ব্যবসাবুদ্ধি সবার থাকে না। আবার যাদের থাকে, তাদের চোখে বাকিরা সেই ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়। আমাদের ঘটনার বিজনেস টাইকুনের প্রিয় খাবার কাঠাল পাতা বলিয়াই সবাই জানত।কিন্তু হঠাৎ প্রকাশ পাইলো যে উনি কাঠাল খাইতেও ছাড়েন না। তাহার যতটুকু দেশপ্রেম সেটুকু বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঠালেই সীমাবদ্ধ। এই একটি ক্ষেত্রে তিনি সীমালঙ্ঘনকারী নন। তাহার দৃষ্টিতে ব্যবসায় বাগড়া দেয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেখাইয়া উনি কাঠাল পাতা খান বটে, কাঠালটা খান কাছের মানুষদের মাথায় ভাঙিয়া। প্রসঙ্গের কারণেই উল্লেখ থাকে যে তিনি প্রায়শই অপরের মেধা ও বুদ্ধিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিয়া থাকেন, কারণ তাহার নিকটে নমুনার সঙ্গে মেলে এমন মাথা প্রচুর। এবং এমনই নিরেট যে তাহাতে কাঠাল ভাঙিয়া খাইলেও তাহারা টের পায় না।
চতুর এই ব্যবসায়ী নিজের ধান্দা লুকাইতেই প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ডে বানিজ্যিক স্বার্থ পান। এই তালিকায় আতর ব্যবসায়ী কিংবা বই ব্যবসায়ীরা পড়েন না। তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী তাহারাই যাহারা জাতীয় ফুল ও ফলের সীমা ছাড়াইয়া জাতীয় পতাকা ও জাতীয়তাবোধ নিয়া সদা সোচ্চার। তাহাদের তিনি চেতনা ব্যবসায়ী বলিয়া সম্বোধন করেন। চেতনা ব্যবসা করিয়া একেকজন আঙুল ফুলিয়া কলাগাছ হইয়া বাগানে এমনই জায়গাসংকট তৈরি করিয়াছে যে রোদ্দূরের অভাবে পুষ্ঠ কাঠাল পাতা পাইতে বড়ই সমস্যা। এই অভিযোগ শুনিয়া সত্যি কিনা জানিতে সেই ব্যবসায়ীদের খোজ নিয়াছেন কয়েকজন। দেখা গেছে ইহাদের কয়েকজন দেশে, কয়েকজন বিদেশে থাকেন। কেউ ছাত্র, কেউবা শিক্ষক হইয়াও ছাত্র, কেউ সাংবাদিক, কেউবা অফিসচারী। তাহারা সকলেই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি দিতে রাজী, তবে তাহা মোটেও কর্পোরেট ধাচে নহে। তাহারা নিজেদের ফেরিওয়ালা বলিয়া দাবি করেন। বলেন- আমরা চেতনার ফেরিওয়ালা, বিনে পয়সায় চেতনা জাগাই। একজন যিনি উচ্চতর শিক্ষার্থে বিদেশে আছেন, তিনি তার মূল্যবান প্রতিটি মুহূর্ত হইতে সময় বাঁচাইয়া, যখন পড়ার বই পড়িলে ক্যারিয়ার আগাইবে তাহা ভুলিয়া মুক্তিযুদ্ধের বাগান ঘাটিয়া চেতনার বীজ ও চারা আলাদা করেন। বাকিরাও তাই। কেহবা চাকুরিতে কর্তৃপক্ষের শ্যেন দৃষ্টি এড়াইয়া, কেউবা অন্যকাজের ফাকে ফাকে এই ফেরি করেন।
এদিকে স্ব-ভাবিত বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী দারুণ ঘটনা ঘটাইয়াছেন। তাহার ব্যবসা হিটের। শুরুতে তাহার হিটাসক্তি দেখিয়া অনেকে চমকাইয়াছেন। কি ব্যাপার! জনপ্রিয় লেখকেরা দশ হাজার হিট না পাইতেই তাহার হিট সংখ্যা দেড় লাখ হয় কিভাবে। পরে উদ্ধার হইলো তার সেই পায়ুরচনায় রিফ্রেস মারিয়া মারিয়া এবং পরে স্ক্রিপ্ট বসাইয়া তিনি এই কীর্তি গড়িয়াছেন। জিজ্ঞাস করা হইলে বলিলেন দেশ বিদেশের না হইলেই হাজার দশেক ভিজিটর শুধু আমার লেখা পড়িতে আসেন। অচিরেই উহা কোটি ছাড়াইলে অবাক না হইয়া হিংসা করিলেই প্রীত হই।
মাঝে আরেক কেলেংকারি। সামহোয়ারে চেতনার ফেরিওয়ালারা একবার ধর্মঘট করিলো। দাবি আদায় করার পর দেখা গেলো মার্কেটে কেনা বেচা না হইলেও হিটখোর প্রচুর ফায়দা করিয়াছে। আলেক্সা রেঙ্কিংয়ের অডিটে এই জোচ্চুরি ধরা পড়িলো। জানা গেল, সে সুযোগ পাইলেই এমনকি অন্যের পোস্টে গিয়াও লিংক দিয়া আসে তার ব্যক্তিগত সাইটের। তারপর সেই হিট দেখাইয়া গুগল নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হইতে ডলার গুনিয়া নেয়। প্রসঙ্গটি জানাজানি হয় প্রথমে রাগিব নামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান এক উইকিপিডিয়ান হিসেবে। ব্লগে দুই নাম্বারি কতপ্রকার ট্রোলিং হইতে শুরু করিয়া কি কি করা হয় তাহা সম্পর্কে সচেতন করিয়াছিলেন তিনি। তাহাকে ছোটো করিতে হিটখোর তাহাকে ইহুদিদের কর্মচারী বলিয়াছে। কিন্তু রাগিব সাহেব ছবি সহকারে ব্যাপারটি ফাস করিয়া দিলেন।
এই ঘটনায় অবশ্য হিটখোর নিজেকে ছাড়া কাহাকেও দায়ী করিতে পারিবে না। হিটখোরের গ্যাংব্যাঙিয়ের শিকার হইবার কুঅভ্যাস আছে। সামহোয়ারে এ ব্যাপারে কাউকে ভাগ দিতে সে নারাজ। অন্যদের ঠেলিয়া সরাইয়া দিয়া নিজের পশ্চাতদেশ আগাইয়া দিতে তিনি সিদ্ধপদ। আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট নামের এক ব্লগারের স্থলাভিষিক্ত হইবার বাসনায় তিনি তাহার দোকান খুলিয়া রাখিয়া যখন সবাইকে আহ্বানা জানাইতেছেন ব্যাঙ্গিঙয়ের, তখন কিছু দুষ্ট ছেলে রাজা তুমি ন্যাংটা বলার মতো করিয়া বলিল আদপে হিটখোর কি জোচ্চুরি করিয়া বেড়াইতেছে।
উহা নিম্নরূপ :
অমিত বলেছেন: মাহমুদউল্লাহ, শুনেন ছাগুরামের এই ঘটনা আজকের না। সে বেশ অনেকদিন থেকেই যেটা করে সেটা হল পোস্টের মাধ্যমে লিন্ক দিয়ে বিভিন্নভাবে সে ব্লগারদের নিজ সাইটে নিয়ে যেত হিট বাড়ানোর জন্য।বেআইনীভাবে এই কাজ করার জন্য অথরিটি তার একটা নিককে ব্যান করে।কিন্তু ততদিনে তার মোটামুটি একটা ইউজারবেস দাড়ায় গেছে, সেটা গুগল এড পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।এরপর সে তার গ্রুপে ব্লগিং সুবিধা চালু করে।সাইটের মূল হিটগুলা আসে চ্যাট আর অনলাইন গেমিংসে, এর সংগে ব্লগিং যোগ হলে তাহলে তো আর কথাই নাই। এর পর সে যেটা শুরু করল যে বিভিন্নভাবে উস্কানীমূলক বক্তব্য আর পোস্ট দেয়া শুরু করা। একবার রাগ ইমন নামক একজন মহিলা ব্লগারকে নোংরাভাবে আক্রমণ করায় কর্তৃপক্ষ তাকে আবার ব্যান করে। সে এইগুলা করত যাতে লোকজন সামহোয়ারইনে লেখার মত কোন পরিবেশ না পায়, সব সময় একটা পলিটিক্যাল প্রেসার এর মধ্যে থাকে। এই কাজগুলা করে সে সচতুরভাবে দোষটা চাপাত সচলায়তন নামে আরেকটা সাইটের উপর। কিন্তু সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন, কারণ সচলায়তন ক্লোজড কমিউনিটি।সুতরাং স্টেডিলি হিট বাড়তে থাকে ছাগুরামের সাইটের। এরকম কার্যক্রমের একটা পর্যায়ে ডিসেম্বর মাসে ত্রিভুজ ও তার গং বেনামে ফ্লাডিং করা শুরু করে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে।ফলশ্রুতিতে আরেকবার অস্থির সময় এবং থাকতে না পেরে অনেক ব্লগারের ছাগুরামের সাইটে গমন। আপনি দুটো সাইটের আলেক্সা র্যাংকিং দেখলেই ব্যাপারটা ধরতে পারবেন। প্রায় মার্চ মাস পর্যন্ত ছাগুরামের সাইটের হিট থাকে সামহোয়ার থেকে বেশি। গত সপ্তাহে সেই হিট পড়ে যায় এবং চতুর ত্রিভুজ যথারীতি আবার উস্কানীমূলক পোস্ট দেয়া শুরু করে।কারণটাকি বুঝতেই পারছেন।
আমার শুধু জানতে ইচ্ছা করে এই ব্যাপারটাকি পর্যায়ক্রমে চলতেই থাকবে ?
অমিত বলেছেন: ও আরেকটা ব্যাপার। ছাগুরামের এই লিন্ক দিয়ে হিট পাওয়ার নেশা এখনো যায় নি। এই ব্লগে ইসলাম নামক গ্রপের মডারেটর সে। গ্রুপ খুলেই সে যেটা করে সেটা হল চারটা মেনু বাটন সে গ্রপের সংগে অ্যাটাচড করে। তার মধ্যে দুইটাতে ক্লিক করলে আপনি সরাসরি তার সাইটে চলে যাবেন।একটি হল ফিডব্যাক আর আরেকটি হল লাইভ ডিসকাস। আমার একটু জানতে ইচ্ছা করছে যে এইভাবে যে ছাগুরাম সামহোয়ারইনকে ব্যবহার করে নিজের সাইটের হিট বাড়াচ্ছে, এটার জন্য সে কি সামহোয়ারইন কে কোন মাসিক ভাতা দেয় ?
প্রশ্নের উত্তর জানিবার পূর্বেই হিটখোর ভাগলবা। কারণ তাহার এই মাফিয়া বানিজ্যের অন্যতম পৃষ্টপোষক এক গডফাদার ফেরিওয়ালাদের তাড়া খাইয়া দৌড়ের উপর আছে। তাহাকে ধরিয়া আনিবার ছলে হিটখোরও পালাইয়াছে। এ ব্যাপারে আরো আপডেটেড তথ্য জানা গিয়াছে। তাহার হিট ব্যবসা সুপার ফ্লপ হইয়াছে দুই নাম্বারি ধরা পড়ার পর। অন্যদিকে ফেরিওয়ালার আনন্দে মিষ্টি খাইতেছে এতদিনে তাহাদের বিনিয়োগ তথা ঘরের খাইয়া বনের মহিষ তাড়াইবার শ্রম কাজে লাগিল বলিয়া। কারন গডফাদারকে দৌড়ানি দিবার কালে আশেপাশের সাধারণ মানুষরাও তাহাদের সঙ্গে যোগ দিয়াছে।
কিন্তু খানিকটা আতঙ্কিত আছি। সামহোয়ারে লগইন করিতে পারিতেছি না, পেইজ খুলিতেছেনা। হিট খোর কি নুডুস খাইতে খাইতে ডিডোস মারিয়া দিলো নাকি?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৪৪