নির্বাচন কমিশনে পরিচয় লিখেছে মাছ ব্যবসায়ী, চালায় দেশের আইসিটি প্রযুক্তি এসব খাত। দেশ বিদেশের মিডিয়ায় বিদ্যুৎ গ্রিড ঠিক হবার ঘোষণা দেয়! ৬০০ মোবাইল এপ বানাইসে, মগার ৬০০ জন ইউজারও নাই। আইটি খাতের উন্নয়নের নামে করসে কিছু কাঁচের জানালার ঘর, নাম দিসে আইটি ইনকিউবেটর, ভিত্রে মাল ছামানা কিছু নাই। একবার খবরে দেখসি ছাত্রলীগ বিয়ের প্রোগ্রামের স্পেইস ভাড়া দেয়।
কিবোর্ড ব্যবসায়ীকে করসে টেলিকম মন্ত্রী, ১০টা কল করলে অন্তত ৩ টা ড্রপ হয়। বিশ্বের এই যুগে যেখানে কল ড্রপকে জাদুঘরে নেয়া হইসে। গিগাবাইট ইন্টারনেটের যুগে আমাদের পেজই লোড হয়না।
দেশের সব মানুষের টেলিকমের ভয়েস এন্ড ডেটার প্রাইভেসি ভঙ্গ করে আড়িপাতার জন্য বিশাল বিশাল ডেটা সেন্টার বানাইসে, শত শত কোটি বিনিয়োগ। এইডারে লফুল ইন্টারসেপ্ট কয়। কিন্তু এগুলার ইউজার পাসোয়ার্ড নাকি সব ভারতীয় কিংবা চায়নিজদের কাছে, এমন অভিযোগ শুনেছি।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি, আন্তঃ রাষ্ট্রীয় চুক্তির ক্লাসিফাইড পিডিএফ কপি ফোনে ফোনে ঘুরে। নাজুক মামলার সাক্ষী আসামী বাদী-বিবাদী সবার কল রেকর্ড, এসএমএস লগ সাংবাদিকের হাতে।
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে ১৪ কোটি মানুষ, শিল্প ব্ল্যাকআউটে গেছে ৬ ঘণ্টা। সারাবিশ্বের সব বড় বড় নিউজে খরব আসছে। কিন্তু ফেইসবুকে 'প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে' পোষ্ট দেয়ায় রাজবাড়ীর ব্লাড ডোনেশান নিয়ে কাজ করা, হুইল চেয়ার কিনে দেয়া সমাজ কর্মীকে রাতের আঁধারে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মানে ডিজিটাল সিস্টেম টালমাটাল হবে, কিন্তু কিছু কুওয়া যাবি না নে।
বিয়ারটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারে না, এক জালি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে তারা অযোগ্য। শুনেছি মাঝে নাকি প্রায় বছর খানেক লাইসেন্স কার্ড ছাপাতে পারেনি। এনবিয়ার ভ্যাট মেশিন (ইএফডি) কিনেছে, এগুলা ফেইল। ট্যাক্স সিস্টেম আপডেটের জন্য এনবিয়ার ভিয়েত্নামি কোম্পানিকে কাজ দিসে, তারা দেশের করদাতাদের তথ্যভাণ্ডার চুরি করে ভাগসে।
পাস্পোর্ট অফিস ই-পাস্পোর্ট দিতে পারছে না চাহিদামত। বিমানবন্দরে ইপাস্পোর্ট গেট চালু করসে, চালাইতে পারে না। ই-পাস্পোর্ট ই নাই। লাখ লোকের আবেদন পেন্ডিং।
ই-পাস্পোর্ট কি দিবে, নরমালটাই দিতে পারে না। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হইসিল গতবছর। নেদারল্যান্ডের হেগের বাংলাদেশ দুতাবাসে পাস্পোর্ট আবেদন করতে কন্সুলার সেকশনের ভাইয়াকে ফোন দিসি প্রায় ৫ বার। ফোন দিলেই ভদ্রলোক বিব্রত কন্ঠে বলেন ভাইয়া ঢাকার সার্ভার নষ্ট, দেরি হবে। আহারে বেচারা! তিন মাস লাগসিল ২ সপ্তাহের কাজ।
বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারটাকে বদলি করে নিসে এইচআর আর এডমিনে। কারণ হে মন্ত্রীর লবিস্ট, বড় ম্যানাজারের পক্ষের দালাদ, ভারতীয় সাবকনের কথা মত সিস্টেম ডিজাইন করে দিতে চায় না।
১২ বছরের পুরানো বিদ্যুতের স্ক্যাডা (বিদ্যুৎ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেশান ব্যবস্থা), যেটা লোড ট্রিপিং ও জেনারেশন ম্যানেজমেন্ট শতভাগ সঠিক ভাবে করতে পারে না, সময় লাগে। ঢাকার রাস্তার ট্র্যাফিক লাইট গুলা পর্যন্ত অকেজো, আগে সেগুলা জ্বলত-নিভত, যদিও হাতে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল হত। এখন গুলশান-২ ছাড়া কোথাও ঠিকঠাক লাইটই জ্বলে না।
রেলের টিকেট নিয়ে দলীয় দুই কোম্পানি সিএনেস আর সহজের মধ্যে কি মারামারি! এই মারামারি অন্য খাতেও। বিশ্ব ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জালি আইটি কোম্পানিকে দিসে সরকারি কাজের ঠিকাদারি। এদের চরিত্র যেমন নেই, নেই লজ্জাও।
রেল ইস্টিশান কিংবা জংশনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখবেন, এখন লাইন এর শিকল চেঞ্জ ম্যানুয়াল। এখনও দেশের সব স্টেশান সফটওয়্যারে আসেনি বলে অনলাইনে সব টিকেট কাঁটা যায় না। আবার বহুবিধ কোটার পরে অনলাইনে টিকেট আসার ঘন্টা পরেই শেষ। কিন্তু কালোবাজারে টিকেট পাওয়া যায়।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ডিজিটাল করার কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে, এখানে ভুলের লক্ষ লক্ষ অভিযোগ আছে। এনআইডিতে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে খোদ সিইসি বলসেন, ‘ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে, আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। এটা নিয়ে বিপদে পড়ছি। নামের বানানে এটা ওটা মিলছে না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুবান্ধবের ৪০-৫০টা সংশোধন করে দিয়েছি’ (আমাদের সময়, ১৯ জুলাই ২০২২)।
এদিকে প্রায় কোটি নাগরিকের জন্মনিবন্ধনের তথ্য হারিয়ে যাওয়া। ‘ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ কোটি জন্মনিবন্ধন একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানিয়েছেন’ (জনকণ্ঠ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)।
জন্মনিবন্ধনের সিস্টেম নাকি ডিজিটাল, বাস্তবে বিষয়টা হচ্ছে ওয়েব থেকে ফর্ম ডাউনলড করে, হাতে পুরণ করে সিটি কর্পোরেশানের নির্ধারিত অফিসে জমা দেয়া লাগে। এই হল আওয়ামী লিগের 'ডিজিটাল' এর স্টান্ডার্ড। নতুন বাচ্চাদের তারা এভাবে ডিজিটালি স্বাগত জানায়।
মটর গাড়ি বাইকে টেরাকের নম্বর পেল্ট ডিজিটাল, কিন্তু সারাদিন গাড়ির কাগজ পকেটে কাগজ নিয়ে ঘুরা লাগে। হালারা এটার নাম দিসে ডিজিটাল। বিয়ারটিএ অফিসে দেখসি টর্চ লাইট দিয়ে ফিটনেস দেখে। কি দেখে আল্লাহ্ পাক জানেন। বিশ্বে ফিটনেস টেস্ট বা এমওটিতে কি দেখে কখনও নেটে সার্চ করেও দেখেনি। এসব নির্বোধ ব্যবস্থায় সড়কে প্রতিদিন মারা যায় কত মায়ের সন্তান। কত আহাজারি! অর্থনীতির সেকি ক্ষতি।
ডিজিটাল সরকারের সব কারিগরি খাতের অবস্থা তথৈবচ। কত বলবো!
কর্পোরেট ওয়ার্ডে সিইও সিটিও দের একটা কৌশলগত পলিটিক্স আছে এরকম যে, এরা ম্যাসিভ ফান্ড খরচ হয় এমন সিস্টেম আপগ্রেড কৌশলে পিছিয়ে দিয়ে, বিনিয়োগ কম দেখিয়ে কোম্পানির আয় বাড়িয়ে দেখিয়ে, গ্রুপ লেভেলে বড় প্রমোশান নিয়ে আস্তে করে ফুটে যায়। এটা পরবর্তি সিইও সিটিওকে বড় সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিটি কারিগরি খাতে এখন এই দশা। বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট, বিটিয়ারসি, বিয়ারটিএ, এনবিয়ার সব খাতের টেকনিক্যাল সিস্টেম পুরানো। ডিজিটাল এন্ড টেকনিক্যাল ব্যবস্থা টালমাটাল।
দেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় একদল অযোগ্য তোষামুদে দুর্বিত্ত ঢুকে আমাদের তো বটেই, আমাদের সন্তানদেরও সব সম্ভাবনাকে চুরি করে নিয়ে গেছে। এরা একদিকে চুরি করেছে, অন্যদিকে সঠিক জায়গায় সঠিক বিনিয়োগ করে সময়মত সিস্টেম গুলোকে আপডেটেড রাখেনি।
নাম দিসে ডিজিটাল সরকার। প্রিন্টারে ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে স্ক্যান করার নাম ডিজিটাল। বন্দরে, বিয়ারটিএ তে কিছু অটোমেশান করসে, কিন্তু প্রত্যাক্টা জায়গায় ম্যানুয়াল ইনপুট দেয়া যায়!
তদুপরি, বিদ্যমান সিস্টেম গুলার লাইফ সাইকেল এমন সময়ে শেষ হওয়া শুরু হচ্ছে, যখন দেশ আর্থিক সংকটে পড়সে, ফরেন কারেন্সি ব্যাল্যান্স শিটে তীব্র সমস্যা আছে, যখন আমদানি রফতানির ঘাটতি বছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
এমন সময়ে সরকার পরিবর্তন হলে, নতুন সরকার এসে চোখে সরিষা ফুল দেখবে, লোকে বলবে এরা ডিজিটাল বুঝে না। আওয়ামী লীগই ভাল ছিল।
সুসময়ে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অপখাতে খরচ করা হয়েছে, পাচার করা হয়েছে। দরকারের সময় বহু জরুরি ঋণ এখন হয় পাওয়া যাবে না, না হয় বেশি সুদে ও কঠিন শর্তে কারিগরি খাতের ঋণ নিতে হবে।
বর্তমান 'পটেনশিয়াল' চুরি গেলে সেটা না হয় আপনি সয়ে নিলেন, ভবিষ্যত চুরি যে করছেন তার দায় আপনাকে দিতে হবে আপনার বুড়া সময়ে, আর আপনার সন্তানকে।
আসলে আমাদের ভবিষ্যতই চুরি হয়ে গেছে!
কবি তারাপদ রায় এর 'আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে' কবিতা দিয়ে শেষ করি-
আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেবেছিলাম
যার উদ্দেশ্যে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম
গতকাল বলাই বাবু বললেন, ‘ঐটি বাঁদরলাঠি গাছ’।
------------------------------------------
------------------------------------------
আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:০৪