somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অামার পয়লা ক্লাসে

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেহরাব বাদে সকল চরিত্র কাল্পনিক.
(৭ম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয় ১৭ আগস্ট। ব্যাস্ততার কারনে আমাদের স্মরণিয় দিবসের আগেই , এই পোষ্ট টা দিলাম।৭ম ব্যাচের সবাইকে অগ্রিম শুভেচ্ছা সহ)
শত চেষ্টা করেও মানুষ অনেক “কেন?” এর উত্তর জানতে পারেনা। আমি যেমন সিনেমা হলে ঝাড়া তিন ঘন্টা ব্যয় করেও বুঝতে পারিনি,” রাণি কেন ডাকাত?” আর “স্বামী কেন আসামি?” । যেমন টা জানতে পারি নি, ভাল ভাবে পরিচয় হবার আগেই বাংলা স্যার আমাদের প্রতি কেন বিরক্ত ছিলেন?
ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বাদ দিলে ভার্সিটি জীবনে প্রথম সেমিস্টারের প্রথম ক্লাস বাংলা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবণে প্রথম ক্লাস হবে আনন্দসুচক আর স্মরণীয়।প্রথম ক্লাস নিয়ে এতটুকু উত্তেজনাকে নিশ্চয়ই আপনারা বাতুলতা বলবেন না!প্রথম ক্লাসে কেঊ কাউকে তেমন ভাবে চিনিনা। যতটুক পরিচয় ঐ ওরিয়েন্টশন ক্লাস বাবদেই। একজন কে আরেকজন আপনি বলে সম্বোধন করি।প্রথমে, ক্লাসে এসেই বাংলা স্যার বিনা উস্কানিতে হম্বি তম্বি শুরু করলেন। আমাদের নাম আর কোন কলেজ থেকে পাশ করছি জেনেই, এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘোষনা দিলেন, তোমারা বাংলা টা একদমই জানোনা।- আমাদের সাথে কথা না বলেই উনি দাবী করলেন আমরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে কোন পড়া শুনা করে আসোনি (অমূলক নয় অবশ্য)।সর্দি ভরা নাকে, ফ্যাচ ফ্যাচ,ঘ্যাত ঘুত এসকল শব্দ বাদ দিলে স্যারের পুরো ক্লাস ছিলো আমাদের প্রতি অপমান সূচক আক্রমণ দিয়ে ঠাসা।
বাঘ যখন হরিণের পালকে তাড়া করে তখন সবচাইতে মোটা হরিণ টাকে টার্গেট করে, মোটা বলে সহজেই হাপিয়ে যাবে আর তখন ধরাটাও সোজা হয়ে যায়। বাংলা স্যার ক্লাসে এসেই নিজের এসেই ক্লাসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আমাদের মাঝে সবচাইতে নীরিহ চেহারার( বস্তুতঃআমাদের ক্লাসে কেঊই নিরীহ ছিলনা) আলী আহমেদ কে অবজ্ঞা ভরে জিজ্ঞেস করলো, এইচ এস সি তে হৈমন্তি পড়েছ?
আলী আহমেদ ভয়ে কাঠ । বেচারির প্রথম ক্লাস, মাথা উঁচু নীচু করে বলল, জ্বি স্যার ,পড়েছি।
হৈমন্তী গল্প টা কোন বই থেকে নেয়া হয়েছিল?
আলী আহমেদ এক রাশ আতংক নিয়ে কাপা কাপা গলায় জানালো, দুঃখিত স্যার জানা নেই ।
এমন সময় পেছন সারির কে একজন চাপা গলায় বলে উঠলো- পপি গাইড থেকে নেয়া হয়েছিল। ভাগ্যিস , স্যার শুনতে পাননি।
স্যার যেন জানতেন এরকমই হবে, বেশ অবজ্ঞা নিয়ে বলল, কিভাবে যে এরা পাশ করে আর ভার্সিটি তে আসে! বাংলায় পাশ করেছ কিভাবে?
আলি আহমেদ বলল স্যার পাঞ্জেরি গাইড পরে।
স্যার ঠিক বুঝতে পারলেন না নিরীহ মুখে এটা নিরেট পাঞ্চ ছিল নাকি আলি আহমেদের সরলতা প্রসূত উত্তর(সরলতার প্রশ্নই আসেনা)।
প্রসঙ্গ পাল্টে, ক্লাসের কেউ বলতে পারবে কোন বই থেকে নেয়া।
তপু জানালো, গল্পগুচ্ছ। ক্লাসের কেঊ এর উত্তর জানাতে বেশ হতাশ হয়ে পরলেন স্যার। এবার আক্রমণের লাইন বদলালেন। ক্লাসের কেউ কি বলতে পারবে, রবীন্দ্রনাথের বাড়ি কোথায়।
আড়াল থেকে মুখ আড়াল করে জাবির জানাল, দিরাই, সুনামগঞ্জ।
স্যার বাক্য হারা! কি পড়াবে এ অকাট মূর্খ দের! রবি ঠাকুর এর বাড়ি কোথায় এরা এটাও জানেনা!

এবার হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই ছেলে তুমিই তো বলেছ দিরাই তাই না?
আমার এবার অবাক হবার পালা
আমি জানালাম স্যার আমি বলিনি।
তুমিই বলেছ! বেয়াদপ ফাজিল!জঞ্জাল।
আমার অসহায়ত্বের ঘোর কাটতে না কাটতেই স্যারের ধমক সহকারে আবার ও প্রশ্ন-
জীবনে কখনো কোন উপন্যাস পড়েছ? ৫টা ঊপন্যাসের নাম বলতে পারবে?
এত সহজ প্রশ্ন আসবে আমি আশাও করিনি।আমি বিগলিত হয়ে জানালাম জ্বি স্যার,
বল দেখি?
আমি দ্রুততার সাথে শুরু করলাম
হ্যালো সোহানা,আই লাভ ইউ ম্যান, নকল রাণা,আগ্নি পুরুষ ১,২, চারিদিকে শত্রু১,২!
স্যারের হার্ট এটাক হবার পালা।নিজেকে কোন রকমে সামলে, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো উপন্যাস?
আমি ততধিক গাম্ভীর্যের সাথে জানালাম জ্বি স্যার মাসুদ রাণা সিরিজের থ্রিলার উপন্যাস।
এত গেল লিখিত বাংলা স্যারের কথা। এবার আসা যাক ব্যাবহারিক বাংলা স্যারের কথা। ক্লাসে এসে নিজে নিজে কথা বলে চলে যেতেন।সামনের ডেস্কে বসা ক্লাসের একজনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম স্যার ক্লাসে গারগল করছিলেন কেন? ঐ মেয়ে আমাকে জানালো উনি নাকি উচ্চারণ বিধি নিয়ে কথা বলছিলেন। হঠাৎ একদিন জানালেন আজকে বাংলা ব্যাবহারিক টেস্ট মানে আবৃত্তি পরীক্ষা।আমরা আকাশ থেকে পড়লাম, কোনরকম পূর্বাভাস ছাড়া পরীক্ষা দিবো কিভাবে?।ক্লাসের অধিকাংশই জীবনে কখনই আবৃত্তি করেনি, এমন মানুষজন কে বললেন রবীন্দ্রনাথের বলাকা থেকে আবৃত্তি করতে হবে । আমাদের ক্লাসে সবচাইতে ভাল আবৃত্তি করে লিটন, ও পেল বি প্লাস। আর মেহরাব ভাই পেলেন এ প্লাস!মেহরাব ভাইয়ের আবৃত্তি না বলে রিডিং পড়া বলাই বাঞ্ছনীয়।জামালপুরের আঞ্চলিক টানে বির বির করে কি যেন বলে গেলেন,আমরা কেউই কিছু বুঝতে পারিনি। তবে পুরা কবিতায় একটা লাইন বুঝতে পেরেছিলাম-লাইনটা হলো,স্যার আপনে বিয়া করেন না ক্যান?
রবীন্দ্রনাথ সাহসী পুরুষ ছিলেন, জালিয়ানবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশদের দেয়া নাইট উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
উনি বেঁচে থাকলে এ আবৃত্তি শুনে নোবেল প্রাইজ ও ফিরিয়ে দিলে কেঊ অবাক হতো না। এমনকি নিজেকে কবি বলে অস্বীকার করলেও বিনা ওজরে দেশবাসি মেনে নিতেন।
মেহরাব ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ প্লাস পাবার রহস্য কি?
উনি জানালেন, স্যার হলেন পয়লা নম্বরের বোকা। এক টিকেটে দুই ছবির পোস্টারে স্বল্পবসনা পাত্রপাত্রি দেখে ভেবেছিলেন গরীব মানুষের ঊপর বানানো ছবি!পয়সার অভাবে কাপড় কিনতে পারেনা এমনই জনগোষ্ঠীর উপর এসকল ছবি তৈরি হয়। উনার সহানুভূতিশীল মন গরীবদের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না, তাই প্রতি বৃহস্পতিবার বিডি আর হলে গরিবদের ছবি দেখে গরিবের কষ্ট অনুভব করতে যেতেন।
একদিন, সিনেমা হলে আমার সাথে দেখা। আমি স্যারের ভুলটা ভাঙ্গানোর জন্যে জানালাম যে, স্যার এটা গরীবদের উপর ছবি না । এটা ব্যবহারিক ইংরেজিতে যারা দুর্বল তাদের জন্য এ সকল ছবি বানানো। উনি আমার কথা না শুনেই হল থেকে দৌড় দিয়ে পালিয়েছেন। এর পর থেকে কেন জানি আমাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে যান।
আমার আবৃত্তি শুনে স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মেহরাব তোমাকে কত দিবো?
আমি বললাম এ প্লাস।
৪৫৬ বার পঠিত
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×