গ্রীক পুরাণের দেব-দেবীদের মানব সভ্যতায় প্রভাব। পর্ব-২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাস শুরু হয় পাথর যুগের শিকারি ও শুরুর দিকের কৃষকদের থেকে। বিভিন্ন যুগ পার করে বিভিন্ন ইতিহাসের ভেতর দিয়ে আজকের গ্রীসের চেহারা হয়েছে ভিন্নতর, তবুও ধ্বংসস্তুপে খুঁজে পাওয়া যায় সে প্রাচীন অতীত ঐতিহ্য।
গ্রীক পুরাণ পাশ্চাত্যে চিত্রকলা, সংস্কৃতি, সিনেমা ও সাহিত্যে সবসময় প্রেরণার যোগান দিয়েছে। গ্রীক পুরাণ ও লোককাহিনী এখনো পাশ্চাত্যে বহু নাট্যকার, আঁকিয়ে, লেখক, দার্শনিক, এমনকি বিজ্ঞানীদেরও অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করছে। যেমন - প্রমিথিউসের যকৃতের পুনর্জন্মের বিযয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞান উপলব্ধি করতে পেরেছে। অনেক ঔষধ তৈরীকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের পণ্যে প্রমিথিউসের নাম ব্যবহার করে থাকে। অনেক আকাশযান, গ্রহ, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু প্রভৃতির নামও গ্রীক পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের নামে নামকরণ হয়ে আসছে।
প্রারম্ভিক গ্রীসবাসিরা মনে করতো রোগ-শোক দেব-দেবীদের কারণে হয় এবং শুধুমাত্র তারাই এর থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। পুরোহিতের এ কাজে মানুষ ও দেব-দেবীদের মধ্যে সংযোগ ঘটাতো ও রোগ মুক্তিতে সহায়তা করতো। পরবর্তীতে আগুন, পানি, মাটি ও বায়ুর সমন্বয়ে গঠিত হয় পদার্থ এর উপর ভিত্তি করে গ্রীক চিকিৎসকরা রোগীর আরোগ্যের জন্য একটি তত্ত্ব বের করেন। তারা বিশ্বাস করতো মানব শরীর চারটি তরল বা রস দিয়ে গঠিত। মানুষের দৈহিক ও মানসিক গুণাবলীর নিয়ামক বলে পরিচিত রস চতুষ্টয় হল - হলুদ পিত্তরস, কালো পিত্তরস, কফ ও রক্ত। রোগ ও দূর্বলতা তখনই হয় যখন এই চারটির ভারসাম্য নষ্ট হয়। তো এই বিষয়টি ব্যবহার করে গ্রীক চিকিৎসকরা রোগীর স্বাভাবিক আরোগ্যের জন্য বিপরীতমুখী পদ্ধতি বের করেন। যেমন - রোগীর ঠান্ডার ক্ষেত্রে তারা উষ্ণতা ও শুষ্কতা প্রদান করতো।
সে সময়ের কিছু বিখ্যাত দার্শনিকের নাম আমরা সকলেই জানি - প্লেটো (খ্রীষ্টপূর্ব ৪২৭ - ৩৪৭), এরিস্টটল (খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪ - ৩২২) ও সক্রেটিস (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬৯ - ৩৯৯)। এরা সকলেই প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এছাড়া ছিলেন গণিতবিদ পিথাগোরাস ও আর্কেমিডিস, শাসক আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট।
প্রাচীন গ্রীসের আটলান্টিস দ্বীপ নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক। বলা হয় যে এথেন্স আক্রমণের এক ব্যর্থ অভিযানে ভুলক্রমে আটলান্টিস একদিনেই সাগরে ডুবে যায়।
গ্রীক ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলো হলো ট্রোজন যুদ্ধ (খ্রীষ্টপূর্ব ১২ বা ১৩ শতাব্দীতে), পার্সিয়ান যুদ্ধ (খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ - ৪৪৯) ও পেলোপোনেসিয়ান যুদ্ধ (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৩১ - ৪০৪)।
প্রারম্ভিক গ্রীসের লোকজন ও ট্রয়বাসীর মধ্যে হয় ট্রোজন যুদ্ধ।
ট্রোজন যুদ্ধ নিয়ে নিচের ছবিগুলো ট্যাপিসট্রি - রঙ্গীন পশমি সুতা দিয়ে অলঙ্কৃরত চিত্রিত কাপড়খন্ড।
পার্সিয়ান রাজ্য ও গ্রীক সিটি-স্ট্যাটস এর ভেতর হয় পার্সিয়ান যুদ্ধ।
আর এথেন্স ও স্পারটার ভেতর হয় পেলোপোনেসিয়ান যুদ্ধ।
যার অবস্থান আটলান্টিক সাগরের মধ্যভাগে। সুপ্রাচীন অলিম্পিক খেলা সে সময় ধর্মীয় ও ক্রিয়ামূলক অন্যতম উৎসব ছিলো, যা প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হতো গ্রীসের অলিম্পিয়ায় জিউস দেবতার পবিত্র স্থানে। যেখানে গ্রীক প্রজাতন্ত্রের সকল রাজ্য ও ছোট-বড় শহর অংশ গ্রহণ করতো। তখনকার অলিম্পিক খেলার অন্যতম অংশ ছিলো যুদ্ধ ও রথ দৌড়। লোককাহিনী অনুসারে জিউস পুত্র হেরাক্লিস বা হারকিউলিস অলিম্পিক খেলার ডাক দেয়।
সে জিউসের সম্মানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরী করে। অধিকাংশের মতে প্রাচীন অলিম্পিক খেলা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালে, যা হাজার হাজার বছর ধরে খেলা হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতেও প্রতি চার বছর পর পর অলিম্পিক খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গ্রীসের সবচেয়ে উঁচু পর্বত হলো মাউন্ট অলিম্পাস, যা গ্রীক পুরাণে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেব-দেবীদের বাস অলিম্পাস পর্বতে। দেবতাদের রাজা জিউসের অবস্থান ঐ পর্বতের শীর্ষস্থানে। জিউস সহ মোট বারো জন নিয়ে গঠিত সেখানকার বাসকারী অলিম্পিয়ানস। এই বারো জনের ভেতর আছে তার স্ত্রী হেরা, পুত্র এপোলো, আফ্রোদিতি, পোসেইডন, হার্মেস, এথেনা, এরেস, হেডেজ ও ডিমিটার।
লোককাহিনী মতে এথেন্স নগরীর নামকরণ হয়েছে জিউস কন্যা বিজ্ঞতার দেবী এথেনার নাম অনুসারে। সে শহরে জিউসের প্রথম স্ত্রী মেটিস গর্ভবতী হলো, এ কথা শুনার পর জিউস তাকে খেয়ে ফেলেছিলো। কারণ সে কারো কাছে জানতে পারে যে জন্মনেয়া শিশুটি জিউসের চেয়েও ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। তো জিউস তার স্ত্রীকে গিলে ফেলার কিছুক্ষণ পর তার তীব্র মাথা ব্যথা শুরু হলো, মনে হলো সে যা গিলেছে তা অনেক বড় কিছু। একটু পর তার মাথা চিরে গেলো আর সেখান থেকে আবির্ভূত হলো পরিপূর্ণ দেবী এথেনা। এছাড়া আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে। একদিন সাগর দেবতা পোসেইডোনের সাথে দেবী এথেনার ঝগড়া লাগলো নগরীর পৃষ্ঠপোষক কে হবে এটা নিয়ে। এরপর সিদ্ধান্ত হলো - ঐ নগরীকে যে সবচেয়ে ভালো উপহার দিতে পারবে, নগরীর নামকরণ তার নামেই হবে। তারপর পোসেইডোন নগরীর কাছে একটি লবন পানির ঝরণা উপহার দিলো, আর এথেনা উপহার দিলো জলপাই গাছ। তারপর তারা বিবেচনা করে দেখলো যে এথেনার উপহারটিই ভালো। কারণ জলপাইয়ের তেল বাতি জ্বালাতে, রান্না করতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহৃত হবে। তারপর এথেনার নাম অনুসারে সে নগরের নাম হয়ে গেলো এথেন্স।
গ্রীক পুরাণের দেব-দেবীদের মানব সভ্যতায় প্রভাব। পর্ব-১
পরের পর্বে সে সময়ে ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী ও স্থাপনার ছবি দিয়ে তিন পর্বের এই ধারাবাহিকটি শেষ হবে।
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁঠালের আমসত্ত্ব
কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে
এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে । ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন