somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আনারসের টুকরোটিতে কামড় বসানোর সাথে সাথেই শাহজাহান সাহেবের বুকটি হাহাকার করে উঠলো। একটি নিদারুণ কষ্টের কথা তাঁর মনে পড়ে যায়। তিনি এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আনারসের টুকরোটি চিবিয়ে গিলে ফেলবেন, নাকি কামড়-বসানো টুকরোটি বের করে এনে নর্দমায় ফেলে দিবেন? মুখের জিনিস এভাবে বের করে আনাটা খুব লজ্জার ব্যাপার হবে, আবার ফলটা ফেলে দেয়াও ঠিক হবে না।

আনারসের টুকরোটিতে কামড় বসানো অবস্থায়ই শাহজাহান সাহেব খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, তাঁর জিহ্বা নড়ছে না, জিহ্বার মাথায় আনারসের অমৃত-মধুর রসটা যেন তার দুঃখকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি নিজেকে অতি নিষ্ঠুর মানুষ ভাবলেন। কী করে যে তিনি এই ফলটি তাঁর নিজের মুখে পুরতে পারলেন তা ভাবতে ভাবতে শাহজাহান সাহেব অত্যন্ত বেদনার্ত হয়ে পড়লেন। তাঁর ইচ্ছে করতে লাগলো মুখ থেকে আনারসের টুকরোটি বের করে এনে নর্দমায় ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু তা তিনি করতে পারেন না। আরো বহু মানুষ আনারসওয়ালার চারপাশে দাঁড়িয়ে ভিড় করে আছে, আনারস খাচ্ছে। এভাবে মুখ থেকে বের করে আনারস ফেললে সবাই ভাববে হয়তোবা এ লোকের আনারস পঁচা অথবা কোনো পোকাটোকা লেগে ছিল। যারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে তারা আনারস না কিনেই ফিরে যাবে। আনারসওয়ালার তাতে প্রচুর ক্ষতি হবে। তিনি আনারসওয়ালার ক্ষতি করতে চান না।
এভাবে মুখের ভিতর আনারসের টুকরো ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা বিব্রতকর। তিনি ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে টুকরোটি কেটে চিবিয়ে গিলে ফেললেন।
শাহজাহান সাহেবের চোখে পানি এসে গেল। তিনি অনেক কষ্টে পুরো একপ্লেট আনারস খাওয়া শেষ করলেন। তাঁর যদিও একবার মুখের টুকরোটি ফেলে দেবার ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু মুহূর্তে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। ফল হলো আল্লাহর উৎকৃষ্টতম নিয়ামতের একটি। এটিকে ফেলে দেয়া মানে আল্লাহর নিয়ামতকে অবজ্ঞা ও অসম্মান করা। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাত’য়ালা ফেলে দেয়া প্রতিটি খাদ্যকণার চুলচেরা হিসাব নিবেন। আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, শাহজাহান মিয়া, তুমি ফল না খেয়ে নর্দমায় ছুঁড়ে মেরেছিলে। আমি মানুষের জন্য ফলকে অন্যতম নিয়ামত হিসাবে সৃষ্টি করেছি। তুমি জেনেশুনে আমার নিয়ামতের তাচ্ছিল্য করেছিলে কেন?
শাহজাহান সাহেব তখন কী জবাব দিবেন? শেষ বিচারের ভয়ে তিনি সবটুকু আনারস সাবাড় করে দাম মিটিয়ে দিলেন।

এখন তাঁর বেশ আরাম বোধ হচ্ছে। গরমে মাথাটা একেবারে ঝাঁ ঝাঁ করছিল। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ্ মাজারের কাছে তিনি বহুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন, প্রায় সাড়ে তিনটা থেকে। মগবাজারে গত সাতদিন ধরে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলেন। নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের ওপর পর্যালোচনামূলক প্রশিক্ষণ কোর্স। গত বছর থেকে দেশে এই কোর্সটি চালু হয়েছে। প্রতি বৎসর মাত্র চারটি করে কোর্স হয়, পাঁচ জন ব্রিটিশ নাগরিক এই কোর্স পরিচালনা করে থাকেন। শাহজাহান সাহেব যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন সেখান থেকে তিনিই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে কোর্স করতে এসেছেন। নিজ স্কুলে শাহজাহান সাহেব রত্নতুল্য। তাঁর প্রতিভা, মেধা ও আচরণে স্কুলের প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষক মুগ্ধ। তিনি মাত্র দেড়বছর ধরে বর্তমান স্কুলটিতে চাকুরিরত আছেন। এতো অল্প সময়ে কোনো শিক্ষকের এমন জনপ্রিয় হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

সদর ঘাটের কাছে নিউ বসাক লেনের এক মেসে শাহজাহান সাহেব এক রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন। ঠিকা করা ঝি রান্নাবান্না করে দিয়ে যায়। মাসিক বেতন দিয়ে সপরিবারে শহরে থাকা সম্ভব নয়। তাই তাঁর স্ত্রী ময়নামতি ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি জয়পাড়ায় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে। আজকাল স্ত্রীর চেয়ে ছেলেমেয়েরাই তাঁকে বেশি টানে। স্ত্রীও এটা জানেন, এবং মনে মনে তা-ই তিনি চান। সন্তানদের প্রতি বাবার যতো বেশি টান থাকে, সন্তানদের মা ততো বেশি খুশি থাকে।
কিন্তু প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে যাওয়াটা অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে। প্রতিবার যাতায়াত বাবদ প্রায় দেড়শ টাকা খরচ পড়ে যায়। একেবারে খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না, ছেলেমেয়েদের জন্য হয় একটা ব্রেড, অথবা এক প্যাকেট টোস্ট বিস্কুট নিতে হয়। এর সাথে কলা নিতে পারলে ওরা বেজায় খুশি হয়। সবসুদ্ধ দু’শ টাকার ওপরে খরচ পড়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে দু’শ টাকা খরচ করে বাড়িতে যাওয়া-আসাটা তাঁর কাছে বিলাসিতা মনে হয়। কারণ যতবার এরূপ বাড়তি খরচ হয় ততবার ময়নামতির মাসিক খরচ-বরাদ্দ থেকে দু’শ টাকা করে কমতে থাকে। ময়নামতির তখন মাস চলতে খুব কষ্ট হয়। এরূপ বিলাসিতায় মনে কোনো সুখ হয় না। তাই কোনো কোনো সময়ে শাহজাহান সাহেব মনকে শক্ত করেন এবং বাড়িতে যাওয়া স্থগিত রাখেন।
গত সপ্তাহে বাড়ি গিয়েছিলেন। এখন হাতটা বেশ টানটান। এ সপ্তাহে তো বটেই, সামনে সপ্তাহেও বাড়িতে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

ট্রেনিং ক্লাসে থাকা অবস্থায়ই করিম খাঁ সাহেব তাঁকে ফোন করেছিলেন, তিনি আজও আড্ডা দিতে আসবেন। ইদানীং করিম খাঁ-কে বড় আড্ডারোগে পেয়ে বসেছে। তাঁর বোধ হয় আজকাল আর বাসায় মন টেকে না। প্রায় প্রতিদিনই তিনি শাহজাহান সাহেবের বাসায় চলে আসেন। তাঁর আবার একটা বিরক্তিকর ঘোড়ারোগও আছে- তিনি একজন ধনী এবং শৌখিন লেখক। সারারাত গল্প লিখেন, নিজে নিজেই কম্পিউটারে টাইপ করে প্রিন্ট করেন। সকাল হতে না হতেই সেই লেখা শাহজাহান সাহেবকে পড়িয়ে শোনাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন করিম খাঁ সাহেব। অফিসে বসে অনেক কষ্টে তিনি সময় পার করেন, যেই না অফিস শেষ অমনি বাসায় গিয়ে নাকেমুখে খাবার গিলে পথ ধরেন শাজাহান সাহেবের উদ্দেশ্যে। শাহজাহন সাহেবকে সেই লেখা না পড়ে শোনানো পর্যন্ত করিম খাঁর স্বস্তি হয় না।
শুধু পড়ে শোনানোই না, গল্প শোনানোর পর শাহজাহান সাহেবকে আবার প্রতিক্রিয়াও জানাতে হয়।
করিম খাঁর গল্প শুনে শাহজাহান সাহেবের বেশ ভালো লাগে, তিনি এই ভালো লাগার কথা করিম খাঁকে বললে তিনি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে গল্পটি পুনর্বার আগাগোড়া পাঠ করে শোনান। ঠিক তখনই শাহজাহান সাহেব মনে মনে অধৈর্য হয়ে পড়েন। কিন্তু মুখ ফুটে বা চেহারার অভিব্যক্তিতে তা কখনো প্রকাশ পেতে দেন না। করিম খাঁ তাঁর অত্যন্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু, তাঁর মনে তিনি কস্মিনকালেও ব্যথা দিতে পারেন না। তিনি একনিষ্ঠ শ্রোতার মত বন্ধুর গল্প শুনে যান, যথাসময়ে যথা-মন্তব্য করেন।
দ্বিতীয়বার পাঠ শেষ করে করিম খাঁ নির্ঘাত যে প্রশ্নটি করেন তা হলো, ‘বলো তো গল্পের কোন অংশটি সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছে?’ প্রশ্নের উত্তর মিলে গেলে করিম খাঁ সেই অংশটি আবার পড়েন। উত্তর না মিললে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা হয়। তখন শাহজাহান সাহেব যে-অংশের কথা বলেছেন করিম খাঁ প্রথমে সেই অংশ পড়েন; পাঠ শেষে বলেন, হ্যাঁ তোমার বিবেচনায় এই অংশ শ্রেষ্ঠ আমি মানি, কিন্তু আমার বিবেচনায় গল্পের সবচাইতে মজাদার অংশ হলো এটি...।
করিম খাঁ তখন সেই অংশটি প্রথমে সাধারণ ভাবে পড়েন, তারপর প্রতিটি লাইন ধরে পড়েন আর ব্যাখ্যা করে বোঝান কেন ঐ অংশটিই গল্পের সেরা অংশ।
মাঝে মাঝে শাহজাহান সাহেব ভুলবশত দু-একটি সমালোচনা করে ফেলেন। করিম খাঁ তখন দেশ-বিদেশের জানা-অজানা অসংখ্য লেখকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝান যে তিনি যা লিখেন তা আসলে সবার মাথায় ঢুকবার নয়। এদেশের প্রতিভাধর গুটি কতক সাহিত্যিক ছাড়া অন্য কেউ তা থেকে প্রকৃত রসাস্বাদন করতে সক্ষম নয়। বড় কথা হলো সাহিত্য সবার জন্য না, কেননা সবাই সাহিত্য বোঝে না।
এটা ঠিক যে করিম খাঁ বেশ ভালো লিখেন। তবে শাহজাহান সাহেবের ধারণা, করিম খাঁর গল্পগুলো জীবনের গভীরতম বোধ থেকে বেরিয়ে আসা নয়। কেননা, করিম খাঁর জীবনে কোনো দুঃখকষ্ট নেই, কোনোদিন ছিল না। তিনি একজন উর্ধ্বতন এনজিও কর্মকর্তা। অফুরন্ত সময় তাঁর। শাহজাহান সাহেব অবশ্য ঠিক বোঝেন না করিম খাঁ তাঁর গল্পগুলো কখন লিখেন; বাসায় রাত জেগে লিখেন, নাকি অফিস সময়ে অফিসে বসেই ওগুলো লিখে থাকেন?

শাহজাহান সাহেবের কক্ষে আজকের আড্ডাটা অত্যন্ত প্রাণবন্ত হবে বলেই করিম খাঁর ধারণা; শাহজাহান সাহেবের ধারণাও তাই। ইমরান আহমেদ, মাহমুদ রহমান, আবদুল করিম এবং মামুন মুর্শিদ খান আজকের আড্ডাতে আসবেন। এঁরা সবাই সাহিত্যিক মানুষ, আড্ডাখানা হলো সাহিত্যের উৎস। গল্পচ্ছলে পরস্পরের ভাব বিনিময়ের ফলে একেক জনের মনের ভিতর একেক রকমের ভাবের সৃষ্টি হয়। সেই ভাব থেকে একেক জন একেকটা অসাধারণ সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করে ফেলেন। শাহজাহান সাহেব সাহিত্যিক নন, একজন স্কুল শিক্ষক। তাঁর জ্ঞান আহরণের জন্য এরূপ আড্ডাখানা অপরিহার্য নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এঁদের আড্ডা দারুণ উপভোগ করেন। আড্ডায় সবাই নিজের কথা বলে যান, সেসব বর্ণনা এতো প্রাঞ্জল যে শাহজাহান সাহেবের মনে হয় এ যেন তাঁরই নিজ জীবনের কথা। তাই তিনি নিগূঢ় মনে সেসব গল্প শুনে যান।

শাহজাহান সাহেব অবশ্য আরেকটি বিষয় প্রায়ই লক্ষ করে থাকেন যে একমাত্র তাঁকে শোনানোর জন্যই এসব গল্প বলা হয়ে থাকে। যেমন, ইমরান আহমেদ যখন তাঁর লিখিত গল্পটি খুব দরদ দিয়ে পাঠ করেন, তখন বাকিরা উসখুস করতে থাকেন। তাঁরা তাঁদের গল্প শাহজাহান সাহেবকে শোনানোর জন্য ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে পড়েন, অপরের পাঠ তাঁদের কানে খুব কম ঢোকে। যার গল্প শুনে শাহজাহান সাহেব অধিকতর তৃপ্তি প্রকাশ করেন, অন্যরা তাঁর ওপরই ঈর্ষান্বিত হতে থাকেন। এক শিল্পী কখনো আরেক শিল্পীর যশঃকীর্তন পছন্দ করেন না। এঁদের এরূপ ভাব দেখে মনে হয় যে এঁরা সবাই আলাউদ্দিন আল-আজাদের ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ পড়েই সহশিল্পীর প্রতি এভাবে ঈর্ষান্বিত হতে উদ্‌বুদ্ধ হয়েছেন।
তবে এ ব্যাপারে করিম খাঁ সাহেবের ভূমিকা অন্যরকম। কারো গল্পপাঠ শুনে প্রচুর মজা পেয়ে শাহজাহান সাহেব যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, বা বেশি আগ্রহ দেখান, তখন প্রায়শই করিম খাঁ সাহেব ধমকে উঠে লেখকের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমার এ গল্পটিতে একটা গোঁজামিল দিয়ে ফেলেছ। পাঠকরা কিন্তু বোকা নয়, তাঁরা ঠিক ঠিকই তোমার এই গোঁজামিল ধরে ফেলবে। গল্পে গোঁজামিল দেয়া মানে চাতুর্যের আশ্রয় নেয়া, পাঠককে ধোঁকা দেয়া, ঠকানো। এটা গর্হিত অন্যায়।
শাহজাহান সাহেবের তখন নিজেকে বেশ নির্বোধ মনে হয়, কারণ গল্পের গোঁজামিলটি কত সহজে করিম খাঁ সাহেব ধরে ফেললেন অথচ তিনি পারলেন না। নিজের ওপর তাঁর রাগ হয়, আমি কেন করিম খাঁ সাহেবের মতো একজন অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লেখক হতে পারলাম না?
শাহজাহান সাহেব আরো লক্ষ করেছেন যে করিম খাঁ সাহেব অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সবার ওপর অদৃশ্য উপায়ে আধিপত্য বিস্তার করে আছেন। তিনি সবার লেখার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন, কূটনৈতিক ভাষায় মাঝেমধ্যে বাকিদেরকে অপমান করতেও ছাড়েন না। শাহজাহান সাহেব তা বুঝে ফেলেন। কিন্তু সেই অপমানের ভাষা বাকিরা বুঝতে পারেন না বলে তিনি খুব আশ্চর্য হোন। এবং মনে মনে খুশিও হোন যে অন্তত এ ব্যাপারটাতে তাঁর নিজের বুদ্ধি-জ্ঞান খুব প্রখর।

করিম খাঁ সাহেব সময়ে অসময়ে বিনা নোটিশে শাহজাহান সাহেবের বাসায় চলে আসেন আড্ডা জমাতে। কিন্তু আজকের আসরটির মাহাত্ম্য অন্যরকম। করিম খাঁ সাহেব সদ্য একটি উপন্যাস লেখা সমাপ্ত করেছেন। এটি তাঁর দ্রুততম সময়ে লেখা উপন্যাস, মাত্র পনর দিনে শেষ করেছেন। এটি তিনি তাঁর শ্যালক-শ্যালিকাদের ওপর জেদ করে লিখেছেন। তাঁর শ্যালক-শ্যালিকারা বলেছিল, দুলাভাই, আপনার বই পড়ে কোনো মজা পাই না কেন? অথচ দেখুন হুমায়ূন আহমেদের গল্প পড়া শুরু করে শেষ না করে থাকা যায় না। করিম খাঁ সাহেবের বুকে কথাটা তিরের ফলার মতো বিঁধেছিল। তাঁকে হুমায়ূন আহমেদের সাথে তুলনা করায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি বই অনেক সময় নিয়ে লিখেন, তাঁর বইয়ের মধ্যে যে গাম্ভীর্য আর বুদ্ধির দীপ্তি, হুমায়ূন আহমেদের গল্পে তা কোথা থেকে আসবে? তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের মতো হালকা রসের একটা ছোটো বই লিখে তিনি শ্যালক-শ্যালিকাদের দেখাবেন যে ওসব বই লিখলে তিনি এতোদিনে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকতেন।

আজকের আড্ডায় করিম খাঁ সাহেব তাঁর পুরো উপন্যাসটি সবাইকে পড়ে শোনাবেন। তিনি নিশ্চিত তাঁর গল্প শুনে আজ সবাই বিমোহিত হবেন। এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ গল্প বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম।
ধরতে গেলে হঠাৎ করেই আজ এরকম একটা জাঁকজমকপূর্ণ আড্ডার আয়োজন করতে হচ্ছে। করিম খাঁ সাহেব অবশ্য দিন পনর আগে একবার বলেছিলেন যে একদিন একটা বড় আসরের আয়োজন করতে হবে, সেই আসরে তিনি সবাইকে একটা চমক দেখাবেন। আজ দুপুরে ফোন করে সেই চমক লাগানোর কথাটি তিনি শাহজাহান সাহেবের কাছে প্রকাশ করেছেন। তবে আসরে সবাই না আসা পর্যন্ত কারো কাছে সেই চমকের কথা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। পাণ্ডুলিপির মোড়ক উন্মোচন করে করিম খাঁ সাহেব নিজেই সেই চমক ভাঙবেন।

করিম খাঁ ফোন করে বলেছিলেন, শাহজাহান সাহেব যেন গোলাপ শাহ্ মাজারের কাছে অপেক্ষা করেন। সেখান থেকে তাঁরা একসাথে বাসায় ফিরবেন। করিম খাঁ সাহেব নিজেই সবার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেছেন। সবাইকে বলে দিয়েছেন ঠিক সাড়ে পাঁচটার সময় শাহজাহান সাহেবের বাসায় উপস্থিত হবার জন্য। করিম খাঁ সাহেব আবার অত্যন্ত সময়ানুবর্তী। তিনি নিজে যদিও মাঝেমধ্যে সবাইকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন, কিন্তু তাঁর আসরে কেউ তাঁর পরে এসে উপস্থিত হলে সময়ানুবর্তী কাকে বলে তা বোঝাবার জন্য মোটামুটি আধঘণ্টার একটা ভাষণ পেশ করেন। সময়ানুবর্তিতার অভাবে যে এ জাতির উন্নতি হচ্ছে না তা তিনি প্রতি পাঁচ বাক্যে অন্তত একবার স্মরণ করিয়ে দেন।
করিম খাঁর ফোন পেয়ে শাহজাহান সাহেব একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তাঁকে আজ অবশ্যই এএসপি সাহেবের মেয়ে কনাকে পড়ানোর জন্য যেতে হবে। কনাকে সপ্তাহে তিনদিন পড়াতে হয়- শনি, সোম ও বুধবার। গত তিনদিন পড়ানো হয় নি। তিনি জানেন যে তাতে এএসপি পরিবার মাইন্ড করবেন না, তাঁরা খুব অমায়িক। কিন্তু শাহজাহান সাহেব নিজে থেকেই আজ কনাকে পড়াতে যাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, মোবাইলে সে কথা কনাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু করিম খাঁর যা আড্ডার ধরন, উনি এলে রাত দশটার আগে বাসা থেকে উঠবেনই না। তার ওপর আজ হলো একটি বিশেষ সাহিত্য-অধিবেশন, চমক দেখানোর দিন। তাঁর কোনো উপন্যাসেরই পৃষ্ঠা সংখ্যা একশ ষাটের নীচে নয়। তিনি খুব রসিয়ে রসিয়ে যদি পুরো উপন্যাসটি আজ পড়তে বসেন, তবে সাড়া রাত পার হয়ে যাবে। বন্ধু মানুষ, তার ওপর তাঁর কাছে অনেক ভাবে তিনি ঋণী এবং এজন্যই বোধ হয় করিম খাঁ প্রচ্ছন্ন ভাবে তাঁর ওপর একটু দম্ভপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে থাকেন। করিম খাঁর অদৃশ্য অত্যাচার তিনি দিনের পর দিন নীরবে সহ্য করে যান।

কিন্তু করিম খাঁর আসতে দেরি হচ্ছে। প্রথমে একবার একটা মিস্‌ডকল দিতেই করিম খাঁ কল রিসিভ করে ফেলেন, শাহজাহান সাহেবের মোবাইলে মাত্র আটটি টাকা ছিল। সেই এক মিনিটে করিম খাঁ জানিয়েছিলেন ঘর থেকে বেরোনোর সময় বাড়িতে মেহমান আসায় অহেতুক আধঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে। শাহজাহান সাহেব বলতে চেয়েছিলেন, আমি তাহলে বাসায় চলে যাই। কেননা গোলাপ শাহ্’র মাজার থেকে বসাক লেনে যেতে মাত্র পনর মিনিটের মত লাগে। আর মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গোলাপ শাহ্ মাজারে এসে পৌঁছাতে করিম খাঁর প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কিন্তু করিম খাঁকে কথাটা বলা যায় নি। যা রগচটা আর দাম্ভিক মানুষ করিম খাঁ!

আজ যেন সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। মাথার ওপরে প্রখর সূর্যতাপ, নীচে পিচ থেকে ঠিকরে ওঠা ভাঁপ, শরীর ভাঁপাপিঠার মতো সিদ্ধ হচ্ছে। শাহজাহান সাহেব গরমে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর বেশ খিদে ও তেষ্টা পেয়েছিল।
তিনি যেখনে দাঁড়িয়ে আছেন, তার ঠিক ডানপাশে এক লোক আনারস ছুঁলে চার ফালি করে লবণ মাখিয়ে বিক্রি করছে। তাঁর জিভে পানি এসে গিয়েছিল এবং মনে মনে লজ্জিতও হয়েছিলেন। কী যে ছেলে মানুষের মতো খাওয়ার প্রতি লোভ, ছিঃ!
শাহজাহান সাহেব এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে কখনো কিছু খান না। তিনি একজন শিক্ষক, এভাবে খাওয়াটা একজন শিক্ষকের পক্ষে বেজায় বেমানান। তাছাড়া একবার একটা লজ্জাকর ঘটনাও ঘটেছিল। ভিক্টোরিয়া পার্কের বাসস্ট্যান্ডের পাশে এমন এক দুপুরে তিনি দাঁড়িয়ে শশা কিনে খাচ্ছিলেন। অর্ধেক খাওয়া হতেই তাঁর চোখ পড়লো দু-গজ সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরই দুজন ছাত্র শশা খাচ্ছে। ওদের মধ্যে টুপু নামের ছাত্রটি বলে বসলো, স্যার, আরেক প্লেট নিবেন?
শাহজাহান সাহেবের মুখে কথা সরে নি। খাওয়া শেষ করে দাম দিতে গিয়ে শোনেন যে, তাঁর ছাত্ররা দাম মিটিয়ে দিয়ে গেছে।
এমন ঘটনা তাঁর জীবনে আর ঘটে নি।
তারপর থেকেই তিনি শুধু দাঁড়িয়ে খাওয়াই নয়, কোনো হোটেল-রেস্তরাঁ কিংবা ফাস্ট ফুডের দোকানেও কিছু খেতে ঢোকেন নি।
তবে শাহজাহান সাহেব ভাবলেন, তিনি কলিজিয়েট স্কুলের শিক্ষক, সদর ঘাটে যার অবস্থান, গুলিস্তানে এই ভরদুপুরে নিশ্চয়ই কোনো ছাত্র আশপাশ থেকে হঠাৎ এসে উদয় হতে পারবে না। প্রচণ্ড তেষ্টা তাঁর সহ্য হচ্ছিল না। তিনি একপ্লেট আনারস খাবার ইচ্ছে করেছিলেন।



শাহজাহান সাহেব দ্রুত ছুটছেন। ডানেবামে তাকানোর বিন্দু ফুরসত তাঁর নেই, তাঁর দৃষ্টি স্থির সম্মুখের দিকে। পল্টনের ওভার ব্রিজের দিকে তিনি দ্রুত ছুটে চলেছেন। এ মুহূর্তে তিনি পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গেছেন, শুধু দুটি ঘটনার কথা বার বার তাঁর মনের ভিতরে আছড়ে পড়ছে।
সেই ছোটোকালে, যখন তিনি মাত্র নয় বছরের বালক, একবার জয়পাড়া হাটে গিয়েছিলন। তাঁর বাবা গুঁড়ের কারবার করতেন। পদ্মার ওপারে পিঁয়াজখালি, ফরিদপুর, যশোর থেকে গুঁড় এনে জয়পাড়া হাটে বিক্রি করতেন। হাঁটের দিন পদ্মা পাড়ি দিয়ে কেরাই নৌকা করে তাঁর বাবা জয়পাড়া হাটে আসতেন। বাড়ি থেকে ভাত নিয়ে এসে তিনি হাটের ঘাটে বাবার জন্য অপেক্ষা করতেন। বাবাকে না দেখা পর্যন্ত কেবল ছটফট করতেন। অনেক অপেক্ষার পর হঠাৎ একসময় দেখতে পেতেন কেরাই নৌকার ছইয়ে দাঁড়িয়ে বাবা হাত নাড়ছেন, তার তখন আনন্দে কান্না এসে যেত। নৌকা ঘাটে ভিড়ার সাথে সাথে বাবা নীচে নেমে এসে তাঁকে কোলে নিতেন, তিনি বাবার বুকের সাথে মিশে যেতেন।
সেদিন তাঁর বাবা এলেন না। গামছায় বাঁধা গামলাভর্তি ভাত হাতে নিয়ে তিনি বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর যখন গড়িয়ে গেল, তখন তাঁর গ্রামের এক চাচা বলেছিলেন, তোমার বাবা কাল আসবেন। শাহজাহান সাহেবের সেদিন খুব কান্না পেয়েছিল। দু-দিন ধরে তিনি বাবাকে দেখেন নি। বাবা এতো দেরি করে আসেন কেন? তিনি গামছায় বাঁধা ভাতের গামলা হাতে নিয়ে কাঁঠাল হাটায় গিয়েছিলেন। তাঁর খুব সাধ ছিল সেদিন একটা কাঁঠাল কিনবেন। কাঁঠাল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ফল। এই মৌসুমে এখনো কাঁঠাল খাওয়া হয় নি। তাঁর পকেটে তো আর কাঁঠাল কেনার টাকা নেই। মা মাত্র একটা টাকা দিয়েছিলেন, বিপদ-আপদে কাজে লাগানোর জন্য।
তিনি অনেকগুলো দোকানে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন, অতি ছোটো কোনো কাঁঠাল আছে কিনা, যার দাম মাত্র এক টাকা।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ একটা ছোটো কাঁঠাল পেয়ে যান, ওটির দাম এক টাকার বেশি হতেই পারে না।
জিজ্ঞাসা করতেই কাঁঠালওয়ালা দাম হাঁকলো তিন টাকা।
তাঁর মুখটা মুহূর্তে করুণ হয়ে গিয়েছিল।
দোকানি জিজ্ঞাসা করেন, কত দিবিরে পাগলা?
তিনি উত্তর দিতে পারেন নি। ভ্যাগা ভ্যাগা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
দোকানি আবার জিজ্ঞাসা করেন, তোর কাছে কয় ট্যাকা আছে?
এক টাকা।
দোকানি হেসে দিয়ে বলেন, পাগল পুলা! দে, এক টাকাই দে।
শাহজাহান সাহেব যেন হাতে চাঁদ পেয়েছিলেন। খুশিতে নাচতে নাচতে তিনি এক টাকার কাঁঠাল নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। এতো সস্তায় কাঁঠাল কিনতে পারা তাঁর জন্য বিরাট কৃতিত্বের ছিল।
বাড়ি এসে ছোটো একটা কাঁঠাল কেনার করুণ গল্প শুনে শাহজাহান সাহেবের মা গলা ছেড়ে কেঁদে উঠেছিলন।

ঠিক অনুরূপ একটা ঘটনা ঘটে গেছে গত সপ্তাহে। শাহজাহান সাহেব যখন বাড়ি গিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী ময়নামতি তাঁকে গল্পটি বলেছেন। এ গল্পটি আরো করুণ, আরো মর্মস্পর্শী।
অন্যদের বাড়ির ওপর দিয়ে বাচ্চারা স্কুলে যাতায়াত করে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোটো ছেলে জসিম মিয়া দেখে এক বাড়িতে আনারস খাওয়া হচ্ছে। ও-বাড়ির ছেলেমেয়ে আর বড়রা বারান্দায় বসে মজা করে আনারস খাচ্ছিল। জসিম মিয়ার আনারস খেতে প্রচণ্ড সাধ হয়। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে বাড়ির করম মোল্লা জসিম মিয়ার হাতে দু-টুকরো আনারস তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ফকিরের গুষ্টি, ভাগ!
জসিম মিয়া শিশু, সে ফকিরের গুষ্টি বোঝে না। আনারসের টুকরো হাতে পেয়ে সে লাফাতে লাফাতে বাড়ি চলে আসে।
জসিম মিয়ার হাতে আনারস দেখতে পেয়ে ওর বড় দু-ভাইবোনও ওগুলোর জন্য ছুটে আসে। কিন্তু কেড়ে নেয়ার আগেই জসিম মিয়া সাবাড় করে দেয়।
ঘটনা এতোটুকুই। জসিম মিয়া তার বড় ভাইবোনদের দেখিয়ে দেখিয়ে আনারস খেয়ে খুব মজা পেলো, কিন্তু বড় দুজনের অন্তরে আগুন জ্বলে উঠলো, এবং আনারসের জন্য ওরা পাগল হয়ে গেলো।
ময়নামতি আনারস কেনার ব্যবস্থা করতে পারেন নি। কিন্তু এ তুচ্ছ ঘটনায় তাঁর বুক ফেটে যাচ্ছিল। বুক ফেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছিল আরো একটি কারণে। করম মোল্লা যে জসিম মিয়াকে ‘ফকিরের গুষ্টি’ বলে গালি দিয়েছে এটা তার ভাসুরপো শুনেছিল। বাড়ি এসে কাকিমাকে এ কথা বলে দিতে সে মুহূর্ত দেরি করে নি। কারণ এটা একটা খারাপ গালি, তার বয়স জসিম মিয়ার চেয়ে বছর দেড়েক বেশি হবে, তার বুদ্ধি তো বেশি হবারই কথা।

শাহজাহান সাহেবের খুব ভুল হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে এসেছেন সাত দিন। ছেলেমেয়েদেরকে আনারস খাওয়ানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। তিনি উর্ধ্বশ্বাসে ওভার ব্রিজের গোড়ায় চলে এলেন। বিভিন্ন আকৃতির, বিভিন্ন ধরনের আনারস ঝাঁকাভর্তি থরে থরে সাজানো রয়েছে। তিনি বেছে বেছে সবচাইতে ভালো আনারসের ঝাঁকার কাছে গেলেন। দরদাম ঠিক করেই বিক্রেতাকে বললেন, পাঁচহালি আনারস বেঁধে দিন।
বিক্রেতা প্রথমে একটু সন্দিহান হয়েছিল, একত্রে পাঁচহালি আনারস তার কাছ থেকে কেউ কোনোদিন কেনে নি। এতো আনারস কেউ কখনো কিনে?
হ্যাঁ, শাহজাহান সাহেব কিনবেন। আজ তাঁর টাকার সমস্যা নেই। প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য খরচ বাবদ আজ তিনি প্রায় হাজার তিনেক টাকা পেয়েছেন। পাঁচহালি আনারসের দাম মাত্র চারশ টাকা। চারশ টাকা বরাবরই তাঁর প্রায় দুই সপ্তাহের খাওয়া খরচ। কিন্তু আজ তিনি কোনো কার্পণ্য করবেন না। সুন্দর করে আনারস বেঁধে বাসের ছাদে উঠিয়ে দিবেন। এ-ও একটা দারুণ সুবিধা যে একেবারে দশ গজের মধ্যেই ঢাকা-দোহার বাস স্ট্যান্ড। আনারস ছাদে উঠানোর পর তিনি ভিতরে গিয়ে খুব আরাম করে বসবেন, এতো গরমেও তাঁর এখন কোনো কষ্টবোধ হবে না। ঠিক দেড়ঘণ্টা পরে জয়পাড়া পুলিশ স্টেশনের কাছে বাস গিয়ে থামবে। বাস থেকে নেমে একটা ভ্যানে করে আনারস নিয়ে দশ-বারো বাড়ির ওপর দিয়ে একদম ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হবেন। একসঙ্গে এতো আনারস দেখে ছেলেমেয়েরা আনন্দে জ্ঞানহারা হয়ে পড়বে। তারা পাগলের মতো এ আনারস খাবে, কোঁচড় ভরে রসালো আনারসের টুকরো নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরবে আর সাথিদেরকে বিলাবে। বাচ্চারা যেমন খেয়ে বেশি আনন্দ পায়, গোপনে সাথিদের মাঝে বিলিয়ে তার চেয়ে আরো অধিক আনন্দ পায়।
কিন্তু পাঁচহালি আনারস কি মুখের কথা? এতো আনারস তিনি এতোগুলো বাড়ির ওপর দিয়ে নিয়ে যাবেন, সব বাড়ির বাচ্চারা তা দেখবে। ময়নামতিকে তিনি বলবেন, যেন এ পাড়ার একটি বাচ্চাও আমাদের এ পাঁচহালি আনারস থেকে বঞ্চিত না হয়। ফলের ওপর বাচ্চাদের হক হলো সবচাইতে বেশি।
এতোগুলো আনারসের ওপরে চড়ে বাচারা খুশিতে লাফাতে শুরু করবে। আর ময়নামতি? ময়নামতি তখন মুখে আঁচল দিয়ে গুমড়ে কেঁদে উঠবেন।

কোথায় রইল সাহিত্যের আড্ডা, কোথায় রইল করিম খাঁ, এসবের কোনো কিছুই আর শাহজাহান সাহেবের মনে পড়লো না।



**আগষ্ট ২০০৩

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১২
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×