মুক্তচিন্তা বা মুক্ত আলোচনা এবং অপরের বিশ্বাস বা অনুভূতিতে আঘাত করা বা বিদ্রূপ করা দুটি ভিন্ন বিষয়- প্রথমটা প্রগতির পথ দেখায়, দ্বিতীয়টা উস্কানি সৃষ্টি করে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ায়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা এ দুটোর পার্থক্য বের করতে পারি না। আরো দুর্ভাগ্য এই যে, আমরা অনেককেই মুক্তচিন্তার ধারক-বাহক হিসাবে তাঁদের নাম ইতিহাসে ক্ষোদিত করি, কিন্তু তাঁদের কীর্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তাঁরা খুব নিম্নরুচির ও হীনমন্য ছিলেন; মুক্ত আলোচনার বদলে ব্যক্তি আক্রমণই ছিল তাঁদের বড় হাতিয়ার। এমন কাউকে আমরা মুক্ত চিন্তার ধারক-বাহক, বুদ্ধিজীবী, ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করতে পারি না।
আমরা কেউ পর্যাপ্ত মাত্রায় সহনশীল নই। সহনশীলতা শুধু ধর্মান্ধদের পক্ষ থেকেই প্রত্যাশিত না, প্রগতিশীলদের কাছ থেকেও সমমাত্রার সহনশীলতা কাম্য; বরং প্রগতিশীলরা যদি নিজেদের ‘ধর্মানুসারীদের’ চেয়ে শ্রেয়তর মনে করেন, তাহলে তাঁদেরই হতে হবে সহনশীলতার আইডল। আমরা যখন রেগে যাচ্ছি, তখনই হেরে যাচ্ছি, আর তখনই ভুলগুলো সৃষ্টি হতে থাকে চেইন রি-এ্যাকশনের মতো। আমার মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিগুলো যদি কংক্রিট হয়, তাহলে আপনার বংশপরিচয় বিকৃত করার প্রয়োজন পড়বে না। বিকৃত বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করলেই যে তর্কযুদ্ধে জয়লাভ ঘটে না, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মুক্ত আলোচনার নামে আমরা এসব করে থাকি। এটা হলো রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশের সূচনা। আমি রেগে গেলে আপনার মধ্যেও সেই রাগ সংক্রমিত হতে বাধ্য। ক্রোধ মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। অমানুষের মধ্যে কোনো মানবিকতা থাকে না।
অন্য দিকে, ‘অন্ধত্ব’ শুধু ধর্মানুসারীদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। ‘ধর্মান্ধ’ আস্তিক যেমন আছেন, তেমনি কট্টরপন্থি নাস্তিকও রয়েছেন। ধর্মানুসারীদের যেমন উচিত ‘ধর্মান্ধতা’ পরিহার করা, তেমনি নাস্তিকদেরও উচিত নাস্তিক্যের ‘অন্ধত্ব’ থেকে বেরিয়ে আসা। উভয় পক্ষেরই উচিত পরমত-সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা। অপরের কথা শোনা এবং বোঝার মানসিকতা থাকতে হবে। নিজের চোখ ও কান বন্ধ করে অনর্গল নিজের বক্তব্য পেশ করতে থাকলে কোনো পক্ষই আদতে বিপরীত পক্ষের বক্তব্য বুঝতে ও মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবেন না। সর্বোপরি, ‘আমার বক্তব্যই সঠিক’, বা ‘আমিই সঠিক’- এই ‘অন্ধত্ব’ ও গোঁড়ামি থেকে উভয় পক্ষকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সকল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কোনো হত্যাই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু পৃথিবীতে শুধু মানুষেরই বাস না, অমানুষরাও বাস করেন। এই অমানুষরা ধর্মান্ধ কিংবা তথাকথিত মুক্তচিন্তাবিদ- দু দলেই সমভাবে বিদ্যমান। এঁদের আক্রমণাত্মক মনোভাব দূর করা না গেলে ভয়াবহ খুনাখুনি বন্ধ হবে না।
আমি এখানে আরেকটা কথা বলতে চাই ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটা সম্পর্কে। আমার মনে হয় ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি শুধু ধর্মানুসারীদের নির্দেশ করলে এর ব্যবহার সঠিক প্রমাণিত হবে না। যাঁরা সংঘবদ্ধভাবে, বা একত্রে, একই মত অবলম্বনের মাধ্যমে ধর্মের বিরুদ্ধে, কিংবা আস্তিকতার বিরুদ্ধে, কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের অন্য কোনো মতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন, তাঁরাও সাম্প্রদায়িক।
যুদ্ধাবসানের পর যে কোনো দেশ বা জাতি সেই যুদ্ধে জয় বা পরাজয়ের কারণগুলো আইডেন্টিফাই করে। পরাজয়ের কারণ বের করলেই যে রিওয়াইন্ড করে সময়ের পিছনে ফিরে গিয়ে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করা যাবে, ব্যাপারটা তা না। তবে ভবিষ্যতে এরূপ পরাজয় এড়ানোর জন্য ওসব ‘Lessons learned’ খুব সহায়ক হবে। এজন্য আমরা মিলিটারি হিস্ট্রি পড়ে থাকি।
হুমায়ুন আজাদ ও রাজীবকে হত্যা করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এই নির্মম হত্যার কারণগুলো খুঁজে বের করেছিলেন? দোষীদের কি প্রাপ্য শাস্তি দেয়া হয়েছিল? এই কারণগুলো খুঁজে বের করার দরকার ছিল অপরাপর লেখকদের শিক্ষার জন্য, যাতে তাঁরা ভুলগুলো (যদি থেকে থাকে) শুধরে নিতে পারেন ভবিষ্যতের জন্য। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার সম্ভাব্য বা প্রকৃত খুনিদের মধ্যে ডিটারেন্স সৃষ্টি করার জন্য, যাতে পরিণতির কথা ভেবে তারা এহেন ভয়ঙ্কর কাজে উদ্যত হবার সাহস না পায়। রাজীব বা থাবা বাবার পোস্টসমূহ পর্যালোচনা করার প্রয়োজন ছিল- তাতে ধর্মানুসারীদের জন্য উস্কানি বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান ছিল কিনা, বা কোনো উগ্রতা ছিল কিনা। ‘উগ্রতা’ শব্দটাও কেবল ধর্মানুসারী আস্তিকদের জন্যই প্রযোজ্য নয়, ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। তাঁর মতো আর কোনো ব্লগার এরকম উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন কিনা। তদ্রূপ, এসব বিতণ্ডায় ধর্মানুসারীদের পক্ষে কারা কারা সম্পৃক্ত ছিলেন? তাঁদের মধ্যেও উগ্রতা ছিল কিনা, এবং সেই উগ্রতার মাত্রা কতখানি ছিল? উভয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের কোনো হুমকি ছিল কিনা। থেকে থাকলে তাঁদের খুঁজে বের করে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কিনা। এসব করা হলে হয়তো অভিজিৎ রায়কে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না।
এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অভিজিৎ রায়কে প্রাণ দিতে হলো। খুনিদের শাস্তি এখন যতই হোক না কেন, মৃত অভিজিৎ রায় আর কোনোদিন পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না। অভিজিৎ রায়ের বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানেরা আর কোনোদিন অভিজিৎ রায়কে বুকের কাছে পাবেন না।
কিন্তু, এই মুহূর্তে আমরা কি খানিকটা চেষ্টা করে দেখতে পারি কেন ঐ উন্মত্ত নরপশুরা এভাবে নির্মম ভাবে অভিজিৎ রায়ের প্রাণ সংহার করলো?
আমি আগেই বলে নিই, আমি এর আগে অভিজিৎ রায়ের নাম শুনি নি। তাঁর মতো একজন ট্যালেন্টেড ব্লগার, লেখক ও বিজ্ঞানীর জন্ম এই সোনার বাংলাদেশে, এ তথ্য আমার জানা ছিল না বলে আমি খুব লজ্জিত, দুঃখিত ও বিব্রত। এ নিয়ে আমার খুব আফসোস হচ্ছিল। কিন্তু পরে খুব তুচ্ছ একটা কারণ খুঁজে পেলাম, যা দিয়ে নিজেকে খানিকটা হলেও সান্ত্বনা দেয়া যায়। আমিও একজন ব্লগার, লেখক ও কবি। আমারও গোটা দশেক বই বের হয়েছে। ব্লগ ও ফেইসবুক জগতে আমার পরিচিতি নেহায়েত কম নয়। কিন্তু, সংখ্যার বিচারে আমাকেই বা ক’জনে চিনেন? অতএব, অভিজিৎ রায়কে চিনতাম না বলে আফসোস না করে তাঁর সম্পর্কে একটু অনুসন্ধান করা যাক।
ফেইসবুকে আমার টাইমলাইন দেখুন। ০১ মার্চ রাত ৮-৫১-তে আমার স্টেটাসটি ছিল এরকমঃ
***
অভিজিৎ রায়সহ যে-কোনও মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা করি। তদন্ত হোক, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক
============================================
অভিজিৎ রায় সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানতে চাই। দয়া করে কেউ জানালে বাধিত হবো।
> সামহোয়্যারইন ব্লগে অভিজিৎ রায়ের কোনো নিক ছিল কিনা। সেই নিকের নাম কী?
> ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম বা অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে তাঁর এমন কোনো কমেন্ট ছিল কি যা থেকে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিষ্টান বা অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদীরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন?
> হযরত মুহম্মদ (সঃ) সম্পর্কে কি তিনি কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য বা কটাক্ষ করেছেন? অন্য কোনো ধর্মের অবতারদের সম্পর্কে কি তাঁর কোনো আপত্তিকর মন্তব্য ছিল?
> যে-সব আর্টিকেল পড়ে ধর্মভীরু মানুষগণ আহত বা ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন তাঁর এমন কিছু আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী। দয়া করে কেউ লিংক দিলে খুশি হবো।
আমি দুঃখিত যে, অভিজিৎ রায়ের নাম আমি আগে শুনি নি, যদিও 'মুক্তমনা' নামে একটা ব্লগ আছে তা জানতাম। এই বুদ্ধিজীবী ব্লগারের অস্বাভাবিক-অকালপ্রয়াণে শোক প্রকাশ করছি। তাঁর স্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। অভিজিৎ স্বর্গবাসী হোন- এই কামনা।
***
ধরুন, আপনার সাথে আমি ‘সনেট’ নিয়ে মুক্ত আলোচনায় বসলাম। ধরুন, আমি সনেট পছন্দ করি না, সনেট লিখিও না। পক্ষান্তরে, আপনি ভালো সনেট লিখেন, সনেট ভালোও বাসেন, মাইকেল মধুসূদনকে সনেটের পথিকৃৎ বিবেচনা করেন। আমার উচিত হবে বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়া যে, সনেট আসলে কোনো প্রকৃত কবিতার স্বাদ দেয় না; এটা একটা জটিল বিষয়ও। আপনি আমার মতামত মেনে নিবেন কী নিবেন না তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর আপনার মেনে নেয়ার অনেকখানিই নির্ভর করবে সনেট সম্পর্কে কতখানি বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য পেশ করছি আমি, আমার বক্তব্যে সনেটের উপর প্রকৃত মূল্যায়ন পরিস্ফুট হচ্ছে কিনা, কতখানি বোধগম্য ভাষায় আপনার কাছে আমার বক্তব্য বিধৃত করছি- এসবের উপর। কিন্তু তাই বলে আপনাকে আমি গালমন্দ করতে পারি না; অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যে তথ্য দিয়ে আপনার ব্যক্তিগত জীবনকে কালিমায় ভরে দিতে পারি না। আপনার নাম, মধুসূদনের নাম, আরো যাঁরা সনেট লিখেন, তাঁদের সবার নাম বিকৃত করে অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় আক্রোশ প্রকাশ করতে পারি না। আপনি আপনার মা/বাবা/ভাই/বোনদের সাথে নিয়মিত ‘ইনসেস্ট সেক্স’ করেন- এসব কুৎসা দ্বারা আপনাকে ঘায়েল করার পথ বেছে নিতে পারি না। সনেট আলোচনায় এসব আসে না। মানুষ ফেরেশ্তা নয়- অতি সস্তা একটা কথা আমরা প্রায়শ বলে থাকি। কিন্তু কথাটা ভুল না মনে হয়। এজন্য এসব অপ্রাসংগিক বিষয়ের অবতারণায় আপনার মনে ক্রোধ ও ক্ষোভের সঞ্চার হওয়া খুব স্বাভাবিক হবে।
আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে বড় হচ্ছি। বেঁচে থাকি। কিন্তু হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ পরে আমার মনে তীব্র বিবমিষার উদ্রেক হয়েছিল। একজন মননশীল লেখক কীভাবে এ ভাষা ব্যবহার করেন? যাঁদের বিশ্বাস ঠুনকো, তাঁরা এ বই পড়ে ফুঁসে উঠবে- স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে নির্বিশেষে।
রাজীবকেও ভালো করে চিনেছিলাম তাঁর মৃত্যুর পর। ব্লগে তাঁর লেখা কোনোদিন আমার পড়া হয় নি, তবে, আমার কোনো কোনো পোস্টে হঠাৎ হঠাৎ তাঁর ছোটখাটো কমেন্ট দেখতাম বলে ভাষা ভাষা মনে পড়ে, কিন্তু আমি নিশ্চিত নই। রাজীবের মৃত্যুর পর ফেইসবুকে তাঁর কিছু নোট আমি পড়েছিলাম। তিনি হযরত মুহম্মদ (সঃ)-কে ডাকতেন মোহাম্মক (মোহাম্মদ + আহাম্মক)। এরপর যেসব কদাকার ও আপত্তিকর ভাষায় রাসুল (সঃ)-কে গালিগালাজ করেছেন, ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-কটাক্ষ করেছেন, তাকে কোনোভাবেই মুক্তচিন্তা বা মুক্ত আলোচনা বলা যায় না, তা ছিল নিছক ব্যক্তি আক্রমণ ও ইসলাম বিদ্বেষ। এ থেকে মানবজাতি কী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে?
মানুষ খুন করা ইসলামের বিধানে নেই। যাঁরা রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল তাঁরা কখনো মুসলমান হতে পারে না। কিন্তু এই খুন থেকে ব্লগার বা কবিলেখকগণ কি কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেছেন?
‘The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History’ বইয়ের লেখক মাইকেল হার্ট রাসুল (সঃ) সম্পর্কে বলেছেনঃ ‘My choice of Muhammad to lead the list of the world’s most influential persons may surprise some readers and may be questioned by others, but he was the only man in history who was supremely successful on both the religious and secular level.’ আমরা হয়তো মাইকেল হার্টের বুদ্ধিমত্তার স্কেল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি। সে ক্ষেত্রে তাঁর নির্বাচিত বাকি ৯৯ জন মনীষীও কিন্তু তুচ্ছ হয়ে যান। আমরা কি তাহলে বলতে পারি, আমাদের থাবা বাবা বা রাজীব মাইকেল হার্টের চেয়েও অধিক জ্ঞানবান ছিলেন?
অভিজিৎ রায়কেও কোনো মুসলমান খুন করে নি। মুসলমানরা ধর্মের নামে খুন করতে পারে না। খুনের বিধান ইসলামে নেই। আল্লাহ্র বিধান মতে খুন হলো কবিরা গুনাহ্, দেশের আইন অনুযায়ী খুন হলো একটা গর্হিত অপরাধ, যাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
কিন্তু অভিজিৎ রায়ের কি কোনো ভুল ছিল?
আমার স্টেটাস প্রকাশ পাবার পর কয়েকটা লিংক উঠে আসে। তাতে আমি পাই, হজরত মুহম্মদ (সঃ)-কে অভিজিৎ রায় ডাকছেন- হজরত মহাউন্মাদ। তাঁর অন্যান্য লিংক পড়ে তাঁকে জ্ঞানবান বা বুদ্ধিমান মনে হয় নি। তিনি রাসুল (সঃ) ও তাঁর বংশধরদের এবং ইসলাম-অনুসারীদের অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ঠিক এটাই হলো অভিজিৎ রায়ের ‘সাম্প্রদায়িক’ উস্কানি। তাঁর লিখিত/প্রকাশিত গ্রন্থের ভাষা নিশ্চয়ই এরূপ হতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস। তাহলে ব্লগ বা ফেইসবুকে তিনি এভাবে লিখেছেন কেন? এসব করে কি তিনি নিজেকে অতি তুচ্ছ মানুষ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ নাস্তিকে পরিণত করেন নি? তাঁর এসব ব্লগিং থেকে মুক্তচিন্তার কোনো খোরাক পাওয়া যায় বলে মনে করি না।
অভিজিৎ সত্যিই আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না। তাঁর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। একই সাথে, ধর্মানুসারী এবং ধর্মবিদ্বেষী সকল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সাম্প্রাদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ধিক্কার জানাচ্ছি।
To be kind to others, be cruel to the criminals. থাবা বাবা ওরফে রাজিবের ব্লগ বা স্টেটাস-সমগ্র এবং অভিজিৎ রায়ের ‘মুক্তমনা’ ব্লগ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এ বন্ধ করা থেকে নানা প্রশ্ন বা সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ধরনের খুনাখুনির ঘটনা যাতে পুনারবৃত্ত না হয় সেজন্য ‘মুক্ত’ চিন্তার লেখকদের জন্য করণীয় হলোঃ
ক. লেখায় প্রকৃত মুক্তচিন্তা বা উন্মুক্ত আলোচনার ছাপ থাকতে হবে, যেখানে কোনো ব্যক্তি আক্রমণ, গালিগালাজ, কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রূপাত্মক মনোবৃত্তি প্রকাশ না পায়। আলোচনার ভাষা মার্জিত ও ভদ্রোচিত হতে হবে।
খ. লেখকদের সহনশীল হতে হবে। অন্যের মতের সাথে আপনি একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু অন্যের মতকে সমুন্নত রাখতে আপনার আন্তরিকতার যেন কোনো ঘাটতি না থাকে।
গ. আলোচনার উদ্দেশ্য যাতে মহত্তর কোনো সৃষ্টি বা আবিষ্কারের দিকে চালিত হয়, আলোচকদের লক্ষ্য সেটি হতে হবে।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসব ‘বাহাস’ মনিটর করা এবং প্রাণনাশের হুমকি, ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ‘মুক্তমনা’য় যাঁরা ভার্চুয়াল বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত ছিলেন, প্রাণনাশের হুমকি ছিল- উভয় সম্প্রদায় থেকেই তাঁদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক। আর কোনো খুন চাই না।
সকল সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ হোক। এভাবে আর যেন একটি খুনের ঘটনাও না ঘটে। আমাদের মুক্ত আলোচনা থেকে যেন দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কিছু উঠে আসে। আমরা যেন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর দিকে ধাবিত হই। কামনা ও প্রত্যাশা এটুকুই।
পুনশ্চ
বিভিন্ন ব্লগেও মনিটরিঙের ব্যবস্থা থাকা জরুরি হয়ে পড়ছে। এরকম খুন-হত্যার ভয়ভীতি, উত্তেজনা ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ব্লগপোস্টগুলোর লেখককে ব্লগ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সতর্কীকরণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আলোচনা মাত্রা অতিক্রম করামাত্র ব্লগপোস্ট ডিলিট করা উচিত হবে। এখানেই শেষ নয়; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসব তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা। যেসব বিষয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, সেসব ব্লগপোস্ট নিষিদ্ধ করাই সমীচীন হবে। আর কোনো ব্লগ যদি এসব উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই পরিচালনা করা হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত হবে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া।
ফেইসবুকে এরূপ মনিট্রিঙের ব্যবস্থা বর্তমানে বিদ্যমান আছে বলে আমি জানি। যেসব ফ্যানপেইজ ও গ্রুপ এসব উত্তেজনা উস্কে দেয়, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে। আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি- শুধু ধর্মানুসারীদের ব্লগপোস্ট বা ফেইসবুক গ্রুপই নয়, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী নাস্তিক বা অন্য যে-কোনো সম্প্রদায়ের পোস্ট বা ব্লগই বন্ধ বা ব্যান করে দেয়া উত্তম হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮