দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার মতো দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়া পরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অজুহাতে সরকার বাড়িয়েছে আমদানির পরিমাণ। কিন্তু সরকার বাহ্যত চাল-গমের আমদানি বাড়ালেও প্রকৃতপক্ষে সরকারি মজুদ থেকেই বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম।
আর সেখানে ঠাঁই হচ্ছে নিম্নমানের বিদেশী গম ও পচা চালের। সরকারি গুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের খাদ্যশস্য সরানোর সাথে খাদ্য বিভাগেরই একটি অসৎ চক্র জড়িত।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন ঠিকাদার, খাদ্য পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই প্রকাশ্যেই দেশের অনেক খাদ্যগুদামে এ কর্মকা- চলছে। খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত থাকার পরও অদৃশ্য কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালো মানের চাল-গম সরিয়ে সেখানে নিম্নমানের চাল-গম রাখার একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। গত ফেব্রয়ারি মাসে ফুল ওসিএলএসডি থেকে ৪শ’ মেট্রিক টন উন্নত মানের গম সরিয়ে সেখানে নিম্নমানের পচা গম রাখতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন পরিদর্শক। ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহ সদর খাদ্য গুদামের আরেক পরিদর্শকও বাজার থেকে নিম্নমানের গম সংগ্রহ করে গুদামে রাখতে গিয়ে ধরা পড়েন। ওই খাদ্য পরিদর্শক সরকারি চাকরির পাশাপাশি অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেই সরকারি গুদামে খাদ্য পরিবহন ব্যবসায় জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য বিভাগের উচ্চপদস্থ কতিপয় কর্মকর্তার মদদেই খাদ্য পরিদর্শকরা এধরনের কর্মকা-ে উৎসাহিত হচ্ছে। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নীরব থাকায় খাদ্যগুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম অবাধে সরিয়ে সেখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা খারাপ ও পচা চাল-গম রেখে দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সরকারি গুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম সরিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের চাল-গম মজুদ রাখায় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বেশিদিন গুদামে রাখা যায় না। পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য কর্মকর্তারাও ৩য় গ্রেডের চাল-গমকে ২য় গ্রেড বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। মূলত, সরকারি গুদামে মজুদকৃত সবচেয়ে ভালো মানের চালকে খাদ্য প্রশাসনের ভাষায় বলা হয় ডিএসডি-৩, মাঝারি মানকে ডিএসডি-২ এবং নিম্নমানের চালকে ডিএসডি-১ বলা হয়। নিম্নমানের চাল গুদামে প্রবেশের সাথে সাথেই তা ভোক্তাদের জন্য বিতরণ করা হয়। কারণ এ গ্রেডের চাল বেশিদিন গুদামে রাখা নিরাপদ নয়। আর আপদকালের জন্য গুদামে মজুদ রাখা হয় ডিএসডি-৩ গ্রেডের চাল। এ গ্রেডের চালের মান খুবই ভালো।
সূত্র আরো জানায়, দেশের বেশ কিছু খাদ্য গুদামেই খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে ডিএসডি-৩ গ্রেডের চাল ডিএসডি-২ গ্রেড হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন। এতে ওএমএস ডিলাররা উন্নত মানের চাল পেয়ে তা চোরাইবাজারে বিক্রি করে তার পরিবর্তে নিম্নমানের চাল কম দামে কিনে গ্রাহকদের দিচ্ছে। এতে ডিলাররাই আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছে। মূলত, আর্থিক সুবিধার বিনিময়েই ডিলারদের এ সুবিধা দিচ্ছেন খাদ্য কর্মকর্তারা। তাছাড়া অনেক খাদ্য পরিদর্শকরা চাল সংগ্রহের সময়ই উচ্চদাম দেখিয়ে নিম্নমানের চাল কিনেছেন। খাদ্য বিভাগের এক অনুসন্ধানে এমন ঘটনা ধরা পড়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লি খাদ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে তা কার্যকর হয়নি। নেয়া হয়নি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থাও।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে দেশের কোথাও ডিএসডি-১ গ্রেডের চাল গুদামে নেই। তবে গুদামে খাদ্যশস্যের গ্রেড পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। কারিগরি পরিদর্শকরাই গুদামে গিয়ে খাদ্যদ্রব্য রাসায়নিক পরীক্ষা করে গ্রেড পরিবর্তনের প্রত্যয়ন দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগ সবসময়ই নজর রাখে। অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেরে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে
তথ্যঃ-
"দৈনিক আল ইহসান"