আজ সারাদিন টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। ক্রয়ডনের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আমি স্মৃতির অলিতে গলিতে।
...............
ছোট্ট আমি বারান্দায় দাড়িয়ে আমার বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। বাবা অফিস থেকে এসে গল্প শোনাবে বলেছে। ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে তাই মামনি মানা করেছে বারান্দায় যেতে। কিন্তু বারান্দায় না গেলে আমি দেখব কিভাবে বাবা এলো কিনা? মামনিটা না মাঝে মাঝে এমন বোকার মত কথা বলে!
...............
স্কুল থেকে এসে বারান্দায় বসে আছি আমি। আজ মনটা ভীষণ খারাপ। মিড টার্ম পরীক্ষার খাতা দিয়েছে আর বলেছে গার্ডিয়ানকে দিয়ে সিগনেচার করিয়ে নিতে। কিন্তু আমার মার্কস ভালো আসেনি তাই মামনির বকা খাওয়ার ভয়ে মনটা দুরু দুরু করছে। একটু পরে মামনি বারান্দায় এসে বলল কি হয়েছে এভাবে বসে আছ কেন, বৃষ্টির ছাঁট আসছে দেখছ না? আমার মুখ দেখেই হয়ত মামনি সবকিছু বুঝে ফেলেছে। বলল মার্কস খারাপ এসেছে তা নিয়ে মন খারাপ করার কি আছে? আগামী বার আরও ভালো করে পড়াশুনা কোর। ওমনি সব ভয় কেটে গেল। মামনিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, থ্যাঙ্ক ইউ মামনি। মামনিও হাসতে হাসতে বলল পাগল মেয়ে, চলো ভাত খাইয়ে দেই।
...............
আমার পড়ার টেবিলে মাথা রেখে আকাশ দেখছি আমি। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আকাশ ফুটো হয়ে গেছে। একটা গাছে দুটা কাক বসে ভিজছে। মামনির খিচুড়ি রান্নার গন্ধ আসছে। আমার ছোট ভাই আমাকে এসে বলল, আপু বারান্দায় বৃষ্টি আসছে। আসো বৃষ্টি ধরি। আমারও খুব যেতে ইচ্ছা করছিল তবু মামনির বকার ভয়ে ওকে মানা করলাম। কিন্তু ও খুব জোরাজুরি করতে লাগল। চলো চলো বলতেই থাকল। বাধ্য হয়ে গেলাম। মামনি কিভাবে যেন টের পেয়ে গেল যে আমরা বারান্দায় ভিজছি। একটু পর পিছনে তাকিয়ে দেখি মামনি দাড়িয়ে আছে। আমরা দুজন ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি আর তখনই রান্না ঘরে কি যেন একটা পড়ার শব্দ হল। মামনি দৌড়ে গেল দেখার জন্য। আমরা দুজনও এক দৌড়ে যার যার রুমে। একটু পর খালা এসে বলল, আপামনি এবার তোমারে বাঁচায় দিলাম কিন্তু আর বারান্দায় যাইও না।
...............
অন্ধকার ঘরে বসে আছি আমি। বাইরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ হচ্ছে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। আজকে স্যারের বাসায় ...... ছেলেটা সবার সামনে আমাকে আই লাইক ইউ বলেছে। ইচ্ছে হচ্ছিল কিছু বলি কিন্তু এত লজ্জা লাগছিল যে কিছুই বলতে পারলাম না। কাল নিশ্চিয় সবাই এই নিয়ে আমাকে অনেক টিজ করবে। উফ কি লজ্জা!
...............
আমার বন্ধু জয়া আর আমি ছাদে বসে আছি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কথা বলছি না। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না। কাল জয়ার ফ্লাইট। ওরা সবাই অ্যামেরিকা চলে যাচ্ছে। একটু পর খালা এসে বলল জয়াপু তোমাকে নিতে এসেছে। বৃষ্টির কারনেই হয়ত ঝাপসা দেখছি চোখে। ওর মুখটাও ঠিকমত দেখতে পাচ্ছি না। ইচ্ছে হচ্ছিল খুব জড়িয়ে ধরি, ধরা হল না। ও চলে গেল!
..............
রিক্সার হুড ফেলে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি আমি, মাঝে মাঝে আকাশ দেখছি। হঠাৎ একটা শব্দ হল। তাকিয়ে দেখি একটা হোন্ডা আর একটা গাড়ী মুখোমুখি দাড়িয়ে। গাড়ী থেকে একজন বের হয়ে হোন্ডায় বসা ছেলেটাকে নানা রকম কুৎসিত গালি গালাজ করছে। কিন্তু ছেলেটা তা শুনছে বলে মনে হল না। হেলমেটের কাঁচ তুলে সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য শুধু দেখলাম সেই চোখ!
..............
লালমাটিয়ার রাস্তায় বন্ধুরা সবাই মিলে টিপ টিপ বৃষ্টিতে হাঁটছি। আমাদের পেছন পেছন হাঁটছে সামনের মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র। টুকরো টুকরো দু একটা কথা ভেসে আসছে পেছন থেকে। আমরাও একটু একটু হাসছি।
...............
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্মৃতির ক্যানভাস থেকে মন চলে এলো বর্তমানের দৃশ্যপটে। হ্যাঁ, মামনি এই তো এসে পড়েছি।