গত সপ্তাহে আমার একটা বন্ধু মা হয়েছে। ওকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে চিনি। কিন্তু কোন দিন ওকে এত আনন্দিত হতে দেখেনি। ও আমাকে বলে যে, দোস্ত আমার মেয়ের গায়ের গন্ধ আমি যদি গায়ে মাখতে পারতাম! মা যখন তার নিজের অংশকে কোলে নেয় তখন তার যে অসাধারণ অনুভূতি হয় তা আর একবার আমি বুঝতে পারলাম আমার বন্ধুটাকে দেখে।
আমি আমার মায়ের প্রথম সন্তান। আমার জন্মের সময় ডাক্তার বলেছিলেন, যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে। টানা ২৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আম্মু আমাকে জন্ম দিয়েছিল। আমার জন্মের পরও তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল আরও ১৬ দিন। এই পরিমানে রক্ত দেয়া লাগছিল যে বাইরে থেকে রক্ত কিনতে হয়েছিল। এই সব কথাই আমার বাবার মুখে শোনা। আম্মু আমাকে শুধু এতটুকু বলে যে, সব কষ্ট মুছে গেল যখন তোমাকে কোলে নিলাম।
একটু যখন বড় হলাম তখন বুঝলাম আমার মায়ের পৃথিবীটা আসলে আমার চারপাশে ঘুরছে। আমার খাওয়া, আমার স্কুল, আমার টিচার, আমার পড়া শুধু আমি আর আমি। সারাক্ষন আম্মু আমার সাথে, ঘুম ভাঙ্গা থেকে ঘুমানো পর্যন্ত। কখনো আদর, কখনো শাসন, কখনো বা অভিমান।
আমি যখন কলেজে পড়ি তখন আমার পক্স হল। সেই কয়েকটা দিন সারাক্ষণ আম্মু আমার পাশে বসে থাকল আর আল্লাহ্র কাছে মিনতি করতে লাগল, হে আল্লাহ্ তুমি এই কষ্ট থেকে আমার মেয়েকে মুক্তি দাও, ওর পরিবর্তে তুমি আমাকে এই কষ্ট দাও। আমি চেতনা অচেতনার মাঝে আমার মায়ের ব্যথায় কাতর মুখটা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম।
জার্মানিতে যাওয়ার দিন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। ভেতরটা ভীষণ শূন্য লাগছিল। ফ্লাইটে বসে বার বার চোখ মুছছিলাম। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু কাঁদতে পারছিলাম না। সেবারই প্রথম মা দিবসে মায়ের জন্য গিফট কিনেছিলাম। পরে শুনলাম যতদিন আমি কাছে ছিলাম না আমার মা নাকি বার বার ঐ গিফটের প্যাকেট খুলে খুলে দেখত আর বলত এইখানে আমার মেয়ের ছোঁয়া আছে। কত ভালবাসা!
গত বছর মা দিবসে আম্মুর জন্য একটা ঘড়ি পেইন্ট করেছিলাম। আমার মা আজো প্রতিদিন সেই ঘড়িতে সময় দেখে। আজো সকালবেলা ডিম খেতে না চাইলে বকা দেয় সেই ছোটবেলার মত। আজো আমি একটু হাঁচি দিলে তার চিন্তার শেষ থাকে না। আজো যদি কখনো খেতে ইচ্ছে না করে তাহলে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। আজো রাতেরবেলা ঘুম থেকে উঠে এসে আমার গায়ে চাদর তুলে দেয়। ঘড়ি তার নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে, সময় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজো আমার মায়ের কাছে আমি সেই ছোট্ট আমিই আছি। মাগো তোমায় অনেক ভালবাসি............
"মায়ের মত আপন কেহ নাই রে মায়ের মত আপন কেহ নাই
মা জননী নাইরে যাহার ত্রিভুবনে তাহার কেহই নাইরে"