আহাজারির বরকল,বেদনার বরকল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এখনো ঘুমঘোরে দূরঅতীতে ফিরে যান আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৮৪ সালের ৩১ মে দিনটি যেনো আবার ফিরে এসেছে তার জীবনে। সেইদিন এক রাতে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডার বরকল উপজেলার ভুষণছড়া গ্রামে একরাতে হত্যা করেছিলো প্রায় ৪৭১জন পূণর্বাসিত বাঙালিকে। সেই কালোরাতে কৃষিজীবি আব্দুর রাজ্জাক হারিয়ে ছিলেন তার স্ত্রী আর তিন শিশু সন্তানকে। ২৮ বছর পর সেই স্মৃতি আবার যেনো ফিরে এসেছে আব্দুর রাজ্জাকের জীবনে। সেই সময় স্ত্রী, সন্তান হারিয়ে আবার বিয়ে করেছিলেন তিনি। তার নতুন সংসারের ছোট সন্তান এবং স্থানীয় জুনোপহর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র জাহিদুর রহমানকে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় তবলাবাগে মাছ ধরার সময় অপহরণ করেছে দুস্কৃতকারীরা। অপহরণের পর গত এক মাসেও কোন খবর নেই তার। গত পহেলা জানুয়ারি আরো অনেকের মতো রাঙামাটি এসেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। চোখের জল তার বাধ মানছেনা কিছুতেই।
শুধু কি আব্দুর রাজ্জাক। মাত্র ছয়মাস বয়সী শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন অপহৃত রমজান আলীর স্ত্রী সাফিয়া বেগম। মা আর অবুঝ সন্তানের অঝোড় কান্না উপস্থিত অনেকের চোখেই জল এনেছে। আরেক অপহৃত ইউসুফ আলীর স্ত্রী রেশমা বেগম মনির কোলে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানটি অজানা কারণে ‘বাবা..বাবা..’ বলে কেঁদেই যাচ্ছিলো। আর অপহৃত মোতালেবের মা রানী বেগম আর রমজানের মা মরিয়মের গগণবিদারী আর্তচিৎকার পুরো পরিবেশকেই ভারি করে তুলেছিলো। আরেক অপহৃত আজহার আলীর চাচা মোঃ আরফান আলীও ভাতিজার জন্য হাহাকার করছিলেন।
অপহৃতদের স্বজনদের বক্তব্য, এখন আর কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তাদের। তারা চান যেকোন শর্তের বিনিময়ে তাদের স্বামী-সন্তান ফিরে আসুক। প্রয়োজনে আর কোনদিন ওই এলাকায় মাছ ধরতে যাবেনা তারা, প্রত্যাহার করে নিবে দায়ের করা মামলাও।
কি হয়েছিলো সেদিন ঃ ৪ ডিসেম্বর রাঙামাটির ভারতীয় সীমান্তবর্তী বরকল উপজেলার বড় হরিণা এলাকার তবলাবাগ এলাকায় কর্ণফুলি নদী ও ঠেগাখালের সংযোগস্থলে মাছ ধরতে যায় ভূষণছড়া এলাকার বাস্ন্দিা ১০ বাঙালি জেলে। রাতে ইঞ্জিন চালিত বোটযোগে এসে একদল সশস্ত্র পাহাড়ি যুবক মাছ ধরার চাঁদা পরিশোধ না করার অভিযোগে পাঁচ জেলেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ সহজেলেদের। অপহরণের জন্য অপহৃতদের স্বজনরা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কে দায়ী করে আসছিলো।
প্রশাসনিক উদ্যোগ ঃ অপহরণের পরপরই স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠে। পুলিশ-বিজিবি এবং সেনাবাহিনী বিভিন্নভাবে অভিযান ও তৎপরতাও চালায়। বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাহাড়ি সামাজিক নেতাদের। কিন্তু নানাভাবে দেনদরবার করেও ব্যর্থ হন তারা। একাধিকবার বরকল সফর করে স্থানীয় বাঙালিদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে অপহৃতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা জানিয়ে আসেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমনকি অপহরণ ঘটনার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন হরতাল ঘোষণা দিলেও গত ১৮ ডিসেম্বর তারিখের এই হরতাল পালন করতে দেয়নি প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা ও স¤প্রীতি রক্ষার প্রয়োজনে। কিন্তু এই সম্প্রীতির স্বার্থে আর কত আব্দুর রাজ্জাকরা নিজেদের স্ত্রী-সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেড়াবে? রানী বেগম আর মরিয়মরা আর কতদিন হারানো সন্তানের জন্য কেঁদে ফিরবে পথে পথে ? এ দায় কার ? সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব কি শুধু এইসব হতভাগ্যদের ? কথিত অপহরণকারীরা কি রাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী ?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।