সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। যেকোনো লক্ষ্য অর্জনের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে সময়ের সদ্ব্যবহার। দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডসমূহ যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজন সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। এই ব্যবস্থাপনা মানে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা নয়। কারন সময়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ সম্ভব নয়। সময়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো বা সদ্ব্যবহার করাকেই ব্যবস্থাপনা বলে।
রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার কারণে মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতা অন্যান্য মাসের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। এছাড়া সাহরী, ইফতার, তারাবিহর নামাজ ও অন্যান্য ইবাদাত বন্দেগীর জন্য সময় বরাদ্ধ থাকায় দিনের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। কিন্তু জীবন যেহেতু থেমে থাকে না, সেহেতু এই কম সময়কেই সকল কাজের জন্য সঠিকভাবে ভাগ করে নিতে হয়।
রমজান মাসে আপনার কাজের ক্ষেত্র, কাজের পরিমান ও কাজের আউটপুট অন্যান্য মাসের ন্যায় রাখতে অনুসরণ করুন সময় ব্যবস্থাপনার ১০ টিপস।
১। আগাম পরিকল্পনা
পরিকল্পনা হলো কাজের অর্ধেক। যে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। রমজান মাসে ইফতার, সাহরী, তারাবিহ ও অন্যান্য ইবাদাত কেন্দ্রীক বড় একটি সময় ব্যয় হয়। এর বাইরে দিনের বাকি সময়টুকুকে দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের জন্য পরিকল্পিতভাবে ভাগ করে নিতে হয়। এজন্য রমজান শুরুর আগেই রমজানের নিত্যদিনকার কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ঠিক করা উচিত।
২। দিনের কার্যতালিকা প্রণয়ন
নিয়মিত কাজের বাইরে সারাদিন বাড়তি কি কি কাজ করবো সেগুলোর তালিকা তৈরি করতে হবে। দিনের শুরুতেই সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সাহরী খাওয়ার পরই করতে পারলে। কাজের তালিকা বেশি বড় হয়ে গেলে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরের দিন বা সম্ভব হলে ছুটির দিনের জন্য বরাদ্ধ রাখুন।
৩। প্রতিটি কাজের জন্য সময় নির্ধারণ
কাজের তালিকা করার পর কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য হাতে কি পরিমান সময় আছে তা নির্ধারণ করতে হবে। ইফতার, তারাবিহ, সাহরী, অফিস, ক্লাসটাইম ইত্যাদি বাদ দিয়েই সময় নির্ধারণ করতে হবে। এরপর তালিকাবদ্ধ কাজগুলোর জন্য সময় ভাগ করে নিতে হবে। দিনের শেষভাগে অর্থাৎ ইফতারের এক-দু ঘন্টা আগে জরুরি ছাড়া তেমন কাজ না রাখাই উত্তম। সময় অপর্যাপ্ত হলে তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিন।
৪। সকালের সদ্ব্যবহার
সকালের ঘুম অলসতার লক্ষণ। এ সময়ের ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সফলতা অর্জনের জন্যও এটি প্রতিবন্ধক। তবে রমজান মাসে সাহরী খেতে ভোররাতে ঘুম থেকে উঠতে হয় বিধায় সকালে একটু আধটু ঘুমাতেই হয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেই ঘুম যেনো সীমার মধ্যে থাকে। অফিস বা স্কুল টাইমের আগে সকালের এক/দেড় ঘন্টার কাজ আপনার পুরো দিনের কাজকে সহজ করে দিবে এবং চাপমুক্ত রাখবে। এজন্য সকালের সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিদিন সকালে অবশ্যই কিছু না কিছু কাজ রাখুন।
৫। পরিবারকে সময় দিন
জীবনের তাগিদে নানাবিধ কাজের ব্যস্ততায় পরিবার, মা-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। রমজান মাস হলো পরিবারের সাথে যোগাযোগ ও বন্ধনকে দৃঢ় করার একটি মোক্ষম সময়। রমজান মাসে অফিস বা স্কুল টাইম সংক্ষিপ্ত হওয়ায় অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে থাকা হয়। এ সময়টুকুতে আমরা পরিবারের সদস্যদেরকে একান্তে সময় দিতে পারি এবং তাদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতে পারি। বিশেষ করে রমজানে ইফতারের বাহারি আইটেম তৈরিতে নারীদেরকে আমরা সাহায্য করতে পারি।
৬। অতিরিক্ত কাজ এড়িয়ে চলুন
এই বিষয়টি শুধু রমজান নয়, সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য। রমজানে রোজার কারণে শরীর কিছুটা দুর্বল থাকায় এটা আরো বেশি প্রযোজ্য। তবে অনেকে রোজা রাখলে কাজ কমিয়ে দেন। তা ঠিক নয়। রোজার সময় স্বাভাবিক কাজে সক্রিয় থাকুন। ইফতারের আগমুহুর্তে ভারী কাজ পরিহার করুন।
৭। অত্যধিক সামাজিকতা থেকে বিরত থাকুন
সমাজে বসবাস করতে হলে নানা ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। রোজার মাসে এসব কর্মকাণ্ডকে সংকুচিত করে ফেলুন। শরীর ও মনে চাপ সৃষ্টি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অযথা সময় ব্যয় কমিয়ে ফেলুন। রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সময় এমনিতেই সীমিত। এজন্য অহেতুক কাজে সময় ব্যয় না করে দরকারি কাজে সময় ব্যয় করুন।
৮। ইবাদাতের জন্য সময় নির্ধারণ
রমজান মাস মুসলমানদের ইবাদাত বন্দেগীর মাস। জরুরি কাজ না থাকলে সাধারণত মানুষ কিছু বাড়তি ইবাদাতের মাধ্যমেই সময় অতিবাহিত করে। এসবের মধ্যে রয়েছে- কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির, নফল ইবাদাত ইত্যাদি। এসব বাড়তি ইবাদাতের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়কে নির্ধারণ করুন। সেটা হতে পারে ইফতারের আগের ১/২ ঘন্টা অথবা ছুটির দিন দুপুর ২টা-৪ টা।
৯। অধ্যয়ন
রমজান মাস জ্ঞান চর্চার মোক্ষম সময়। এসময় ধর্মীয় জ্ঞান চর্চার প্রতি মানুষ বেশি মনোনিবেশ করে। তবে একাডেমিক ও সাধারণ জ্ঞান চর্চার জন্যও রমজান ভালো সময়। ধর্মীয় জ্ঞান চর্চার জন্য কুরআন-হাদিস অধ্যয়নের পাশাপাশি ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়ন করা যায়। আর সাধারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন সাহিত্য ও উপন্যাস পড়া যায়। দিনের একটি সময়কে অধ্যয়নের জন্য নির্ধারন করে রাখুন এবং কি কি সাহিত্য অধ্যয়ন করবেন রমজান শুরুর আগেই হাতের কাছে এনে রাখুন। জ্যামে বা বৃষ্টিতে আটকে থেকে অলস সময় পার না করে মোবাইলে বইয়ের অ্যাপ ডাউনলোড করে পড়ুন।
১০। সুস্থ থাকুন
সময় ব্যবস্থাপনার পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যেতে পারে যদি আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকেন। রমজানে সুস্থতার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অতিমাত্রায় ভাজাপোড়া খাওয়া। যতই ক্ষতিকর হোক না কেনো একজন সুস্থ ব্যক্তির ইফতারের প্লেট থেকে ভাজাপোড়া সরানো প্রায় অসম্ভব। তাই যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর উপায়ে ঘরে তৈরি ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত। এছাড়া রমজানে সুস্থ থাকতে অতিমাত্রায় ঘুম পরিহার করুন এবং ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১২