যদি গানই হতো দেহের খোরাক, কেমন হতো? আহারের জন্য যুদ্ধ হতো না। গানে গানে পৃথিবীটা হতো বেহেশ্তখানা! আমি তো মৃত্যুর পর আর কিছু চাই না, চাই শুধু সুর আর গান, গান আর কবিতা, আর কবিতার মতো তোমাকে!
গত পোস্টে দুইটা গান পোস্ট করেছিলাম। এবার তার চাইতে বেশি। প্রথম গানটা আমার রেন্ডিশন। এটা একটা বয়াতী গান। আমার মানব জনম বৃথা গেল রে বাজান। বয়াতী গানে মনসুর হাল্লাজের কাহিনি অনেক হৃদয়গ্রাহী ও জনপ্রিয় একটি গান। সর্বশেষ এ গানটা শুনেছিলাম আমাদের ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার বিখ্যাত বাউল শিল্পী পরশ আলী বয়াতী সাহেবের কণ্ঠে (১৯৮৪/৮৫ সালে হবে), আমাদের পাশের গ্রাম সুতার পাড়ার বিখ্যাত শাহ মাদবর আলী সাহেবের বাড়িতে। পরশ আলী বয়াতীর কণ্ঠে ছোটোবেলায়ও এই গানটা শুনেছি, যখন তিনি আমাদের প্রতিবেশী ফুফাত ভাই আহমেদ আলী ভাইদের বাড়িতে এসে গানের আসর বসাতেন। আহমেদ আলী ভাইয়ের মাকে তিনি ধর্ম-মা ডেকেছিলেন। সেই সূত্রে মাঝে মাঝেই আসতেন এবং একাই গানের আসর বসাতেন। অনেক রাত অব্দি গান হতো। সেই আসরেও এই গানটা শুনেছি। আরো অনেক বাউল শিল্পীর কণ্ঠেই এটা শুনেছি, তবে পরশ আলী বয়াতীর কণ্ঠে এটা যত মূর্ত ও আবেদনময় হয়ে উঠতো, অন্য কারো কণ্ঠে এমনটা হতে দেখি নি।
দীর্ঘ এই কাহিনি-গানের এক পর্যায়ে এরকম কিছু লাইন ছিল :
আমার মানব জনম বৃথা (কিংবা ব্যথায়) গেল রে বাজান
একজন গুরু না ভজিয়া (বা চিনিয়া) রে
মায় তো জানে পুত্রের বেদন
অন্যে কি তা জানে?
এর বেশি মনে নেই।
শাহ মাদবর আলী সাহেবের বাড়িতে নিয়মিতই বাউল শিল্পীদের গানের আসর হতো। দূর দূরান্ত থেকে দলে দলে প্রচুর মানুষ আসতেন সেই গান শুনতে। সর্বশেষ যেদিন গানটা শুনেছিলাম, সেদিন কয়েকজন ব্যক্তি এই গানটা টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করেছিলেন। গানের পালা শেষ হবার মাস এক কী দুই মাস পর সুতার পাড়া গ্রামের কোনো এক বিয়ে-বাড়িতে রাতের বেলা মাইকে সেই রেকর্ড করা গানটা বাজানো হচ্ছিল, যেটি আমি আমাদের গ্রাম থেকে চকের মাঝখান দিয়ে সুতার পাড়া গ্রামে যাওয়ার যে সড়কটা আছে, ওখানে বসে খুব উদাসীন ভাবে বসে শুনছিলাম। রাত তখন ১০টারও বেশি বাজছিল। পাশের গ্রাম থেকে খুব মধুর করুণ সুরে সেই গান ভেসে আসছিল, আমি সেই গানে নিমগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম।
সেই গানটা আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। গানটার উপর আমি কিছু কথা জুড়ে দিয়েছি। সুরটাও মূল সুরের মতো নেই, কিছুটা, কিংবা হয়ত অনেকটাই পার্থক্য হয়ে গেছে। শৈশব-কৈশোরে পরশ আলী বয়াতী ছিলেন আমার গানের মহানায়ক। এখনো তিনি আমার মনে সেরকমই আছেন। তার সাথে যোগাযোগ করার অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তার এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে প্রতিবেশী চাচাত ভাই আজিজের সাথে (আলী কাকার ছেলে)। এই গানটি গেয়ে ফেইসবুকে শেয়ার করে আমি ফেইসবুক ফ্রেন্ডদের অনুরোধ করেছিলাম, কারো সাথে পরশ আলী বয়াতী সাহেবের যোগাযোগ থাকলে তারা যেন দয়া করে তাকে আমার শুভেচ্ছা জানান, আর এই গানটি যেন তাকে শোনানো হয়, এই গানটির কথা তার মনে পড়ে কিনা সে-কথাটি জানার জন্য। করুণ খবরটি জানালো ফেইসবুক বন্ধুরা - পরশ আলী বয়াতী সাহেব বছর খানেক আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। আমার আবাল্য-সঙ্গীত-মহানায়ক পরশ আলী বয়াতীর প্রয়াণের খবরে আমি খুব ব্যথিত হই। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।
গানের লিংক : আমার মানব জীবন বৃথা গেল রে বাজান - মূল - পরশ আলী বয়াতী। রেন্ডিশন : খলিল মাহ্মুদ
তোমার কোনো দোষ ছিল না
এটা শুধুই সুরের খেলা। সন্ধ্যাবেলা গোসল সেরে তোয়ালেটা বারান্দায় মেলতে গিয়েই হুট করে সুরটা চলে আসে। ফার্স্ট ট্রাই, সেকেন্ড ট্রাই, একেবারে তাৎক্ষণিক।
লিরিক :
তোমার কোনো দোষ ছিল না
তুমি যে তখন কোথায় বসতি গড়েছ
আমার তো সেসব জানা ছিল না,
জানা ছিল না
তোমার কোনো দোষ ছিল না
তুমি তো তখন কোথায় ছিলে
কোথায় ছিলে, জানা ছিল না
কিছু তো আমার জানা ছিল না
৩০ নভেম্বর ২০২১
গানের লিংক : তোমার কোনো দোষ ছিল না : কথা, সুর ও কণ্ঠ - খলিল মাহ্মুদ
আমার সঙ্গে চলো
কথা, সুর ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
লিটার : বেবি লিটার
--
আমার সঙ্গে চলো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার পথে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার পথটি ধরো
কেন হিংসা নিন্দা
আভিজাত্যের
দর্প দম্ভ করো গো
আমার সঙ্গে চলো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার পথে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার পথটি ধরো
এই যে তোমার জ্ঞানের দম্ভে
কত না লম্ফ ঝম্ফ
নিজেকে সবার শ্রেষ্ঠ ভাবো
পরকে ভাবো তুচ্ছ
একদিন
এক ফুৎকারে উড়ে যাবে সব
জবান হলে বন্ধ গো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার পথে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার পথটি ধরো
ধন সম্পদের পাহাড় তোমার
শক্তি বাহুবলের
মাটিতে তোমার পা পড়ে না
দম্ভ অহঙ্কারে
সেদিন
দর্প তোমার যাবে না সঙ্গে
দর্প তোমার মাটিতে মিশবে
যখনশুইবে মাটির ঘরে গো
আমার সঙ্গে চলো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার পথে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার পথটি ধরো
আমিই সত্য আমিই সহজ
আমিই সত্য তোমার বন্ধু গো
সত্য পথে চলো রে বন্ধু
ধরো সত্য পথটি ধরো
সহজ পথে চলো রে বন্ধু
ধরো সহজ পথটি ধরো
তোমার হিংসা নিন্দা
আভিজাত্যের
দর্প দম্ভ ছাড়ো গো
সহজ পথে চলো রে বন্ধু
ধরো সহজ পথটি ধরো
সত্য পথে চলো রে বন্ধু
ধরো সত্য পথটি ধরো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার পথে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার পথটি ধরো
আমার সঙ্গে চলো রে বন্ধু
ধরো আমার সঙ্গ ধরো
আমার সঙ্গ ধরো
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
গানের লিংক : আমার সঙ্গে চলো, কথা, সুর ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
আমাদের এই ভালোবাসা
এটা শুরুতে একটা এক লাইনের গান ছিল (সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র এক লাইনের গান)। কিন্তু এ সুরটা আমি নিজে নিজে অনেক বেশি আওড়েছি। সুরটা শুরুতে যা ছিল, এখন তার চাইতে অনেক বেশি রিফাইন্ড। অবশেষে একটা পূর্ণাঙ্গ গানই করে ফেললাম। তবে, এটার ২য় ভার্সন হবে একটা - দেশের গান, সুরে সামান্য চেঞ্জ আনা হবে।
লিরিক :
হা হা হা হা হা হো হা হা হা হো
হো হো হো হো হো হো হো হো হো
হো হো হো হো হা হা হা হা
হো হো হো হো হো হো
আমাদের এই ভালোবাসা
চিরদিন নিশ্চয় থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
পাহাড়ের গায়ে লেখা থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
পাখিদের কাকলিতে বাজবে
তারপর তারপর তারপর তারপর
তারপর নিশ্চয় থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
চিরদিন নিশ্চয় থাকবে
হা হা হা হা হা হা হা
হো হো হো হো হো হো
আমাদের এই ভালোবাসা
মানুষের মুখে মুখে বাঁচবে
অমর কাহিনি হয়ে থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকবে
তারপর তারপর তারপর তারপর
তারপর নিশ্চয় থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
চিরদিন নিশ্চয় থাকবে
তারপর তারপর তারপর তারপর
তারপর নিশ্চয় থাকবে
আমাদের এই ভালোবাসা
চিরদিন নিশ্চয় থাকবে
হা হা হা হা হা হা হা
সুর ও প্রথম দু লাইন : ১৬ আগস্ট ২০১৯
সম্পূর্ণ লিরিক : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১
গানের লিংক : আমাদের এই ভালোবাসা
সেই তুমি চলে গেছো
এটা সর্বশেষ গান। বিরহের গান। লিরিক দেখুন।
সেই তুমি চলে গেছ
আবার ফিরবে কিনা
সে কথা আমায় তুমি বলে যাও নি
বলে যাও নি তুমি
সে কথা আমায় তুমি বলে যাও নি
সেই পথ ধরে হাঁটি ফুলবীথিকায়
যেদিকে তাকাই হায় স্মৃতিরা আমাকে কাঁদায়
সারা রাত জেগে থাকি
রাতের আঁধার যেন
করুণ বিষের মতো আমার হৃদয় জুড়ে
সারা রাত বেদনা ছড়ায়
কোথাও রাখি নি লিখে ঠিকানা তোমার
তুমিও যাও নি ফেলে পথের চিহ্ন কোনো
আজো পথে চেয়ে আছি
ভোরের কুয়াশা কেটে
হয়ত হঠাৎ তুমি আবছা ছায়ার মতো
ধীর পায়ে আসছো হেঁটে
০৬ ডিসেম্বর ২০২১
গানের লিংক : সেই তুমি চলে গেছো, কথা, সুর ও কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
একটা এক্সপেরিমেন্ট - এক পলকের একটু দেখা - কিশোর কুমার, ছায়াছবি 'লুকোচুরি'
এটা অনেক জনপ্রিয় গান। আমি কলেজ জীবনে এ গানটা অনেক বেশি গুন গুন করে, বা বন্ধুদের সাথে গেয়েছি। সেদিন একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে গেল। এটা গুন গুন করে গাইতে গাইতে সুর আঁকাবাঁকা বাঁকাতেড়া করতে করতে দেখি, এটা আর আদি সুরে নাই। তবে, যে সুর হয়ে গেছে, ওটা আমার মৌলিক সুরই বটে। তো, এই নতুন সুরে গানটা কেমন শোনায়, লিংকে দেখুন। সুরটা আরো রিফাইন এবং মূল সুর থেকে স্পষ্ট পার্থক্য করেই আমার নতুন একটা গান হবে ভবিষ্যতে।
গানের লিংক : এক পলকের একটু দেখা, ভিন্ন সুর, কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
তাহলে কিশোর কুমারের গাওয়া মূল গানটাও শুনে নিন এই লিংকে ক্লিক করে : এক পলকের একটু দেখা, কণ্ঠ : কিশোর কুমার
উৎসর্গ : প্রয়াত পরশ আলী বয়াতী সাহেব, দোহার উপজেলা, ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৩