(এই লিখাটি বাংলাদেশ চিন্তকদের অবশ্য পাঠ্য। শুধু রিডিং পড়ার জন্য নয়, লিখার থীম এবং কন্টেন্ট অনুধাবন করার চেষ্টা করুন প্লিজ। আশা করি দীর্ঘ লিখাটি ওর্থ রিডিং হিসেবেই পাবেন।)
আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস-২০১৬ উপলক্ষে ১৩ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ (বাপা) ও ‘জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন’ সংস্থা দুটি থেকে জানানো হয় (রেফারেন্স নং-২), ‘দেশের বিশেষজ্ঞদের যুক্ত না করে শুধু বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা দেশের নদীগুলোর জন্য নতুন অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দেবে। ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের নামে ভুল পরিকল্পনায় দেশে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর দেশের বেশির ভাগ উপকূলীয় নদী আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এখন আবারো বিদেশী বিশেষজ্ঞনির্ভর ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপের আদলে করা ওই পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য কখনই বাস্তবসম্মত হবে না। বরং দেশের যে নদীগুলো কোনোমতে টিকে আছে, তা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব জনাব শামসুল আলম বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার কিছু কৌশলগত দিক বণিক বার্তায় ((রেফারেন্স নং-১) আলোচনা করেছেন যা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। পানি ব্যবস্থাপনায় ডাচদের অভিজ্ঞতা অদ্বিতীয় বর্ননা করে জ্যেষ্ঠ সচিব ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের নিজস্ব বলে উল্লেখ করে বলেছেন যে সম্পূর্ণ দেশীয় বিশেষজ্ঞ কর্তৃক এর খসড়া প্রণীত হচ্ছে। বিস্তারিত বর্ননায় বলা হয়েছে- ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে কৃষি, পানিসম্পদ, ভূমি, শিল্প, বনায়ন, মত্স্যসম্পদ প্রভৃতিকে গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি (৫০ থেকে ১০০ বছর) মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করা। ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হচ্ছে- ১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও পানির পর্যাপ্ততা বৃদ্ধি করা; ৩. সমন্বিত ও টেকসই নদী ও নদী মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; ৪. জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং তাদের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৫. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও ন্যায়সঙ্গত সুশাসন গড়ে তোলা এবং ৬. ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
উপরোক্ত ৬ টি বিষয়ের প্রতিটিতে দেশের সাকজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট এবং নদী অববাহিকা এবং উপকূলীয় জসাধারনের এর লভধ জ্ঞানকে (ব্যাপক সার্ভে ভিত্তিক) মহাপরিকল্পনায় সমন্বিত করার চরম প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই বিষয় গুলোকে দেশে ইন্টেলেকচূয়াল ডিবেট হিসেবে উন্মুক্ত করে মহাপরিকল্পনায় ইনপুট নেয়াও সময়ের দাবী। আলোচনায় প্রবেশ করছি বাপার অভিযোগ দিয়ে।উপকূলীয় বেড়িবাঁধ দিয়ে নদী হত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা নিরেট সত্য তবে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে বিশেষ পয়েন্ট নির্ভর সমালোচনা কাম্য ছিল বাপার কাছে। তবে নাগরিক এবং নাগরিক সংঘঠনকে তথ্য সরবারহের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায় থেকে যায়। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান এর উপর প্রকাশিত দলিল কিংবা নাগরিক আলোচনার পরিসর উন্মুক্ত করা হয়নি।
নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশের ডেল্টার সাদৃশ্য অসাদৃশ্য
নদীমাতৃক হলেও নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশের কৃষি ভিত্তিক জীবনধারা ব্যাপক ভিন্ন। নেদারল্যান্ডস উপকূলে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ নেই, বিস্তৃত উপকূল অসংখ্য ড্যাম ও ডাইক দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। এই ডাইকগুলো দিয়ে সাগর থেকে ভুমি উদ্ধার করা হয়েছে যা দেশটির মোট আয়তনের তিন ভাগের এক ভাগ প্রায়, অর্থাৎ দেশটির ১/৩ ভাগ সমূদ্র সমতলের নীচে! ডাইকগুলো সমতলে লোনা পানির আগ্রাসন এবং স্থায়ী বন্যা প্রতিবন্ধক। এখানে ধান চাষ একেবারেই হয় না, খাদ্যাভ্যাস স্বল্প পানি নির্ভর কৃষি জাত গম ভূট্রা যব আলু দুধজাতীয় পণ্য (চীজ এন্ড ব্রেড) ইত্যাদি নির্ভর। দেশটির বিস্তৃত মধ্যাঞ্চল শুধুই গবাদি পশুর সুবিশাল চারণভূমি।পুরো দেশের সমতলই আর্টিফিশিয়াল ক্যানেল নেটোয়ার্ক এর আওতায় এনে স্বল্প পানি নির্ভর কৃষি জাতের ফলন করা হয়ে, এই অগভীর ক্যানেল গুলোতে উইন্ডমিল ভিত্তিক সাধু পানি প্রবাহ সঞ্চালিত হয়। উল্লেখ্য শীতকালীন দেশ হওয়ায় বছরে একটি মাত্র আউটডোর ফলন সম্ভভ এদেশের মাঠে। তবে এখানে বছরব্যাপী বহুবিধ সবজির ফলন হয় বিশালাকায় গ্রীন হাউজে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিস্তীর্ন উপকুল ম্যানগ্রোভ (সুন্দরবন) বেষ্টিত যা টাইডাল ওয়েভ নির্ভর এক মহা প্রাণের আঁধার, যা একদিকে প্রাকৃতিক কর্ম সংস্থানের আঁধার অন্যদিকে ভারত মহাসাগরীয় দুর্যোগ এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে বাংলাদেশ রক্ষাকবচ। সুতরাং শাখা প্রশাখার ন্যায় নদির জালবেস্টিত এই উপকূলীয় অঞ্চলে কোন রকমের নদী শাসন এবং পানি ব্যবস্থাপনার মহা ম্যান মেইড পরিকল্পনা অগ্রহনযোগ্য। তবে ম্যানগ্রোভ ছাড়া বাকি নদী অববাহিকায় ডাচ অভিজ্ঞতা বাস্তবায়ন করা যায় যেখানে ড্যাম এবং ডাইক ভিত্তিক স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রনের কাজের শুধু পাইলট ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে আগানো যায়। তবে সাধু পানির ব্যবহার নিশ্চিতে ক্যানেল নেটোয়ের্কের জ্ঞান ট্র্যান্সফার করা গুরুত্বপূর্ন হতে পারে যদিও খাল খনন কর্মসূচী বাংলাদেশে একেবারেই নতুন নয়, দরকার ভিশন নির্ভর বাস্তবায়ন। এর বাইরে বলতে হয়, বাংলাদেশে গড় বায়ু প্রবাহ নেদারল্যান্ডস এর তুলনায় খুবই কম বিধায় এখানে উইন্ড মিল নির্ভর পানি পানি প্রবাহ পরিকল্পনা কাজ করবে না। বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে কিউবিক রিলেশনে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় বলে আমাদের উইন্ড এনার্জির ভবিষ্যাৎ আসলেই নাজুক।তবে বাংলাদেশের সেচে সৌর বিদ্যুৎ খুবই সম্ভাবনাময়। উপরন্তু বিস্তৃত সমভূমি শুধু গবাদি পশুর চারণ ভূমির জন্য ছেড়ে দিবার ডাচ পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য নিছকই উচ্চাভিলাষ। উল্লেখ্য বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডস এর তুলনায় কমপক্ষে ১২ গুন ঘনবসতিপূর্ন!
নেদারল্যান্ডস এর জীল্যান্ড এর নিচের দিকে খুব ছোট ছোট কিছু ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে (পুরপুরি ম্যানগ্রোভ বলা যায় না)বাঁচাতে দেশেটির এই কর্নারে বাঁধ দেয়া হয়নি। যদিও ন্যাচারাল বনগুলো পুরোপুরি টিকানো যায়নি কারন আপ স্ট্রীমের মিঠা পানির ফ্লো নিয়ন্ত্রিত। (মনে রাখতে হবে গঙ্গা -কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের কারনে হিমালয়ের মিঠা পানি শুকনো মৌসুমে খুলনা-সাতখিরার নদনদী হয়ে সুন্দরবন বিধৌত করে না। পানি সেচে ডাইভার্ট হয়ে যাচ্ছে)। সুন্দরবন বাঁচাতে আমাদের এরকম কিছু করা লাগবে অর্থাৎ বরগুনা-পটুয়াখালীর পশ্চিম এবং পূর্বকে আলাদা করে সুন্দরবনের দিকে কোন ধরনের ম্যান মেইড ম্যানিপুলেশন করা যাবে না। আর বরগুনা থেকে চট্রগ্রামের দিকে মহাপরিকল্পনার আবকাঠামো পরিকল্পনা নেয়া যায় (নদীর মোহনায় স্লুইস কন্ট্রল্ড ড্যাম আউটার সীতে ডাইক)। বরগুনা-পটুয়াখালীর কথা উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, একচূয়াল লাইন সমীক্ষা করে বের করতে হবে।
মোহনায় একাধিক বাঁধ এবং মহীসোপানের শুরুর দিকে ডাইক থাকায় নেদারল্যান্ডস এর নদনদী মৎস্য শূন্য প্রায়। এখানে নদী ভিত্তিক মৎস্য চাষ কোন পেশা নয়, নাগরিকদের কেউই নদীতে মাছধরে জীবিকা চালান না। নির্দিষ্ট ফি সহ বাৎসরিক লাইসেন্স নেয়া লাগে নদীতে শখের বসে মাছ ধরতেও, এই কাজটি কিছু ধনী লোকের হবি। সুতরাং বাংলাদেশের ব্যাপক মৎস্যজীবী মানুষের জীবনধারার বাস্তবতায় এটা একটা চরম ব্যাতিক্রম যা ডেল্টা পরিকল্পনার তাদের ডেল্টা প্ল্যানের আউটকাম এবং আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের অপরিহার্য্য ইনপুট।
হাজার বছরে অর্জিত স্থানীয় জ্ঞানকে আধুনিক পরিকল্পনায় সমন্বিত করুন
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী এবং খালের পাড়ে শহর বন্দর এবং হাট বাজার বসে উঠেছে শতাব্দী প্রাচীন নৌপথ ভিত্তিক মাস ট্রাস্নপোর্টেশন এর কারনে যা সভ্যতার অত্যন্ত যৌক্তিক অধ্যায়। কিন্তু পরবর্তিতে সড়ক পথ করার সময় দেখা যায় ঠিক নদী বা খালের একটি কূল ব্লক করে রাস্তা বানানো হয়েছে (কথিত মাটি প্রাপ্তির সুবিধার জন্য) কিন্তু এতে চাষের জমিতে পলি পতনে চরম প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে, বিপরীতে পলি পতন জনিত উর্বরতা ত্বরান্বিত করতে সঠিক সময়ে ওয়াটার পাসের জন্য প্রবাহ নির্ভর ডেটা বেইজড ডাইমেনশন করে পর্যাপ্ত কাল্ভার্ট, ব্রিজ কিংবা স্লুইস গেইটের বন্দবস্ত করা হয়নি কখনই। অথবা বর্ষা পরবর্তি জলাবদ্ধতা কিংবা ফসল কাটা নতুন ফসলের জন্য জমি প্রস্তুতে দ্রুত পানি সরানোর বিবেচনা ব্রিজ কাল্ভার্ট ডিজাইন এবং ডাইমেনশনে আনা হয়নি। কাচা পাকা রাস্তা করা হয়েছে কিন্তু সেই এলাকার কয়েক যুগে হওয়া বন্যা গুলোর পানির উচ্চতা কেমন ছিল তার গড় মেজারমেন্ট নেয়া হয়নি, ফলে এই ২০১৫ সালের বন্যাতেও অনেক গ্রামের ভিতরের সব রাস্তা এবং গ্রামের মূল রাস্তাটির অনেক অংশের উপরই পানি উঠতে দেখেছি, অথচ পাশেরই শত বছরের পুরানো রেলসড়ক বন্যা মুক্ত। উপরন্তু মাটি ভরেটের রাস্তার বেইজে কনক্রিট সাপোর্ট না রাখায় প্রতি বছর বর্ষা এবং বন্যা পরবর্তি সময়ে ভেঙ্গে যাওয়া অংশে মাটি ফেলে মেরামত করা লাগে বছর বছর। পলি পতনের জন্য নদীর বা খালের দুই কূল উন্মুক্ত রেখে দুই স্রোত ধারার মাঝের ভুমিতে নতুন খাল খনন করে রাস্তা বানানোর ডিজাইন কোথাও চখে পড়ে না যা বাড়তি পানি প্রবাহের এবং শুকনা মৌসুমে পানি ধারনের বন্দবস্ত করতে পারতো। এর বাইরে রয়েছে অতিকায় নদী অববাহিকায় বালু এবং সিমেন্টের ছোট ছোট বস্তা ফেলার হাস্যকর নদী শাসন কিংবা শহর রক্ষা ব্যবস্থাপনা।বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কিংবা নদী অববাহিকায় নেই কোন সাধু পানি পুনঃ সঞ্চালনের পরিকল্পিত ক্যানেল নেটোয়ার্ক। অর্জন বলতে তিস্তা, কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মত ২-৩টি বৃহৎ সেচ ব্যবস্থাপনা যা প্রতিবেশী দেশের অন্যায্য পানি প্রত্যাহারে অকেজো হয়ে উঠছে। কিন্তু বিস্তৃত সমতলে চাষাবাদের জন্য সাধু পানি পুনঃ ব্যবহারের কোন সমন্বিত ক্যানেল নেটোয়ার্ক নেই। এগুলো এক একটি পানি ব্যবস্থাপনার ডিজাইন গ্যাপ নির্দেশক যা আমরা হয় ধরতে পারিনি অথবা দুর্নিতি পরায়নতার কারনে বাস্তবায়ন করিনি। এগুলো আমাদেরই ডিজাইন ত্রুটি, তবে ডেল্টা প্ল্যানের টেকসই ডিজাইনে এই উত্তরাধিকার প্রাপ্ত পরিকল্পনা গ্যাপ গুলোর অঞ্চল ভিত্তিক ইনপুট দেয়া দরকার।অন্যথায় ডেল্টা পরিকল্পনা দিয়ে আমাদের বন্যা পানি ও সেচ এবং অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় টেকসই প্রযুক্তি ইনক্লুড করার ভীশন অর্জিত হবে না।
জলবায়ু পরিবর্তন, ঋতু বৈচিত্রের ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতা, অনিয়মিত বৃষ্টি (অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টি), বন্যা, শক্তিমান দেশ সমূহের তৈরী ফারাক্কা রূপী মরণফাঁদ, আন্তর্জাতিক নদ নদীর পানি প্রত্যাহার ও প্রবাহ পথের পরিবর্তন , উৎস থেকে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ হ্রাস, পলি পতন আর কূলের ভাঙ্গন জনিত নাব্যতা হ্রাস, অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক পানির উৎসের গভীরতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি সমতলের সাধু পানি অঞ্চলে সাগরের লবণাক্ত পানির আগ্রাসন ইত্যাদি ইত্যাদি বহুবিধ কারণে বাংলাদেশের কৃষক দিন দিন পানি হারা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পানি আগ্রাসনে পড়ছেন।স্যালাইন পেনিট্রেশন এর কারনে উপকূলীয় কৃষির স্বাভাবিক ক্যালেন্ডার বাঁধা গ্রস্ত হচ্ছে, সমস্যায় পড়ছে ফলনের জাত এবং বীজ ব্যবস্থাপনার সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলো। এর বাইরে রয়েছে চাষাবাদের রাসায়নিক আগ্রাসন জনিত স্থানীয় ফলন জাতের বিলোপ। ফলে বীজ ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক ক্যালামিটির বিপরীতে ন্যাচারাল রেজিস্টেন্স হারিয়ে রাসায়নিক সার কীটনাশাক ছাত্রাক নাশক হয়ে পড়ছে যা মাটি এবং পানিকে বিষিয়ে কৃষি জমি এবং সাধু পানির অণুজীব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, জমি দিন দিন অনুর্বর হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর অনিরাপদ বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যানকে কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তার এই বিষয় গুলোকে অ্যাড্রেস করতে হবে।
উপকূলীয় খাদ্য নিরাপত্তায় এখন থেকেই বহুবিদ পরিকল্পনা হাতে নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে, আলোচ্য বিষয়ের শুধু একটি মাত্র হতে পারে এমন যে "আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস কে ধীরে ধীরে কিন্তু কার্যকর ভাবে পরিবর্তন করব যেখানে পানি নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমে আসে"। ধান চাষ অতিমাত্রায় পানি নির্ভর যাতে স্থির কিংবা বদ্ধ পানি আবাশ্যক। এটাই প্রধান সমস্যা।। সুতরাং ভাত প্রধান জাতি সমূহ খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম শিকার হবে। আজ থেকে ৫০ বৎসর পর এত বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদনের পানি আসবে কোথা থেকে? সেই সময়ের চাহিদার একটা ট্রেন্ড বের করা সম্ভভ হলেও জমির ক্রমবর্ধমান অনুর্বরতা, নদীর এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস এবং কেমিক্যাল নির্ভরতার কারনে উৎপাদন কেমন হবে সেই ট্রেন্ড বের করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে! ধান চাষে সাধু পানি ব্যবস্থাপনার এই দিকটি অবহেলিত থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান উপকূলীয় স্যানিটেশন এবং আবাসন উন্নয়ন ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তায় খুব বেশি উপকার দিবে না।
মহাপরিকল্পনার বিভিন্ন তথ্য এবং প্রেজেন্টেশনে দেখা গিয়েছে সেখানে উপকূলীয় শহর রক্ষা, অবকাঠামো, নগর ড্রেনেজ, স্যানিটেশন, নদী শাসন, ল্যান্ড ক্লেইম অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। অতি অবাক করা বিষয় হচ্ছে এর প্রতিটিই একটি নগর পরিকল্পনার অপরিহার্য্য অংশ যা ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের জেলা, বিভাগ, সিটি এবং পৌর কর্পরেশনের কার্যতালিকাধীন। উপরন্তু এই বিষয় গুলো জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পেও রাখা হয়েছে। আমরা চাই এই সাধারণ নগর ব্যবস্থাপনার রুটিন ওয়ার্ক স্কোপের পুনরাবৃত্তি ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনায় রাখা না হোক, দুর্নিতির আরেকটি উৎস সৃষ্টি করা না হোক। সহজ কথায় আমরা চাই ডাচ টিমকে সঠিক ইনপুট দেয়া হোক-অতীতের ডিজাইন ত্রুটির, বাস্তবায়ন ভুলের, স্থানীয় দুর্নিতিজনিত মানহীন কাজের, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার, রিসোর্স স্বল্পতার এবং সেই সাথে আগামীর সম্ভাবনার যা আমাদের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানিসম্পদ, ভূমি, শিল্প, বনায়ন, মত্স্যসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করে তুলবে।
উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী এলাকা দুর্যোগ প্রবণ। সেখানে এনার্জি পরিকল্পনা রিনিউএবল (যেমন সোলার বেইজড কমিউনিটি গ্রীড) হওয়া বাঞ্ছনীয়। উপরন্তু নদীর মোহনা এবং উপকূলে ছোট ছোট বহু ডেল্টার জাল থাকে যা ল্যান্ড কানেক্টেড না। যেমন মেহেন্দিগঞ্জ, ভোলার আসে পাশের দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া এগুলা ওয়াটার লকড। তাই এখানে হয় পাওয়ার ট্রান্সমিশন থাকে না, অথবা ঘুর্নিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। অথবা লোড কম থাকায় পাওয়ার ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন এবং মেইন্টেনেন্স বিজনেস কেইস দাঁড়া করায় না। একই ভাবে গ্যাস ট্রান্সমিশন করার বিজনেস কেইস হয় না। আবার দুর্যোগ পুর্ন সময়ে এগুলো পুনঃ স্থাপন করা খুব কষ্টলি, সময় সাপেক্ষ। এর উপর রয়েছে এসব এলাকার মানুষের নিন্ম ক্রয় ক্ষমতা। এই বিষয় গুলো ডেল্টা প্ল্যানের ইনপুটে সমন্বিত দেখতে চাই আমরা।
ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে নাগরিক স্বার্থের দিক হিসেবে খুব আগ্রহের বিষয় গুলো নিন্মরূপ।
০১। কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গুলোকে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন ধারার সাথে সমন্বয় করার প্ল্যান করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের জীবন ধারার কোন কোন ভ্যালূ গুলোকে ডেল্টা প্ল্যানের টেকসই উন্নয়নে রাখা হবে?
০২। উপকূলীয় ভৌত অবকাঠামো (শহর রক্ষা বাঁধ, সড়ক, রাস্তা, বাজার, আবাসন, স্যানিটেশন, স্কুল, মসজিদ ইত্যাদি), বিদ্যুৎ, জ্বালানীর টেকসই পরিকল্পনা কেমন?
০৩। উপকূলীয় কৃষি, জীবন ধারা-জীবিকা, স্বাস্থ্য, টেকসই গৃহায়ন, গবাদি পশুর লালন, কৃষকের ইনহেরিটেড বীজ স্বত্ব এইসব ইন্টেলেকচূয়াল প্রপার্টি রক্ষাকে ডেল্টা প্ল্যানে বিবেচনায় আনা হয়েছে কিনা?
০৪। কিভাবে স্যালাইন সহনীয় কৃষি ফসল, সার বীজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবা হচ্ছে এবং বর্তমানের উপকূলীয় কৃষি সাইকেলকে কিভাবে ইভল্ভ করা হবে সেটার পরিকল্পনা কি কি?
০৫। শহর রক্ষা, ড্যাম, বন্য নিয়ন্ত্রনের ইন ফস্ট্রাকচারাল কাজ গুলূতে কিভাবে রিনিউএবল এনার্জি সোর্সের সমন্বয় আনা হবে (টাইডাল এনার্জি, ঊইন্ড এনার্জি কিংবা সোলার), যাতে ন্যাচারাল এনার্জি সাইকেল দিয়েই পানি ব্যবস্থাপনার কাজ গুলো, উপকূলীয় মানুষের জ্বালানী চাহিদা গুলো মিটানো যায়!
০৬। সাগরের ল্যান্ড ক্লেইম এর পদ্ধতি, মূলনীতি কেমন? ল্যান্ড ক্লেইম এর সাথে উপকূলীয় জীবনধারায় অভ্যস্থ মানুষকে (বিশেষত মৎস্য জীবী) কিভাবে স্থলভাগের অভ্যন্তরীণ জীবন ধারায় কর্মসংস্থানের প্রেক্ষাপটে আত্বীকরন করা হবে?
০৭। সুন্দরবন কে রক্ষা করার প্ল্যান আছে কি না? সুন্দরবনের জিও ডাইভার্সিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কি পরিকল্পনা? ম্যানগ্রোভ এর জন্য অত্যাবশ্যকীয় জোয়ার ভাটার টাইডাল সাইকেল সংরক্ষণ এর পরিকল্পনা কি?
০৮। সুন্দরবনে জীবিকা নির্বাহী লোকদের বিকল্প কর্ম সংস্থানের পরিকল্পনা কি কি?
০৯। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান নদী রক্ষার রক্ষা কবচ কিনা? বাঁধ- ডাইক দিয়ে ল্যান্ড ক্লেইম নদী হত্যার হাতিয়ার। এর বিপরীতে নদীর নিয়মিত প্রবাহ রক্ষায় কি কি পরিকল্পনা রয়েছে।
১০। বর্ষায় ভারত বড় বড় আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উজানে দেয়া বাঁধের স্লুইস গেট ছেড়ে দিয়ে অতি স্বল্প সময়ে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড তৈরি করে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে কিংবা বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি করে। এই অতিশয় হীনমান্য প্রবনতা এবং ফসল ধ্বংসের যে অর্থনৈতিক অবিচার, তার সাথে ডাইক - বাঁধ দেয়া ভিত্তিক ল্যান্ড ক্লেইম প্লকল্প যোগ হলে দেশের বর্ষা কালীন ফলনে এক অশনি সংকেত নেমে আস্তে পারে। ডেল্টা প্ল্যানে এই মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের ছেড়ে দেয়া পানির প্রবাহকে কিভাবে সমন্বিত করে দেশের বর্ষা কালীন ফলন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখা হবে তার বিস্তারিত পরিকল্পনা জানা দরকার।
১১। যুগ যুগ ধরে বালুর বস্তা নির্ভর হাস্যকর নদীশাসনের ফলহীন চেস্টার বিপরীতে নদী ভাঙন রোধের টেকসই এবং সাশ্রয়ী ফলদায়ক বিকল্প কি কি?
১২। ডেল্টা প্ল্যান ডাচ টেকনোলোজি কিভাবে স্থানীয় প্রকৌশলী আর পরিকল্পনাবিদদের ট্র্যান্সফার করবে তা যথাযথ ডিফাইন করছে কি? আদৌ এধরনের ট্র্যান্সফার উইন্ডো আছে কিনা?ডেল্টা গবেষণার ফ্রেইমোয়ার্ক কেমন করা হচ্ছে? নগর ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা, জমবায়ু পরিবর্তন ফান্ডেড প্রজেক্ট এগুলোর সাথে ডেল্টা প্ল্যানের এনগেইজমেন্ট কিংবা ডিমারকেশন এর পরিসর কেমন এবং কোথায়?
১৩। ইলিশের মত সাগরের মৎস্য জাতের প্রজননের ধারাবাহিকতা কিভাবে বজায় রাখা হবে, যেখানে মাছটি শুধু ডিম ছাড়তে স্রোতের বিপরীতে নদির মিঠা পানিতে আসে? অন্যদিকে উর্বর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র গুলো (যেমন হালদা নদী, কর্নফুলীর মোহনা, পাথরঘাটা, মেঘনার মোহনা) রক্ষায় পরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেটাকে কিভাবে ডেল্টা পরিকল্পনায় ইন্টিগ্রেটেড করা হবে?
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান যদি উপরোক্ত বিষয়াদিকে সমন্বিত না করে উপকূলীয় শহর কেন্দ্রিক আবাসন ব্যবস্থাপনা এবং ল্যান্ড ক্লেইম ভিত্তিক আবাসন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়, তাহলে এই প্ল্যান আমাদের কোন কাজেই আসবে না। বরং এটা ম্যানগ্রোভ বন, নদী, উপকূলীয় ফলন সহ আমাদের জীবন এবং কৃষি ব্যবস্থার ব্যাল্যান্সকে ধ্বংস করবে যা আমরা চাই না।
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ন মহীসোপান শেলো (বঙ্গোপসাগরে মেঘনা মোহনার গড় গভীরতা মাত্র ১৫-১৮ ফুট),এমনিতেই ভাটার সময় জেগে উঠে বিশাল আকারের সব চর ও ডুবো চর।বলা হচ্ছে হাতিয়া-নিঝুমদ্বীপ-ধামারচর এবং ধুলা-চরমোন্তাজ- চরকুকরি মুকরি ক্রস ড্যমের মাধ্যমে মূল স্থলভূমির সঙ্গে নির্বিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত করা যাবে মাত্র দশ বছরের মধ্যেই। সেই সাথে এই এলাকায় তেল- গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনাও অনেক। অন্তত ৩৩ হাজার বর্গমাইল আয়তনের অবিচ্ছিন্ন ভূমি পাওয়া যাবার সম্ভাবনা আছে। এমতাবস্থায় ভয় হচ্ছে ডাচ টেকনোলজির উতকর্ষে ড্যাম এন্ড ডাইক ভিত্তিক এই ল্যান্ড ক্লেইমের প্রকল্পই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ হয়ে উঠবে, রমরমা জমি ও আবাসন ব্যবসা হবে কিন্তু সুন্দরবন, প্রাণ বৈচিত্র্য, সেচ, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং উপকূলীয় অন্যান্য ব্যবস্থাপনা আনফোকাসড হয়ে যাবে!
যেমনটা মাননীয় সচিব জনাব শামসুল আলম ব্যাখ্যা করেছেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে কৃষি, পানিসম্পদ, ভূমি, শিল্প, বনায়ন, মত্স্যসম্পদ প্রভৃতিকে গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি (৫০ থেকে ১০০ বছর) মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করা।
আমরা চাই সরকার এবং পরিকল্পনা কমিশন এই বিষয়ে উন্মুক্ত এক্সপার্ট বিতর্কের আয়োজন করুক। মহাপরিকল্পনার প্রত্যেকটি দিক বিস্তারিত প্রকাশ করুক। নদী ভাঙনের ভুক্তভোগী, নদী অব্বাহিকার কৃষক এবং উপকূলীয় জীবনধারার মানুষের ব্যাপক সার্ভে লভধ জ্ঞান মহাপরিকল্পনাকে সমৃদ্ধ করুক, ডেল্টা প্ল্যান বিভিন্ন ইন্সটিটুটের থিউরেটিক্যাল ডিজাইন না হয়ে বাস্তবিক ইনপুট সর্বস্ব হোক। দেশীয় ডেল্টা পরিকল্পনাবিদদের ঘন ঘন নেদারল্যান্ডস ভিজিট না করে বরং ডাচ এক্সপার্টদের নিয়ে আমাদের উপকূলীয় এলাকা সমূহে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অববাহিকায় দীর্ঘ মেয়াদী ভিজিট করা দরকার, প্রয়োজন আমাদের নদিতে বিভিন্ন ঋতুতে পানি প্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন, খরা, আমাদের সেচ ব্যবস্থা, বীজ এবং ফসল ব্যবস্থা, কৃষি সাইকেল, আমাদের উপকূলীয় কৃষি এবং মৎস্য ভিত্তিক জীবনধারা নিবিড়ভাবে অনুধাবন করে প্ল্যানিং ইনপুট নেয়া (এই ইনপুটকে কম্প্রেহেন্সিভ এনভায়রনমেন্টাল সার্ভে,ইকোনোমিক সার্ভে, এগ্রিকালচারাল সার্ভে দিয়ে কভার করতে হবে) যার সাথে ডাচ টেকনোলজির সমন্বয় করা যায়। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে আমাদের অনেক আশা ভরসা।ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট এর মৌলিক অবকাঠামোতে আমাদের বলার মত কোন অর্জন নেই!এই একটা প্ল্যান ঠিক মত হোক, এই প্রত্যাশা করছি বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস এর ডেল্টা পরিকল্পনাবিদদের কাছে।
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান উচ্চমান হোক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান উচ্চমান হোক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
জনগুরুত্ব বিবেচনায় এই লিখার বিস্তারিত ভার্শন দৈনিক বণিক বার্তায় ২৮ এবং ২৯ এপ্রিল উপ্সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘিরে নাগরিক প্রত্যাশা
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘিরে নাগরিক প্রত্যাশা
রেফারেন্সঃ
১। পানি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত একটি দেশজ মহাপরিকল্পনা
২। বদ্বীপ পরিকল্পনা নদীর জন্য অশনিসংকেত
৩। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান অফিসিয়াল সাইট
৪। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান প্রেজেন্টেশন
৫। প্রেজেন্টেশন
৬। Holland's Barriers to The Sea
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৯