নিপুণ অক্টোপাসের মতো সংসার ঘিরে
মায়া তার বিছায়েছে জাল
মায়া খুব নিষ্ঠুর বিষ, তিলে তিলে নিঃশেষ করে
মায়া এক গোপন হন্তারক, অজান্তেই করে যায় খুন
মায়া এক অলঙ্ঘ্য বেড়ি, ছেঁড়া যায় না যাকে
আমাদের হৃদয়গুলো মায়ার আখড়া
মনগুলো আবেগের খনি
মায়াগুলো শুধু বিষই নয়,
ধারালো চাকুর মতো হৃদয় কেটে ফালি ফালি করে
মায়া আমাকে অস্থির করে, তুফানের মতো ঢেউ তোলে মায়া
মায়া আমাকে কুরে কুরে খায়
মায়া আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দেয় না
দূরবাসী সহোদর রাতদিন অশ্রু ফেলে, ইথারে
ভেসে আসে কান্নার সুর
কী করে স্থির থাকি এ করুণ বিষাদে?
কী করে স্থির থাকি যখন মনে পড়ে বোনের অন্ধ আর্ত চোখ
কতদিন ‘মা’ ‘মা’ বলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙে গেছে
বাবার হাত ধরে গুঁটি পায়ে হেঁটে যায় ছোট্ট এক শিশু-
ঝাঁপসা চোখ একধ্যানে তাকিয়ে থাকে, অবিরাম বুক ভেসে যায়
আমি তো থাকবো না আর মাত্র কিছুদিন পর। দু-বেলা
খেয়ে-পরে সুখে থাকবে তো সোনার সন্তানেরা?
বহুদিন দেখি না কন্যার মুখ। হবে তো ওদের ভূরি ভূরি সুখ?
অলক্ষুণে অজস্র চিন্তা মাথায় করে ভিড়
ওরা খুব গরীব হয়ে গেল। ফুৎকারে উবে গেল সবগুলো সুখ।
হয়ত-বা, কারো খাবারের দিকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকবে
শীর্ণকায় ক্ষুধার্ত ছেলেটা, ঝলমলে কাঁচের ভেতর রঙিন চকোলেট,
হাই-ফাই রেস্টুরেন্টের ফাস্টফুড, বার্গার খেতে
অনেক সাধ হবে- একদিন এসবের ওপর শুয়ে-বসে
ওরা খেলতো, আনন্দ করতো; কষ্টে ওদের বুক ফেটে যাবে।
হায়, এসব ভাবতে ভাবতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে ওঠে আমার কণ্ঠ
আর বিশ্বাস করুন, এখন লিখতে যেয়েও টনটন ব্যথায়
ফুলে উঠছে চোখ।
আরো কত স্বজনের কথা, বহুদূর-বন্ধুর কথা মনে হলে
পাঁজর ভেঙে খান খান হয়ে যায়
চোখ ফেটে রক্ত ঝরে, মায়া আমাকে উন্মাতাল করে
মায়া আমাকে একদণ্ড সুখ দেয় নি কখনো
মায়া আমাকে আষ্ট্রেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে অগণিত রজ্জুর মতো
মায়া আমাকে গ্রাস করেছে কুটিল অক্টোপাসের মতো
আমি তাই মুক্তি চাই, বিভ্রমের মায়াকুঞ্জ থেকে
সংসারের ব্যুহ থেকে মুক্তি চাই আকাশের অবারিত বুকে
এমন একটা জীবন চাই, যে-জীবনে মায়াময় কারাগার নেই
আমি সেই নিগূঢ় অরণ্যে যাব, কেটে ফেলে এইসব মায়ার বাঁধন
যেখানে কান্না নেই, সংসার নেই। অনুপম শান্তি নিকেতন।
হে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, আশা করি মনকে শান্ত রাখবেন,
যেদিন সকালে দরজা খুলে দেখবেন – আমি নেই।
শূন্য ঘর। শূন্য পাটাতন।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১