somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি যে আমার কবিতা - ভিন্ন সুরে || সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ভিন্ন সুরের 'মুখ'-এর সাথে মিল রেখে আমার করা অন্তরার সুর

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'তুমি যে আমার কবিতা', নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'দর্পচূর্ণ' (১৯৭০) ছায়াছবির এ কালজয়ী গানটি বাংলাদেশের সঙ্গীতপিপাসু কোনো মানুষ শোনেন নি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। ছায়াছবিতে এ গানটি যুগল কণ্ঠে গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন ও মাহমুদুন্নবী। অসমম্ভব সুরেলা ও রোমান্টিক একটা গান, যা মনকে আনন্দ ও রোমান্সে ভরে তোলে। যারা ছবিটি দেখেন নি, শুধু এ গানটি শুনেছেন, তারা কি কেউ জানেন যে, এ গানটির প্রথম তিন লাইন, অর্থাৎ গানের শুরু বা 'মুখ' প্রথমে একটি ভিন্ন সুরে গাওয়া হয়? গল্পের নাটকীয়তার মাধ্যমে পরে পুরো গানটি গাওয়া হয় বর্তমানে প্রচলিত সুরে, যা আমরা এতকাল ধরে শুনে আসছি। কিংবদন্তি সুরকার সুবল দাস এ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।

যারা এ ছবিটি দেখেছেন, কিংবা দেখেন নি, সবার উদ্দেশেই কয়েক লাইনে কাহিনিটা বলি। দুর্ঘটনাক্রমে তরুণ ঔপন্যাসিক শাহাদাত চৌধুরী অশিক্ষিত, মান-গোত্র-বিত্তহীন এক হতদরিদ্র 'খসম' পরিচয়ে আশ্রয় নেন এক অধ্যাপক পরিবারে, যেখানে তার স্ত্রী খুব রগচটা প্রকৃতির, আর আছে প্রেমবতী সুন্দরী এক কন্যা, যার নাম ঝরনা, যার হাসিতে ঝরনা ঝরে, সর্বাঙ্গে রূপের ঝরনা প্রবহমন। সুন্দরী কন্যার রূপই আসলে শাহাদাত চৌধুরীকে ছদ্মনাম ধারণ করে তাদের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণে প্ররোচিত করে। খসম ঐ বাড়িতে চাকরের 'চাকরি' পেলো। সে দিনভর চাকরামি করে, আর রাতভর লেখে উপন্যাস, কবিতা, গান, ইত্যাদি। একরাতে হঠাৎ ছাদে পায়চারি করতে করতে খসমকে সিগারেট খেতে দেখে ফেলে ঝরনা। সে চুপি চুপি খসমের রুমে যায়। তার রুমভর্তি লেখালেখির কাগজপত্র ছড়ানো ছিটানো। একটা কাগজ উঠিয়ে পড়তে থাকে। হায় আল্লাহ! এ দেখি অবাকের উপর অবাক কাণ্ড! সে অশিক্ষিত খসম নয়, সে পুরোদস্তুর একজন শিক্ষিত মানুষ, যে কিনা একজন কবি ও লেখকও বটে। সে ঝরনাকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছে এক বিরাট উপন্যাস। ঝরনাই এখন তার একমাত্র আরাধনার বস্তু। এখান থেকে খসমকে নিয়ে ঝরনার সন্দেহ শুরু হয়। খসম অবশ্য ঝরনার এই সন্দেহটা ধরতে পারে না। সে সব সময়ই আবলামি আর ছাগলামি করতে থাকে। আমি সিনেমা হলে এ ছবিটি দেখেছিলাম, সম্ভবত ১৯৮৬ সালের দিকে; যদ্দূর মনে পড়ে, এইচ এস সির পর বাড়িতে গিয়েছিলাম, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে দোহারের হলের বাজারের যে-হলটা আছে, যে-হলের নামে এ বাজারটা হয়েছে, সেই হলে। তো, নায়কের আবলামি, বলদামি, ছাগলামি আর দুষ্টামি দেখে ছবির এ সিকোয়েন্সে হলভর্তি মানুষ খুব হাসছিল আর রোমান্স উপভোগ করেছিল বলে অনুমান করি, যদিও সে-সব এখন মনে নাই :)

এখানে বলে রাখা ভালো, চাকর খসম যখন এ বাড়িতে চাকরের 'চাকরি' পেয়ে গেল, একটু পর দেখা গেল ঝরনা সুন্দরী রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে 'নিশি রাতের কান্না' নামক এক সাড়াজাগানো উপন্যাস পড়ছে, যে বইয়ের লেখকের নাম শাহাদাত চৌধুরী, (যা ছবিতে আগেই দেখানো হয়েছিল), যে-শাহাদাত চৌধুরী এখন খসম নাম ধারণ করে তাদের বাসায় চাকরের 'চাকরি' করিতেছে।

যাই হোক, আরেক রাতে ব্যস্ত চাকর-কাম লেখক নিমগ্ন হয়ে সিগারেট টানছিল আর লিখছিল। পরিচালক তখন ঘরের দরজা খুলেই রেখেছিলেন, যাতে গোপন অভিসারিনী রূপবতী ঝরনা চুপি চুপি এ ঘরে আসতে পারে। যথাসময়ে ঝরনা সুন্দরী দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকে লেখকের পেছনে গোপনে বসে পড়ে; লেখক মহোদয়ের ছুঁড়ে ফেলা বা একটা-একটা করে কমপ্লিট করা লেখার পাতাগুলো পেছনে রেখে দেয়, আর ঝরনা বেগম সেই কাগজগুলো কুড়িয়ে হাতে তুলে নেয়, একঝলক পড়েও দেখে। আমি হালার ৪০-৪৫ বছর ধইরা লিখতেছি। লিখি হলো বাঁধাই করা ডায়েরি, খাতায়, বা লুজ শিটে লিখলেও তা গুছাইয়া রাখি যাতে উইড়া না যায়। আর হালার খসমের পো খসম পাগলের মতো লেখে আর পাতাগুলো পেছনে ফেলে দেয়, খোঁজও নেয় না ওগুলো উড়ে যাচ্ছে, নাকি ঝরনা এসে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, নাকি হালার ইঁদুরে কাটতেছে। একটা কবিতার পাতা তুলে নিয়ে সুন্দরী লাস্যময়ী ঝরনা নিজের রুমে যায়। মনে হলো চাকর আর রাজকন্যার রুম পাশাপাশি, মাঝখানে শুধু একটা দরজা। আলাদা ঘরও হতে পারে, শ্যুটিং স্পটে আমি ছিলাম না।

নিজের বেডে এসে খসমের কবিতার পাতা পড়তে থাকে ঝরনা। আসলে সেটা কবিতা না, গানের লিরিক। ঝরনা যে একজন সুরকারও, তা অবশ্য ছায়াছবির কোনো জায়গায় আগে-পরে উল্লেখ নাই। অথচ সেই ঝরনা প্রথম পাঠেই অপূর্ব সুরে গেয়ে ওঠে :

তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী
আমার স্বপন আধো-জাগরণ
চিরদিন তোমারে চিনি

পাশের রুম থেকে হঠাৎ ঝরনার কণ্ঠে এ সুর শুনতে পায় খসম । সে নিজের রুম থেকে উঠে এসে ঝরনার রুমে ঢোকে। ঝরনার রুমের দরজাও পরিচালক খুলে রেখেছেন আগে থেকেই, যাতে খসম যে-কোনো সময়ে যে-কোনো প্রয়োজনে এ রুমে আসতে পারে। খসম এসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ঝরনার কণ্ঠে গানের প্রথম অংশটি শুনতে থাকে। তখন ঝরনারও চোখ এসে পড়ে খসমের দিকে। কী রোমান্টিক চাহনি তখন পরস্পরের দিকে! খসম তখন এগিয়ে যেতে যেতে বলে, উহু, ওভাবে না, এভাবে। তারপর শুরু করে প্রচলিত সুরের গানটি - তুমি যে আমার কবিতা। দুজনে খুব মনোযোগ দিয়ে গানটা গাইল, রাতের বেলা ঘরের ভিতরেই। ঝরনার মা-বাবারা অবশ্য তাদের গান শুনতে পান নি বলেই মনে হলো।

এই যে ঝরনা সুন্দরী নিজের বেডে শুয়ে-বসে, নিজের সুরে যে অংশটুকু গাইল, সেই সুরটা ছায়াছবির বাইরে মাইকে বা রেডিওতে কখনো আমি শুনি নাই। শোনার কথাও না। আমি আগেই বলেছি, ঐ প্রথম গাওয়া অংশটুকু আমার কাছে খুব সুইট লাগে। যেহেতু ঐ সুরের সাথে মিল রেখে সুরকার সুবল দাস অন্তরার কোনো সুর করেন নি, আমি শুধু খেলার ছলে বা একান্ত শখের বশেই মূল সুরকার সুবল দাসের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা রেখে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ভিন্ন সুরের প্রথম তিন লাইনের সাথে মিল রেখে এ গানের প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরায় আমি সুর বসিয়েছি। সত্যি কথা বলতে কী, সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া প্রথম তিন লাইনের সুরটাই আমার কাছে বেশি মেলোডিয়াস মনে হয়। তবে, যেহেতু পুরো গানটা আর ঐ সুরে গাওয়া হয় নি, তাহলে স্বভাবতই ধরে নেয়া যায় যে, প্রচলিত সুরটাই সুরকার, পরিচালকসহ সবার কাছে গ্রহণীয় হয়েছিল। গানটা এত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে আমার মনে হয়, প্রথম সুরে গাওয়া হলেও এ গানটি সমান জনপ্রিয়তা, হয়তবা তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা পেতো। কেউ আবার দয়া করে ভেবে নেবেন না যে, সুবল দাসের প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরার সুর আমার করা এ সুরের মতো হতো :) নিশ্চয়ই তা হতো তার অন্যসব গানের সুরের মতোই অসাধারণ ও চিরসবুজ। আমার প্রয়াস শুধু শখের বশেই করা।

গানের ইউটিউব লিংক : এখানে ক্লিক করুন - তুমি যে আমার কবিতা

অথবা নীচের ভিডিওতে ক্লিক করুন :




তুমি যে আমার (ভিন্ন সুরে) : এখানে ক্লিক করুন - তুমি যে আমার কবিতা

কথা : ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল
সুর : সুবল দাস (প্রথম তিন লাইন)
কণ্ঠ : সাবিনা ইয়াসমিন (প্রথম তিন লাইন)
প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরার সুর, মিউজিক কম্পোজিশন ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্‌মুদ
মিউজিক কম্পোজিশন গাইড : বেবি লাবিব

লিরিক :

তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী
আমার স্বপন আধো জাগরণ
চিরদিন তোমারে চিনি
তুমি যে আমার কবিতা

আমি কে তোমার যদি জানতে
তবে কি আমায় কাছে টানতে?
হয়ত সুদূরে যেতে গো সরে
না, না নয়নের নীলে তুমি যে ছিলে
চিরদিন তোমারে চিনি
তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী

তুমি এলে তাই স্বপ্ন এলো
ইন্দ্রধনুর লগ্ন এলো
এ মধুর প্রহর হোক না অমর
ওগো মোর পল্লবীনি
তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী

যদি এ লগন আঁধারে ঢাকে
যদি নেভে দিন পথেরও বাঁকে
তুমি যে আমার বলবো আবার
চিরদিন তোমারে চিনি
তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী
আমারও স্বপন আধো জাগরণ
চিরদিন তোমারে চিনি
তুমি যে আমার কবিতা
আমার বাঁশির রাগিণী



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সামুর নতুন মডারেটরদের কাজ কি?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

সামুতে মডারেটররা ভালো কিছু উপহার দিতে পারছেন কি? তারা কি যোগ্যতাবলে এই পদপ্রাপ্ত হোন? আমার কাছে প্রশ্নগুলো বেশ ধোয়াশা পূর্ণ। কাভা ভাই থাকা কালে আমি এই ধরনের প্রশ্ন করি নাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পুরস্কার কোনও সৃষ্টির মানদন্ড হওয়া উচিত.......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪৭

'পুরস্কার' কি কখনও কোনও সৃষ্টির মানদন্ড হওয়া উচিত?
অথচ হয়, সেটাই হয় প্রতিনিয়ত।

আমাদের প্রতিবেশী একটি মেয়ে একেবারেই সাধারণ ছবি আঁকে। মেয়েটির বাবা রাস্ট্রের একজন বিখ্যাত আমলা। ওদের গোটা বাড়িতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন দেশে ছাত্ররা পুর্ণাংগ রাজনৈতক দল গঠন করতে শুনেছেন?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১১



আপনার জীবনে, কোন দেশে ছাত্ররা রাজনৈতক দল গঠন করতে শুনেছেন? পাকি জল্লাদেরা দেশের মানুষকে ইডিয়টে পরিণত করে জংগী সংগঠন গড়ছে আমাদের চোখের সামনে?

ছাত্ররা যেই দলটি করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর ডার্ক ন্যাচার প্রতিযোগিতা!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩








মানুষের ডার্ক ন্যাচার সমূহ নিয়ে পর্বাকারে পোস্ট দিতেন ব্লগার মি.বিকেল,অনেকেই পড়তেন ;কমেন্ট করতেন। কমেন্ট যারা করতেন তারা নিজেদের ভেতরে এসব খুজে বের করে, রিয়েলাইজ করে কমেন্ট করতো না;করতো অন্য কিছু।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংবাদ শিরোনাম......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১১



মাত্র ২০ টি
সংবাদ শিরোনাম....সিলেক্ট করেছিলাম। আপলোড হয়েছে ১০ টা। অবশিষ্ট দুর্নীতির শিরোনাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×