলেন, “আমার জানা মতে তিন কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি জড়িত।” ওমর ফারুকের মাধ্যমে তিনি কয়েকশ লোককে রেলে ঢোকাতে চেয়েছিলেন বলে আজম দাবি করেন।
আজম খানের দাবি, মন্ত্রীকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ৬০০ লোককে রেলে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি গাড়িতে আলোচনা শুনেছেন। তাঁর দাবি, “দোষটা করেছেন মন্ত্রী। এখন সরকারের ওপর সেটা চাপাতে চান।” আজম এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন।
ওমর ফারুক রেলের নিয়োগ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলেও দাবি করেন আজম খান।
আজম বলেন, “গাড়ি যখন বিজিবিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন ওমর ফারুক তাঁর কাছে জানতে চান, গাড়ি নিয়ে আমি কোথায় যাচ্ছি? তখন আজম বলেন, স্যার, এগুলো ঘুষের টাকা, দুর্নীতির টাকা, রেলের দুর্নীতির টাকা, এই টাকাসহ আমি আপনাদের ধরিয়ে দেব। এ জন্য আমি গাড়িটা ভেতরে ঢুকিয়েছি।”
ঘটনার রাতে বিজিবির গেট খোলা থাকায় এবং গাড়িটি থামানোর জন্য কোনো সংকেত না দেওয়ায় সহজেই গাড়িটি গেটের ভেতর ঢুকিয়ে দেন বলে তিনি জানান। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তারা আমাকে সিগন্যাল দেয়নি আর আমিও দাঁড়াইনি।” এর পেছনে তিনি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “গাড়িটা দিনে কয়েকবার এদিক দিয়ে আসা-যাওয়া করে। তারা হয়তো চিনেছে, এ জন্য গুরুত্ব দেয়নি।”
গাড়ি বিজিবির ভেতর প্রবেশ করানোর পর ফারুক টাকা দেওয়ার লোভ দেখান বলে তিনি জানান। আজম এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের তদন্ত কাজে সহায়তা করতে চান বলে সাক্ষাৎকারে জানান।
Click This Link