সবার জীবনেই বন্ধু থাকে। সাধারণত মেয়েদের মেয়ের সাথে এবং ছেলেদের ছেলের সাথে বন্ধুত্বটা গভীর হয়। এর অবশ্য কারণও আছে। আমরা সাউথ এশিয়ানরা ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বকে সহজভাবে নিতে পারি না। আমাদের মনে হয় এটা শুধু বন্ধুত্বই তো নাকি কোন কিন্তু আছে। যাই হোক কিছু বন্ধু থাকে লেনদেনের, তুমি আমাকে নোট দেবে আমি তোমাকে নোট দেব এই ধরণের। কিছু বন্ধু থাকে বিপদের বন্ধু, অর্থাৎ কেবল বিপদে পড়লেই তাদের কথা মনে হয়। দোস্ত বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে। আমি আমার অ্যাসাইনমেন্ট বাসায় ফেলে এসেছি। তুই কি একটু তোর পেপারটা দিবি? তোরটা পুরোটা কপি করব না। আমার কিছু মনে আছে আর বাকীটা তোরটা দেখে লিখব। আর কিছু বন্ধু থাকে সত্যিকার বন্ধু, যেখানেই যায় একসাথে। ক্যান্টিনে একসাথে আবার গ্রুপ ডিসকাশনেও একসাথে। কিন্তু এমন বন্ধুদের মাঝেও প্রতিযোগিতা থাকে। ও লিনিয়ার অ্যালজেব্রায় এ+ পেয়েছে আমাকেও ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসে এ+ পেতে হবে।
শুধু কিছু কিছু বন্ধু থাকে যে বন্ধু কোন ক্যাটাগরিতেই পড়ে না, এমনকি ছেলে মেয়ের ক্যাটাগরিতেও না। তেমনই একটা বন্ধু ছিলে তুমি আমার। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যে শুধুই বন্ধু হতে পারে সেটা তুমিই প্রথম প্রমাণ করে দিলে। সেমিস্টারের মাঝখানে অন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে আসলে তুমি। প্রোগ্রামিং ক্লাসে জাভার কোডগুলো এমন গড়গড় করে বলে দিতে লাগলে যে আমরা সবাই হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকলাম। আবার সেই তুমিই যখন ক্লাসমেটের নকল নিজের বলে দাবি করে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে গেলে তখন মনে হল তুমি একটা গাধা কারণ সবাই জানত কাজটা কে করেছে। গ্রুপ ডিসকাশনে যখন স্যার তোমাকে আমাদের দলে ফেললেন তখন খুব রাগ হল কারণ একে তো তুমি আতেল তার উপরে গাধা, এই দুই কোয়ালিটি একসাথে সহ্য করা খুবই কঠিন। কিন্তু গ্রুপ ডিসকাশনেই তুমি প্রমাণ করে দিলে যে কত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী তুমি। ধীরে ধীরে বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা। কত সহজেই তুমি বুঝে নিতে আমার না বলা কথাগুলোও। তুমি আসে পাশে থাকলে আমি নিশ্চিন্ত বোধ করতাম। কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। তারপর একদিন দুজনেই মাস্টার্সের জন্য নানা দেশের নানা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করলাম। আমি চলে গেলাম জার্মানিতে আর তুমি অ্যামেরিকায়।
দূরে থেকেও টেকনোলজির কারণে তুমি সবসময়ই আমার কাছে ছিলে। তুমি ডায়রি লিখতে পছন্দ করতে আর চিঠিও। মাঝে মাঝেই তোমার টুকরো টুকরো চিঠি আমাকে মুগ্ধ করে দিত।
সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও তোমার আমার সাথে কথা বলা লাগতই। কত কথা দুজনের। সারাদিনে কি কি করলাম, নতুন কি দেখলাম।
অ্যামেরিকা গিয়েই তুমি আবিষ্কার করলে যে তোমার জাপানী মেয়ে খুব ভালো লাগে। ওরা নাকি ছোট ছোট পুতুলের মত দেখতে।
ইউজ্যাবেলিটি ইঞ্জিনিয়ারিঙে আমি যখন ইউজ্যাবেলিটি টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত তখন তুমি ব্যস্ত নিউ অরলেন্সে তোমার সেমিনার নিয়ে। তোমার সাথে কথা তো হচ্ছেই না বরং তোমার জন্মদিনে আমার দেয়া কার্ড পেয়েছ না পাওনি তাও জানাওনি বলে আমি যখন গাল ফুলিয়েছি তখনই তোমার ছোট্ট একটা নোট আমার সব মান ভাঙ্গিয়ে দিল।
আবার একবার তোমার জন্মদিন এলো। কোথায় তুমি বন্ধু আমার? কেন হারিয়ে গেলে এতদূরে যেখান থেকে আর কখনোই ফিরে আসবে না তুমি। আজো তোমার কথা মনে করে চুপটি করে কিছুক্ষন কেঁদে নেই আমি যদি মন হালকা হয় এই ভেবে কিন্তু জানো যতই কাঁদি না কেন মন হালকা হয়ই না। মনে আছে আমার এক সপ্তাহ পড়ে তোমার ফ্লাইট ছিল। আমাকে এয়ারপোর্টে সি অফ করতে এসে তুমি বলেছিলে যে আমি যেন তোমাকে না ভুলি। যোগাযোগটা যেন থাকে। দুষ্টুমি করে গানও গেয়েছিলে ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’। আচ্ছা আকাশের ঠিকানাটা তো বললে না। তাহলে হয়ত আমি এখন তোমাকে চিঠি লিখতে পারতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০