হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ফযীলত:
মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে বাইত সম্পর্কে ইরশাদ করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোন প্রতিদান চাইনা। তবে আমার নিকটজন তথা আহলে বাইতগণ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা/২৩)
“হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার (দেহ মুবারকেরই) একটি টুকরা। যে উনাকে রাগান্বিত করবে, সে আমাকেই রাগান্বিত করলো।”(বুখারী, মুসলিম)
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, তিনি বিশ্বের সকল মহিলার সাইয়্যিদাহ, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, উনাদের সম্মানিতা মাতা, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার অত্যন্ত স্নেহময়ী কন্যা এবং উনার সর্বপ্রথম আহলিয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, উনার চার কন্যার একজন। তিনি নুবুওওয়াত প্রকাশের ৩ বৎসর পূর্বে ২০ জুমাদাল উখরা বিলাদত শরীফ লাভ(জন্মগ্রহণ) করেন।
উম্মূল মু’মীনিন হযরত হযরত আয়েশা ছিদ্দিক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুন নিসা আহালিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মোশাহাবা এত বেশি ছিল অনেক সময় উনার আগমনের কারণে উনার আওয়াজ মুবারক এবং চাল চলন মুবারক দূর থেকে মনে হতো হয়ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসতেছেন। সেজন্য আমরা দাঁড়িয়ে তাযিম-তাকরিমের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করতাম। পরে লক্ষ্য করে দেখতাম তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহালিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ। উনার চাল চলন মুবারক, উঠা বসা মুবারক, কথা বার্তা মুবারক, আওয়াজ মুবারক এবং উনার সব কিছুই যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন, খতামুন নাবিয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মোশাহাবা ছিল।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধারা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে চালু হয়েছে। মূলত তিনি আহলে বাইত উনাদের অন্যতম। তাই সকল মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- উনাকে মুহব্বত করা, উনার জীবনী মুবারক জানা, উনাকে প্রতি ক্ষেত্রে অনুসরণ-অনুকরণ করা এবং সর্বত্র উনার বেশি বেশি আলোচনা করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। আর আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য। আর আমার আহলে বাইতগণ উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।”
……………………………….
হযরত ছিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ র্মযাদার অধিকারী তিনি হচ্ছেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফযালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং “ছিদ্দীক্বে আকবর” লক্বব মুবারক উনার একক বৈশিষ্ট্য।
কুরআন শরীফ-এ স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি একাধিক স্থানে উনার ছানা-সিফত করেছেন। উনার প্রশংসায় অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।
উনার র্মযাদা স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। এমন কোন ভাষা নেই, যে ভাষায় উনার জীবনীমুবারক রচিত হয়নি। তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন, প্রথম কুরআন শরীফ সংগ্রহকারী অর্থাৎ জামিউল কুরআন এবং নাম দিলেন মাছহাফ এবং উনাকেই প্রথম ‘খলীফাতু রসূলিল্লাহ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলাম জগতে এক নজিরবিহীন বিরল ব্যক্তিত্ব। নুবুওওয়াতের পর উনার ইমামত ও খিলাফত সকলেই বিনা দ্বিধায় মেনে নেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছওর গুহার সঙ্গী হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে উল্লেখ করেছেন। এর ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে স্বয়ং হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমার সারা জীবনের আমল যদি আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সেই তিন রাত্রির আমলের সমান হতো! তা সেই তিনি রাত্রি, যেই রাত্রিতে তিনি (হিজরতের সফরে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলেন।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর সময় উনার অসুস্থ অবস্থায় আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ১৭ ওয়াক্ত নামাযে ইমামতি করেছিলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনতিবিলম্বে সর্বসম্মতিক্রমে আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর খিলাফতের ভার অর্পণ করলেন। অতঃপর তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা নিযুক্ত হন এবং যোগ্যতা ও সুনামের সাথে সর্বমোট দু’বছর তিন মাস দশ দিন খিলাফত পরিচালনা করেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে সকল প্রকার বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্র সাফল্যের সাথে দমন করে তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। (সুবহানাল্লাহ)
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ-এর দিন হচ্ছে ‘২২শে জুমাদাল উখরা’।
……………
আমাদের কর্তব্য এবং সরকারের দায়িত্ব:
সম্মানিত মুসলমান মূলত হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বিশেষ করে সাইয়্যিদাতুন নিসা আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং আফদ্বালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা ও বুযূর্গী সম্পর্কিত ইলম না থাকার কারণেই আমরা উনাদের যথাযথ মুহব্বত ও অনুসরণ করতে পারছি না। যার ফলে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিলে ব্যার্থ হচ্ছি। তাই উনাদের সম্পর্কে জানা সকলের জন্যই ফরয। কেননা যে বিষয়টা আমল করা ফরয সে বিষয়ে ইলম অর্জন করাও ফরয। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে উনাদের সম্পর্কে কোন আলোচনাই নেই। তাহলে মুসলমানগণ কি করে হাক্বীক্বী মুসলমান হবে?
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন হচ্ছে ২০ মে জুমাদাল উখরা এবং ২৩শে জুমাদাল উখরা আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ। তাই প্রত্যেক মুসলিম অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।