কবিতার অর্থ
‘কী যে লিখি ছাই মাথা ও মুণ্ডু আমিই কি বুঝি তার কিছু?’
এতদিন তো ভাবতাম আমিই বোধ হয় একমাত্র ব্লগার যে কিনা নিজের লেখার মাথামুণ্ডু নিজেই কিছু বোঝে না; এখন তো দেখি খোদ দুখুমামারও এ আক্ষেপ ছিল।
আসলে কবিতা যে কী বস্তু আমরা মনে হয় কেউই তা বুঝি না। কিংবা কোনটা কবিতা, কোনটা প্রবন্ধ বা গল্প- এটাও বোধ হয় আমরা সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করতে পারি না। এর কারণ কী? কবিতার বর্তমান স্টাইল বা প্যাটার্ন, নাকি আমাদের বোধের অক্ষমতা?
আমার মাঝে মাঝে বোধের অক্ষমতাটাই এর জন্য দায়ী মনে হয়। কিন্তু কবিতার প্যাটার্ন কি এর জন্য কম দায়ী? ব্লগে অনেক মজার ঘটনা ঘটে; হয়তো একটা দীর্ঘ কবিতা লিখলাম- কেউ কেউ বললেন গবেষণা ভালো হয়েছে, কেউ বললেন ভালো প্রবন্ধ, কেউ বা এটাকে গল্প বলতেও দ্বিধা করলেন না; এবং আমি অবাক হলাম এই কারণে যে কোনো ব্লগারই এটাকে কবিতা হিসাবে উল্লেখ করলেন না। এখানে লেখক হিসাবেও আমার দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে হয়। এজন্য কোনো পোস্টকে (যেটাকে আমি মনে মনে কবিতা বলি) আমি সহজে কবিতা বলে উল্লেখ করি না- ছেড়ে দিই পাঠকের বিবেচনার উপর।
কেউ কেউ বলেন, কবিতা অনুভবের বিষয়, কেউ বলেন এটা অনুবাদের বিষয়। আবার যদি কোনো কিছু না বোঝা যায় তাহলে সেটা অনুভবও করা যায় না, তেমনি অনুবাদও করা যায় না। কবি মনে মনে যা ভাবেন, তার পুরোটাই কবিতায় প্রকাশ করতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। কবি হয়তো পুরোটাই প্রকাশ করলেন, কিন্তু পাঠক এর মানে দাঁড় করালো সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। এটাকেই হয়তো কবিতার বহুমাত্রিকতা বলে। কবিতা অনুভবের বিষয়- এটাই বেশিরভাগ কবি ও পাঠক মনে করেন; তবে কেউ কেউ কবিতার অর্থটাও বুঝে নিতে চান কবিতার নিগূঢ় নির্যাস আস্বাদনের জন্য। এতে আমি দোষ দেখি না- পাঠক হিসাবে এটা যে কেউই দাবি করতে পারেন। এই পাঠকের হাত ধরেই কোনো কোনো কবি শীর্ষে উঠবেন, কেউ উঠতে ব্যর্থ হবেন।
১০ নভেম্বর ২০১৩
কবিতা পাঠ; প্রতিক্রিয়া; জনপ্রিয়তা
ব্লগে একটা কবিতা, গল্প কিংবা যে-কোনো বিষয়ের উপর প্রবন্ধ বা ফিচার পোস্ট প্রকাশ করার পর নিম্নোক্ত কমেন্ট পেলেনঃ
১) ৮০ জনই উচ্ছ্বসিত। লেখার ভূয়সী প্রশংসা করলেন। তাঁদের কমেন্টের সাথে আপনার মত শতভাগ মিলে গেলো। আপনার পোস্টটি লিখে আপনি যেমন তৃপ্তি ও আনন্দ পেয়েছেন, তেমনি কমেন্টও মনের মতোই হলো।
২) ১০ জন ব্লগারের কাছে মোটামুটি ভালো লাগলো; তাঁরা কিছু ভালো ও কিছু নেগেটিভ পয়েন্ট তুলে ধরলেন। নেগেটিভ পয়েন্টগুলোর সাথে আপনার মতের মিল একেবারেই হলো না- আপনি বিরক্ত হলেন এঁদের উপর- ধ্যাৎ- লেখা না বুঝে খামোখা গ্যাঞ্জাম পাকাচ্ছেন এঁরা।
৩) ৫ জন ব্লগারের কাছে লেখাটা ভালো লাগে নি। তাঁরা বাজে কমেন্টে আপনার মেজাজ খারাপ করে দিলেন।
৪) ৫ জন ব্লগার আপনার লেখাটার চুলচেরা বিশ্লেষণ করলেন। এঁদের কেউ কেউ এমনই কঠোর যে লেখাটাকে কোনো ‘লেখা’ বলেই স্বীকৃতি দিতে তাঁদের বাঁধলো।
এ থেকে আপনার অনুভূতি, মতামত বা অনুসিদ্ধান্ত কী হতে পারে? আমার মতামতটা এখানেই দিয়ে রাখি।
১) আপনার জনপ্রিয়তা ৮০% এর কিছুটা উপরে এবং ৯০%-এর কিছুটা নিচে।
২) যে-কোনো মিডিয়ায় বা ব্লগে আপনার লেখাটার উপর মতামতের শতকরা হার মোটামুটি এমনই হবে বলে মনে হয়।
৩) যাঁরা আপনার ফ্যান, অর্থাৎ আপনার লেখা যাঁদের ভালো লেগেছে, তাঁদের সর্বদা সম্মানের চোখে দেখুন। যাঁরা আপনার লেখার সমালোচনা করেছেন তাঁদের পোস্টগুলো পড়ে তাঁদের ব্যাপারে একটা ধারণা পেতে চেষ্টা করুন। তিনি গুণেমানে আপনার চেয়ে শ্রেয়তর না হলেও তাঁদের নেগেটিভ পয়েন্টগুলো ভেবে দেখুন। তাঁদের মতো করেও কেউ না কেউ ভাবতে পারেন- এ সত্যটাকে মূল্য দিন, সম্ভব হলে আপনার লেখাকে তাঁদের মত করে সাজান। কিন্তু তাঁদের উপর আপনি রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন- এটা এক মুহূর্তের জন্যও ভোলা যাবে না।
১২ নভেম্বর ২০১৩
শচীন- এক বিস্ময়কর মহাকাব্যের নাম
শচীনের বিদায়ে কান্না পাচ্ছে। শচীনবিহীন ক্রিকেটবিশ্ব ম্লান হয়ে থাকবে আগামী অনেক দিন।
শচীন রমেশ টেন্ডুলকার- একটা উজ্জ্বল কবিতার নাম- একটা মহাকাব্য।
১৫ নভেম্বর ২০১৩
প্রহসন
মিথ্যাকে সত্যে প্রতিষ্ঠিত করার নামই কি রাজনীতি? জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোই কি রাজনীতির লক্ষ্য?
একজন নেতা কীভাবে হাসতে হাসতে মিথ্যা কথা বলেন, আর কিছুলোক কীভাবে তা মিথ্যা জেনেও সত্য হিসাবে সানন্দে গ্রহণ করেন তা দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করে।
নজরুল এ দেশকে ‘আগুন খেলার সোনার বাংলা’ বলেছিলেন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলায় এখন আগুন জ্বলছে।
ঘরে ঘরে আগুন জ্বলছে।
পথে পথে আগুন জ্বলছে।
বাংলাদেশের আকাশে এখন আগুনের কালো ধোঁয়া আর পোড়া-মানুষের তীব্র গন্ধ। রক্তের বিনিময়ে আমরা যে-গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, সেই স্বাধীনতার নামে এখন বাংলাদেশ জ্বলছে।
আমি পুড়ে যাচ্ছি, আমরা পুড়ে যাচ্ছি- বিলাসপুরে ৫জন নিরীহ মানুষকে কুপিয়ে মারার পরও সমাবর্তনে মুখ ছাপিয়ে হাসি ঝরে পড়ে- হায়, নিষ্ঠুর বঙ্গভূমিতে নিরীহ মানুষেরা এভাবেই মাটিতে মিশে যেতে থাকবে- তাঁদের জন্য কতিপয় এ্যামেচার কবি জনসমক্ষে ‘মায়াকান্না’ কেঁদে অবশেষে হাসতে হাসতে চায়ের আমন্ত্রণে শামিল হবেন।
৭ জানুয়ারি ২০১৪
পাথর নয়, ফুল
লোভনীয় ফুল। বুকভরা অপার্থিব গন্ধ। ক্রমশ শাণিত হয় ধাঁধানো শরীর। মথিত হওয়ার চেয়ে তীব্র কোনো বাসনা নেই, নেই অন্য কোনো সুখ।
অনাঘ্রাত কস্তুরি জানে কি জীবনের মানে! গভীর মননে মেরিলিন মনরো।
সমগ্র সংগ্রামের মূলে যা তুমি চাও
সে আমার শরীরের ঘ্রাণ।
২৯ জানুয়ারি ২০১৪
For Explosions
এমনিতেই পুরোটা পৃথিবী তোমার পদতলে, এর সাথে সামান্য মেধা যোগ হলেই তোমাকে মাথায় তোলে নাচে তামাম পুরুষ।
তুমি নারী,
এবং
রূপসিনী।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
অভিলাষ
কখনো পাখি হতে সাধ হয়, কখনো প্রেমিক
আলপথ গুঁড়ো করে শূন্যে আছড়ে পড়ে দুরন্ত মহীরুহ
কখনো বাতাস, কখনো জোয়ারের নদী
কখনো পাহাড় পাঁজরের হাড় খুলে
অধীত অতীতের হতে তুলে ধরে একগুচ্ছ মর্মর ইতিহাস
কখনো প্রেমিক হতে ইচ্ছে হয়, কখনো খুনি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
(কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার রাইসুল নয়ন- ফেইসবুকে তাঁর কমেন্ট থেকে শেষ পঙ্ক্তিটি নেয়া হয়েছে)
মনুষ্যরূপ
ক্রোধ একদিকে মানুষকে অন্ধ করে, অন্যদিকে মানুষের সত্য ভাবনাটিকে উন্মোচিত করে দেয়। রাগের মাথায় আপনার স্ত্রী আপনাকে যে-নামে ডাকবেন, বা যে ভাষায় গালি দেবেন, আপনার প্রতি তাঁর প্রকৃত মনোভাব সেটিই। শান্তিকালীন সময়ে আবেগের ভেতর সত্য চাপা পড়ে থাকে।
আচমকা আমাকে প্রশ্ন করলেন- আপনার ৩ জন প্রাণপ্রিয় বন্ধুর নাম বলুন। আমি বললাম- নুরু, জসিম ও আবুল। এই যে এতকাল রাষ্ট্র করেছি- করিম, ইমরান, শাহজাহান, জাহিদ ছাড়া আমার আর কোনো বন্ধুই নেই- ওটা যে সত্য নয় তা আমি নিজেও জানতাম না।
স্ত্রীর হাসিমুখ আপনার দহন পানি করে দেবে; আপনি আমার প্রিয়তম বন্ধু নন- এ জ্বালা আপনাকে কুরে কুরে খাবে।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
পুরুষ-প্রকৃতি
পুরুষদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তোষামোদি করবার ক্ষমতা। এ কাজে কবিরা অদ্বিতীয়।
সত্য নয়?
ম্যাডাম প্রভা রহমানই সঙ্গীতে সেরা- এ কথা কোনো নারী বলেন নি। আপনার সেরাদের তালিকায় সর্বদা নারীরাই এগিয়ে থাকেন।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
কষ্টের অনুভূতি
সুখ বিলীন হয়ে যেতে পারে, কষ্ট পারে না; সুখ মিলিয়ে যেতে যেতে দুঃখের গর্ভে ডুবে যায়; কষ্ট তার ক্ষত বা দাগ রেখে যায়, গুটিবসন্তের মতো। যে নারী পিলখানায় তার স্বামীকে হারিয়েছেন, যে সন্তান হারিয়েছে তার বাবা বা মাকে- পাহাড়-সমান হাজারটা সুখও তা কোনোদিন চেপে রাখতে পারে না।
সুখ বা দুঃখের অনুভূতি হলো ব্যক্তিক। যিনি জীবনে ‘কষ্ট’ দেখেন নি, তাঁর কাছে কষ্ট হলো মুছে যাওয়া ছবির মতো। কষ্ট মুছে ফেলা যায় না।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
(কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার সাবরিনা সিরাজী তিতির। ফেইসবুকে তাঁর একটা স্টেটাসে করা আমার কমেন্টের পরিমার্জিত রূপ)
প্রতিক্রিয়া
এসব পড়ে আয়নাতে কি নিজের সুরত দেখতে পেলে?
তা যদি হয়, স্বভাবখানি শুধরে ফেলো।
তোষামোদি, হিপোক্রিসি- এসব ছেড়ে
সত্য বলো
সত্য বলো
বুকের ভেতর সর্বদাই সত্য বলার সাহস রাখো
এবং তুমি আগের মতোই
মিষ্টি হেসে সামনে দাঁড়াও।
আমি আছি
আছি আমি
যেমন ছিলাম, ঠিক তেমনি।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪