অভাবের কারনে সরকারী ভাতা প্রাপ্তির বইটিও বন্দক রেখেছে মুক্তিযোদ্ধা মহির
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কুড়িগ্রাম চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের হাট পাটওয়ারী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মহির আলম। পিতা মৃত গেনদার শেখ তার মায়ের নাম সবজান। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত।
১৯৭১ সাল বেজে উঠে যুদ্ধের দামামা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন ছিলেন একজন টকটগে ১৮ বয়সের যুবক। মা সবজান ছেলেকে তৈরি করে এবং ছেলেকে আদেশ করে যুদ্ধে যাবার এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য। তখন মায়ের নির্দেশে ২৯দিনের ট্রেনিং নিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তিনি ছিলেন ১১নং সেক্টর চাঁন কম্পানীর অধিনে। তার মুক্তিবার্তা-০৩১৬০৫০১৮৩, গেজেট নং-১৬৬১।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মহির আলম জানান, কি আর বলবো বাবা এই দেশ স্বাধীন করলাম আর এই দেশ আমাকে কি দিলো। এই সামান্য ভাতা। কিন্তু অভাবের কারনে বইটিও বন্দক রাখতে হয়েছে। আজ আমি পঙ্গু কিন্তু পাইনি সরকারী ভাবে কোন সহায়তা কোন চিকিৎসা, পাইনি দেশের মানুষের কাছে কোন সাহায্য।
মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তার চোখ চকচক করে ওঠে। তিনি বলেন, ১৯৭১সাল তখন আমি একজন ঝড়ে পড়া ছাত্র। অভাব অনটনের কারনে লেখা পড়া ছেড়ে বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করতাম। দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ভক্ত ছিলাম। বেজে উঠে যুদ্ধের দামামা। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মনে পড়ে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা এবং সেই সাথে পাকহানাদারদের অত্যাচার দেখে মা আমাকে নির্দেশ দেয় বাড়িতে বসে থাকা হবে না দেশকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। তুই যুদ্ধে চলে যা। আমরা পরাধীন থাকতে চাইনা, এদেশ স্বাধীন চাই। পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশের মাটিকে মুক্ত করতে হবে আর দেরি না করে এখনেই চলে যা যুদ্ধে। মায়ের আদেশ আর পাকবাহিনীর অত্যাচারের কথা ভেবে সিন্ধান্ত নেই, পা বাড়াই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনেক বাধা অনেক পথ পেরিয়ে ভারতের কাকরি পাড়া।
সেখানে ১৯দিন ট্রেনিং দিয়ে রৌমারী ট্রেনিং সেন্টারে এসে ১০দিন ট্রেনিং দেই। ট্রেনিং শেষে ১১নং সেক্টরের কোম্পানী অথ্যাৎ চাঁদ কোম্পনীতে যোগ দিয়ে কম্পানী কমান্ডার চাঁদ মিয়ার নির্দেশে কয়েটি প্লাটুনে ভাগ হয়ে চিলমারী আক্রমণের সিন্ধান্ত হয়। আমি ছিলাম প্লাটুন কমান্ডার নজরুল ইসলাম এর অধীনে।
এ সময় ভারতের সৈন্যরাও ছালী পাড়া হতে সহযোগিতা করে। ১৯৭১সাল সেই দিন ছিল ১৭ অক্টোবর রৌমারী ক্যাম্প থেকে নৌকায় করে নজরুল কমান্ডারের নেতৃত্বে চিলমারী অপারেশনে পাকহানাদার বাহিনীকে হত্যা করি। রমনাঘাট এরপর উলিপুর ডাকবাংলা, হাতিয়া অনন্তপুরসহ কযেকটি এলাকায় যুদ্ধকরি। ১১নং সেক্টর কোম্পানী কোমান্ডার প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাশেম চাঁদ-এর নেতৃত্বে ৮ নভেম্বর রাতে উলিপুর ডাক বাংলায় পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প সহ তাদেরকে উৎখাত করার জন্য সম্মূখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি।
পরে আবার আমরা হাতীয়া অনন্তপুরে পাক বাহিনীর সাথে সম্মূখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। এসময় পাক বাহিনীর এলোপাতারী গুলিতে ৬০০জনের অধিক সাধারন লোক মারা যায়। দেশ শক্রমুক্ত হওয়ার পর আমরা সকলে চিলমারী হাসপাতালে একত্রিত হয়ে সবাই মিলে কম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার নির্দেশে ২৪ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে গাইবান্ধা মালয়েশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেই। এর পরে মোঃ শওকত আলী সরকার (বীর বিক্রম) এর হাতে মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র গ্রহন করি।
তিনি আরো জানান, যখন শুনতে পাই দেশ শক্রমুক্ত ও দেশ স্বাধীন ঘোষনা পাওয়ার পর পরই মনে আনন্দে নেচে উঠে চোখ দিয়ে আনন্দে জল বেড়ে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মহির মিয়ার ৭ছেলে ১ মেয়ে। তিনি মৃত্যুর অগেই ৭১’এর ঘাতক দালালদের বিচার ও জাতীকে কলংকমুক্ত দেখে যেতে চান। আর সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান চান।
Click This Link
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন