১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ বাঁধটি নানাবিধ জন-দুর্দশার সৃষ্টি করেছে।
ব্যাপকভাবে মানব বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফারাক্কা বাঁধটি দিনকে দিন বেশি ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে-
১. ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার প্রবাহ কমে নদীগর্ভের বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে যায়। এতে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির একচেটিয়া চাহিদা তৈরি হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে পানির স্তর নিচে নেমে মরু প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়েছে, গ্রীষ্মে পদ্মা অববাহিকার তাপমাত্রা বেড়েছে এবং পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
মোহনায় স্বাদু পানির চাপ কমে লবণ পানির আগ্রাসন স্থলভাগের প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার ভিতরে চলে এসেছে, এবং সুন্দরবনেরও সমূহ ক্ষতি করেছে।
নদী হত্যা, কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ফারাক্কা বাঁধ আবারও আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচিত হইবার দাবি রাখে। নতজানু সরকার জাতীয় পরিসরে বিষয়টি আলোচনা করতে দেয় না, দ্বিপাক্ষিক মিটিং এরও এজেন্ডায় রাখে না।
২. জলবায়ু পরিবর্তনে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়েও নদীর প্রবাহ কমছে, বিপরীতে বর্ষায় অতিবৃষ্টিতে প্রবাহ বাড়ছে। ফলে বাঁধটি একদিকে শুষ্ক মৌসুমে তীব্র খরা, অন্যদিকে বর্ষায় অতিবন্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
৩. ভারত চুক্তিমতো শুষ্ক মৌসুমে পানি দেয়নি, ২০২৪ সালে চুক্তি থাকার পরেও মাত্র ৩-৫ হাজার কিউসেক পানি এসেছে। অববাহিকার মানুষ বলছেন, 'এত কম পানি তারা জীবনে কখনও দেখেননি'।
৪. গঙ্গা অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য এবং গড় পরিমাণের ভিত্তিতে ফারাক্কা বাঁধটি পরিচালনা করা হয় না, আগে থেকেই অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ার সুযোগ থাকলেও ভারত শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং বাংলাদেশের অবকাঠামো, ফসল এবং লাইভস্টোকের সমূহ ক্ষতি হয়, কোন কোন বছরে যা প্রায় ৫ হাজার কোটিতে পৌঁছায়।
এমতাবস্থায়- ২০২৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে, ফারাক্কা বাঁধ আরো বেশি সমস্যাজনক হয়ে উঠবে। বর্তমান গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তিটি পানির নিশ্চয়তা দেয়নি। ভারত ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে তিস্তা চুক্তি বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে বলে এখানে কয়েকটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে-
ক. নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি কত দ্রুত হবে?
খ. আবারও কি গ্যারান্টি ক্লজহীন একটা সস্তা লোক ভুলানো চুক্তি সাক্ষর হবে যা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবে না!
গ. নাকি নতজানু সরকারের দাসবৃত্তিক আচরণে ভারত তিস্তার মত গঙ্গা পানি চুক্তিও অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখবে!
আন্তর্জাতিক আইনকানুন ও কনভেনশনের তোয়াক্কা না করে ভারত ৫৪টি আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীতে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে বহু নদী হত্যা করেছে, প্রবাহ ধারাকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং একতরফা পানি প্রত্যাহার করেছে। পদ্মা রিভার সিস্টেমের ৮টি বড় নদীর ৫টিতেই ভারত বাঁধ দিয়েছে।
বাংলাদেশের ভূমিকে শুষ্কে মৌসুমে নিষ্ফলা ঊষর করতে এবং বর্ষায় হঠাৎ বন্যায় ভাসিয়ে দিতে ভারতের ক্রমাগত অপচর্চার জবাব গোলাম সরকার দিতে পারছে না। অধিকার আদায়ে মাওলানা ভাসানীর যে লড়াই ছিল সেটা সরকার এবং আমজনতা সবাই ভুলে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪