মানবভূষণ
লজ্জাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ভূষণ। একজন লজ্জাশীল মানুষ
অন্যায় করেন না, যেহেতু কৃত কুকর্মের জন্য তাকে
চোখ খুলে অন্যের চোখে তাকাতে হবে, যে-চোখ
সমস্ত লজ্জার আখড়া।
সম্পদশালী
একজন নির্লোভ বা নির্মোহ মানুষই প্রকৃত সম্পদশালী,
কেননা, তার কোনো অভাব নেই, কেননা তার কোনো
কিছু চাওয়ার নেই।
ক্ষমা
ঔদ্ধত্ব্যের ক্ষমা নেই, ক্ষমা করতে নেই।
দাম্ভিকতা চূর্ণ হওয়ার পর যেদিন ভূতলে
লুটিয়ে ভুলের জন্য কেঁদে জাড় হবেন
সেদিনই তার প্রকৃত মানবিকতা প্রস্ফুটিত হবে-
কেবল সেদিনই তাকে এক শর্তে ক্ষমা করা যায়-
এ জন্মে আর কোনোদিন ‘ইতর’ হবেন না।
সুখ
সুখ একটা মানসিক পরিস্থিতি মাত্র, সম্পদের উপস্থিতি
বা অনুপস্থিতির উপর সুখের স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল নয়।
ময়লা
‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না’। আপনার মনটা
ধুয়ে ফেললেই খাসলত সাফ হয়ে যাবে।
প্রেম ও মানবিকতা
মানুষকে ভালোবাসার নামই মানবিকতা। এই
ভালোবাসা মুখে ‘তোমাকে ভালোবাসি’ বলা না;
মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, বিপদ অতিক্রমণে
হাত বাড়ানোই মানবিকতা।
প্রেমও অনুরূপ। গদগদ স্বরে ‘তোমাকে ভালোবাসতে
বাসতে ফতুর হয়ে যাব’ বলে রাতভর পাশ ফিরে শুয়ে
থাকা, অতঃপর অসুস্থ স্ত্রীকে নির্জন গৃহে ফেলে রেখে
পরকীয়া রমণীর সম্ভোগে গমন ‘প্রেম’ নহে।
গো-চোনা
আরেকটা প্রবাদ আছে – এক বালতি দুধে একফোঁটা
গো-চোনা পড়লেই পুরোটা দুধ জমে নষ্ট হয়ে যায়।
আপনার মুখের কথা বন্দুকের গুলির মতো, একবার
বেরোলে আর ফেরানো যায় না। বলার আগে কথাগুলো
মনে মনে পর্যালোচনা করুন। আপনার ৫টা কথায়
মানুষ খুশি হোন, পরের ৩টা কথায় আপনাকে খুব
প্রজ্ঞাবান মনে হয়, সর্বশেষ ২টা কথায় আপনাকে
‘ইডিয়ট’ বা ‘ইতর’ মনে হয়- প্রতি ১০টা কথার
শেষ দুটো কথা পরিত্যাগ করুন। ‘স্যাডিস্টরা’
মানুষকে আঘাত করে আনন্দ পান। কেউ ‘স্যাডিস্টদের’
ভালোবাসে না। আমরা আপনার মাহাত্ম্যকেই দেখতে চাই।
সম্মান
আমাদের বাসার কাজের লোকটা, কিংবা অফিসের চতুর্থ
শ্রেণির কর্মচারিটাও একটা পরিবারের প্রধান ‘কর্মকর্তা’,
যেখানে তার একটা ‘রাজদরবার’ ও ‘সিংহাসন’ রয়েছে;
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, পুত্রবধূ-জামাতারা তার সম্মানিত সভাষদ;
এদেরকে ‘আপনি’ বলুন এবং সম্মানের সাথে ‘আদেশ’
করুন। সম্মান কেনা যায় না, এটা অর্জন করতে হয়।
মত-বিরোধ ও সদাচরণ
জ্ঞানের ঘাটতির জন্য কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন
না। আপনার চাইতেও অধিক জ্ঞানবান পণ্ডিত রয়েছেন,
তাদের কথা ভেবে মাথা নত করুন।
এই ব্লগে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষক আছেন,
অধ্যক্ষ ও কলেজশিক্ষক আছেন। অনেক জ্ঞানী
পণ্ডিত ও গবেষক আছেন। তাদের নিভৃত বিচরণ,
বিনয় ও নমনীয়তাই হলো তাদের শক্তিমত্তা।
তারা ‘সদাচরণ’ কাকে বলে জানেন। চেষ্টা করলে
আপনিও সেটা শিখতে পারেন।
আমার মতের সাথে আপনার মতের মিল হবেই –
এমনটা ভাবি না। তবে, আপনার মত ও দর্শনকে
সম্মান করি এবং তা সমুন্নত রাখতে আমার আন্তরিক
সহযোগিতা পাবেন সর্বদাই। এ সহযোগিতা পাওয়ার
জন্য আপনার একটাই ‘যোগ্যতা’ থাকা চাই, তা হলো
অন্যের মতামতের প্রতি আপনার ‘শ্রদ্ধাবোধ’।
কথা
কথায় মানুষ হাসে এবং
কথায় মানুষ কাঁদে
কথায় ঘর ভাঙে, আবার
কথায়ই ঘর বাঁধে।
এ ছোট্ট কবিতাটা ২০০৪ সালে লেখা এবং ২০০৫ সালে
প্রকাশিত আমার ‘অন্বেষা’ কবিতাগ্রন্থের অন্তর্গত। কথার
শক্তি একটা পারমাণবিক বোমার চাইতেও অনেক বেশি,
কারণ, ঐ বোমাটা ‘কথা’র বলেই চালিত হয়। আপনার
কথা যেন কারো বুকে ক্ষতের সৃষ্টি না করে; আপনার কথা
দগদগে ঘায়ে মলমের মতো যেন হয়। আপনার কথা
আপনাকে ‘মাহাত্ম্যের’ মুকুট পরাবে।
পরিবেশ
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ
এত ডাকি তবু কেন
কও না কথা বউ
উপরের প্রচলিত ছড়াকে এভাবে লিখলাম :
আতা গাছে টিয়া পাখি
ডালিম গাছে তোতা
এত ডাকি, আমার বউয়ের
কান কি তবে ভোঁতা?
পরিবেশ গম্ভীর হয়ে উঠলে চটুল রসের কিছু
গল্প বললে পরিবেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৮