somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনার কীর্তিকলাপ, কিংবা পাগলামি, কিংবা ভালোবাসা

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অহনা খুব জ্বালাতন করতো, অর্থাৎ খুব জ্বালাত,
বা বিরক্ত করতো আমাকে, যেমন, হঠাৎ হঠাৎ মাঝরাতে
মোবাইলে কল করে বলতো, ‘তুই যে ঘুমিয়েছিস, ঘুমানোর
আগে কি আমার কথা ভেবেছিস? বল, কতবার ভেবেছিস?
তাহলে একবার কলটি কেন করিস নি আমায়? নিদেনপক্ষে
একটিমাত্র মিস্‌ডকল!’ তারপর বলতো, ‘আজ রাতে তোকে
ঘুমাতেই দিব না।’ এরপর সে একটানা মিস্‌ডকল দিতে
থাকতো। পরদিন ঘুম ভাঙলে দেখতাম, মোবাইল স্ক্রিনে
কয়েক হাজার মিস্‌ডকল নোটিফিকেশন পুষ্পের মতো
ফুটে আছে। এবং বুদ্ধিমতী অহনা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে
জেনেই আমি ফুলের সংখ্যাটা মুখস্থ রাখতাম, এবং
কখনো-বা ওর বাহবা পাবার জন্যেই একটা এসএমএস
পাঠিয়ে লিখতাম – ‘আজ তুই উনত্রিশ শ তেইশটা ‘চুমু’
দিয়েছিস, পাখি।’ ও তৎক্ষণাৎ কল করে বহুক্ষণ নিঃশব্দে
কাটিয়ে দিত। আমি বুঝতাম, ওর বুকে তখন ভালোবাসারা
খলবল করে উল্লাস করছে। ঝড়ের বেগে ও বেসামাল,
এবং অধিক বেসামাল হয়ে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

অহনা আমায় বলতো, ‘দমে দমে তুই আমার নাম জপবি,
বুঝলি, বাবু? তোর রক্তকণিকায় আমি মিশে আছি, তোর
হৃৎপিণ্ডের অলিগলি ঘুলি-ঘুপচিতে আমি খেলা করি। আমাকে
কীভাবে ভুলে থাকবি, সোনাপাখি?’ তারপর বলতো,
‘আচ্ছা শোন, যখনই ঘর হতে বেরোবি, আমায় একটা
মিস্‌ডকল দিবি, ঘরে ঢুকেও দিবি। খেতে বসবি, দিবি।
খাওয়া শেষ, দিবি। আচ্ছা, আজ তুই কোন গানটা গেয়েছিস?
ঠিক আছে, এখন তুই গলা ফাটিয়ে ‘আমার সোনার বাংলা’
গেয়ে শোনাবি আমাকে। এটা তোর মতো এ বাংলায় আর
কেউ গাইতে পারে না।’ তারপর অহনা নিজেই গুনগুন করে
একমনে গাইতে থাকতো, ‘আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে।’

একদিন দুপুরে অকারণে জেদ করলো অহনা। বললো,
‘আজ সারাদিন একটাই কাজ তোর। নিরালায় বসে আমাকে
একটানা মিস্‌ডকল দিতে থাকবি। বুঝেছিস তো? মিনিটে কম
করে হলেও পাঁচটা। বুঝেছিস না? হ্যাঁ, এই আমি ফোন
কাটলাম, তুই শুরু করবি এখনই। আমায় যে তুই একবারও
মনে করিস না, সেজন্য এটা তোর শাস্তি। বুঝেছিস, সোনা?’
পাঁচ মিনিট পর অহনার ক্ষিপ্ত স্বর- ‘তুই দেখি জন্মের স্লো!
মিনিটে পাঁচটা কল দিতে বলেছি, আর তুই পাঁচ মিনিটে
দিলি পাঁচটা? আচ্ছা স্টুপিড একটা তুই! ওকে, দিস ইস দ্য
লাস্ট চান্স। স্টার্ট।’

দুদিন পর অহনার ফোন। ওর কণ্ঠস্বর খুব ঠান্ডা।
বলছিল অহনা, ‘তুই সত্যিই একটা পাষণ্ড। মন বলে
কিচ্ছু নেই তোর। পাষাণের চাইতেও কাঠিন্যে ভরা দেহ।
আমি ভাবতেও পারছি না, কীভাবে একবারও আমার খোঁজ
না নিয়ে থাকতে পারলি তুই। তোকে বলেছিলাম একটানা
আমাকে মিস্‌ডকল দিতে, আর তুই কী করলি? কয়েকটা মাত্র
মিস্‌ডকল দিয়েই হাওয়া হয়ে গেলি? পারলি তুই? পারলি তুই
এতটা নিষ্ঠুর হতে? কষ্ট দিয়েছিস অনেক আমাকে। আমি
ভাবতেও পারি না কী কাঠের তৈরি মন তোর! রাগ করে
বিগত দু'দিন ফোন 'অফ' করে বসেছিলাম। ফোন ‘অন’ করে
একটা এসএমএস পাই নি, না পেয়েছি তোর একটা মিস্‌ডকল
অ্যালার্ট। কী করে তুই এতটা নির্দয় হতে পারিস?’
তারপর আরো ঠান্ডা হতে থাকে অহনা। স্বগত কথনে
অহনার কণ্ঠে আবেগ কিংবা কান্না ঝরে পড়ে, ‘নাহ্!
আমি বুঝে গেছি, আমায় তুই একটুও ভালোবাসিস নারে বাবুই।
মিছেই আমি খুন হয়েছি ভালোবেসে তোকে। আচ্ছা,
আমাকে বল তো মানিক, কে আছে আমার চাইতেও
অধিক হৃদয়বতী, যে তোকে আমার চাইতেও অধিক
ভালোবাসতে পারে?’
কণ্ঠে আকুতি ঢেলে আমার জবাবের অপেক্ষায় থেকে থেকে
একসময় নিজেই জবাব দিত, ‘নাই রে পাগল, কেউ নাই।’

তারপর আমি দেখেছি, অহনার চাইতে অধিক সত্যিই
কোনো হৃদয়বতী নেই, নেই অন্য-কেউ, যে-কিনা
অহনার চাইতেও অধিক ভালোবাসতে পারে।

তারপর ভালোবাসতে বাসতেই, ভালোবাসার সমস্ত চিহ্ন
চরাচরের পথে পথে ফুটিয়ে রেখে ভোরের পাখির মতো
হাওয়া হয়ে গেল অহনা।

১৪ জুলাই ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫২
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×