আজ সারাদেশের মানুষ এমন একটি দিন পার করল যার আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে পচন ধরা রাজনীতির দুর্গন্ধ । স্বাধীনতার ৪১ বছর পর ও এদেশের মানুষ মুক্তি পেল না এই কলুষিত রাজনীতি থেকে ।
আবারও বিরোধী দলের বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা, সারা দেশ অচল করে দেয়ার প্রচেষ্টা । আর সরকারি দলের সেই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেয়া । লাভের মধ্যে এই হল যে একদিনের জন্য দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেল, আমার দেশের দিনমজুরেরা কাজের অভাবে অনাহারে একটা দিন কাটালো । আর কত দেখব আমরা এমন কিছু অমানুষের রঙ্গলীলা ।
প্রথমে বলি আমাদের মহান বিরোধীদলের কথা (যারা ক্ষমতায় থাকার সময় যা বলে, ক্ষমতা হারালে তার ই বিরোধিতা করে ) । যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একসময় তাদের রাত এর ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো, এখন আবার সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তাদের পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। তাই এর প্রতিবাদে ডাকতে হল সমাবেশ । বিরোধী দলের কেউ আগে ক্রিকেট খেলত কিনা কে জানে । কেননা সমাবেশ ডাকার ক্ষেত্রে তাদের টাইমিং এর প্রসংশা করতে হয় । সপ্তাহের মাঝামাঝি একটি কর্মময় দিনে, তার ওপর আবার এশিয়া কাপের বদৌলতে ঢাকায় অনেক বিদেশি অতিথি, এমন দিনে সমাবেশ না দিলে এর কোন মূল্য থাকে নাকি ? মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী, আপনি যে আজ দেশের ভাবমূর্তি এভাবে বিদেশিদের সামনে উন্মোচিত করলেন, তার প্রসংশার ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না বলে আমাকে মাফ করবেন ।
আর সরকারি দলের কথা কি বলব । দেশের এখন সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত আইনটি হচ্ছে, সরকার সম্বন্ধে যে সত্য কথা বলবে তার গলা টিপে ধরা হবে । আজ আমরা তার আরেকটা উদাহরণ দেখলাম তিনটি প্রথম সারির টিভি চ্যানেল এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় ।
সারা দেশের যান চলাচল তারা আজ বন্ধ করে দিয়েছে যাতে বিরোধীদলের লোকজন ঢাকায় আসতে না পারে । কিন্তু এতে সাধারণ মানুষ কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তা ভাববার সময় তো সরকারের নেই । তারা তো জনগণের কথা ভাবেন নির্বাচনের আগে, নির্বাচন শেষ হলে ভুলে যান ।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বোধ হয় এটা মাথায় রাখা উচিত যে, আজ এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি নিরাপত্তার অভাবে একটি মানুষও প্রাণ হারায়, একটি বাচ্চাও স্কুলে যেতে না পারে, একজন দিনমজুরও না খেয়ে থাকে আপনাকে তার দায়িত্ব নিতে হবে । তখন আপনি এই বলে পার পাবেন না যে , "রাস্তায় মানুষের নিরাপত্তা তো আমি দিতে পারবো না " ।
লেখার শেষে দেশের সকল সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বলছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী, আমরা মাফ চাই । প্লিজ আমাদের মাফ করেন । এই মহান পার্লামেণ্টে আপনাদের শুধু গালিগালাজ আর নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমরা পাঠাইনি ।
নিজেদের দায়িত্ব যদি পালন করতে পারেন, তাহলে সেটা করেন । আর না পারলে, যদি লজ্জা থাকে তাহলে নিজেরাই সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন ।
"আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইজন মানুষের সেই লজ্জাবোধটুকু আছে", এটুকু তো আমরা আশা করতেই পারি, তাই না ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:৩০