হঠাৎ হঠাৎ একটা অরিহ গন্ধ ভেসে আসে বাতাসের স্বননে; প্রথম তারুণ্যে অঞ্জনার কেশফুলে
এমন পেলব একটা ঘ্রাণ ছিল; কলমিলতা আর ধুধুল্লার শরীরেও ছিল এমন অদ্ভুত কিছু ঘ্রাণ;
এখনো কোনো কোনো নিঝুম দুপুরে বড্ড আচানক নাকের পর্দা ভেদ করে একগুচ্ছ সৌভিকঘ্রাণ
মগজে ঢুকে পড়ে; অন্ধের মতো ঘ্রাণের উৎস খুঁজতে খুঁজতে কেবলই উদ্ভ্রান্ত হই;
সে-রাতে ভৈরবের রেল-স্টেশনে নামতেই বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ একটা
অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করলো; ‘ভালো আছিস, সোনাপাখি?’ বলতেই কেঁদে উঠলো অহনা,
‘তোর ঘ্রাণ এখনো ভুলতে পারি না সোনা; ঘরের চারপাশ, বারান্দায় এখনো তোর ঘ্রাণ। আমাকে
জ্বালায়, পোড়ায় তোর ঘ্রাণ। আর পারি না, আমাকে একটু বাঁচতে দে না, পাখি!’
১২ অক্টোবর ২০১২
...................অরিহ গন্ধ
...................‘অরিহ গন্ধটা’ খুব নিরীহ, সাদামাটা গন্ধ নয়, এমন একটা
...................অনির্বচনীয় গন্ধ, যা অন্যসব গন্ধকে ছাপিয়ে ‘অস্তিত্বশীল’ হয়ে ওঠে।
...................গন্ধের কোনো ‘অস্তিত্ব’ নেই, কিন্তু এ গন্ধটার এমনই প্রভাব, মনে হয়
...................নিরীহ বাতাসের মৃদুতম শব্দতরঙ্গের সাথে একাত্ম হয়ে অতিশয়
...................মোলায়েমভাবে নাসারন্ধ্রের ভেতর ঢুকে পড়ে। কোথা থেকে আসে
...................এ গন্ধ? কোন্ অমরাবতীর পুষ্পোদ্যানে কোনোদিন-না-দেখা ফুলের
...................থেকে উঠে আসছে এ ঘ্রাণ? প্রথম যৌবনে রাহিমা নাম্নী এক কিশোরীর
...................চুলগুচ্ছে এমন ঘ্রাণ ছিল। আড়িয়াল বিলে ডগাতোলা কলমিলতার শরীরে
...................এমন মাদকতাময় কিছু ঘ্রাণ ছিল। ধুধুল্লা-লতা মুঠো ভরে হাতে তুলে নেবার
...................সময় এমন কিছু ঘ্রাণে আমি মাতোয়ারা হতাম। সেইদিন কবে চলে গেছে,
...................অথচ আজও সেই ঘ্রাণ আমাকে পাগল করে। কোথা থেকে এ ঘ্রাণ আসে?
...................ঘ্রাণের উৎস খুঁজে খুঁজে বিষাদগ্রস্ত হয়ে উঠি, উৎস মেলে না।
...................এমনটা কি শুধু আমারই ঘটে থাকে? কেন ঘটে থাকে?
...................ঝঞ্ঝা-ক্ষুব্ধ যৌবনে যে যুবতীর কোমল গন্ধে জীবনে স্থৈর্য্য এসেছিল, সে হারিয়ে
...................গেলো। কিন্তু রেখে গেলো তার অফুরন্ত ঘ্রাণ। অহনার খবর জানা নেই, তার ঠিকানা
...................হারিয়ে গেছে। এক ভবঘুরে, ছন্নছাড়াকে মনে রাখবে অহনা, এতখানি আশা করাই
...................অন্যায়। কিন্তু যেদিন মাঝরাতে, একটা অচেনা নাম্বার থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
...................অতি পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর- অহনা সে- অনেক কাল আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি। সে তো
...................সুখেই আছে, এমন ভেবে ভেবে কত কেঁদেছি। ....এই ভাবনাটাই ভুল ছিল। কেউ ভুলতে
...................পারে না। আমিও যেমন অহনার কথা মন থেকে মুছে ফেলতে পারি নি, পারে নি অহনাও।
...................আমার যেমন মনে হয়, একটা অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ আমায় পাগল করে দিল, অহনার দশাও
...................এমনই। ভুলতে না পারা কী যে বেদনাময়, বুকের ভেতর যার তুষের আগুন সেই শুধু তা জানে।
...................অহনাও ভুলে যেতে চায়, ভুলে গিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।
...................একটা ঘ্রাণ, শুধু একটা ঘ্রাণ নয়, একটা অদৃশ্য বন্ধনের প্রতীক।
ঋণ : ব্লগার অপর্ণা মম্ময়
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২১ রাত ৯:২১