ছোটোবেলা থেকেই আমার একটু পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাব আছে। একটা সময় কিছু হলেই বাসা থেকে পালিয়ে যেতাম। এরকমও হয়েছে, বাসার ছাদে পানির টাংকির নিচে পালিয়ে আছি, আর আমাকে সারা দুনিয়া তোলপাড় করে খোজা হচ্ছে। অনেক কষ্টে খুজে পাওয়ার পর আবার আম্মু ধরে দুই তিনটা কিল বসিয়ে দিত। বড় হওয়ার সাথে সাথে অভ্যাসটা যাওয়ার কথা ছিল। হয়তো কিছুটা গিয়েছিলোও। কিন্তু এখনও কেউ কিছু বললে আর সেই সব লোকের মুখোমুখি হতে ইচ্ছা করে না। যে কারণেই হোক, ব্লগটা ছেড়ে দেবার চিন্তা করছিলাম।
ব্লগ ছাড়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছিল সম্ভবত চানাচুর আর অয়ন। এই দুই লোক, সময় পেলেই সাড়ে চার হাত লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্লগে আসতে বলে। আমারো ব্লগ ছাড়ার মাসখানেকের ভিতর বেশ হাসফাস লাগা শুরু করল। কিন্তু ফিরতে লজ্জা লাগে। কেন লজ্জা লাগে জানেন? আমার ফেসবুকের অনেক বন্ধুকে দেখি হঠাৎ স্ট্যাটাস মেরে বলে, “ বিদায় বন্ধুরা, বিদায়! এটাই ফেসবুকে কাটানো আমার শেষ দিন।” কিন্তু ২৪ ঘন্টা না কাটতেই দেখা যায় আবার ফেসবুকে আবার একটিভ হয়ে গিয়েছে। এই ধরনের লোকগুলোকে আমার বেশ হাস্যকর লাগে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল, আমি সেই হাস্যকর লোকদের দলভুক্ত হতে না চাইলেও আমাকে হতে হচ্ছে। আমি এই একটা কাজই বেশ আনন্দ নিয়ে করি। এটা থেকে আমি আলাদা হতে পারছিলাম না।
তারউপর চানাচুর আমার জন্মদিন উপলক্ষে এমন পোস্ট দিয়েছে আর তাতে অনেকে যে কমেন্ট দিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ব্লগ ছেড়ে আসলেই বেকুবি হয়েছে। নিজেকে চরম এগ্রিকালচার টাইপ মানুষ মনে হচ্ছে।
যা হোক, আমার এবারের জন্মদিনের বিস্তারিত জানিয়ে ফেলি।
১।এই প্রথম আমি আম্মুকে ছাড়া জন্মদিন করলাম। এত বড় ধাড়ি মেয়ের এইসব কথা ন্যাকামী লাগতে পারে। কিন্তু ঘটনা আসলেই সত্য। আম্মু তার কাজিনদের সাথে কুমিল্লা বেড়াতে গিয়েছিল। সকাল বেলা আম্মুর কাছ থেকে উইশ নিতে ফোন দিয়ে শুনি সে আর তার কাজিনরা কচি খুকির মত চিৎকার-চেচামেচি করছে। আমি আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। ঘন্টাখানেক পর সে ফোন দিয়ে উইশ করল আর সাথে এই দাবীও জানালো যে আমার জন্মদিনের ব্যাপারটা নাকি তার আগেই মনে ছিল।

২। চানাচুরে সাথে আজ চাওমিন খাওয়ার প্লান ছিল। ভেবেছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে খাব আর সিনেমা দেখব। ওখানে গিয়ে দেখি বন্ধ।



আবার রিক্সা ঘুরিয়ে সিটি কলেজের ওখানের স্টারে গেলাম। কাচ্চি বিরিয়ানী অর্ডার দিলাম। সেই জঘন্য কাচ্চি। এত জঘন্য কাচ্চি আমি গত তিন বছরে খাইনি। কিন্তু চানাকে দেখলাম বেশ আমোদ করেই খাচ্ছে। বেচারী হয়তো সারা দুনিয়া ঘুরে বেশ ক্লান্ত ছিল। খেয়েদেয়ে মনে হল যে পরিমানে খেয়েছি তাতে নিশ্চিত দুই কেজি ওজন বেড়ে যাবে। তাই দুইজন হাটা শুরু করলাম। হেটে হেটে স্টার থেকে ধানমন্ডি লেকে পাড়ে এসে বসলাম। ও আল্লাহরে ধানমন্ডি লেকে কি বাতাস!!!!


যা হোক, একটা রিক্সা নিয়ে মামার বাসায় গিয়ে মামীর সাথে পটপট করে আবার বের হয়ে আসাদগেট আসলাম। আড়ং থেকে কিছু কেনাকাটা করে বাসে ঝুলে ঝুলে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বেজে গেল।
এত বিস্তারিত বলার কারণ যেটা সেটা হল- আজকের জন্মদিনের মত আজগুবি আর বেকুবমার্কা জন্মদিন আর পালন করিনি।


সব কিছু আনন্দময় ছিল, অনেক বন্ধুদের মেসেজে ফোন ইনবক্স ভরে গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও একজন ভাল বন্ধুকে খুব মিস করেছি। গত জন্মদিনের সবচেয়ে সুন্দর উইশটা যে বন্ধু করেছিল সে হয়তো এবার ভুলেই গিয়েছে যে আজকে আমার জন্মদিন।
যাই হোক, বন্ধুটি ভালো থাক। সব বন্ধুরা ভালো থাক। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। বিশেষ করে চানাচুরকে যে জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসার ভেলায় ভাসিয়ে নিয়েছে । আইলাভিউ চানাভাই!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪১