মানুষেরও যে আকাশের মত হৃদয় থাকতে পারে
তাকে না দেখলে হয়ত আমার জানাই হতনা।
রুপকথারও বাইরে যে এক বিশাল জগত আছে
তার কাছে না শুনলে বোধহয় শোনাই হতনা।
আজকে আমার এই পৃথিবীর অনেক কিছুই চেনা
ব্ল্যাকবোর্ডের ওই কালো আকাশ আমায় এন দে না।
এনে দে না বয়সটা সেই ছয় কিংবা সাত
হয়ত তখন ফিরে পেতাম স্যারের কোমল হাত।
সালাম জানাই সহস্রবার আমার যিনি গুরু
তার কাছেই হয়েছিল শিক্ষাজীবন শুরু।
নগরবাউল জেমসের অসম্ভব জনপ্রিয় এই গানটা আমাদের প্রথমজীবনের প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে কে স্মরণ করে।
আমাদের সকলেরই আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরুর সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার পাই কয়েকজন মানুষকে। যারা একাধারে তখন আমাদের অভিভাবক, শিক্ষাগুরু এবং জীবনকে গড়ে তোলার কারিগর হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাদেরও রাজনৈতিক আদর্শগত পরিচয় থাকে। তবে তা সুপ্ত থাকে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে আমরা উচ্চ বিদ্যালয়. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অতিক্রম করলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের মত দরদী আর সত্যবাদী শিক্ষাগুরু পাইনা। পাওয়া সম্ভবও নয়।
কিন্তু সেই সব মাটির মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদেরকে গতকাল শাহবাগে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়ে এবং গরম পানি ছিটিয়ে যেভাবে লাঞ্ছিত করেছে তা কি কোন সভ্য দেশে হতে পারে? যে পুলিশ এসব অপকর্ম ও গর্হিত কাজ করেছে তারাও জীবনের প্রথম বেলায় এমন কোন শিক্ষাগুরুর কাছেই শিক্ষাজীবন শুরু করেছিল। তারাও আমাদের মতোই শিক্ষকদেরকে দেখলেই হাত তুলে সালাম দিত, শ্রদ্ধা করত। আজ যখন পেটের দায়ে, চলতে নাপেরে এই শিক্ষকরা দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে যাচ্ছিল তখন কোন অশুভ শক্তির ইশারায় তাদের উপর হামলা চালানো হল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সহ দেশের সকল কার্যালয়ই শিক্ষকদের মর্যাদার কাছে নস্যি তা তো সর্বজনবিদিত। আমাদের সরকারের কর্তারা আর এই পুলিশরা হয়ত কাদের নেওয়াজের সেই কবিতাটা পড়েনি। (বাদশাহ আলমগীর/ কুমারে তাহার পড়ারইত এক মৌলভী দিল্লীর...)।
এইসব শিক্ষকদের আন্দালনের ফলাফল হয়ত অন্যান্য আন্দোলনের মত মহান মানবতাবাদী মহীয়সী! শেখ হাসিনার কোন এক ঘোষণায় শেষ হবে। বিশ্ব বিজয়ের মত হাসিনা হাসিমুখে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের যাবতীয় কৃতিত্ত্ব নেবে। ( এমনকি এজন্য তাকে জাতয়ি ষ্টেডিয়ামগুলোর বারোটা বাজিয়ে ৪/৫ বার সংবর্ধনা দেয়া হতেও পারে কিংবা তার তোষামোদকারীরা নোবেল চাই বলে প্রলাপও বকতে পারে)। কিন্তু এই সব মহান মানুষদের সাথে যে ব্যব্হার করা হল তার কিছুই হবেনা।
সরকার কি পারতনা আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ লেলিয়ে না দিয়ে আন্দোলনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে?
আন্দোলনরত এই শিক্ষকদেরকে যথাযথ মর্যাদার সাথে তাদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাসসহ প্রক্রিয়া শুরু করা সরকারের আশু কর্তব্য।