ব্লু নাইলের পশ্চিম তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে বুড়িগঙ্গার কথা মনে
পড়বার কারণ দেখি না। সূর্য ডুববার চার ঘণ্টা পরও
বাতাসের ভাঁপ বুকে এসে বিঁধলে নদীতে নাববার দুর্মর ইচ্ছেরা
পামর সংশয়ে ক্রমশ দমিত হতে থাকে। পদ্মা অথবা
মেঘনায় সাঁতার কেটেছি, আটলান্টিকের দুস্তর গহিনে ঢুকে গিয়ে
কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে তীরে পৌঁছেছি। ইতিহাসের নীলনদ
টলটল পানির চাকচিক্যে যখন বুকের মহিমা দেখায়, আমার
বাড়তে থাকে লালসা, আর জীবনের কোন মুক্তো কোন সিন্ধুকে
লুকানো, সাধ হয় খুঁজে দেখি।
নদীর ইতিহাস তুমি কেন পড়ো আমি জানি না
দেশ বা জাতিতত্ত্বে গভীর আগ্রহ কেন জানা নেই
আমার ওষ্ঠে ওসবে স্বাদ নেই, কোনোকালে ছিল না
তোমার ঝলমলে হাসি ঝরে পড়ে বসুন্ধরার প্রত্যেক ফ্লোরে,
ইলেকট্রিক সিঁড়িতে
আফ্রা’র রঙিন বিতানে আমার তখন ভিজে ওঠে চোখ-
কতকাল দেখি না স্বদেশ
জন্ম থেকেই আবেয়ী জ্বলছে; এখন ছারখার।
সুরম্য খার্তুমের সুবিন্যস্ত পথঘাট ও নির্মল আলোকসজ্জা দেখে
কে বলবে- ৫৬ থেকে দেশটিতে দাবদাহ? অমায়িক
এবং শৃঙ্খলাপরায়ন, সৎ মানুষের উত্তর জনপদ আফসোসে
চাপড়ায় বুক- হায়, আমরা ভাগ হয়ে যাচ্ছি, ভেঙে যাচ্ছি আমরা।
হায় পাপেট জাতিসংঘ; জাতিসংঘবাহিনী!!
মানুষ ভুলে যায় নদী ও পাখিকে। ফুলের গন্ধ বাতাসে উঁবে যায়।
সম্পর্ক ভেঙে যাবার সঠিক উপমা পৃথিবীতে
হয়ত-বা নেই। কত সহজেই অতিশয় ভালো আছো নির্বিঘ্ন
গেরস্থালি আর নিরুদ্বিগ্ন সময়কে কবজ করে।
সাঁঝতারা খুব অবাক হয়েছে। তোমার উৎফুল্লতা, স্বতঃস্ফূর্ত
উচ্ছ্বাস, আর বারংবার ‘ঝেড়ে ফেলেছি ইতিহাস ও অতীত’
যেভাবে বলেছো, এবং ‘ভালো আছি খুব, এই হয়েছে ভালো’-
আমাকে এটুকু শান্তি দিয়েছে- আমার কখনো দায় ও দোষ ছিল না।
দক্ষিণে ভাগ হয়ে যাচ্ছে যুবা; ভাগ হয়ে যাচ্ছি আমরাও,
আমরাও ভেঙে যাচ্ছি।
এভাবেই মানুষ ও জনপদ ক্রমশ ভাগ হতে থাকে, ভেঙে ভেঙে
সরে যেতে থাকে; অনন্তর একদিন ভুলে যায় নদী ও পাখিকে;
এমনকি সত্তাকেও।
২৫ জুলাই ২০১০
ফুটনোট
আবেয়ী- সুদানের একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। যুবা- দক্ষিণ সুদানের রাজধানী। দারফুর- সুদানের আরেকটি রাজ্য; এখানেও গৃহযুদ্ধ চলছে। আফ্রা- সুদানের রাজধানী শহরে একটা অভিজাত শপিং মল; বাংলাদেশের বসুন্ধরা সিটির মতো অত্যাধুনিক না হলেও এর সাথে তুলনীয়। খার্তুম- সুদানের রাজধানী।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬