আদিবাসী দিবস পালনে বাধার অভিযোগ ঃ কি ছিলো সেই চিঠিতে....
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৯ আগষ্ট সাড়ম্বরে দেশের বিভিন্নস্থানে পালিত হয়ে গেলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। দেশের কোথাও এই দিবসের অনুষ্ঠানে সরকার থেকে কোন ধরণের বাধা প্রদান বা অসহযোগিতার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু দিবসটিকে সামনে রেখে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচী এবং দিবসের বিভিন্ন আলোচনায় সরকারী একটি পরিপত্র কে সামনে এনে দিবসটি পালনে সরকারী পর্যায় থেকে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই। কিন্তু বাস্তবে দেশের কোথাও এই দিবসের কোন কর্মসূচীতে সরকারী পর্যায় থেকে বাধা দেয়ার ঘটনা না ঘটায়, কি ছিলো সরকারী সেই পরিপত্রে এনিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে সচেতন মহলে।
একটি বিশেষ সূত্র থেকে ওই পরিপত্রটি সংগ্রহ করে দেখা গেছে,ওই পরিপত্রের কোথাও আদিবাসী দিবসের কর্মসূচীতে বাধা দেয়ার কোন কথাই লেখা নেই। ২০১২ সালের ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকদের কাছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব ডা. মোঃ সারোয়ার বারী সাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়,যাতে ওই পরিপত্রটি ( যার স্মারক নং-স্বম(রাজ-২)/গোপ্র/-বিবিধ/৪-৬/২০১১-৮৮১) নিজ জেলার উপজেলা পরিষদগুলোর কাছে নির্দেশনা হিসেবে প্রদান করার কথা নির্দেশক্রমে বলা হয়। চিঠিটির সূত্র হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের গোয়েন্দা শাখার কথা বলা হয়েছিলো। এই চিঠির সূত্রেই জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট চিঠিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছে প্রেরণ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের চিঠি ঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ এর উপসচিব ড. শাহিদা আকতার সাক্ষরিত চিঠিটিতে (৪৬.০৪৫.১০.০৪.০০৪.২০১১-৫৪৬) একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিবেদনের উদ্ধৃতাংশ প্রেরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব,পুলিশের আইজিপি এবং ডিএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। ২০১১ সালে আদিবাসী দিবস শেষ হওয়ার মাত্র দুইদিন পরে এই চিঠিটি পাঠানো হয় ১১ আগষ্ট’২০১১ তারিখে ।
কি ছিলো সেই নির্দেশনায় ঃ আদিবাসী দিবস উদযাপন প্রসঙ্গে সেই চিঠি বা নির্দেশনার শুরতেই বলা হয়- ‘১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে ৯ আগষ্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ওই দিদবসটি পালনের চর্চা শুরু হয়েছে। আদিবাসী দিবসে মেলা,সঙ্গীতানুষ্ঠান,সেমিনার,র্যালী এবং অন্যান্য অনুষ্টান আয়োজন করা হয়।’ জাতীয় সংসদের ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে ‘নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল-২০০৯’ জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার তথ্য জানিয়ে আরো বলা হয়,‘২৬ জুলাই ২০১১ মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার প্রতিনিধি ও কূটনীতিক,ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের হাই কমিশনার,রাষ্ট্রদূতদের এই বিষয়ে ব্রিফিং করেন। উক্ত ব্রিফিং-এ তিনি তিন পার্বত্য জেলার উপজাতীয়রা যে আদিবাসী নয়,তা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন।’
এরপর ওই চিঠিতে যেসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়,তা হলো-
১.আদিবাসী বিষয়ে সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যেনো সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় গৃহীত নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন বক্তব্য প্রদান না করেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজণীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
২.বিশ্ব আদিবাসী দিবসে সরকারের পক্ষ থেকে যেনো কোন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা না হয়,সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে।
৩. বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই এই মর্মে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৪.আগষ্ট মাস,জাতীয়ভাবে স্বীকৃত শোকের মাস,এই মাসে আদিবাসী দিবসের নামে অপ্রয়োজনীয় আনন্দ অনুষ্ঠান পরিহার বাঞ্চনীয়।
চিঠির কোথাও আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ করা বা করতে না দেয়ার কথা বলা না হলেও এই নিয়ে ব্যাপক প্রচারনার ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাস্তবে আদিবাসী দিবস পালনে কোথাও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে,এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান যেনো শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হতে পারে সেই জন্য বাঙালীভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচীও পুলিশী বাধার কারণে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘন্টা পরে আদিবাসী দিবসের সকল কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর শুরু হয়। কেবল রাঙামাটিই নয়,তিন পার্বত্য জেলা সহ সারাদেশেই আদিবাসী দিবসের সকল আয়োজন নির্বিঘেœই শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই আলোচকরা তাদের বক্তব্যে সরকার আদিবাসী দিবস পালনে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ এনেছে। এমনিক আদিবাসী নেতৃবৃন্দও সাংবাদিকদের কাছে সরকার আদিবাসী দিবসের কর্মসূচীতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন,আদিবাসী দিবস পালনে বাধা দেয়ার কোন নির্দেশনাই সরকার থেকে ছিলোনা। আর বাধা দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেন,এটা অবিশ্বাস্য যে,সরকার একটি দিবস পালনের কর্মসূচীতে বাধা দিবে এবং সরকার তা দেয়ওনি।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান জানিয়েছেন,আদিবাসী দিবস পালনে বাধা তো দূরের কথা আমরা বরং সহযোগিতাই করেছি। সমঅধিকার কে নির্ধারিত সময়ে কর্মসূচী করতে দেইনি আমরা এবং আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানকে নির্বিঘœ করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।