প্রতিদান – জসীমউদ্দীন
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী;
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর ।
আমার একুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;
সে মোরে দিয়েছে বিষ ভরা বান,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান;
কাটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,
আপন করিতে কাদিঁয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর ।
মোর বুকে যেবা কবর বেধেছে আমি তার বুক ভরি,
রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি।
যে মুখে সে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে সখী, তারি মুখ খানি,
কত ঠাই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর,
আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর ।
এটা শ্রদ্ধেয় কবি জসীমউদ্দীনের একটি প্রেমের কবিতা। যা বাংলাদেশের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বইয়ে আছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সপ্তম শ্রেণীর কিশোর-কিশোরীদের পাঠ্য হিসেবে কি করে এমন একটা প্রেমের কবিতা চয়ন করা হইল? তাছাড়া ছোট বাচ্চাদের এইরকম একটা প্রেমের কবিতা পড়তে দিয়ে আমাদের বিজ্ঞ সুশীল সমাজ এই ছোট্ট কোমল মনগুলোকে কি বোঝাতে চাইছেন তাও আমার বোঝার আওতার বাইরে।
কেউ যদি বলেন যে এটা প্রেমের কবিতা না তাহলে আমি তার/তাদের কাছে কিছু উত্তর জানতে চাই-
১। “পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি”- মজনু ছাড়া আর কে, কবে, কোথায়, কার জন্য পথে পথে ঘুরেছে দয়া করে বলবেন কি?
২। “দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর”- প্রেমিক প্রেমিকা ছাড়া আসলেই কি কেউ কারো কথা ভেবে রাত জাগে কিনা তারও কিছু নমুনা জানতে চাই বৈকি?
৩। “রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি”- সোহাগ জড়ান ফুল প্রেম ছাড়া আর কোন কোন সম্পর্কে ধরা যায় তাও জানার প্রয়োজন বোধ করছি?
এই কবিতাটা কি কোনভাবে মা, বাবা, ভাই, বোন বা অন্য কোন রক্ত সম্পর্কের কথা বলে। যদি বলে তাহলে তাও আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন দয়া করে।
আমি তো শুধু তিনটা লাইনকে উদাহরণ হিসেবে দেখালাম। এভাবে যদি ধরে ধরে প্রতিটা লাইনের বিশ্লেষণ করা যায় তো দেখা যাবে বুক ভরা হাহাকার নিয়ে ঘুরে বেড়ান এক উদ্ভ্রান্ত প্রেমিকের কথাই এখানে বলা হয়েছে। অথচ বাচ্চাদের পড়ানোর সময় একে নানাভাবে মহত্ত্বের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের এরকম একটা প্রেম ভিত্তিক বিরহের কবিতা পড়িয়ে কি প্রেমের জন্য বুক ভরা আকুলতা/ব্যকুলতাই শেখানো হচ্ছে না?
বিঃদ্রঃ "তৃষিত তিমীর" নামের অ্যালবামে এই কবিতার আবৃতি শুনতে পারবেন। ঐ এলবামের আবৃতিকার ছিলেন মেহেদী হাসান।