#BDTOURISM
পর্যটন নিয়া আমাদের চিন্তাভাবনা এতো আনস্ট্রাকচারড, ভাবা ই যায় না। বেশ কিছুদিন খুব প্রচার করলাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় বালুকাবেলা আমাদের কক্সবাজারে। আমরা দেশী বিদেশী পর্যটক দের আমন্ত্রন জানানোর জানানোর জন্যে বেশ আবেগী সুন্দর ভিডিও ও করেছিলাম বলে মনে পড়ছে আমার। তারপর কি করলাম ??? পুরো সী-বীচ জুড়ে ৩ থেকে ৫ তারকার হোটেল বানালাম। ঠীক তার পরের সারিতে ৩ - ৫ তারকার ক্লোন ভার্সন এর হোটেল বানালাম। কিন্তু সমুদ্র বা এই বেলাভূমি, যেটা নিয়ে মার্কেটিং এর চেষ্টা করলাম, ইনফ্যাক্ট সীবীচ এ মানুষ যেই জন্যে যাবে, সেই সমুদ্র ভিত্তিক কোনো এক্টিভিটিজ এর আয়জন করলাম না। সমুদ্রের ধারে কয়টা কটকটি আর প্রচন্ড ন্যাগিং করা ডাবওয়ালা, ডীমওয়ালা, আর ঝিনুক এর মালাওয়ালা ছাড়া সেখানে আপনার আমার কি করার আছে ভাবেন তো। সরকারি ভাবে না হলেও বেসরকারি ভাবে কিছু ইকো-রিসোর্ট করা যেতো (আছে অবশ্য দুই একটা যেগুলা সাধারন মানুষ এর আওতার বাইরে)। ঝাউবন বাড়িয়ে দিয়ে সেখানে কুড়েঘর টাইপ বানিয়ে সুন্দর বাজেটফ্রেন্ডলি থাকার ব্যাবস্থা করা যেতো। সৈকত এর সামনে হাজার হাজার ঝিনুক এর মালা, ঢাকায় বানানো বার্মিজ আচার এর দোকান না দিয়ে (এগুলা কেউ কিনে এখন আর?), সেখানে মিউজিক ক্যাফে, ভালো কিছু সামুদ্রিক খাবারের দোকান করা যেতো। খুব সুন্দর পরিকল্পনা করে এগোনো যেতো।
যেখানে সিক্কিম, দার্জিলিং, মেঘালয়, কোলকাতা তে বেশ ভালো হোটেলে থাকা খাওয়া আর ঘুরে আসা মিলিয়ে একেকজনের (প্রতি জায়গা ভেদে) ১৫ থেকে ২০ হাজার এ বেশ আমুদে আরামদায়ক ট্যুর কমপ্লিট হয়ে যায়, সেখানে আমাদের কক্সবাজারে একটু সাধারন মানের হোটেলে ৪ দিনে কেবল মাত্র রুম রেন্ট ই ২০ হাজার টাকা। তাহলে দেশের মানুষ কেনো ট্যুরিজম এর জন্যে ভারত্মুখী হবে না ????
এইবার ছবি টা দেখেন। এই সাদা দৈত্য কাঞ্চনজংঘা দেখতে দেশের মানুষ (কোভিড এর আগে) হুমড়ী খেয়ে দার্জিলিং সিক্কিম গেছে। অথচ বছরের একটা বিশেষ সময়ে কোনো ভিসা ছাড়া দেশের মাটিতে দাড়ায়ে এই জিনিস দেখা যায় আমাদের পঞ্চগড় থেকে। October এর শুরু থেকে November এর মাঝামাঝি পর্যন্ত মানে কুয়াশা না আসা পর্যন্ত বেশ স্পষ্ট ই দেখা যায়। সবচেয়ে ভালো দেখা যায় ডাকবাংলো থেকে।
এখন আসি, কেনো এতো কথা বল্লাম। এই পঞ্চগড় এ এই ডাক-বাংলো ছাড়া থাকার আর কোনো ভালো ব্যাবস্থা নাই।
বলতে পারেন, শুধু বছরের ১ মাস একটা পাহাড় দেখা যায় এই জন্যে হয়তো পর্যটন নিয়ে সেখানে কোনো ভাবনা নেই।
তাইলে আসেন আর কি কি দেখা যায় ঐখানে এইটা বলি -
১) ভিতরগড় দুর্গনগরী
২)বার আউলিয়া মাজার শরীফ
৩)মির্জাপুর শাহী মসজিদ
৪)মহারাজার দিঘী
৫)বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
৬)গোলকধাম মন্দির
৭)তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো
৮ ) আরো আছে অনেক কিছু নীচে কপি পেস্ট করে দিলাম এক জায়গা থেকে -
সব মিলিয়ে দেখার মত জায়গা একদম কম না, এক টানে বললে - ডিসি পার্ক, মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত রকস মিউজিয়াম পাথরের জাদুঘর, করতোয়া নদীর পাড়, বিজিবি ক্যান্টিন, বোদা পৌরসভা সংলগ্ন বাইপাস মহাসড়ক, বদেশ্বরী মন্দির, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বারো আউলিয়ার মাজার, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট-ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মহানন্দা নদীর পাড়, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, পিকনিক কর্ণার, রওশনপুর জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট, আনন্দধারা, আনন্দ গ্রাম, শিশুপার্ক, মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়ার স্মৃতিসৌধ, ভিতরগড়ের পৃথু রাজার মহারাজার দীঘি, ভীমের জঙ্গল, বাংলার শ্রেষ্ঠ সুলতান হোসেন শাহের হোসেন দীঘির গড়, মোগল সেনাপতি মীর জুমলার মীরগড় এবং ইখতিয়ারউদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর রাজনগড় এবং তালমা রাবার-ড্যাম এলাকায় হিমালয় বিনোদন পার্ক ও রাস্তার পাশে অবস্থিত ভারতীয় কাঁটাতারের সীমানা প্রাচীর।
এতো এতো কিছু। কিন্তু লোকজন যেয়ে থাকার জায়গা নাই। কিছু থাকার জায়গা বানান। শীতকালে শীতমেলা করেন সেখানে। দার্জিলিং এর শীত , বিশ্বাস করেন আপনি ঐখানেই টের পাবেন। হাড়-কাপানো শীত। আপনি দার্জিলিং এর ফীল ই পাবেন।
ভ্রমন কে সহজ করেন। ভ্রমন কে encourage করেন। দেখেন, আমরা ভারতে না দৌড়ায়ে দেশেই ঘুরবো। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। ভ্রমনস্থান গুলোতে খাবার এর জন্যে ট্রেডিশনাল ফুডগুলো প্রোমোট করেন।
আমি নিজে খুব একটা ঘোরাঘুরি করি না। জীবনে বন্ধু দের সাথে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাই নাই, তাই আমার জন্যে এইটা নিয়ে বেশী কথা বলাটা অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়তেছে। আমি যতটা না ট্যুরিজম পার্স্পেক্টিভ থেকে বলছি, তার চেয়ে বেশী ইকোনোমিক কনসার্ন থেকে। কোভিড টা শেষ হলে আমার আশংকা দেশেয় ৮০% মানুষ ভারতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে অনলি ফর ট্যুরিজম (আমি নিজেও একজন)। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দেশেই ট্যুরিজম প্লেস গুলো কে একটু সময় নিয়ে একটু """ দরদ """" নিয়ে সাজাতাম, আমার ধারনা দেশের এত্তো এত্তো টাকা দেশেই থেকে যেতো।
শুধু ভ্রমন স্থান না আসুন নিজের আশেপাশে পরিষ্কার রাখি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ।
ছবিঃ অনলাইন থেকে মেরে দিসি (কার তোলা ধারনা নাই, যিনি তুলেছেন আমাকে মাফ করে দিয়েন, পারলে কমেন্ট এ জানায়ে দিয়েন। শুভ কামনা।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৭