somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারকাজরিপ

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিসক্লেইমার

এই গল্পের প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্র বাস্তব; দৈবাৎ কোনো অসঙ্গতি পরিদৃষ্ট হলে লেখকের গোচরে আনার জন্য পাঠকের প্রতি অনুরোধ থাকলো, তৎক্ষণাৎ সংশোধনী জুড়ে দেয়া হবে।

পটভূমিকা

আমার ৫ বছর ১ মাস মেয়াদী ব্লগীয় জীবন এবং তার চেয়ে মাস কয়েক কম বয়সী ফেইসবুক লাইফে ‘হিট’, ‘কমেন্ট’ এবং ‘লাইক’-এর সংখ্যা উত্তরবঙ্গীয় মঙ্গার সমতুল্য। ‘আমি এখন টয়লেটে (আহ্‌, ফিলিং রিলিভ্‌ড)’, অথবা ‘কোল্ড শাওয়ার নিচ্ছি (প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো)’ জাতীয় স্টেইটাসে যেখামে ধুমসে ‘লাইক’ আর ‘কমেন্ট’ পড়তে থাকে, তা দেখে আমার মন কেবলই স্বপ্নাতুর হতো, হায়, আমার কপালে যদি এমনটা জুটতো! আমার কাছের মানুষেরা আমার সাহিত্যকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন; আমার মতো উচ্চমার্গীয় সাহিত্য খুব কম ব্লগারের মগজ থেকেই উৎসারিত হয়ে থাকে বলে তাঁরা মনে করেন; অথচ আমার কোনো পোস্ট প্রথম পাতায় পাবলিশ করা হলে ওটি ঝিমোতে ঝিমোতে পরের পাতায় চলে যাবার সময় খুব হতাশ হয়ে লক্ষ করি তাতে পাঠসংখ্যা ১০ কি ১২, এবং কোনো কমেন্ট নেই। মাস কয়েক ধরে ব্লগিং করছেন এমন অনেক ব্লগার আছেন যাঁরা একটা ২-৩ লাইনের স্টেইটাস টাইপের পোস্ট পাবলিশ করলেও সেখানে পাঠসংখ্যা দ্রুত ১০০-এর ঘর ছাড়িয়ে ১০০০-এর দিকে ধাবিত হয়, শিলাবৃষ্টির মতো কমেন্ট প্রক্ষিপ্ত হতে থাকে। ‘নির্বাচিত’ পাতায় বেজায় সাধারণ মানের পোস্টগুলো দেখে মাঝে মাঝে আমার চোখের কোণ ভিজে ওঠে- হায়রে আমার নিষ্ঠুর ভাগ্য! আমার এমন কেন হয়? ব্লগে নিজের পার্টিসিপেশন ইভালুয়েট করতে থাকি। নাহ্‌, আমি ব্লগের সক্রিয়তম ব্লগারদের কেউ নই যে, রান্নাবান্না, স্নানাহারসহ যাববতীয় প্রাকক্রিয়াদি ব্লগেই করে থাকি, তবে আমি নিয়মিত অন্যান্যদের ব্লগ ভিজিট করি, সহব্লগারদের পোস্ট পড়ে গঠনমূলক কমেন্ট লিখি; আমার কমেন্টের স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে আমার খুব উচ্চ ধারণা না থাকলেও এর মান নেহায়েত কম নয় এতটুকু আত্মবিশ্বাস আমার আছে। এজন্য কোনো কোনো ব্লগার আমাকে সমীহ করেন বলেও মনে হয়, আর কেউ কেউ প্রাপ্য সম্মানও দিয়ে থাকেন।

হঠাৎ জীবন একবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। জীবনে কী আর আছে যদি তাতে কিছু বৈচিত্র না থাকে! একটা ‘হিট-প্রত্যাশী’ পোস্ট আমাকে লিখতে হবে, যেটি আমার এ যাবতকালের সেরা পোস্ট হবে- হিটসংখ্যা, পাঠসংখ্যা এবং সর্বোপরি কমেন্টসংখ্যার দিক দিয়ে। আমি দেখেছি, ঐ ধরনের পোস্টগুলো খুব ‘হিটময়’ হয়ে থাকে, যেখানে টেক্সটের সারা গতর জুড়ে সহব্লগারদের নাম উল্লেখ থাকে, উৎসাহ-প্রেরণা প্রদানের জন্য ধন্যবাদসহ কৃতজ্ঞতার কথা লিখা থাকে। পাঠকমাত্রই ঐসব পোস্টে ঢুকে নিজের নাম খোঁজেন- নাম পেলে ‘হুররে’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন এবং একটা ‘লাইক’সহ কমেন্ট করে থাকেন। নাম না থাকলেও কিন্তু কমেন্ট বা হিটের কমতি হয় না; ‘মাইনাস, আমার নাম নাই’ বলে একটা কমেন্ট ফেলে রেখে অভিমান করে ঐ ব্লগার ব্লগ থেকে বেরিয়ে যান। লাভের মধ্যে কিন্তু লেখকেরই লাভ হলো- তিনি হিট ও কমেন্ট দুটিই পেলেন; মাঝে মাঝে কেউ কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে নাম-মিস হয়ে যাওয়া ব্লগারের নাম এডিট করে টেক্সটে ঢুকিয়ে দেন; ফলে ঐ ব্লগার পুনর্বার এসে খুশিতে ডগমগ হয়ে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে আরও একটা কমেন্ট রেখে যান। ব্যাপারটা খুব মজার। আমাকে ঠিক এ কাজটাই করতে হবে।

একটানা আটদিন লিখতে পারি নি, কিন্তু কর্মক্ষেত্রের কর্তব্য পালন ও পারিবারিক ডামাডোলের ভেতর যতটুকু সময় পেলাম, নিয়মিত ব্লগিং ও ফেইসবুকিঙের ফাঁকে ফাঁকে এ পোস্টটা দাঁড় করাতে আটদিনই লেগে গেলো। এরপর বেশ লম্বা একটা ব্রেক নিলাম। আপনারা প্রায়ই দেখে থাকবেন ফিল্মমেকাররা ফিল্ম রিলিজ করার অনেক আগে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফিল্ম তৈরিরও অনেক আগে এর গানগুলো তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দেন, খুব ঘন ঘন টিভি চ্যানেলে দেখানো হতে থাকে। একটানা বহুদিন ধরে প্রচারিত হবার ফলে একটা সাধারণ মানের গানও বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে; আর যদি গানগুলোর কোয়ালিটি খুব ভালো হয়, তাহলে তো কথাই নেই, গানের সাথে সাথে মুভিটাও দেখার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। আমি এরকম একটা চাতূর্যের পথই বেছে নিলাম।

ছাপার কাগজে প্রায় দুই ফর্মা সাইজের লেখাটা আরও বার কয়েক পড়ে ফাইনাল টাচ দেয়ার পর এর শিরোনাম স্থির করি – ‘তারকাজরিপ’। কমপ্লিট সেটিসফেকশনের একটা সুখ আমার সারা শরীরে বয়ে যেতে লাগলো। অবশেষে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট রাত ১১টায় ‘তারকাজরিপ’-এর প্রথম কিস্তি ফেইসবুকে আমার ‘সোনাবীজ’ নিকের টাইমলাইনে ৪০১৩ জন ফ্রেন্ডের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।

তারকাজরিপ – প্রথম কিস্তি

আমার ‘অনলাইন তারকাজরিপ’ লেখাটা শুক্রবারের সাহিত্যসাময়িকীতে যেদিন প্রকাশিত হলো, সেদিন দুপুরে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক তুঙ্গে উঠলো। সকালের দিকে কেউ কেউ পত্রিকার লিংকসহ ব্লগে দু-একটা পোস্ট দিয়ে এ লেখার বিরোধিতা করে দু-চার কথা লিখলেও বেশিরভাগ ব্লগার সারারাত ব্লগিং ও ফেইসবুকিঙের সবটুকু নির্যাস তলানিসহ উপভোগ করার পর অফুরন্ত তৃপ্তি সহকারে নাকে খাঁটি সর্ষের তেল ঢেলে ঘুমোচ্ছিলেন বলে নামজাদা এবং সেলিব্রেটি ব্লগারগণ তখনও এ ‘স্ট্রাইকিং’ লেখাটার ঝাঁঝ আন্দাজ করতে পারেন নি। আমি সকাল ১০টায় ঘুম থেকে উঠে নিয়মমাফিক আধঘণ্টা ব্লগ এবং আধঘণ্টা ফেইসবুক ব্রাউজ করার পর সাপ্তাহিক কাঁচাবাজারের উদ্দেশ্যে বাইরে চলে গেলাম।

জুম্মার নামাজের পর লাঞ্চ সেরে বিছানায় শুয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে যথাস্বভাবে শুক্রবারের টেলিফিল্ম দেখার জন্য একবার চ্যানেল আই, আরেকবার এনটিভি দেখতে শুরু করলাম, আর যথারীতি আমার মাথার ডানপাশে ছোট্ট টিপয়ের উপরে রাখা ল্যাপটপ অন করে এভরিহোয়্যারইন ব্লগে ঢুকতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ- ব্লগের প্রথম পাতায় ‘দৃষ্টি আকর্ষণের’ নিচে একটা পোস্ট ঝুলছে – ‘সোনাবীজের বিতর্কিত তারকাজরিপ’। পোস্টের প্রথম কয়েকটা লাইন – ‘সত্যকে মিথ্যা, আর মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করার অপপ্রয়াস হিসাবে চিহ্নিত হলো সোনাবীজের ‘অনলাইন তারকাজরিপ’, অনলাইন ব্লগারগণ হলেন যার সাবজেক্ট; এ জরিপ দ্বারা তিনি সমগ্র ব্লগবাসীকে অপমানিত করেছেন; এভরিহোয়্যারইন ব্লগ থেকে তাঁকে চিরতরে ব্যান করার দাবি উঠেছে, এবং কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে ব্লগের পক্ষ থেকে মানহানির মামলা রুজু করার কথাও তুলছেন।’ ব্যক্তিজীবনে আমি একজন অতি নিরীহ মানুষ, এবং ব্লগজীবনে প্রায়-সবার অগোচরে থাকা অখ্যাত ও নিরুপদ্রব এই ব্লগারের বিরুদ্ধে এই অপবাদ দেখে আমি বিচলিত হবার বদলে দারুণভাবে পুলকিত হয়ে উঠি – হুররে, আমি দেখি সত্যি সত্যি তারকা বনে গেছি!

তিনি ব্লগের একজন সম্মানিত মডারেটর। তাঁর বেশ ক’টি মাল্টি নিক থাকলেও ‘আরজু মণি’ নিকেই তিনি সমগ্র ব্লগ ও ফেইসবুক দুনিয়ায় খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেছেন; সম্প্রতি ‘আশা সঞ্চারিয়া’ নামক আরেকটা নিক চালু করে থাকলেও যুগপৎ দুটি নিকে পরিচিতি লাভের আশাটা আপাতত মিঠাইয়ে বালু মিশ্রিত হবার মতো বিপত্তি ঘটে যাওয়ায় সে গুঁড় কেউ খাচ্ছেন না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, কেননা, ঐ নিকে তিনি প্রত্যাশিত ‘তোলপাড়’ সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এই মহীয়সী ব্লগারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি অপরিমেয়; তিনি একজন সুসামাজিক ব্লগার; ছোটো-বড় সবার ব্লগে তিনি ঢুঁ মারেন; সব পোস্ট পড়ার সময় পান না, কোনো কোনো পোস্টে তিনি চোখে চশমা-পরা একটা ইমোটিকন ফেলে যান, যার অর্থ ‘এখন পড়ার সময় নেই, তবে আবার আসবো পড়তে ও কমেন্ট করতে।’ তিনি খুবই ব্যস্ত ব্লগার, কারণ, তিনি একজন মডারেটর, আর সুলেখক না হলে মডারেটর হওয়া যায় না; অসাধারণ লেখনিশক্তি এবং বিচিত্র ও অভিনব স্বাদের পোস্ট দ্বারা ব্লগমাতা ‘ডায়ানা’র সুনজর লাভে সক্ষম হলে পরেই একদিন জানতে পারি তিনি অন্যতম মডারেটর হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি আরজু মণি আপুর লেখার ভক্ত অনেক আগে থেকেই, এবং যেদিন অনেক অনুনয়ের পর তিনি আমাকে ফেইসবুক ফ্রেন্ড হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, সেদিন তাঁকে মেসেজ করে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। এরপর মাঝে মাঝে তাঁর সাথে আমার চ্যাট হতো। তিনি আমাকে ছোটো ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। আমার লেখার ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিয়ে বড় লেখক হবার জন্য যাবতীয় সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। ওহ্‌, ঐ কথাটা বলতে ভুলে গেলাম- তিনি মডারেটর হবার পর আমাকে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম, এবং পরবর্তী ব্লগ সম্মিলনে তাঁর এই ছোটো ভাইকে এ উপলক্ষে মিষ্টি খাওয়াতে ভুলবেন না, তাও বলেছিলেন।

‘দৃষ্টি আকর্ষণ’-এর নিচে যে স্টিকি পোস্টটি দেখা যাচ্ছে, সেটি লিখেছেন আমার অনেক প্রিয়, ব্লগের জনপ্রিয়তম সেলিব্রেটি ব্লগার স্বয়ং আরজু মণি আপু।


প্রথম কিস্তির প্রতিক্রিয়া

ঘড়িতে যখন কাঁটায় কাঁটায় ১১টা বাজছিল, ঠিক তখনই তারকাজরিপ-এর প্রথম কিস্তি ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া হয়, এবং ঠিক ৫ মিনিটের মাথায় সর্বপ্রথম যিনি ‘লাইক’ বাটনে ক্লিক করেন তিনি হলেন ব্লগার ‘সোনালী ডানার ফড়িং।’ এরপর আমি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে থাকি তারকা ব্লগারগণের উপস্থিতির জন্য। ২০ মিনিট পার হয়ে যায়, ২৫ মিনিট পার হয়ে যায়, কোনো কমেন্ট তো দূরের কথা, দ্বিতীয় কোনো ‘লাইক’-এর টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। ব্লগের মতো ফেইসবুকে ঐ সুবিধাটা নেই যে দেখবো কারা কারা আমার এ স্টেইটাসে চোখ বুলিয়ে গেছেন। একবার মনে হলো, লেখায় অন্য কোনো ব্লগারের নাম নেই বলে সবাই ‘মাইন্ড খেয়েছেন’; কিন্তু আরজু মণি! তিনি তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩২ ঘণ্টাই ফেইসবুকে ঘুরে বেড়ান, আমার স্টেইটাস কি তাঁর চোখ এড়িয়ে গেলো? নাকি তিনিও ‘মাইন্ড খেয়েছেন’? এমন সময়ে... ঠিক এমন সময়ে ঘটনাটা ঘটলো- আরজু মণির ‘দুরন্ত’ লাইক, সেই সাথে তিন তিনটা ‘কিউরিয়াস’ স্মাইলি, এবং প্রায় একই সঙ্গে ব্লগার জাফর সিদ্দিকীরও একটা ‘কিউরিয়াস’ স্মাইলি দেখে আমি এক্সাইটেড হয়ে পড়ি। এরপর ঐ রাতে যতক্ষণ জেগে ছিলাম, আমার এক্সাইটমেন্ট ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে তুঙ্গে উঠলো, এবং আরও যে তিনজন ব্লগারের উপস্থিতি আমাকে প্রভূত আনন্দ দিত, তাঁদের কাউকে দেখতে না পেয়ে সবটুকু উত্তেজনা বাতাসে মিলিয়ে গেলো।

২৫ আগস্টে আমার ঘুম ভাঙলো সকাল ১১টার দিকে। নাস্তা করার পর ফেইসবুকে ঢুকি। মনের এক কোণে একটুখানি আশা ছিল, সেই তিনজন ব্লগারের ‘লাইক’ অথবা ‘কমেন্ট’ অথবা দুটোই হয়তো থাকবেই। একেবারে হতাশ হতে হলো না। ঐ তিনজনের একজন, আমার খুব প্রিয় ব্লগার, খুবই প্রিয় ব্লগার, এভরিহোয়্যারইন ব্লগের জনপ্রিয়তম ব্লগারদের একজন, মাহজাবীন মুন আপুর একটা কমেন্ট রয়েছে তাতে। কিন্তু তাঁর কমেন্টে অভিমান ঝরে পড়ছে: ‘আহা সেলিব্রিটি হইতে পারলাম না।’ যদিও কমেন্টের শেষে একটা হাস্যমান স্মাইলি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, তিনি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন মনে। কারণ, তিনি জানেন, আমি তাঁকে অসম্ভব ভালোবাসি; ‘তারকাজরিপ’ জাতীয় আমার কোনো লেখায় তাঁর মতো তারকার নাম থাকবে না, এটা তিনি মরে যেয়েও বিশ্বাস করবেন না। তবে আমি কিন্তু বেশ আহত হলাম মুন আপুর কমেন্টে, কারণ, আমার উপর তাঁর পরিপূর্ণ বিশ্বাসের দারুণ অভাব রয়েছে। নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে এর কিছুক্ষণ পরই ফেইসবুকে তারকাজরপি দ্বিতীয় কিস্তির শেয়ার দিলাম।


তারকাজরিপ – দ্বিতীয় কিস্তি

‘মেয়েতে মেয়েতে মামাতো বোন।’ এ কথার কী অর্থ হয় বলুন তো? বলছি শুনুন। একটা মেয়ে, নাম তার নীলা। আরেকটা মেয়ে, তার নাম শীলা। নীলা আর শীলার সাথে একদিন আমার দেখা। নীলাকে বললাম, ও মেয়েটি কে? নীলা বললো, ও আমার মামাতো বোন। আমি চোখ সরু করে শীলার দিকে তাকাতেই শীলা বলে উঠলো, নীলাও আমার মামাতো বোন। অদ্ভুত তো! ওরা কী বলছে, সম্পর্কের এসব মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝি না। থাক, আপনারা ভাবতে থাকুন, আর চলুন ‘তারকাজরিপ’-এর পরের খবর জানতে।

‘দৃষ্টি আকর্ষণমূলক’ পোস্টটা না পড়েই বুঝতে পারি, এটা একটা আই-ওয়াশ ধরনের পোস্ট। আরজু মণি আপু আমাকে খুব ভালোবাসেন। তাঁর মতে আমার মধ্যে তীব্র সম্ভাবনা বিদ্যমান; আমার লেখার মান অনুযায়ী ব্লগে আমি ‘হিট’ পাচ্ছি না। এই যে পোস্টটি স্টিকি হলো, তামাম ব্লগার ‘সোনাবীজ’ নামটি জানতে পারলেন, অনেকেই উৎসুক হয়ে আমার ব্লগে ক্লিক করবেন, কেউ কেউ দু-একটা পোস্ট পড়বেন, তাতেই কাজ হয়ে যাবে। তাঁরা দেখবেন আমার লেখার ভেতরে কী রত্নখনি লুকায়িত আছে। তাঁরা এর প্রশংসা করবেন আপরাপর ব্লগারের সাথে, পোস্টগুলোকে ফেভারিট করবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি একটা পোস্ট পাবলিশ করলে নিয়মিত ও পুরোনো কয়েকজন ব্লগার মিলে সচরাচর সর্বসাকুল্যে গোটা দশেক কমেন্ট করে থাকেন। তাঁরা অবশ্য আমার লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেন; কিন্তু আফসোস, ব্লগে এ লেখার কোনো প্রচার জুটলো না। প্রচারেই প্রসার। এই প্রচার ও প্রসারের কাজটি অভিনব কৌশলে করে দিলেন আরজু মণি আপু। একটা বিতর্কিত বই ব্যান করা হলে, কিংবা কোনো লেখক বিতর্কিত বিষয়ের অবতারণা করলে বাতাসের বেগে তাঁর নামডাক আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। আমার এখন সেটাই হচ্ছে। আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি, আরজু মণি আপু আমাকে নিয়ে সমুদয় ব্লগারের সাথে ‘রিভার্স’ খেলছেন।

পোস্টের বিষয়বস্তুর চেয়ে কমেন্টগুলো আগে দেখতে ইচ্ছে করলো। প্রথম কমেন্টকারী ব্লগারের নাম মাহজাবীন মুন। ‘রেহনুমা’ নামক তাঁর আরেকটি নিক আছে বলে আমি অনুমান করছি, কিন্তু ওটি তাঁর নিক নয় বলে একদিন ফেইসবুক মেসেজে আমাকে জানিয়েছিলেন। তাঁর আরও কয়েকটি মাল্টি নিক আছে বলে আমার ধারণা, তার মধ্যে একটি তাঁর স্বামীর নিক বলে তিনি প্রচার করে বেড়ালেও ওটি যে তাঁর নিজেরই একটা মাল্টি নিক, সেটা সহজেই আনুমেয়। তবে আমার ভুলও হতে পারে, কারণ আমি মানুষ, গাছ নই। আমার আর মুন আপুর দেশের বাড়ি পাশাপাশি – আমরা আড়িয়াল বিলের মানুষ, পদ্মার পাড়ে আমাদের বাড়ি। এজন্য তিনি আমাকে আদর করে দেশি ভাই ডাকেন। এটা আমার ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের এ পরিচয় ঘটেছিল তাঁর ‘রেহনুমা’ নিক থেকে, যখন আমি ‘ফারিহান আহমাদ’ নিক ধারণ করে ছিলাম। আপু সেই কথাটি ভুলে গেছেন। মুন আপু তাঁর কমেন্টে লিখেছেন: ‘দেশি ভাইকে আমি অনেক সম্মান করতাম আমাদের দেশের পোলা হওয়ার সুবাদে। কিন্তু তিনি যে দাবি করছেন ‘রেহনুমা’ নিকটাও আমার, সেই দাবি আমি প্রত্যাখ্যান করছি, এবং এহেন মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া, ব্লা ব্লা বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তাঁকে একসাথে শতেকখানি মাইনাস দিতে ইচ্ছে করছে; ব্লগে মাইনাস বাটনের অভাব বোধ করছি। তেঁজের সাথে রিপোর্টেড।’ মুন আপু আমার উপর এতখানি ক্ষেপতে পারেন তা ধারণাতীত ছিল। আমি ভাবতে থাকি এর কারণ কী হতে পারে তা নিয়ে। আমি বুদ্ধিমান মানুষ; মুহূর্তে মনে পড়ে যায় বিরাট বোকামি করেছি, যা আমার মেধার সাথে যায় না। ‘তারকাজরিপ’-এর ৫০ ভাগেরও বেশি সময় নিয়ে যাঁদের কথা বলেছি তাঁরা হলেন আরজুমণি ও রবীন্দ্রনাথ শায়লা; অথচ আমরিন রেজোয়ানা এবং মাহজাবীন মুন আপুর ব্যাপারে বিশদ কিছু না লিখে শেষ অনুচ্ছেদের মাঝামাঝি এক জায়গায় লিখেছিলাম – ‘এ ছাড়াও যাঁদের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন তাঁরা হলেন....।’

জন্মলগ্ন থেকেই ব্লগে দলাদলি বা গ্রুপিং একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কোনো পোস্ট পছন্দ না হলে বিপরীত পক্ষ সংঘবদ্ধভাবে ডাবল এন্ড ভার্টিক্যাল এনেভেলপমেন্টের মাধ্যমে ব্লগলেখকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উপর্যুপড়ি আক্রমণ করতে থাকেন। লেখকের সপক্ষ ব্লগারগণ তখন মহারণে মেতে ওঠেন; পুরো ব্লগ উত্তাল ও বেসামাল হয়ে পড়ে। ব্লগাধিকর্ত্রী তখন মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন, কখনো সফল হোন, কখনো নিজেই বিতর্কিত হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

ব্লগার আরজু মণি ও রবীন্দ্রনাথ শায়লা যেমন সমগোত্রভুক্ত প্রতিষ্ঠিত সেলিব্রেটি ব্লগার, অন্যদিকে মাহজাবীন মুন এবং আমরিন রেজোয়ানাও শীর্ষস্থানীয় সেলিব্রেটি। এঁরা মেয়েতে-মেয়েতে মামাতো বোন। আপাত মধুরতম সম্পর্ক দৃষ্ট হলেও এঁদের অন্তরে সর্বদাই অন্যপক্ষের জন্য বিষদাহ হতে থাকে। এক শিল্পী কোনোদিন অন্য শিল্পীর যশোখ্যাতি বা প্রশংসা সহ্য করতে পারেন না। আলাউদ্দিন আল-আজাদ তাঁর ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাসে এ কথা প্রমাণ করে গেছেন। মাহজাবীন মুন একজন ভ্রমণপিপাসু ব্লগার। তিনি পৃথিবীর ১৯৭টি দেশই ভ্রমণ করেছেন। পৃথিবীর ১৯৮তম দেশটি কবে আত্মপ্রকাশ করবে আর কবে তিনি স্বামীর ব্যাংক থেকে ১৪ লাখ টাকা তুলে নিয়ে সেই দেশটি দেখতে উড়াল দিবেন, এ নেশায় তাঁর ঘুম হয় না। ব্লগে তিনি ‘লেডি বতুতা’ খেতাব অর্জন করেছেন তাঁর ভ্রমণলিপ্সার জন্যই। তবে তাঁর এতো ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য হলো ভ্রমণ শেষে ব্লগে একটা সচিত্র ভ্রমণ পোস্ট পাবলিশ করা, যা পড়ে ব্লগারগণ টাসকি খেয়ে পড়ে যাবেন। জীবনে সাধ-আহ্লাদ বলতে তাঁর এতোটুকুই, একটা অতি চমৎকার ভ্রমণপোস্ট লেখা। মুন আপুর এরকম পোস্ট পাবলিশ হওয়া মাত্র ব্লগারগণের মধ্যে কে আগে কমেন্ট করে ‘পুত্তুম পিলাস’ দিবেন তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তা ফেইসবুকে শেয়ারিং হতে থাকে। ‘লাইক বাটনে’ ঘন ঘন ক্লিক পড়তে থাকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কমেন্টের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ফেইসবুক শেয়ারিংও রাতারাতি ৫০০’র ঘরে পৌঁছে যায়। বাহবা বাহবা, মারহাবা মারহাবা, অসাধারণ, আপনার দ্বারাই সম্ভব- ইত্যাকার প্রশংসায় ব্লগবাসীগণ শতমুখ হয়ে ওঠেন। ঠিক এ জিনিসটাই আরজু মণি ও শায়লার শরীরের যেন আগুন জ্বেলে দেয়।

দ্বিতীয় কিস্তির প্রতিক্রিয়া

দ্বিতীয় কিস্তি পড়ে শেষ করার জন্য যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু সময় পরেই প্রথম কমেন্টটি যিনি লিখলেন, তিনি আমার সেই প্রথম রাতে কাঙ্ক্ষিত তিন ব্লগারের একজন।
‘হাঃ হাঃ হাঃ সোনাবীজ ভাইয়া, রকযযযযযয! ঠিক বলেছেন একদম। একজনের জনপ্রিয়তা অন্যজনের গায়ে বিলাই সুড়সুড়ি ছড়িয়ে দেয়।’ আমরিন রেজোয়ানার এ কমেন্ট আমার মনে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিল। আহ্‌, পরম শান্তি! শান্তি!
কিন্তু এরপর আর কোনো কমেন্ট নেই! আশ্চর্য তো! দিনে-দুপুরে সবাই কি ঘুমোচ্ছে? আমি এই কিস্তিতে কমপক্ষে ‘আকাশবীনা বাতাসবীনা’র কমেন্ট প্রত্যাশা করছি। কয়েক মাস আগেও ব্লগ ও ফেইসবুকে তাঁর অভিন্ন নিক ছিল – রবীন্দ্রনাথ শায়লা; কবে তিনি এই নতুন রূপ ধারণ করেছেন আমি জানি না। প্রোফাইল পিকচারও বদলে ফেলেছেন। তাঁর এই ছলবদল আমাকে জানান নি, কিন্তু তাঁর কমেন্ট পড়েই খপ করে ধরে ফেলেছিলাম – তিনি আর কেউ নন – রবীন্দ্রনাথ শায়লা।
পাক্কা তিন ঘণ্টা পর আরজু মণির কমেন্ট: ‘রূপক নাম হওয়ার পরেও তীব্র নিন্দ জানাচ্ছি। একজন মেয়ে আরেকজন মেয়েকে অপছন্দ করতে পারেন কী না, সেটা আর যার মনেই থাকুক আমার নিজের সাইটে মুন আপা আর আমরিনের ব্লগের লিংক দেয়া আছে আমার প্রিয় ব্লগার হিসেবে। হিংসে করলে দিতাম না অবশ্যই।’ এর নিচেই তাঁর আরেক কমেন্ট: ‘হিংসে করলে আমি অন্য মেয়ে ব্লগারদের পোস্টে যেতাম না... কারণ কোনো কোনো মেয়ে ব্লগারের পোস্টে আমি গেলেও তাঁরা সচরাচর আসেন না আমার ব্লগে।’ আমি একটু ঘুরে বসি- যা বাবা! আলামত তো খুব ভালো ঠেকছে বলে মনে হচ্ছে না। আরজু মণি বোধ হয় ভুল বুঝছেন। আমি লিখি, ‘ একটু অপেক্ষা করুণ না! অতি শীঘ্রই এভরিহোয়্যারইন ব্লগে এ পোস্টের পূর্ণাঙ্গ শুভমুক্তি ঘটবে, তখন সবকিছু বলা যাবে নে।’ অবস্থা সত্যিই বেগতিক। আরজু মণি ও আমরিন রেজোয়ানার সম্মিলিত আক্রমণে আমার জান দফারফা হবার জো হলো। এমন সময়ে আমার পক্ষ নিয়ে যিনি আবির্ভূত হলেন, তাঁর নাম আমিনুর রহমান নেসলে। একজন সহযোদ্ধা পেয়ে আমার মনোবল আকাশ স্পর্শ করলো। এরই মধ্যে আমরিন রেজোয়ানার আরেক কমেন্ট: ‘মনে মনে আমি কিন্তু সোনাবীজের মুণ্ডুপাত করছি।’ আরও ঘণ্টা তিনেক পরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আবির্ভূত হলেন মাহজাবীন মুন। ‘এটা কী লিখেছেন সোনাবীজ ভাই? আপনি আমার দেশি মানুষ, এমন করে আমাকে পঁচাতে পারলেন? আমি কাউকে ব্লগ কেন, ব্লগের বাইরেও কোনোদিন হিংসা করি নি। আর আমি কোনো সেলিব্রিটি নই, আমার কোনো মাল্টি নিকও নেই। আমার স্বামীর নিক যক্ষের ধনের মতো পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখে, পাছে আমি আলতু-ফালতু কমেন্ট করে তাঁর ইমেজ নষ্ট করি।... আর মণির কমেন্টে ১০০০ লাইক। আমিও কখনো কাউকে হিংসে করি না। অভিমান হতে পারে, কিন্তু কখনো হিংসা নয়। এই সুনাম আমার বাস্তব জীবনের পরিচিত মহলে ব্যাপক সুবিদিত সোনাবীজ ভাই।’

আপনি অতি সহজেই একজন মানুষকে কাঁদাতে পারেন। কিন্তু কাউকে হাসানোর দক্ষতা খুব কম মানুষেরই আছে, কেননা মানুষের কাঁদবার আবেগ হলো হাসবার আবেগের চেয়ে অনেক বেশি। আপনি কাঁদলে আপনার চেহারা শুধু বিকৃতই হয় না, চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়, কখনো বা নাক দিয়েও পানি চলে আসে। হাসলে আপনার চেহারা কেবল উজ্জ্বল হয়, কিন্তু কান দিয়ে রঙিন ধুয়া বের হয় না, চুলগুলোও লাফালাফি করে না। যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ‘তারকাজরিপ’ লিখেছিলাম, তার পেছনেও আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল- ব্লগারগণের সাথে কিছু হাসিতামাশা করা। কিন্তু মানুষ রম্য বোঝে না, ঠাট্টা বোঝে না। সবাই এতো বেরসিক হলে আমি বাঁচবো কাকে নিয়ে? এমন সময় একটা বিগ ব্লেসিঙের মতো উপস্থিত হলেন যিনি, এ সময়ে আমি ঠিক তাঁকেই আশা করছিলাম। তিনি কি অন্তর্যামী?

তিনি আমার সাক্ষাৎ ‘গেরাই’। আমার বাড়ি তাঁর বাড়ি মধ্যে কয়েক গ্রাম, ভালোবাসার আদান-প্রদান হচ্ছে অবিরাম। বছরখানেক আগে তিনি এমু ব্লগে খুব সক্রিয় ছিলেন, এখন কালেভদ্রে তাঁকে ব্লগে দেখি। তবে ফেইসবুকে আমার দুই নিক মিলিয়ে মোট ৯০১৩ জন ফ্রেন্ডের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। তাঁর রাজনৈতিক ভাষ্য আমার খুব ভালো লাগে। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় শক্তিশালী যুক্তির মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যবিষয়গুলো তুলে ধরেন; ভেরি কনভিন্সিং। তাঁকে আমার অনেক অনেক কাছের মানুষ মনে হয়, এবং ভালোও বাসি অনেক বেশি। শুধু ‘গেরাই’ হওয়াটাই যে এর মূল কারণ তা না; তিনি আমাকে একজন অনেক বড় লেখক মনে করেন; বলতে গেলে তাঁর আবেগাপ্লুত কমেন্টই আমাকে সত্যিকারে বড় লেখক হতে প্রেরণা যোগায়। আমার কোনো পোস্ট পাবলিশ হওয়া মাত্র দুনিয়ার সব ব্লগার পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও তিনি অবশ্যম্ভাবীভাবে আমার ব্লগে ঢুকবেন, এবং আশাব্যঞ্জক কমেন্ট লিখবেন। আমাদের পারস্পরিক আন্তরিকতা ও অন্তরঙ্গত্ব কতোখানি গভীর তা তাঁর কমেন্ট থেকেই বোঝা যাবে। আরজু মণি আপুর আলোচ্য পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সোনাবীজ ভাইয়ের অসাধারণ ‘তারকাজরিপ’ প্রবন্ধটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। আমি অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করলাম যে, বেশ কয়েকজন ব্লগার এ বিষয়টাকে সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখে এর সাহিত্যিক মাহাত্ম্য ম্লান করতে সচেষ্ট হয়েছেন, এটি খুব ঘৃণ্য। একজন কবি বা কথাসাহিত্যিককে কীভাবে পয়েন্টে পয়েন্টে বিশ্লেষণ করতে হয়, তাঁর লেখার মেরিটস আর ডি-মেরিটসগুলোকে কীভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তা উত্তরণের রাস্তা বাতলে দিতে হয়, সোনাবীজ ভাই সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোকে অতিশয় নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করেছেন। শুধু ব্লগসাহিত্যেই নয়, চিরন্তন সাহিত্যে এটি উৎকৃষ্ট সমালোচনা হিসাবে যুগ যুগ ধরে আলোচিত হতে থাকবে, নবীন সমালোচোকগণের জন্য পথের দিশারি হিসাবে কাজ করবে।’ বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ এই ব্লগার আর কেউ নন, আমাদের অতি পরিচিত ও অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘নবসিঁথি’। তিনি ভাবীর কৃষ্ণকালো গভীর কুন্তলদামের মধ্যিখানে সুরম্য বীথিসদৃশ ‘সিঁথি’ দর্শনে আপ্লুত হয়ে ‘নবসিঁথি’ নিক ধারণে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন। ফেইসবুকে অবশ্য তাঁর নিকসংখ্যা দুটি, যদিও আদিকালে মাত্র একটি নিকেই সপ্রতিভ ছিলেন। ‘শিপন খাঁন।’ সাম্প্রতিক কালে ‘শিপন মামা’ নামে আরেকটা নিক ওপেন করেছেন তাঁর ভাগ্নে-ভাগ্নিদের জন্য; আমি অবশ্য তাঁর দুটো নিকেই এনলিস্টেড; গেরাই বলে কথা আছে না? ‘তারকাজরিপ’ পত্রিকায় পাঠানোর আগে এটি শিপন ভাইকে পড়তে দিয়েছিলাম। তিনি পুরো টেক্সট থেকে তাঁর নাম সমূলে সরিয়ে ফেলতে বলেন, বিনিময়ে ‘ত্রিশোনকু বাঘ’, কবি ‘সুপান্থ সরওয়ার’, সব্যসাচী লেখক-গবেষক ‘ফারজুল আল-আমিন’ ও শব্দের জাদুকর ‘মাভারিক’-এর উপর বিশদ লিখতে বলেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আড়িয়াল বিলের মানুষ, দুনিয়ার মানুষ এটা জানে। আপনার তারকাজরিপে আমার নাম দেখলে মানুষ এ জরিপকে স্বজনপ্রীতির দায়ে প্রত্যাখ্যান করবে।’ শিপন ভাইয়েই বদান্যতা ও মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই শিপন ভাইয়ের কমেন্ট মরুভূমির প্রখর রোদের মধ্যে ফ্রিজের ঠাণ্ডা বাতাসের মতো আমার বুক সুশীতল করে দিল। মনে মনে শিপন ভাইকে স্যালুট করি।

নবসিঁথি ভাই লিখলেন: ‘আচ্ছা সোনা ভাই, ফেইসবুক আর ব্লগের সেলিব্রেটিদের প্রতি আপনার কী মন্তব্য? আপনি কি মনে করেন, যাঁরা সেলিব্রেটি তাঁরা তাঁদের লেখার গুণেই সেলিব্রেটি হয়েছেন? আপনার পোস্টে মন্তব্য আসে না তাঁদের মতো, যাঁরা ফেইসবুকে একটা উরাধুরা স্টেইটাস দিলেও মিনিটে ২০-৩০টা ‘লাইক’ পড়ে যায়। এই সেলিব্রেটিদের প্রতি আপনার মন্তব্য কী? এঁদের ব্যাপারে আমার নিজস্ব মতামত আছে, যা এখানে বলতে চাই না। আর আপনিও বলেতে না চাইলে সমস্যা নেই। আমি বুঝে নেবো।’

‘গেরাই’ না হলে কি এভাবে আমার বেদনার মূলে পৌঁছতে পারতেন? মনে মনে তাঁকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু ব্যাপারটাকে এতো সিরিয়াস হতে দেয়া যায় না; আবহাওয়া হালকা করার জন্য তাঁর কমেন্টের জবাবে লিখি: ‘তারকাজরিপ একটা আগাগোড়া রম্যরচনা, নবসিঁথি ভাই। লেখাটাকে শান দিচ্ছি, আর একটু একটু করে ফেইসবুকে শেয়ার করছি কোনো অহেতুক বিতণ্ডা সৃষ্টি হয় কি না তা দেখার জন্য। নির্ভেজাল বিনোদনই এর মূল লক্ষ্য। তদুপরি কেউ আহত হয়েছেন মনে হলেই টেক্সট সুইট্যাবলি মোডিফাই করা হবে।’
এর প্রায় সাথে সাথে খুব ছোটো করে একটা কমেন্ট লিখলেন মুন আপু: ‘হু, মোডিফাই করেন সোনাবীজ ভাই, বিশেষ করে আমার মাল্টি নিক, হিংসা আর সেলিব্রিটির কথাগুলো অবশ্যই বদলে দিতে হবে। মনে রাখবেন কিন্তু।’
আমি মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। তাঁর মনটা খুব সরল, নিষ্কণ্টক। তিনি এখনও বুঝতে পারেন নি যে, এটা নিছকই একটা রম্য কাহিনি, যেখানে হাস্যরস উৎপাদনই একমাত্র লক্ষ। আমার সরলমনা মুন আপু মর্মাহত হোন এটা আমি চাই না, তাই তাঁর আপত্তির অংশটুকু পরিমার্জন করে লিখলাম: ‘মুন আপুর ‘রেহনুমা’ নামক আরেকটি নিক আছে একথা আমি বিশ্বাস করি না, যদিও রবীন্দ্রনাথ শায়লা একদিন ফেইসবুক চ্যাটিঙের সময় খুব দৃঢ়ভাবেই বলেছিলেন যে ‘রেহনুমা’ হলো মুন আপুর ওরিজিন্যাল নিক, যা তিনি নিজে শায়লাকে ২০১০-এর ব্লগদিবসে জানিয়েছিলেন। তাঁর আরও কয়েকটি মাল্টি নিক আছে বলে শায়লার ধারণা, তার মধ্যে একটি তাঁর স্বামীর নিক বলে তিনি প্রচার করে বেড়ালেও ওটি যে তাঁর নিজেরই একটা মাল্টি নিক, সেটাও মুন আপু একই দিন শায়লাকে কথাচ্ছলে জানিয়েছিলেন বলে শায়লা দাবি করেন। তবে এসব কথা যে আমি সজ্ঞানে বলছি তা না-ও হতে পারে, কারণ আমি মানুষ নই, বটগাছ।’

তারকাজরিপ – তৃতীয় কিস্তি
(গণ্ডগোল সৃষ্টির আশঙ্কায় যা ফেইসবুকে শেয়ার করা হয় নি)

আমার সম্বন্ধীর শ্যালক আমার ছোটো শ্যালিকাকে বিয়ে করেছে। সম্বন্ধীর মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে, শ্যালিকার মেয়ে পড়ে ক্লাস ওয়ানে। এই দুই মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী? সম্পর্কটা খুব জটিল নয়; ঝটপট বের করে ফেলুন।

শায়লার গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুর সময়ে ভবিষ্যত বাণী করে গিয়েছিলেন :

‘আজি হতে শতবর্ষ পরে,
এক মেধাবিনী ব্লগারের জন্ম হবে ঢাকার শহরে;
সে হবে সকল কলায় কলাবরিষ্ঠা,
সে হবে সুন্দরীতমা, অসাধারণ নৃত্যে;
সে গল্প ও কবিতা লিখবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা;
তবে সে সেলিব্রেটি হবে রন্ধন-রেসিপির পাণ্ডিত্যে।’

ব্লগারগণ তাঁর নামের আগে ‘রবীন্দ্রনাথ’ যুক্ত করে ‘রবীন্দ্রনাথ শায়লা’ করেছেন তাঁর রাবিন্দ্রিক কলাবিন্যাসের কারণে। অনেকেই মনে করেন, শায়লা রবীন্দ্রনাথের কালে জন্মগ্রহণ করলে দুই শীর্ষ সাহিত্যিকের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এবং ১৯১৩ সালে হয় সাহিত্যের নোবেলটি শায়লা কেড়ে নিতেন, অথবা একান্তই ওটা রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে দেয়া হলেও শায়লার জন্য ‘রন্ধনশিল্পে নোবেল’ নামে আরেকটি বিষয় উন্মুক্ত করে সেটি শায়লাকেই সোপর্দ করা হতো। ব্লগের ছোটোদেরকে তিনি প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। ‘পিচকি ভাইয়া, পিচকি আপুনি’- ছোটোদের প্রতি তাঁর এই সুমিষ্ট সম্বোধন। বড়দেরকে তিনি ‘ভাইয়ামণি’ ও ‘আপুনি’ ডাকেন। তাঁর ডাকগুলো এতো মোলায়েম যে পাথরও গলে যায়, আর সবাই তাঁর নতুনতম পোস্টের অপেক্ষায় তীর্থের বায়সের মতো বসে থাকেন। শুরুতে তিনি ‘অরুণা’ ও ‘আবছায়া’ নামক দুটো নিক থেকে সমান্তরালে লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। তিনি ‘প্রতিসরণ’ নামে আরেকটা নিক পরিচালনা করতেন। অরুণা ও প্রতিসরণের মধ্যকার দ্বৈরথ-সিরিজটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন যেন তাঁর মনে হয়, এসব অস্তিত্বহীন ভার্চুয়াল নামের বদলে আসল নামে নিক ধারণ করলে যৌবনে স্ব-নামেই খ্যাতি লাভ সম্ভব হবে। সঠিক সময়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এবং কয়েক মাসের মধ্যেই স্বমহিমায় স্ব-নামে ব্লগপ্রিয়তার শীর্ষ সারিতে উঠে এলেন। শায়লার এমন কোনো পোস্ট নেই যেখানে কমেন্টের সংখ্যা ৩৫০টির নিচে। আমব্লগারদের কমেন্ট প্রাপ্তি যেখানে গড়পড়তা ৮-১০টি, সেখানে ৩৫০টি কতো বড় স্কোর শুধু একবার কল্পনা করে দেখুন। আমার সেরা পোস্টটি ‘২১০বার পঠিত’; শায়লার যে পোস্টটি সবচেয়ে কম পঠিত হয়, সেখানেও পাঠসংখ্যা থাকে ৭ হাজারের ঘরে। কিছু বুঝতে পারছেন, কোথায় বটগাছ, আর কোথায় ব্যাঙের ছাতা? তো, শায়লা আর মুন আপুর মধ্যে এই স্কোর একটা বিরাট কোল্ড ওয়ারের সৃষ্টি করে। আমার খুব মজা লাগে, যখন দেখি তাঁরা দুজনে প্রায় একই সময়ে ব্লগে পোস্ট করেছেন। জাতীয় নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের ভোট গণনার সময় যেরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়- আমুক দলের হামুক এখন এগিয়ে, একটু পরেই বিমুক দলের খামুক শীর্ষে উঠে আসেন- এঁদের দুজনের কমেন্ট সংখ্যাও একইভাবে আপ-ডাউন করতে থাকে। আমার মজাটা হলো- এঁদের দুজনের কাছ থেকেই এসএমএস পাই পোস্ট পড়ে জলদি কমেন্ট করার জন্য, এবং অন্য ব্লগারগণকেও যাতে খুব শীঘ্র বেশি বেশি কমেন্ট করতে বলি।

২ নম্বর কমেন্ট পড়ে আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। ‘আরে মিয়া, মহিলারাই কি খালি সেলিব্রেটি নাকি? আপনার লেখার চৌদ্দ আনাই ফিমেইল ব্লগার, নামকাওয়াস্তে দুই-একজন জেন্টসের নাম উল্লেখ করছেন, তাও যাগো কোনো নামডাকই নাই ব্লগে। আমরা ব্লগে ঘাস চিবাই না, সাহিত্য রচনা করি। ..... আর শোনেন মিয়া... এ পোস্ট দ্বারা আপনি নিজেকে ‘লুল শিরোমণি’ বানাইয়া ফালাইছেন। যত্তসব।’ এই ব্লগারকে আমি সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। কথাসাহিত্যে তাঁর ধার আমাকে হিংসার আগুনে জ্বালিয়ে মারে। ব্লগবাসীর জরিপে তিনি শীর্ষস্থান দখল করবেন এটা জেনেই অতি সুকৌশলে আমার লেখায় তাঁর নাম টেনে আনি নি। তাঁর গল্পে যেখানে পাঠক প্রশংসায় ফেটে পড়েন, আমি সেখানে গিয়ে কড়া সমালোচনা করি, আর সবাইকে কমেন্টে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিই যে, ওস্তাদেরও ওস্তাদ আছেন- সেটি স্বয়ং আমি। এরপর খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটে- আমার পরের কমেন্টগুলোতে প্রায়শ দেখা যায় ‘সোনাভাইয়ের সাথে একমত’ প্রকাশ করে আমার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছেন বেশ কয়েকজন ব্লগার। আমি আবার করি কী, তাঁদের ব্লগে গিয়ে তাঁদের লেখাকে ‘অসাধারণ’, ‘অতুলনীয়’ বলে আসি। এই ব্লগার সম্প্রতি ‘ঘটনা থেকে গল্পের উন্মেষ’ শিরোনামে কাহিনি লিখে ব্লগে একরকম আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছেন। আমি এ লেখা পড়ি আর চমৎকৃত হই, এভাবে লিখবো লিখবো করে মনস্থির করি, কিন্তু পারি না, অথচ তাঁর মেধা আমাকে কুরে কুরে ক্ষয় করে দেয়। আমি তাঁর পোস্টের নিচে দু শব্দে লিখে আসি ‘ভালো লেগেছে।’ সাধারণ পোস্টে যেখানে আমার বিদ্যা জাহিরের জন্য দীর্ঘ গঠনমূলক কমেন্ট লিখি, যা থেকে লেখকগণ খুব উপকৃত হবার সাথে সাথে আমাকে ‘পীর’ সাব্যস্ত করেন, সেখানে উচ্চমার্গীয় পোস্টগুলোতে ‘ভালো লেগেছে’ দ্বারা বোঝাতে চাই যে, এটা এখনো ‘আলোচনার যোগ্য’ হয়ে ওঠে নি; আরো লিখুন, বেশি বেশি লিখুন। জয়েস সামী নামধারী এ ব্লগার আমার পোস্টে কোনোদিন কমেন্ট করেন নি; আমার ধারণা, তিনিও আমাকে হিংসা করেন। তবে আমি ওঁত পেতে আছি, যেদিন জয়েস সামী আমার কোনো পোস্টে কমেন্ট করবেন, আমি রিপ্লাই দিব- ‘ভালো লাগছে দেখে যে এতোদিনে আপনি ক্লাসিক সাহিত্য পড়তে আগ্রহী হলেন।’

ব্লগার ভার রক্ষক লিখেছেন: ‘আপনার জরিপটা পুরাই ভুয়া। ব্লগারদের অর্ডার অব মেরিট আমার মতে এরকম:
১। অপর্ণা সেনগুপ্ত
২। জাফর সিদ্দিকী
৩। খেলোয়াড়/নক্ষত্রচারিণী/অন্য ব্যথা/স্বপ্নবাজ কবি – যুগ্মভাবে
৪। জালালউদ্দিন আহমেদ সরকার
৫। সায়েম চাঁদ
৬। আশরাফুল ইসলাম দুর্বার
৭। সেলিম মনোয়ার/রুমন রুমি/মামুন মুর্শিদ/বোকাহৃদয়/কাণ্ডারি সক্ষম – এঁরাও যুগ্মভাবে
৮। জীবনানন্দ দাশের মূর্তি/অন্যমনস্ক হেমন্ত/সুদৃশ্য/মাঈনুদ্দিন বাবুল – আবারও যুগ্মভাবে
৯। হাসান মাহমুদ/দিকভ্রান্ত নাবিক
১০। সোমসুখী/মোঃ ইসহাক কাজী
উল্লেখ্য, ফারাহ দিবা আমান, সান্তনু মাহফুজ এবং নীরঞ্জন শর্মাও দুর্দান্ত লেখক; কিন্তু তাঁরা অনেক দিন ধরে ব্লগ থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে তাঁদেরকে বিবেচনার বাইরে রেখেই আমার মেরিট লিস্ট করতে হয়েছে।’

ভার রক্ষকের সাথে আমি তীব্রভাবে দ্বিমত পোষণ করছি অপর্ণা সেনগুপ্তকে মেরিট লিস্টের শীর্ষে স্থাপনের জন্য। তিনি মূলত অন্য একটা ব্লগসাইটের বাসিন্দা, এভরিহোয়্যারইন ব্লগে তিনি উড়ে এসে সিংহাসনে বসতে চাইছেন। এই ব্লগে তাঁর বয়স এখনও ১ বছরই পূর্ণ হয় নি। আমি তাঁকে অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম, এভরিহোয়্যারইন ব্লগে না এলে ব্লগ ও ব্লগার কী তা জীবনেও বুঝতে পারবেন না। তিনি বলতেন, এই ব্লগটি নাকি তাঁর কাছে মরুভূমির মতো ধূসর, নীরস ও শুকনো মনে হয়। তারপর হলো কী, আমাকে না জানিয়েই তিনি আমার ৫ মাসের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই ব্লগে এসে গেড়ে বসলেন। একটা ভদ্রতা আছে তো, নাকি? বলতে পারতেন, ‘বড় ভাই, আপনার কথাই শেষ পর্যন্ত শুনতে হলো। আপনার ছায়ায় যেন থাকতে পারি, এ আশীর্বাদ করুন।’ থাক ওসব কথা, বড়দের অনেক সময় ছোটোদের সাত খুন মাফ করে দিতে হয়, তাঁকেও মাফ করে দিয়েছি। তবে ১ নম্বর অবস্থানটি কোনোভাবেই তাঁর প্রাপ্য হয় না; আমার মেরিট লিস্টে তাঁর অবস্থান ৫ থেকে সামান্য নিচে হয়, কিন্তু পঞ্চম স্থানে যোগ্য কাউকে না পেয়ে অপর্ণাকেই ওখানে বসাতে হয়েছে, এর বেশি দাক্ষিণ্য আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ, অপর্ণার ঘাড় একটু বেশিই তেড়া, তাঁকে উপদেশ দিতে গেলে শোনেন তো না-ই, বরঞ্চ আমাকেই উলটো কয়েক কথা শুনিয়ে দেন। তিনি যদি আমার কথা শুনতেন, তাহলে আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিতাম, তিনি গল্পসাহিত্যে একটা চমকপ্রদ, অনন্যসাধারণ ও অভিনব ধারার সৃষ্টি করে চলেছেন, যা রচনা করা স্বয়ং আমার পক্ষেও সম্ভব নয়।

তবে ভার রক্ষকের সাথে এক জায়গায় আমার মিল পাওয়া গেলো যখন দেখলাম মেরিট লিস্টে দুর্বার আর সরকারের নাম রয়েছে। দুজনেই তুখোড় কবি; ফেইসবুকে এ দুজন কবির সাথেও আমার অনেক বেশি কমিনিউকেশন হয়ে থাকে। কিন্তু এ দুজনকে আমি আলাদা করতে পারি না- যেমন, দুর্বার চাকরি খুঁজছেন হন্যে হয়ে, সরকার একটা সরকারি কলেজের শিক্ষক। আমি সরকারকে মেসেজ পাঠালাম- ‘আপনার বিয়ের খবর কী?’ দুর্বার ফেইসবুকে ‘প্রিয় প্রেমিকার খোঁজে’ নামক একটা গ্রুপ ওপেন করেছেন, সরকার সেখানে নিয়মিত বিরতিতে কবিতা পোস্ট করে চলেছেন। ব্যাপারটা কনফিউজিং না? কবিতা লিখে কি কেউ কোনোদিন প্রেমিকা জোটাতে পেরেছেন? সরকার খুব গান ভালোবাসেন, এবং আমিও; আমাকে উৎসর্গ করে তিনি একটা গানের পোস্ট পাবলিশ করেছিলেন, যেখানে আমার পাশে শোভা পাচ্ছিল ‘গাঙচিল’ আর ‘লালন সাঁই’ নামক দুই গান সম্রাটের নাম। তবে এঁদের সাথে কয়েকজন আরমানকেও আজকাল দুর্দান্ত কবিতা লিখতে দেখা যাচ্ছে। তিনি একটা বেসরকারি টিভিতে ‘টক শো’ রচনার চাকরি পেয়েছেন কিছুদিন হলো; ইদের আগে প্রথম বেতন পেয়ে তিনি আকাশে উড়াল দিলেন এবং মাটিতে নামলেন ইদের ঠিক দুদিন পর। আমার সাথে এ তিন ব্লগারের ঘনিষ্ঠতার কথা অনেকেই জানেন বলে এখানেও ‘স্বজনপ্রীতি’র দোষ এড়ানোর জন্য আমার তারকাজরিপে তাঁদের নাম উল্লেখ করি নি। তবে দুর্বার আর সরকারের জন্য আমর শুভ কামনা থাকলো, একই সঙ্গে উপদেশও - আপনাদের কবিতা ক্রমশ আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে, দয়া করে আমার আয়ত্তের বাইরে যাবার ঘৃণ্য চেষ্টা করবেন না।

সায়েম চাঁদ একটা হাসির ইমোটিকন ছুঁড়ে দিয়ে শুরু করলেন: ‘ভার রক্ষকের সাথে পুরোপুরি একমত।’ এই সায়েম চাঁদ হলেন আরেক জন প্রিয় কবি, যাঁকে ব্লজন্মকাল আমার নিজপক্ষীয় ব্লগার মনে করে আসছি। আমার প্রথম দিকের পোস্টে মাঝে মাঝে যাঁদের কমেন্ট পড়তো, সায়েম চাঁদ তাঁদের একজন। প্রথম দিকে তাঁকে ‘আপু’ ভাবতাম, এটা মনে হতেই লজ্জায় মরে যাই। তাঁর কোনো কমেন্টে ‘আপু’ বলে ধরা খেয়েছি কিনা কে জানে। তাঁর প্রাঞ্জল কবিতাগুলো আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু আমার মতের বিপরীতে গিয়ে তিনি ভার রক্ষকের সাথে একমত পোষণ করলেন, এটি আমাকে আহত করলো।

খেলোয়াড়ের কমেন্ট হলো এরকম: ‘ব্লগার সায়েম চাঁদ লিখেছেন: ভার রক্ষকের সাথে পুরোপুরি একমত।’ প্রথম প্রথম আমি খেলোয়াড়কে ভুলবশত ‘লেখোয়াড়’ পড়তাম। আবার তাঁর সাথে ‘নক্ষত্রচারিণী’কে গুলিয়ে ফেলতাম, ব্যাপারটা আরও জট পাকিয়ে ফেলতাম যখন নক্ষত্রচারিণীর পোস্ট পড়ে কমেন্ট করে বসতাম ‘অন্য ব্যথা’র পোস্টে। শেষ পর্যন্ত ‘আহমেদ পি এস’-এর প্রোফাইল পিকচারে ‘ছুটি শ্যাষ’ লেখা দেখে মনে মনে বলতাম, ‘খেলোয়াড় সাহেব, আপনি নিক নেইমও চেঞ্জ করেছেন, প্রোফাইল পিকচারও চেঞ্জ করেছেন, কিন্তু আকিকা করেন নি, ব্যাপারখানা কী, বলুন তো?’... খুব হাস্যকর একটা ব্যাপার, কৌতুকপ্রদও। তবে খেলোয়াড়ের কমেন্টে আমি অবাক হই নি, কারণ তিনি প্রকাশ্যেই আমার শত্রুপক্ষ। ইন ফ্যাক্ট, এ চারজনের কাউকেই আমি সহ্য করতে পারি না। তাঁদের কবিতা পড়তে গেলে আমাকে অভিধান পাশে নিয়ে বসতে হয়- প্রতিটা শব্দই আমার কাছে অপরিচিত। কী অদ্ভুত আর গম্ভীর বিষয়-আশয় নিয়ে যে তাঁরা কবিতা লিখেন, তার মাথামুণ্ডু কিছুই মগজে ঢোকে না। তবে কৌশল করে এমন কমেন্ট করি যে, আমার কাছে তাঁদের শির অবনত না করে উপায় থাকে না।

প্লিওসিন অথবা গ্ল্যাডিয়েটর লিখলেন: ‘ভালো তো! ভালো না!’ এই ব্লগারের প্রকৃত নাম সাহোল। ব্লগে যাঁরা কবিতা লিখেন, সাহোল তাঁদের গুরু। বয়স খুব বেশি হয় নি, বড় জোর প্রেম করার বয়স হয়েছে। এ বয়সেই যে তিনি এমন ধারালো কবিতা লিখেন, বুদ্ধদেব বসু জীবিত থাকলে তাঁকে যমের মতো ভয় পেতেন। বুদ্ধদেব আগে জন্মগ্রহণ করে বেঁচে গেছেন কোনোমতে। সাহোলকে আমি এতো ভালোবাসি তার কারণ হলো, তিনি একজন পণ্ডিত কবি হয়েও আমাকে ‘বস্‌’ মানেন। এমন বিনয়ী কজন হতে পারেন! আমার মেরিট লিস্টে তাঁর অবস্থান চতুর্থ।

এর পরের কমেন্টটি করেছেন কবি আঁখি অরিন্দম, ব্লগে যিনি ‘সুদৃশ্য’ নামে নিক গ্রহণ করেছেন। লিখলেন: ‘প্রিয় কবি ভার রক্ষক, আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনার এ্যাসেসমেন্টে আমাকে এভাবে মূল্যায়ন করার জন্য। তবে আমি সত্যই বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করছি আমার নামখানির উল্লেখ দেখে। যে-কোনো ‘হিটাকাঙ্ক্ষী’ পোস্টে সবাই যে তাঁর নিজের নাম খুঁজে বেড়াবেন তা তো জানা কথাই, তবে আমার মনটা অন্যরকম। কোন্‌ কোন্‌ ব্লগার আমাকে ভালোবাসেন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। ব্লগারগণের মধ্যে জেনারেল টেনডেনসি হলো এ জাতীয় পোস্টে আগাগোড়া সবার নাম ঢুকিয়ে দেয়া, যাতে কেউ ব্লগে ঢুকে ‘খালি হাতে না ফিরে যান।’ আমি সচরাচর দীর্ঘ পোস্ট এড়িয়ে যাই, আমার ক্লান্তি লাগে। (এজন্য আমি অল্প শব্দে কবিতা লিখি, গদ্য লিখতে যেয়ে সময় নষ্ট করি না।) কিন্তু সোনাবীজ ভাইয়ার নাতিদীর্ঘ’র চেয়ে সামান্য দীর্ঘ ‘গল্পটা’ আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। আমি বেশি মুগ্ধ হয়েছি তাঁর পরিমিতি বোধে। যাঁরা আলোচনার যোগ্য কেবল তাঁদেরকেই তিনি আলোচনা করেছেন। ব্লগে কাণ্ডারি সক্ষম একজন প্রভাবশালী ব্লগার, স্বপ্নবাজ কবি একজন দুর্দান্ত রম্যলেখক, ব্লগার ‘এক্সাইটেড’-এর মতো উচ্চাঙ্গীয় কবিও দ্বিতীয়টি আর দেখি না, গল্পকার ‘ইনকগনিজেন্ট’-এর গল্পগুলো এমনই উচ্চরস সমৃদ্ধ যে ব্লগসাহিত্যে এর সাক্ষাৎ একটা বিরল ঘটনা। সাম্প্রতিক কালে ব্লগার ‘উদাসী তৃষ্ণা’ এক নতুন ধারার গল্প সংযোজন করছেন ব্লগে, যা একই সঙ্গে প্রেম, রহস্য ও সাই-ফাই মেটারিয়েলের স্বাদ সৃষ্টি করে। এই যে একে একে আমি বিখ্যাত ব্লগারদের নাম বলে গেলাম, এঁরা বিখ্যাত হলেও এখনো এমন একটা সীমারেখায় আটকে আছেন যে, ঠিক এই মুহূর্তে তারকাজরিপে তাঁদের নাম ক্ষোদিত হয়ে গেলে তাঁদের পা আর মাটিতে পড়বে না; ফলে হবে কী, তাঁরা আর বেশিদূর এগোতে পারবেন না।’ সুদৃশ্য’র কমেন্ট পড়ে আমি থ বনে গেলাম, মনে হলো তিনি আমার নিউরনে ঢুকে সবগুলো রহস্য চুরি করে তাঁর কমেন্টে ফাঁস করে দিয়েছেন। একজাক্টলি এটাই কারণ, কেন আমি গণহারে সব ব্লগারের নাম নিয়ে একটা দীর্ঘ তালিকা তৈরি করি নি। ব্লগে যাঁর কোনো লেখা আমি জীবনেও পড়ি নি, যাঁর সাথে কোনোদিন কোনো পোস্টে মতবিনিময়েরও সুযোগ ঘটে নি, অথচ তাঁরও মন রক্ষা করার জন্য আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবো, এটা আমার ধাতে নেই। সুদৃশ্য আরেকটা সুন্দর কথা বলেছেন; প্রিয় কোনো ব্লগারের পোস্টে আমিও আমার নাম খুঁজি, নাম পেলে ভীষণ লজ্জিত বোধ করি, না পেলে খানিকটা দুঃখবোধ হয় বৈকি। তবে ধরুন, খুব কাছের একজন ব্লগার এ জাতীয় একটা পোস্টে তাঁর প্রিয় ব্লগারদের একটা সুদীর্ঘ তালিকা বানালেন, কিন্তু সেখানে আমার নাম নেই- এটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়। কারণ, আমি জানি, এ ব্লগার যখন দেখবেন আমার নামটা তিনি ভুলে গেছেন, তখন নিজেই লজ্জিত হতে থাকবেন। অথবা এটাই সত্য যে, ‘আমি তাঁর খুবই প্রিয় ব্লগার’, তাঁর এ জাতীয় কথা চাতূর্যপূর্ণ প্রগলভ্‌তা ছাড়া আর কিছু নয়, আদতে আমি তাঁর কাছের কেউ নই। প্রিয়তম মানুষের নামই সবার আগে মুখে আসে। আমি মনে মনে বললাম, ‘সুদৃশ্য’র জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।’

ব্লগার সোমসুখী ক্ষিপ্ত হয়ে লিখেছেন: ‘ভার রক্ষকের অর্ডার অব মেরিট পক্ষপাতমূলক হয়েছে। ১, ২ ও ৯ নম্বর ছাড়া আর কাউকে এ লিস্টে থাকার যোগ্য মনে করি না। তবে হ্যাঁ, হাসান মাহমুদকে ৯ নম্বর থেকে উঠিয়ে যুগ্মভাবে অপর্ণার সাথে ১ নম্বরে নিলে লিস্টটা পরিপূর্ণ হয়। আর দয়া করে এসব ভূয়া মেরিট লিস্ট থেকে আমার নামটা কেটে দিন।’ ব্লগার সোমসুখী আমার দৃষ্টিতে একজন মেধাবী ও শক্তিশালী ব্লগার, যিনি দু হাত খুলে কবিতা ও গল্প লিখেন। তাঁর লেখায় অমোঘ সম্ভাবনা দেখি। কিন্তু তাঁর পোস্টে আমি সব সময়ই এমনভাবে কমেন্ট করি যে, আমি যেন তাঁর গাইড, এবং আকারে-ইশারায় এটা বোঝাতে ছাড়ি না যে আমার পরামর্শেই তিনি এতো ভালো লিখছেন। এটা আমার পরিচিত ব্লগারগণ জানেন। জানেন বলেই আমার মেরিট লিস্টে তাঁর নাম রাখি নি ইচ্ছে করে, যেহেতু কেউ কেউ ভেবে বসতে পারেন এ কাজটা আমি স্বজনপ্রীতি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে করেছি।

ব্লগার জাফর সিদ্দিকী তাঁর কমেন্টে আমার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সোনাবীজ আমার খুব খুব খুবই প্রিয় একজন কবি। কিন্তু তিনি এই তারকাজরিপ জাতীয় বিতর্কিত বিষয়ের উপর কেন লিখলেন তা ভাইবা উঠতে পারতেছি না। তেনার কি খুব হিটের দরকার ছিল? এমু ব্লগে আমি শুধু বয়োজ্যেষ্ঠই নই, সকলের শিক্ষকও বটে; কই, আমার পোস্টে তো কোনো কমেন্টও নাই, হিটও নাই। এইজন্য কি আমি কানতেছি? আমি কি পারতাম না এরকম একটা হিটাকাঙ্ক্ষী পোস্ট লিখ্যা ব্লগে ঝড় তুলে ফেলবার জন্য? এসব ছেলেমানুষি স্বভাব সোনাবীজের মতো কবির পক্ষে নিতান্তই বেমানান। আর অতিশয় দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, সোনাবীজ আমাকে গদ্যের কাতারে এ্যাসেস করেছেন; আমার কবিতা নাকি খুবই কাঁচা হয়। অথচ আমি কবিতা লিখতে লিখতেই বুড়া হইছি। আগের দিনে ডেইলির সম্পাদকরা আমারে কবি বইলাই চিনতেন। কিন্তু সোনাবীজ আমার কবিতারে কবিতা মনে করেন না কেন তা দেইখ্যা আমার নিজেরই এখন সন্দেহ হচ্ছে তিনি আদতে কবিতা বোঝেন কিনা। যাই হোক, তিনি আমার খুবই প্রিয় কবি, এ ব্যাপারটা আমি আমরণ বজায় রাখতে চাই।’ তিনি এর নিচেই আরেকটা এক বাক্যের কমেন্ট লিখেছেন: ‘প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর রায় নামক আরেকজন ব্লগার আছেন, যাঁর সমকক্ষ খুব কম গল্পকারই আছেন এমু ব্লগে; সোনাবীজকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি প্রোফেসর সাহেবের ব্লগটা একনজর দেখে আসবার জন্য।’ জাফর সিদ্দিকী আমারও খুব প্রিয় একজন ব্লগার। তাঁর ধারালো গদ্যের কাছে আমি বরাবরই কুপোকাত। আমার উপর তাঁর এহেন অভিমানের উৎস হলো তাঁর সাম্প্রতিক কোনো এক কবিতা পোস্টে করা আমার একটা কমেন্ট। আমি তাঁর ‘বান্ধবী’ কবিতাটা পড়ে যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। (‘যারপরনাই’ শব্দটা আমি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি)। কমেন্টে লিখেছিলাম: ‘জাফর ভাই, আপনার পরাক্রমশালী গদ্যের পাশে আপনার কবিতাগুলো এই সেদিনও খুব ম্রিয়মান ছিল। একজন শক্তিশালী গদ্যকারের মগজ থেকে ততোধিক সাবলীল এমন একটি কবিতা রচিত হবে, এটা আমাকে যারপরনাই অবাক করে দিল। এ কবিতা থেকে যদি আমাকে উদ্ধৃতি দিতে হয়, তাহলে পুরো কবিতাটাই তুলে দেয়া ছাড়া গতি নেই।’ আমার এ উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবেন (ভার্চুয়ালি), আমার প্রত্যাশা এমন ছিল। কিন্তু এ প্রশংসার কোনো রিসপন্‌স না করে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি তো এমনি এমনি ঝড়ে বক মরার মতন কবিতা টাইপের কিছু লিখে ফেলি।’ যা বাবা, ছোটো একটা ধন্যবাদটুকু পর্যন্ত নেই! এরপর পোস্টান্তরে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে লাগলেন, ‘আমার ব্যাপারে তোমার সম্যক জ্ঞান নাই বালক। আমি স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকেই কবিতা লিখে পত্রিকার সম্পাদকের সাথে সশরীরে দেখা করতাম; আমার হ্রস্ব ই-কার দীর্ঘ ই-কার সংক্রান্ত কোনো বানান-সমস্যা ছাড়া কবিতায় আর কোনো ত্রুটি পান নি কোনোকালের কোনো সম্পাদকই। আমি সেই কবি। আসো, তোমাকে কবিতা লেখা শেখাই।’

জাফর ভাইয়ের কমেন্ট পড়ার পর মনে মনে বললাম, ‘গুরু, এতোদিন আপনাকে চিনি নাই। দয়া করে আপনার চরণ দুটো এগিয়ে দিন, ধুলি নিব।’

তারকাজরিপ – চতুর্থ কিস্তি
(আমার বিরুদ্ধে মানব-বন্ধনের ডাক উঠতে পারে, এই ভয়ে
ফেইসবুকে শেয়ার করা হয় নি)

মেয়েতে-মেয়েতে মামাতো বোন কী করে হয়, এখনও যদি না বুঝে থাকেন, তাহলে তৃতীয় কিস্তির প্রথম অংশটুকু আবার পড়ে আসুন। এ ধাঁধার সাথে তারকাজরিপের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। খামোখা ওটার সাথে এটা মেলাতে যেয়ে প্রাণান্ত হবেন না যেন।
আমার সম্বন্ধীর মেয়ের নাম নিশাত, শ্যালিকার মেয়ের নাম বিভা। বিভার মামা বিয়ে করেছে বিভার ফুপুকে, ঐদিকে নিশাতের মামা বিয়ে করেছে নিশাতের ফুপুকে। বলুন তো, আমার সম্বন্ধী আর শ্যালিকার মধ্যে সম্পর্ক কী? হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, এটা কোনো প্রশ্নই হয় না। তাহলে বলুন, নিশাতের মা ও নিশাতের ফুপুর মধ্যে কী সম্পর্ক?

যাকগে, ঐসব ধাঁধা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন, তারকাজরিপে নিজের অবস্থানটা এবার যাচাই করুন। তার আগে বলুন তো, উপরে যেসব ব্লগারের নাম পড়েছেন, তাতে কি আপনার নাম ছিল? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে আপনি একজন তারকা ব্লগার, ‘না’ হলে হতাশ হবার কারণ নেই; হয় আপনি একজন ‘প্রচারবিমুখ’ ব্লগার, অথবা একজন ‘উঠতি তারকা’। এমন যদি হয় যে, আপনার অরিজিন্যাল ও মাল্টি নিক দুটোই মেরিট লিস্টে স্থান দখল করে নিয়েছে, তাহলে আপনি একজন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ব্লগার। এর যে কোনো একটি নাম লিস্টে থেকে থাকলে জলদি ‘স্থান পাওয়া’ নিকটিতে চলে আসুন, আপনার প্রচার ও প্রসার ঘটবে এখানেই।

ব্লগার নস্টালজিয়ার কমেন্টটা হলো তাঁর স্বভাবের মতোই নিরুপদ্রব ও বহুমাত্রিক। তিনি এক কথায় কমেন্ট লিখেছেন, ‘শুভেচ্ছা, সোনাবীজ ভাই।’ আমার মেরিট লিস্টে তাঁর নাম নেই; তাঁর কমেন্ট পড়া মাত্র আমি লজ্জায় মুষড়ে পড়ি। মেরিট লিস্ট করার সময়ে তাঁর নাম আমার মনে পড়ে নি; আমার গত এক বছরের পোস্টে যাঁদের কমেন্ট রয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে ১০ সিরিয়ালের একটা মেরিট লিস্ট করেছি, যেখানে মোট ১৪ জন ব্লগারের নাম রয়েছে, যাতে ১২ জনই হলো ফিমেইল ব্লগার। আমার লেখাটা ব্লগে পোস্ট করা হলে এ মুহূর্তেই ওটা এডিট করে নস্টালজিয়া’র নাম ঢুকিয়ে দেয়া যেত; কিন্তু লেখাটা শুক্রবারে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটা দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যসাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। আর কোনো কায়দা নেই এ সম্মানিত ব্লগারের নাম অন্তর্ভুক্ত করার। এ ব্লগার একজন গীতিকার। তাঁর বিখ্যাত ‘অপ্সরা’ গানটা আমার ফিঁয়াসের অনেক প্রিয়। ফিঁয়াসে যখন জানতে পেরেছিল এ গানের গীতিকারের সাথে আমার দহরম-মহরম ভার্চুয়াল যোগাযোগ রয়েছে, সে অবাক হয়ে বলেছিল, ‘তা....ই? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না কিন্তু। ওর মোবাইল নম্বর দিতে পারবি?’ মোবাইল নাম্বার চাইতেই বলি, ‘আরে ধূর! এঁরা খুব বড় মাপের মানুষ। যাকে-তাকে মোবাইল নাম্বার তাঁরা দেন না।’ এটা বলেছি ভয়ে। মেয়েদের দিয়ে কি বিশ্বাস আছে? না, মানে বলছি যে, মেয়েরা মোবাইল নাম্বার মুখস্থ রাখতে পারে না, একটা-দুটো ডিজিট উলট-পালট করবেই।

এমু ব্লগের ফিমেইল ব্লগারগণ নস্টালজিয়া নামে পাগল। আমরিন রেজোয়ানা তো দাবি করেন যে, ‘অপ্সরা’ গানটি আসলে তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। কোনো এক রাতে রেজোয়ানা স্বপ্নে দেখছিলেন, পূর্ণিমা রাতে খলখল জোছনায় নদীর ধারে একটা নির্জন বটগাছের নিচে অতিশয় মন খারাপ করে বসে আছেন তিনি; ঠিক ঐ সময় বাতাসে ধীর কদম ফেলে কাছে এসে দাঁড়ালেন যেই মনস্বী বংশীবাদক, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং নস্টালজিয়া। আমি অবাক হলাম। একুশে বইমেলা ২০১২-তে নস্টালজিয়ার ‘আজ তোমার মন ভালো মেয়ে’ বইটাতে ‘অপ্সরা’ গানটার ব্যাপারে গীতিকার একই কাহিনি লিখেছেন। তিনি এ গানটা স্বপ্নে পেয়েছিলেন। কোনো এক নিঝুম নিশীথে মনের দুঃখে আকাশে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন নস্টালজিয়া (স্বপ্নে আকাশে হাঁটা, ওড়া বা ফুটবল খেলা সম্ভব); হঠাৎ মর্তের মাটিতে জনৈকা দুঃখিনী মেয়ের মর্সিয়া কান্না শুনে নেমে এসে রেজোয়ানাকে আবিষ্কার ও উদ্ধার করেন। স্বপ্নোত্থিত হয়ে নস্টালজিয়া ঘোরের মধ্যে কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না, এবং এই ঘোরের মধ্যেই রেজোয়ানার উদ্দেশ্যে গানের প্রথম অন্তরা বেরিয়ে আসে; এরপর সঞ্চারি লিখবার জন্য তাঁকে আরও দেড় বছরকাল অপেক্ষা করতে হয়; উদাস বাউলের মতো তিনি এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেন, কিন্তু হায়, স্বপ্নে হারানো মানসীকে কি আর খুঁজে পাওয়া যায়? যায়, গানের মাধ্যমে। তিনি গানটা চূড়ান্ত করে দেশের প্রথম সারির সঙ্গীতকার বাদশা মজুমদারকে দিলে বাদশা অতিশয় চমৎকৃত হলেন, এবং স্বল্প দিনেই গানটা রিলিজ করা হলে তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ে এটি রীতিমতো ঝড় তুলে ফেলে। এরকম আশ্চর্য গান পৃথিবীতে এই প্রথম। আরেকটা কথা না বললেই নয়, নস্টালজিয়ার বেশকিছু লিরিক ইতোমধ্যে আমি সুরারোপিত করে পিসিতে সেইভ করে রেখে দিয়েছি; আমার কনিষ্ঠতম ভাইটির দ্বিতীয় এ্যালবামে এগুলো ঢুকিয়ে দিব, এবং এ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচনের দিন নস্টালজিয়াকে আমন্ত্রণ করে প্রধান উন্মোচকের আসনে বসিয়ে তাঁকে তাক লাগিয়ে দেবার কথা ভাবছি; আমার তারকাজরিপে তাঁর নাম না রাখার অপরাধটি এতে লাঘব হবে, এবং তিনি আমার প্রতি বেজায় সন্তুষ্ট হবেন তা বলাই বাহুল্য।

রেজওয়ান মাসুদ তানিমের কমেন্ট পড়ে চমকে উঠলাম। তিনি লিখেছেন, ‘ব্লগার সম্পর্কে সোনাবীজের একেবারেই ধারণা নেই। সূর্যধনের নাম ছাড়া কোনো মেরিট লিস্ট পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। আমার সাথে সকল ব্লগার একমত হবেন যে, ব্লগের ১ নম্বর তারকা হলেন সূর্যধন, ২ নম্বরে হাসান মাহমুদ ছাড়া আর কেউ নেই, ৪ নম্বরে টেনেটুনে আরজু মণির নাম আসতে পারে। তবে কবিতায় শাহেদ চৌধুরী আর রাহি ফ্লোরা জুটিই সেরা। রম্যসিরিজে জাতির শ্বশুর ও আমিচেয়ারম্যান৪২০-এর নাম পাকাপোক্তভাবে থাকবে। রান্নাবান্নার রেসিপি আর আলতা-চুড়ি-পরা ছবিপোস্ট দিয়ে ব্লগার হওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথ শায়লার কী এমন কোয়ালিটি আছে যে তাঁর নাম মেরিট লিস্টের ৩ নম্বরে দিয়েছেন? এইডা ফাতরামি ছাড়া আর কিছুই হয় নাই।’ এ পর্যন্ত ভালোই ছিল, এর পরের কথায় আমার মরে যাবার উপক্রম হলো। ‘তবে সোনাবীজের চরিত্র যে এতো নারীঘেঁষা ভাঁড়ামিতে পরিপূর্ণ, তাঁর ‘তারকাজরিপ’ না পড়লে জানা যাইত না। তিনি নারীমহলের মনোরঞ্জনের জন্য ১৪ জনের তালিকায় ১২টি আসনই নারী দ্বারা অলঙ্কৃত করেছেন। তাঁকে আজ থেকে আমি লুলসম্রাট উপাধিতে ভূষিত করলাম।’ ধরণি দ্বিধা হও, তোমার গর্ভে ঢুকে পড়ি। এ ব্লগারকে আমি অনেক অনেক পছন্দ করি, তাঁর প্রজ্ঞা ও উচ্চমার্গীয় সৃজনিশক্তির জন্য। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, অনুবাদক ও সাহিত্যসমালোচক। তবে তিনি ইংরেজি কবিতা লেখেন এবং তার বঙ্গানুবাদও তিনি নিজেই করেন। তাঁর সাথে চ্যাটবক্স ও সেলফোনে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ হয়, যার ফলে তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা অনেক বেশি। তিনি আমাকে এভাবে মূল্যায়িত করবেন তা আমি কস্মিনকালেও ভাবি নি। হায়, ভালোবাসার এই প্রতিদান! তাঁর কমেন্টের প্রেক্ষিতে ব্লগার আরজু মণি প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনি ১ ও ২ নম্বর মেরিটের কথা লিখেছেন, ৩ নম্বর বাদ দিয়ে ৪-এ চলে গেলেন; ৩ নম্বর পজিশনটা কার?’ রেজওয়ান মাসুদের আরেকটা কমেন্ট, ‘আপনি সত্যিই নির্বোধ, মহামানবী।’ উত্তরে মহামানবী একটা দাঁত বেরা স্মাইলি প্রক্ষেপ করেছেন। আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, রেজওয়ান ভাই নিজের অবস্থানটা ৩ নম্বরেই দাবি করছেন। তাঁর এই বুদ্ধিদীপ্ত চাতূর্যে আমি চমৎকৃত না হয়ে পারি না।

এর পরের কমেন্টটা বোম্ব বার্স্টিং। মি. ফক্স লিখেছেন: ‘সোনাবীজ আসলে একটা আবাল। তাঁর ভাণ্ড খালি হইয়া গেছে। কিছু লিখবার না পাইয়া এখন নিজেরে ফুটাইতেছে। এমন নিম্নমানের ভণ্ডামি দ্বারা আর যাই হোক, ভালো ব্লগারও হওয়া যায় না, মননশীল সাহিত্যিকও হওয়া যায় না।’ এই ল্যাপটপ ছুঁয়ে বলছি, ব্লগে কাউকে যদি আমি সত্যিকারে ভালোবেসে থাকি, তাহলে তিনি হলেন মি. ফক্স। তাঁর রম্য ও গল্পগুলো আমাকে চুম্বকের মতো টানে। আমিই একদিন আবিষ্কার করেছিলাম যে তিনি একটা রত্ন। তাঁর পোস্টে আমি কমেন্ট করে এ কথা বলতাম। আমার মনে পড়ে, তাঁর প্রথম দিকের পোস্টের একমাত্র পাঠক ছিলাম আমি একা। তাঁর পোস্ট পড়তাম, ফেভারিট করতাম, আমার প্রশংসার বানে তিনি ভেসে যেতে থাকলেন, অপরাপর ব্লগারগণ আমার প্রশংসার কারণেই তাঁর পোস্ট পড়তে থাকেন। সেই মি. ফক্স আমাকে এতখানি আঘাত দিয়ে কথা বলতে পারলেন কীভাবে?


তারকাজরিপ – পঞ্চম কিস্তি
(মডারেট। যে কোনো দিন ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া হতে পারে)

বোকাহৃদয় লিখেছেন:

‘সম্মানিত ব্লগার। আসসালামুআলাইকুম। সোনাবীজের লেখাটা আমি আদ্যোপান্ত মাত্র ৪ বার পড়তে পেরেছি। লেখাটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে তাঁর মেরিট লিস্টের ৭ নম্বরে রেখেছেন বলেই বলছি না, আমি আসলে তাঁর লেখনিশক্তিতে মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর শব্দভাণ্ডার হলো ব্যাপক, বাক্যনির্মাণে তিনি অদ্বিতীয়; ‘তারকাজরিপ’-এর মধ্য দিয়ে তিনি শুধু তারকাদের বর্তমান অবস্থান নির্ণয় করেই ক্ষান্ত হোন নি, তাঁর ক্ষুরধার লেখনি দ্বারা ব্লগের নানাবিধ কুৎসা, খুনাখুনি, গালাগালি, ইত্যাদির বাস্তব ও ঘৃণ্য চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন, যা সমাজের জন্য একটা দুর্ধ্বর্ষ ব্লপেটাঘাত হিসাবেই বিবেচনা করছি আমি। আমার ফিঁয়াসেসহ আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মহান লেখক সোনাবীজকে অভিনন্দন জানাচ্ছি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য। তিনি পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহযোগে বিশ্লেষণ করেছেন, যা দ্বারা তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ছাপও পাওয়া যায়। সোনাবীজের জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা।’ আমার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি টপ করে ল্যাপটপের কি-বোর্ডের উপর পড়তেই আমার সম্বিৎ ফিরে আসে, এবং চোখের পানিতে পিসির কি-গুলো ম্যালফাংশান শুরু করার আগেই টিস্যু পেপার দিয়ে ওটি মুছবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

মামুন মুর্শিদ লিখেছেন: ‘লেখাটায় একটা অভিনব চাতূর্য আছে। এর কিছু অংশ সপ্তাহ দুয়েক আগে সোনাবীজ ভাই ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেখানে আমার নামও ছিল, যদ্দূর মনে করতে পারি। আমিনুর রহমান নেসলে, শান্তির অগ্রদূত, সোনালী ডানার ফড়িং, ঁঁঁ (চন্দ্রবিন্দু টু দ্য পাওয়ার থ্রি, ওরফে প্রাপ্তি), ফালতু নায়ক, কয়েকজন আরমান, ও কাল্পনিক প্রেম এ ধরনের লেখা না লিখবার জন্য সাজেশান দিয়েছিলেন। কারণ, এখানে কংক্রিট কোনো কিছু নেই, অর্থাৎ এ জাতীয় লেখার মূল বক্তব্য বা মেসেজ কী তা স্বয়ং লেখকের পক্ষেও উদ্ধার করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু, এ লেখা ব্লগে বিতর্কের সৃষ্টি করে। পারস্পরিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ... সবচেয়ে বড় কথা হলো, পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে আড়াইবার পড়ার পরও আমি বুঝে উঠতে পারি নি এটি ‘তারকাজরিপ’ হলো কোন্‌ হিসাবে। লেখক তাঁর লেখায় দুনিয়ার ব্লগারদের নাম একে একে বলে গেছেন; তাঁর কাছে সবাই ভালো। এটা কিছু হলো? সমালোচনা হতে হবে সমালোচনার মতো। এতো ব্লগারের নাম উল্লেখ করায় যে কেউ লেখাটায় ঢুকেই নিজের নাম খোঁজেন; নাম পেলে মহাখুশি, না পেলে সঙ্গত কারণেই লেখকের দাদার গোষ্ঠি উদ্ধারে উঠেপড়ে লেগে যান।’ মামুন মুর্শিদ একজন ক্লাসিক রাইটার। তাঁর লেখায় এমন কিছু থাকে যে পাঠক একবার সেই লেখা পড়া শুরু করলে শেষ না করে আর উঠতেই পারেন না। তিনি চলমান রূঢ় ঘটনাবলি, সমাজের ডার্ক স্টোরিসমূহ, অর্থাৎ অন্ধকার দিকগুলো খুব সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখনিতে তুলে ধরেন; পড়লে মনে হয় সত্যি ঘটনা, কিন্তু তা সত্যি নয়, অথচ এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলেছে। গত কয়েকমাস ধরে তিনি এবং মাননীয় এমপি মহোদয়, জনৈক মূর্খপণ্ডিত ও দলভুক্ত শুভ মিলে এভরিহোয়্যারইন ব্লগের নির্বাচিত সাহিত্যকর্ম নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে একটা লিটল ম্যাগ প্রকাশ করছেন নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে। এটা নিঃসন্দেহে একটা প্রশংসনীয় কাজ। ব্লগারসেবামূলক এই মহৎ কাজের দরুণ এই রত্নচতুষ্টয় এখন ব্লগশিরোমণি। আমি ব্লগে এ চারজনকে বেশ তোয়াজ করে চলি।

ব্লগার আরজু মণি সব কমেন্টের জবাব দেন নি। বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ ব্লগারের কমেন্টের জবাব লিখেছেন। ব্লগার মামুন মুর্শিদের কমেন্টের জবাবে লিখেছেন: ‘আপনাদের উপর সোনাবীজের একটা গোপন ক্ষোভ আছে। আপনাদের মাসিক সাহিত্যপত্রিকায় কোনোদিন সোনাবীজের কবিতা বা গল্প ছাপেন নি, অথচ কতো ছাইপাশ ছাপিয়ে ম্যাগের সাইজ ঢোলের সমান ফুলিয়ে ফেলেছেন। এটা অন্যায়।’ কথাটা সত্য, কিন্তু আরজু মণি তাঁর রিপ্লাইয়ের শেষে একটা হাস্যমান স্মাইলি যোগ করেছেন। তাহলে? তিনি আমাকে উপহাস করেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার আরজু মণি আপুর উপর আমার অভিমান দানা বাঁধতে থাকে। আমি ভেবেছিলাম তিনি ‘রিভার্স খেলছেন’, যাতে তাঁর নেতিবাচক বক্তব্য পড়ে সবাই তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার পক্ষে কমেন্ট করেন। এখন দেখছি তিনি সত্যি সত্যি আমার বিরুদ্ধপক্ষ বনে গেছেন। মেয়েরা এতো নিষ্ঠুর! এতো নিষ্ঠুর তাঁদের আচরণ! ধরণি, তুমি আরেকবার দ্বিধা হও, আমি আরেকবার তোমার গর্ভে ঢুকে দেখি, মরণে কতো সুখ।

এতক্ষণে আমি বুঝতে পারি আরজু মণির ক্ষোভ কোন্‌ জায়গাটাতে। আমার অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ শায়লাই এভরিহোয়্যারইন ব্লগের ১ নম্বর তারকা ব্লগার; শুধু তারকা বললে তাঁকে খাঁটো করা হয়, তিনি উচ্চমার্গীয় তারকা, যাকে মেগা স্টার বলাই শ্রেয়। তিনি কী না পারেন! স্বল্প খরচে পানি গরম করা থেকে শুরু করে তেঁতুলের হালুয়া, আমের সন্দেশ ও কচুভর্তা বানানো, আলতা-স্নো-কাজলের পরিমিত ব্যবহার, শাড়ি ও চুড়ি পরার আধুনিক কৌশল এবং রূপবতী হবার ১০১টি গোপন রহস্য সম্বলিত রূপচর্চা বিষয়ক গবেষণায় ব্লগে তাঁর দ্বিতীয়টি আর কেউ নেই; সম্প্রতি তিনি যাত্রা পরিচালনায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, যার সচিত্র প্রতিবেদন ব্লগসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে চারদিকে সাড়া পড়ে যায়। এজন্য রবীন্দ্রনাথ শায়লাকে, যাঁকে এ যুগের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলা যায়, আমি আমার মেরিট লিস্টের ১ নম্বরে স্থান দিয়েছি। এটাই আমার জন্য কাল হয়েছে। আমার ধারণা, আরজু মণি নিজেই এই প্রথম স্থানটা পাবেন বলে আশা করেছিলেন। তিনি ক্ষিপ্ত মূলত দুটি কারণে: ১) তাঁর নিজপক্ষীয়া ব্লগার রবীন্দ্রনাথ শায়লা তাঁকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে উঠে গেছেন, যার ফলে গোত্রের ভেতর তাঁর কর্তৃত্ব কর্তিত হলো; ২) অন্যদিকে তিনি নিজে অবস্থান করছেন ১০-এর ঘরে। এ দ্বারা তিনি অপমানিত বোধ করেছেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমার কী করার আছে, বলুন? প্রত্যেক ব্লগার নিজ কীর্তির দ্বারাই নিজের অবস্থান তৈরি করেন। তিনি এমু ব্লগের একজন মডারেটর বলেই যে তাঁকে উচ্চাসনে বসাতে হবে, এটা ভাবা তাঁর অনুচিত হচ্ছে। যাই হোক, আমার ভাবনা মিথ্যাও হতে পারে। আর যদি সত্যি সত্যিই তিনি এ কারণে আমার উপর ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বলবো, প্লিজ আপু, আপনি শান্ত হোন, মাটির দিকে তাকান, আপনার এই ছোটো ভাই আপনাকে আপনার যোগ্য আসনটিই দান করেছে। আপনি আরও ভালো করুন আপু, আপনি উচ্চতম শিখরে যেদিন উঠতে সক্ষম হবেন, সেদিন আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। .... এই সাথে আমরিন রেজোয়ানা ও মাহজাবীন মুন কেন এতো ক্ষিপ্ত হলেন আমার উপর তারও একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করেছি আমি। এঁরা দুজনেই ভূ-গর্ভে আরোহণ করে পৃথিবীর প্রাচীনতম ও গভীরতম ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁড়ে এনে ব্লগদুনিয়ায় প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে এ কাজগুলো পানি গরম করা ও চোখে কাজল পরার চেয়ে অনেক বেশি শ্রমসাধ্য, সৃজনশীল ও মূল্যবান। এ দুজন ছাড়া ব্লগে এ মহতী কাজগুলো করার আর কেউ নেই। আমরিন রেজোয়ানা মনে করেন, তাঁর নিরলস অবদানের জন্যই আজও রিকশার পেছনে রাজ্জাক-ববিতা বা শাবনূর-ফেরদৌসের পোস্টার দেখা যায়, সিনেপ্লেক্সে ইতিহাসের প্রথম বাংলা ছবি ‘দ্য লাস্ট কিস‘ প্রদর্শিত হয়, মেয়েরা চন্দ্রাবতীর মতো প্রেম করতে উদ্বুদ্ধ হয়, বাবু ইংলিশ এখনো টিকে আছে। আর মাহজাবীন মুন? তাঁর ধারণা, তিনি ছাড়া ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্য উন্মোচন করা আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়, এবং একমাত্র তাঁর দ্বারাই পৃথিবীর প্রাচীনতম মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতা ‘বানপো‘কে পৃথিবীতে পুনর্বাসন সম্ভব হবে। এ কাজের যোগ্য সম্মান হতে পারে একমাত্র ‘নোবেল প্রাইজ‘, অথচ আমি কিনা তাঁকে সমান্য ব্লগেও শীর্ষস্থান দিয়ে সম্মানিত করতে কার্পণ্য করলাম! তাহলে কীসের দেশি ভাই আমি তাঁর? আমার ‘ছোটো মিয়া‘ রহস্য সিরিজে তাঁরা এতো যে উচ্ছ্বাসপূর্ণ মন্তব্য করে থাকেন, সকলের চেয়ে আলাদা- আমি তার মূল্য স্রেফ এভাবে দিলাম! তাঁরা ক্ষিপ্ত হবেন না তো আমার মোবাইলে কি ২০ টাকার ফ্লেক্সি পাঠাবেন! দুনিয়া এতো সহজ নয় সোনাভাই!!

‘স্মৃতি’ নাম্নী কোমল ও প্রজ্ঞাবতী ব্লগারের কমেন্টগুলো আমার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছিল অনেক অগে থেকেই। একদিন তিনি আমার কোনো একটা পোস্টে জ্ঞানগর্ভ কমেন্ট করলে তাঁর প্রতি আমার অনুরাগ সৃষ্টি হয়, এবং আমার ব্লগে তাঁর উপস্থিতি আমাকে দারুণভাবে উৎফুল্ল করে। তাঁর প্রোফাইল পিকচারটা বড় স্নিগ্ধ। ঘন মেঘের আড়াল থেকে একঝাঁক সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে, তার মাঝখানে একটা লাল ঘুড়ি উড়ছে। একদিন ফেইসবুকে হঠাৎ করে তাঁর নামটি ভেসে উঠতে দেখলে আমি পুলকিত বোধ করি। আমার পুরোনো ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ফ্রেন্ডসংখ্যা ৫০০০ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে ২ বছর আগে, এবং চলমান অ্যাকাউন্টে এ সংখ্যা ৫০০০-এর দিকে দ্রুত ধাবমান, যেজন্য ফ্রেন্ডসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমার আগ্রহ এখন খুবই কম; উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, গত প্রায় দেড় বছর ধরে আমি কাউকে কোনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই নি, এবং নতুন বন্ধুদের রিকোয়েস্টও খুব বেছে বেছে অ্যাকসেপ্ট করেছি। আমার আপাদমস্তক অহমিকা জলাঞ্জলি দিয়ে ‘স্মৃতি’কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে আমাকে অপমান, হতাশা আর লজ্জার সাগরে নিমজ্জিত করে তিনি তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরকম আরেকজন ব্লগারের নাম ‘আজ আমি কিছুই খাব না’। তাঁর প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকালে আমি চোখ সরাতে পারি না- মনে হয় থুতনিতে হাত দিয়ে উদাস গোধূলিকালে দূরের দিগন্তের পানে বিমর্ষ চোখে বসে আছে জীবনানন্দের বনলতা সেন। ও হ্যাঁ, তাঁর ইউজার আইডির নাম বনলতা সেন। এই গতকালই ফেইসবুকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ- উর্বশী সিজেল তাঁর নাম। সিজেলের রম্যরচনা পড়লে হাসতে হাসতে চোখের ভুরু পড়ে যায়। তো, বিশেষ করে এ দুজন ব্লগারের কথা বলার কারণ হলো, এঁদের কমেন্ট আমার ভালো লাগে। প্রাণোদ্দীপক কমেন্টের দ্বারা লেখককে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁদের জুড়ি নেই। কিন্তু ‘তারকাজরিপ’ পড়ে স্মৃতির যে প্রতিক্রিয়া তা থেকে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট বোঝা গেলো না। তিনি লিখেছেন, ‘তারকাকথন ভালো লাগলো।’ তারকাকথন! আমি অবাক হই, লেখাটাকে ‘তারকাকথন’ বলবার কী কারণ? নাকি একটা তরল খোঁচা মারলেন এই বিচক্ষণ ব্লগার। মামুন মুর্শিদের কমেন্টের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় তাঁর এই ছোট্ট কথাটিতে- এটা কি তাহলে সত্যিই কোনো জরিপ হয় নি, কেবল তারকাদের গুণগান গাওয়া হয়েছে? আমার ভুলগুলো খুঁজতে থাকি।

তারকাজরিপ – ষষ্ঠ কিস্তি
(ভয়ে ভয়ে ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া হয়)

সেলিম মনোয়ারের কমেন্টে দৃষ্টি দেয়া যাক। তিনি লিখেছেন: ‘দেশে কবিরা এখন অবলুপ্তির পথে। ব্লগসুদ্ধ ঘাঁটাঘাটি করবার পর লক্ষাধিক ব্লগারের মধ্যে মাত্র জনা দশেক কবি এখনো সাহিত্যের সুন্দরীতম শাখা কবিতায় নিজেদের শ্রম ও মেধা অকাতরে বিসর্জন দিচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে আমিও একজন। পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে, বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হচ্ছে, ক্রমাগত নির্বিচারে বিষ প্রয়োগের ফলে বাসাবাড়ি থেকে তেলাপোকা নির্বংশ হয়ে যাচ্ছে, আর প্রাণহীন যান্ত্রিকতার দরুণ এমনকি গ্রামগঞ্জ থেকেও কাক প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। কবিদের অবস্থাও তথৈবচ। এখনই যদি সরকার এই কবি সম্প্রদায়কে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে না আসে, তাহলে অচিরেই এমন এক সময় আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে যে, এক ফোঁটা ওষুধ খাইয়ে দেয়ার জন্যও কোনো কবিকে এই ধরাধামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে এরই মধ্যে আমি একটা গবেষণা করেছি। তার ফলাফল সত্ত্বর প্রকাশ করা হবে। তবে, এই মুহূর্তে ব্লগকবিরা যাতে তল্পিতল্পা গুটিয়ে লুডু খেলতে চলে না যান, সেজন্য তাঁদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। সোনাবীজ ভাই যে ধরনের জরিপ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে শুধু মেরিট লিস্ট তৈরি করলেই চলবে না, মেরিট অনুযায়ী সম্মানীর ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি নিজেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী; আমার ব্যাংক থেকে একটা মোটা অংকের অনুদান সংগ্রহ করে দিব, প্রয়োজনে আমার প্রোভিডেন্ড ফান্ডের সমুদয় অর্থ এই পারপাসে ডোনেট করতে রাজি আছি। তবে, আমার একটাই শর্ত- কবিদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা মেরিট লিস্ট থাকতে হবে। আমার বিবেচনায় প্রথম ১০ জন কবির নাম আমি এখানে তুলে দিলাম: ১) কবি রশিদুল ইসলাম ২) সম্পূর্ণ রুবেল ৩) শ্রাবণ বৃষ্টি ৪) ফালতু নায়ক (খুব ভালো কবিতা লিখেন) ৫) ম্যাক্সিম গোর্কি ৬) ঁঁঁ (চন্দ্রবিন্দু টু দ্য পাওয়ার থ্রি ওরফে প্রাপ্তি) ৭) লিলি আম্মানসুরা ৮) ইসরাতসুলতানা ৯) মাহমুদা তানিয়া ১০) খেয়ানৌকা ১১) রুমন রুমি (ইনি গল্প লিখেন, কিন্তু কবিতায় সেরা) ১২) সোনাব্যাঙ ১৩) ফারিহা ১৪) মেঘবৃষ্টিরোদ্দুর ১৫) পদ্মা পাড়ের ছেলে ১৬) মেজমান আন্দালিব ১৭) সাজেদা সোহেলী ১৮) মহামহোপার্য ১৯) ড্যামেড ২০) ইমরোজ কবির সান ২১) ইরফান আহমেদ তুফান ২২) সোহাগ বিহাগ। এই লিস্টের নিচে ‘বিঃ দ্রঃ’ দিয়ে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, ১০ জনের কথা বললেও লিস্টটা শেষ পর্যন্ত ২২-এ গিয়ে ঠেকলো। যদিও এঁরা অনেকেই কবিতা লিখেন না, কিন্তু কবি জাতের বিলুপ্তি ঠেকানোর জন্য প্রতিভাধর এসব ব্লগারকে কবিতা লিখতে উৎসাহিত করে তুলতে হবে। কথায় আছে না, যত গুঁড় তত মিঠা! আমরা যতো ভালো কবি আমাদের দলে টানতে পারবো তত ভালো কবিতা পাব।’ এরপর পুনশ্চ দিয়ে লিখেছেন, ‘লিস্টটা আমার নিজের তৈরি বিধায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করি নি। তবে সহৃদয় ব্লগারগণ আমাকে যে পজিশনেই ফেলুন না কেন, আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিব।’

সেলিম মনোয়ার ভাই ব্লগ ও ফেইসবুকে আমার অন্যতম প্রিয় কবি। তিনি মূলত কবিতা লিখলেও রম্যরচনায়ও সমান পারদর্শী। তিনি স্বল্প দিনেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পোস্ট লিখবার রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। ব্লগমাতা ডায়ানা তাঁর নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিবেন মর্মে প্রস্তাব করলে মনোয়ার ভাই সবিনয়ে সাফ জানিয়ে দেন, ওসব ফালতু রেকর্ডে নিজের নাম চড়িয়ে কবিজাতির অবমাননা করতে চান না তিনি। তিনি নিভৃত কবিতাচর্চা দ্বারা বাঙালা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হয়েছেন, এজন্য প্রতিদিন অন্তত সাতটা কবিতা লিখা হলো তাঁর বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা। মনোয়ার ভাইয়ের কবিতাপ্রেমে আমি বিমুগ্ধ। কিন্তু লজ্জার বিষয় হলো, তারকাজরিপের কোথাও তাঁর নাম নেই; ব্যাপারটা আর কিছুই না, ভুলে গিয়েছিলাম। কারণ, নোমান সামির প্রশস্তি গাইতে গাইতে আমি এমনই উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম যে লেখার দৈর্ঘ্য গিয়েছিল অনেক বেড়ে, যেজন্য রাহি ফ্লোরা ও শাহেদ চৌধুরী জুটির মতো তুখোড় কবিযুগলকে পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে শেষ করতে হয়েছিল। তবে সেলিম মনোয়ার ভাইকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই কবি রশিদুলের নাম উল্লেখ করেছেন বলে। তিনি আমাদের আগামী দিনের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এসএসসি পরীক্ষার জন্য খুবই ব্যস্ত আছেন বলে বেশ কিছুকালের জন্য তিনি ব্লগ থেকে বিরতি নিয়েছেন। তাঁর মতোই আরেক দুর্দান্ত কবি ও গল্পকার হানিফ আলাদিন কী জানি কেন ব্লগ থেকে দূরে সরে গেছেন অনেক দিন হলো; তাঁকেও খুব মিস করি। এক্ষণে আমি শান্তির অগ্রদূত এবং রুমন রুমির নামও অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। অগ্রদূত একজন অতি বড় মাপের সাই-ফাই লেখক; তাঁর গল্প পড়লে মাথা ঘুরে যায়। রুমন রুমিও কম যান না। আরেকজন আছেন মহামহোপার্য, যিনি গ্রিক উপাখ্যানের জীবন্ত কোষ। খুব মিস করছি ড্যামেডকে, যাঁর মধ্যে আমি আমার ছায়াকে খুঁজে পাই। আরেকটা খুব ছোট্ট মিষ্টি আপু আছেন, যাঁকে অনেকদিন দেখি না ব্লগে। আমি অপেক্ষায় আছি, একদিন হুট করে এসে আমার ব্লগে একটা এক শব্দের কমেন্ট করবেন- ‘ভাইয়া!’ তখনই তাঁর নামটা দেখবো খু...কি... ঝা। সেলিম মনোয়ার ভাই এতোগুলো নাম বলে আমার চোখে পানি এনে দিলেন।

এরপর যিনি আবির্ভূত হলেন তাঁকে আমি প্রথম প্রথম ‘আবির্ভাব’, এরপর ‘অভিভূত’, সর্বশেষ তাঁর নামের বানান খেয়াল করে দেখি তাঁর নিকনেইমটি হলো ‘ডামিভূত’। ব্লগে এই ‘ডামিভূত’ হলেন আরেক ব্লগার যিনি আমার একজন শক্ত ফ্যান। আপনারা জানেন, জহুরে জহুর চিনে। তিনি নিজে একটা মহামূল্য জহুর বলেই আমার ভিতরকার রত্নভাণ্ডার তিনি আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আমার একেবারে প্রথম পোস্ট থেকে পড়া শুরু করে কী আবেগঘন কমেন্টই না তিনি লিখলেন। তা পড়ে আমি নিজেই তাঁর ফ্যান হয়ে গেলম। কিন্তু তিনি খেপেছেন: ‘আমিও বলছি আপনার জরিপ পুরাই ভুয়া হইছে। যে পোস্টে কবি শিরোমণি বিদেশ হাসনাইনের নাম না থাকবে, তা আর যাই হোক, কোনো জরিপ হইতে পারে না। বিদেশ হাসনাইন একটা সাধারণ কথা কইলেও সেটা কবিতার মতো হইয়া যায়। তাঁর মতো এতো সমৃদ্ধ কমেন্ট করবার পারে এই শহরে এমন কোনো ব্লগকবির জন্ম হয় নাই। আপনি কি জীবনানন্দ দাশের মূর্তির সাথে তাঁর আবৃত্তিগুলো ডাউনলোড কইরা কোনোদিন শুনছেন? শোনেন নাই। আপনারে আমি এতোকাল অনেক শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু লিস্টে তাঁর নাম না পাইয়া আপনার কবিপ্রতিভার উপর আমার সন্দেহ হইতেছে, জাফর সিদ্দিকী ভাইয়ার মতোই।’ আমি ঝিম মরে বসে গেলাম। কানের লতিগুলোতে শাঁই শাঁই করে চিকন ব্যথার মতো কী যেন ছড়িয়ে পড়ছে। বিদেশ হাসনাইন অনেক দিন ধরে ব্লগে নেই, যেমন নেই মতিউর রহমান সমুদ্রসহ আরও কয়েকজন প্রখ্যাত ব্লগার, যাঁদের সাথে ব্লগজীবনের প্রথম দিকে আমার প্রগাঢ় মতবিনিময় হতো। আমার কবিতাকে ছায়া করে এঁরা যে কমেন্ট করতেন, তা আমার কবিতাকে ছাপিয়ে যেতো। আমি কেমন করে তাঁদের নাম ভুললাম? এখন তো দেখি আরও বড় বিপদে পড়ে গেলাম। ‘ব্লগপাতায় সামসুন্নাহার’ নাম্নী যে মহীয়সী সর্বদা আমার লেখায় বিচরণ করেন, তাঁর নামও কোথাও উল্লেখ করি নি। কী বিপদ! কী বিপদ! সেলুলয়েডের মতো কয়েকটি নাম আমার মনের পর্দায় খুব দ্রুত ভেসে যাচ্ছে- প্রখ্যাত কবি কামরুল হাসান মাহী, কবি রবাহুত, সালমাপপি, দুর্ধ্বর্ষ ডাঃ অ্যানোনিমাস চয়ন, রঙতুলিপোস্টার, চতুষ্কুণো, ইঞ্জিনিয়ার জেকিল, স্নিগ্ধ মাখন, সাবরিনা সিরাজী কোকিল, সিঁথির অনুভূতি, তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির ফাঁদে যেতে, বৃষ্টিভেজা ভোর, অলওয়েজ সুইম, রাইসুল আঁখি, সুস্থ কবি, ভেনাস, অন্তরপ্রান্তর, নেক্টারাস, পাহাড়ের হাসি, লুৎফুল বারী হীরা, ধবধবে কাঁচাচুল, শ।মশের, শিশিরের হাসি, শিশিরের গন্ধ, হিজিবিজি, শিপু মামা, লাল-দর্পণ, কবি মাওলানা১৬১২, মিমা, বৃষ্টিহারা, গরম শরবত, বিদ্রোহী কাগু, তাসনুভা সাখাওয়াত মিথিলা, তানিয়া হোসেন খান ওরফে Written by Tania Hossain Khan, প্রতুল_শাহ, মেহরুবা আপু (যিনি জীবনে কোনোদিন পল্লীগীতি শোনেন নি), ঘুমন্ত তুমি, মাসুম আহমদ ১৪ ছাড়া .... আরও কতো কতো ব্লগারের নাম মনে পড়তে থাকলো- উম্মে হালিমা, নীলাঞ্জনা মায়া, অপরাজিতার ব্যথা, শিউলি আঞ্জুমান আরা বেগম... সবচেয়ে বেশি মনে পড়লো বাঘ ইমনের কথা। তিনি এতো বড় কবি হয়েও তাঁর কমেন্টে বিনয় ঝরে পড়তো। তিনি একবার আমার এক কবিতা পড়ে লিখেছিলেনঃ ‘আপনার লেখায় কী যেন আপনি উছলি আনন্দ আছে। রম্য নয় জেনেও বড্ড মজা লাগে! এ এক অসাধারণ প্রতিভা! প্রণমি কবি আপনারে, এমন গুণ ধরেছ ভব মাঝারে!’ এমন মন্তব্যের প্রতিদান আমি কীভাবে শোধ দেব?

আরজু মণির পোস্ট এমনিতেই ‘হিট’, ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’ ও ‘শেয়ারিঙে’ খুব দ্রুত দীর্ঘ হতে থাকে; বর্তমান স্টিকি পোস্টের কমেন্টসংখ্যা এতো বেশি যে পড়তে পড়তে আমি অধৈর্য্য হয়ে পড়লাম। উলটো দিক থেকে, অর্থাৎ নিচের দিক থেকে পড়ার জন্য স্ক্রল চেপে সর্বশেষ কমেন্টের উপরেরটিতে এসে আমার চোখ আটকে গেলো। তিনি ‘সবুজ অঙ্গন’ নামক একটা সাহিত্যপত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, এবং একজন দক্ষ ডিটেকটিভ রাইটার। তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন, এবং আমার লেখার প্রকৃত মূল্যায়ন করে থাকেন। ‘সবুজ অঙ্গন’-এর এমন কোনো সংখ্যা নেই যেখানে তিনি আমার কোনো গল্প অথবা কবিতা ছাপেন নি। তিনি একজন বিদগ্ধ সমালোচক এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারও। এই চিরকুমার মহামানব আমাকে কোনোদিন একটা কটূ কথা বলেছেন এমনটা মনে পড়ে না। তিনি লিখেছেন: ‘আপনার মেরিট লিস্টে ফিফা ওরফে ফ্রিডম ফাইটারের নাম না দেখে খুব খুশি হলাম। কারণ তিনি একজন দক্ষ তর্কবাগীশ, তিনি এতোই মেধাবী যে গায়ের জোরে সব তালগাছ নিজের জমিনে নিয়ে লাগান। তবে হাসান মাহমুদকে আপনার লিস্টের প্রথম অথবা নিদেনপক্ষে পঞ্চম সিরিয়ালে স্থান দেয়া সমীচীন ছিল; তিনি এমনই একজন রাইটার যিনি পৃথিবীর যে-কোনো রাইটারের ভিত ভেঙে তছনছ করে দেবার ক্ষমতা রাখেন। আরেকজনের নামও এই মেরিট লিস্টে থাকতে পারতো- বর্তমান ব্লগদুনিয়ার নতুন সেনসেশন- মোঃ ইসহাক কাজী; এতে ব্লগার আরজু মণি যে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন তা সকলেই জানেন। আমরিন রেজোয়ানার নাম মেরিট লিস্টের ৭ থেকে উঠিয়ে ২-এ নেয়ার পক্ষে আমি। তিনি বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য, লোকায়ত সাহিত্য, ইত্যাদির উপরে যা লিখেন তা অনন্য। রম্যরচনায় কাল্পনিক প্রেম, কয়েকজন আরমান, সম্পূর্ণ রুবেল, প্রমুখ ব্লগারগণ সূর্যধনকেও ছাড়িয়ে গেছে; তাঁদের ব্যাপারে কোনো আলোকপাত না দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হলাম। আর আপনার জন্য উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো, সাম্প্রতিক কালে ব্লগে আলোড়ন সৃষ্টিকারী, বাংলাদেশ থেকে এক মুহূর্তে ইন্টরানেট বন্ধ করে দেয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা যাঁর আঙ্গুলের ডগায়, সেই মহামতি ব্লগার ‘পরিবেশ বান্ধব’কে আপনার মেরিট লিস্টের প্রথম কাতারে অন্তর্ভুক্ত না করে আপনার ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন বলে মনে করছি।’ এই মহামান্য ব্লগার ও সম্পাদকের নাম পান্থ বিহঙ্গ। তাঁর প্রতি আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা অপরিসীম তা আমার কাছের মানুষরা জানেন। তাঁর উপরের কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে প্রণিধানযোগ্য। কিন্তু এরপরে তিনি যা লিখলেন তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ‘ব্লগপাতায় সামসুন্নাহারের সাথে আপনার কী সম্পর্ক? তাঁর ব্লগের সবগুলো ফেভারিট পোস্টই আপনার। সামসুন্নাহারই একমাত্র ব্লগার যাঁর সাথে আপনি ‘তুমি’ সম্বোধনে কথোপকথন করেন? ব্যাপার কী? এ ব্যাপারটা অনেকের কাছেই সন্দেহযুক্ত হচ্ছে বলে মনে করি। আচ্ছা, আপনি যে এভাবে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছেন, এর পরিণাম আপনার মতো লেখকের জন্য কতোখানি ভয়াবহ হতে পারে তা কি আপনি একবারও ভেবে দেখেন নি?’
আমি দ্রুত ‘সোনাবীজ’ নিক থেকে লগআউট করে ‘ব্লগপাতায় সামসুন্নাহার’-এ ঢুকে পড়ি, তারপর আরজু মণির পোস্টে এসে পান্থ বিহঙ্গ’র বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদের একটা দীর্ঘ কমেন্ট লিখি....

মেয়েতে-মেয়েতে মাসতুতো মামি। আবারও সেই ধাঁধা! হ্যাঁ, এটা একটা জটিল ধাঁধা, যার উত্তর পৃথিবীতে কারো জানা নেই। আপনি যদি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চান, তাহলে এটির উত্তর বের করুন, ততক্ষণে আমি তারকাজরিপের পরের পর্ব গুছিয়ে নিতে থাকি।

তারকাজরিপ – শেষ কিস্তি

কোনো এক সময়ে আমার যে-কোনো লেখার প্রথম পাঠিকা ছিল আমার হবু প্রেমিকা। গল্পের নায়িকা কলাপাতারং শাড়ি পরলে হবুকে দেখতাম ঐ রঙের শাড়ি পরছে। কবিতার মেয়ে যখন গালে হাত দিয়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে নীলাকাশ দেখতো, আমি দেখতাম আমার হবু প্রেমিকা আমার পড়ার টেবিলের জানালা বরাবর ছাদে গিয়ে প্লাস্টিকের একটা ছোটো চৌকিতে বসে আকাশ দেখছে; আমি তাকে দেখছি কী না সে বার বার আড় চোখে পরখ করতো; কিন্তু আমি বিটকেলি করতাম, ওর দিকে তাকাতাম না। একদিন এসে আমার খাতাপত্র ছিঁড়ে ফেললো, আর কবিতার ডায়েরিটা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিল। আমি হেসে দিয়ে বললাম, ‘আজকাল কেউ ডায়েরিতে কবিতা পোষে? ওগুলো তো আমার ল্যাপটপে।’ বলে একটা মুচকি হাসি দিতেই বললো, ‘আমি তোর ল্যাপটপ ভেঙে গুঁড়ো করবো, বদমাইশ কোথাকার।’

হবু প্রেমিকা একদিন কনফার্ম্‌ড প্রেমিকা হলো। কিন্তু কবিতার নারী হয়ে উঠলো তার চক্ষুশূল। বলে, ‘আমি কি তোর কুঁড়েঘরে এসে চুল এলিয়ে বসি?’ আমি বলি, ‘ওটা ফ্যান্টাসি।’ ‘তোর ফ্যান্টাসির নিকুচি করি।’ সে রাগে গজগজ করতে করতে বলে, ‘আর কোনো প্রেমের কবিতা লিখবি না বলে দিলাম। কেন, দেশ নিয়া, শান্তি নিয়া লিখতে পারিস না?’ বছর তিনেক প্রেম করার পর প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেলো। আমার অবয়ব শ্মশ্রুমণ্ডিত হতে থাকলো ধীরে ধীরে; আমি কবিতা লিখতে থাকি। আমার সত্যিকার প্রেমিকা যেভাবে বিগতা হয়েছে, বিগতা হবার পর সে যা যা যে-যেভাবে করে, কবিতায় তাই উঠে আসে আমার অজান্তে। কিন্তু এ কবিতা আমি ছাড়া আর কেউ নেই পড়বার।

আমার দ্বিতীয় বইটাও একটা উপন্যাস ছিল- ‘অন্তরবাসিনী’। আমাদের স্কুলজীবনের পটভূমিকায় লিখা হয়েছে গল্প। আমি তখন বিচ্ছেদকাতর, বেদনাক্রান্ত ব্যাচেলর। কোনোরকমে টিউশনি করে পেট চালাই, ফাঁকে ফাঁকে লিখি। কিন্তু পত্রিকাঅলারা লেখা ছাপেন না। তবে আমি উদ্যম হারাই না, কারণ, আমি আমার দুজন ভক্ত পাঠক পেয়ে গেছি- একজন আমার স্কুলজীবনের ক্লাসমেট শাহজাহান, আরেকজন হলো ওর অর্ধাঙ্গিনী। আমি দুদিন পর পর ১৫-২০ পৃষ্ঠা লিখে ঝকঝকে ছাপায় প্রিন্ট করে সন্ধ্যায় ওর বাসায় চলে যাই। শাহজাহান ওর প্রাইভেট পড়ুয়া এক দঙ্গল ছাত্রছাত্রী ফেলে আমার পাশে এসে বসে। ‘নে, পড় পড়। পরবর্তী আকর্ষণ কী কী আছে শোনা দেখি।’ হাসতে হাসতে শাহজাহান এ কথা বলতো। আমি পড়তাম আর ওরা স্বামী-স্ত্রী তন্ময় হয়ে শুনতো। সবাই নিজের কথাই শুনতে চায় অন্যের মুখে। ভাবী কান খাড়া করে থাকতেন- পারুল বা বীনার সাথে শাহজাহানের কোনো সম্পর্ক সংঘটিত হয়েছিল কিনা তা জানার জন্য। গল্প দ্রুতবেগে এগিয়ে চলে- ওরা দুজন গল্পের ভেতরে ডুবে যায়। কিন্তু এ গল্প শাহজাহানকে নিয়ে নয়, এ হলো স্বয়ং সোনাবীজের রগরগে প্রণয়কাহিনি। স্কুলজীবনে সায়ন্তনির সাথে আমার প্রেম তীব্র হয়েছিল। কাহিনির পরতে পরতে সেই প্রেমের মারাত্মক রসঘন বর্ণনা।

এইসব পাণ্ডুলিপি শাহজাহানের ঘরে ফেলে যাই বরাবরই। উদ্দেশ্য, ওর ছাত্রছাত্রীরা এগুলো পড়ে কী বলে তা জানা। এ ছাত্রছাত্রীদের কোনো লেখকের সাথে কোনোদিন সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ হয় নি। আমাকে ওরা অনেক বড় একজন লেখক মনে করে। এটা আমাকে নির্মল আনন্দ দেয়, এবং অহংকারী করে তোলে। আমি কোনো তারকা লেখক নই, সেটা আমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানেন না। কিন্তু ওদের কাছ থেকে আমি যা পাচ্ছি, তা থেকে আমার যে আনন্দ হয় তা একজন তারকা লেখকের প্রাপ্তির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

একদিন বাসায় এসে বসতেই ছাত্রছাত্রীরা আমাকে ঘিরে ধরলো। ভাবী এসে মিটিমিটি হাসছেন। ‘ব্যাপার কী?’ জিজ্ঞাসা করি। ওরা বলে, ‘আপনাদের স্কুল লাইফটা খুব ইভেন্টফুল ছিল।’ ‘কে বলেছে?’ ‘এই তো, এই কাগজে পড়লাম।’ বলেই ওরা আমার ‘অন্তরবাসিনী’র পাণ্ডুলিপি বের করে ধরে। ভাবী বলেন, ‘আপনি নাকি খুব ফাজিল আছিলেন স্কুলে?’ ‘ধূর, কী বলছেন এসব?’ ছাত্ররা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘আমরা সব জেনেছি। সব জেনেছি।’ ‘আরেন্নাহ, ওসব তো গল্প। বানিয়ে বানিয়ে লেখা।’ ওদেরকে কিছুতেই বোঝানো গেলো না যে, এগুলো সত্যি নয়, বানানো গল্প।

শাহজাহান ওদেরকে ধমক দিয়ে পড়ার ঘরে চলে যেতে বললো। আমি বলি, ‘এসব কি তুই বলেছিস যে গল্পের সব কিছুই সত্য কাহিনি?’ ‘বলার কী আছে, সত্যই তো!’ আমি হেসে বলি, ‘মনে করিস না যে সবই বানিয়ে বলছি, এর অন্তত ১০ ভাগ ঘটনা সত্য।’ শাহজাহানের কণ্ঠস্বর হঠাৎ একটু চড়ে যায়। বলে, ‘তুই কি আমাগো আবাল পাইছস? সায়ন্তনিরে কতোবার জঙ্গলে নিয়া করছস তা কি আমরা জানি না ভাবতেছস?’ আমি ভাবীর সামনে ওর কথায় চরম বিব্রত হই। ওর মুখ খুলে গেলে সেই মুখে আর কিছুই আটকায় না- ভাষার শ্রী তখন আর দেখে কে। বললাম, ‘দোস্ত প্লিজ প্লিজ, মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।’ ‘আরে ফাক ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ। তুই বনেজঙ্গলে নিয়া মাইয়াগো বাঙ্গি ফাডাবি, আর আমরা কইতে পারুম না, এইডা কুন বালের কতা কইতেছস?’ ভাবী উঠে চলে গেছেন। সুশিক্ষিতা, ভদ্র মহিলা। আমি শাহজাহানকে বলি, ‘স্টুপিডের মতো কথা বলছিস কেন?’ ও ধমকে ওঠে, ‘শাটাপ। সত্য না হইলে এইসব লিখলি ক্যামনে?’ আমি বলি, ‘দোস্ত, শান্ত হ, শান্ত হ। এটা একটা গল্প। গল্পে সুড়সুড়ি না থাকলে কেউ খাবে, তুই-ই বল না? এ গল্পের এক ছটাকও সত্য না, সব বানানো। তুই আমারে চিনস না?’ ‘রাখ তর বালের চিনাচিনি। তরে আমি অনেক আগে থেকেই চিন্যা ফালাইছি।’ সরকারী হাই স্কুলের ইংলিশ টিচার মোঃ শাহজাহান মিয়া রাগে কাঁপতে কাঁপতে ছাত্রছাত্রীদের রুমে চলে যায়। আমি ভাবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।

হাইস্কুলে মেয়েদের সাথে পড়তে থাকা অবস্থায় ক্লাস সিক্সেই আমাদের পোলাপানের ইঁচড় পেকে লোহা হয়ে গিয়েছিল। শাহজাহান আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সেয়ানা ছিল, যেমন ছিল সে সবচেয়ে সুদর্শন বালক। ছেলেদের মধ্যে ক্লাসের ফার্স্ট বয় শাহজাহান, মেয়েদের মধ্যে সায়ন্তনি; সায়ন্তনির মেধার চেয়ে রূপের ঝাঁঝ সাতগুণ বেশি ছিল। শাহজাহান কেমন করে যেন সায়ন্তনির প্রেমে পড়ে গেলো। আমি আজকের মতোই তখনও ক্লাসের নিরীহতম ছাত্র ছিলাম, আর ছিলাম ক্লাসের সেকেন্ড বয়। নবম শ্রেণীতে উঠবার পর জানতে পেলাম শাহজাহান ক্রমাগত ‘ছ্যাঁকা’ খেতে খেতে তামা হয়ে গেছে; এটা আবার আমি জানলাম কীভাবে- স্বয়ং সায়ন্তনি একদিন আমার কবিখ্যাতির কথা জানতে পেরে কবিতার খাতাটি দেখতে চাইলে আমি যখন কৃত্রিম অথচ আপাত-সহজাত রাগ প্রকাশের মাধ্যমে কোনো কবিতাই অবৈধ কাউকে দেখানো সম্ভব নয় জানিয়ে আমার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছিলাম, তখন আচমকা পুরো ক্লাসের সামনে আমার গালে একটা মস্ত কামড় বসিয়ে সায়ন্তনি বলেছিল, ‘তর কবিতার খ্যাতা পুড়ি।’ তারপর পুরো একবছর সে আমার সাথে কথা বলে নি। ক্লাসের দুষ্টের শিরোমণি ছেলেগুলো আমাকে ‘কাপুরুষ’ বলে খেপাতো, যেহেতু আমি সায়ন্তনির শরীরের কোনো মোক্ষম স্থানে অনুরূপ কোনো দংশন বা মর্দন করি নি। ও আরেকটা কথা, আমি অষ্টম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম, শাহজাহান প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে পরীক্ষায় স্মরণকালের ভয়াবহতম খারাপ নম্বর পেয়ে অনেক পেছনে চলে গেলে ওর জন্য আমার প্রচুর মায়া হচ্ছিল। এরপর প্রেমের অমোঘ বিধান মতে যা হবার তাই হলো- আমার আর সায়ন্তনির মধ্যে এক অপ্রতিরোধ্য প্রেমের জন্ম হলো। আমরা হাবুডুবু খেতে খেতে অকূল সমুদ্রে ভাসতে লাগলাম। প্রত্যাখ্যাত হয়ে শাহজাহান কী যে যন্ত্রণার মধ্যে ছিল, যারা ভুক্তভোগী কেবল তারাই জানেন।

‘অন্তরবাসিনী’র রসাত্মক প্রেমকাহিনি শুনতে শুনতে শাহজাহান পুড়ে যাচ্ছিল। সায়ন্তনির কথা তুলতেই যেন আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো ঘটনা ঘটে গেলো। নিজের আরাধ্য প্রেমিকা ধরা না দিয়ে অন্যের কব্জাগত হলে সেই কাহিনি শুনতে কারই বা সহ্য হয়? শাহজাহানের হৃদয় তো আর পাথরে গড়া নয়।

ঐদিন রাত একটার সময় শাহজাহানের কল পাই। যেন কিছুই হয় নি, এমন ভাবে বলে, ‘কী রে, তুই কই থাকস? বাসায় থেইকা চইলা গেলি ক্যান?’ শাহজাহান আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। ও আমার সাথে রাগ করে এমনটা আমি কখনো ভাবি না। কিশোর বয়সের সেই উদ্দাম প্রেম কৈশোরেই নিভে পানি হয়ে গিয়েছিল; তা মনে রেখে রূপবতী স্ত্রীর সামনে এভাবে বিস্ফোরিত হওয়া মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। কিন্তু আমি ওর বাসা থেকে চলে আসার পর হয় ভাবীর ভর্ত্‌সনায়, অথবা নিজের বিবেকের তাড়নায় শাহজাহান নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় এবং আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।

‘তর নভেল শেষ করবি কবে?’ শাহজাহান জানতে চায়।
‘আরও কয়েকদিন লাগবে, কেবল তো মাঝপথে।’ আমি বলি।
‘জলদি শেষ কর। পুরা কাহিনি পড়ার জন্য ছটফট করতেছি।’
আচ্ছা, এই যে আমি প্রায়ই বলে থাকি আমি খুব নিরীহ, গোবেচারা টাইপের মানুষ, কথাটা মনে হয় ঠিক না। মাঝে মাঝে আমার ত্যাঁদড়ামি দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই- এ কাজ কি সত্যিই আমি করেছি, নাকি আমার মগজে ঢুকে পড়া জনৈক বাঁদরের কাজ এগুলো?

তিন দিনের মাথায় বড় একটা অধ্যায় সম্পূর্ণ করে খুশিতে নাচতে নাচতে শাহজাহানের বাসায় উপস্থিত হলাম। ভাবী এসে একটা ভুবনমোহিনী হাসি ছড়িয়ে সামনে দাঁড়ালে মনে হলো, আমি নেই। শাহজাহান স্কুল থেকে ফিরে নি, ওর দুই বাচ্চার ছুটি হবে মনে হয় আরও অনেক পরে। নির্জন দুপুরে একলা ঘরে এই প্রচণ্ড রূপবতী নারী যখন হাসিমুখে আমার থেকে মাত্র ১২ আঙ্গুল দূরে খাটিয়ার উপর পা দুলিয়ে বসে পড়লেন, মনে হলো আমি নেই- না, আমার তখন সর্বাঙ্গ কাঁপছে- ভাবীর মনের গোপন ইচ্ছেটা মনে হয় আমি টের পেয়েছি। ১২ বছরের ক্ষুধার্ত বাঘ সামনে শিকার পেলে শক্তিতে দুর্দমনীয় হয়ে পড়ে। আমি আলগোছে একটা হাত উঠিয়ে ভাবীর শরীরে স্থাপন করবো, এমন সময়ে ভাবী নিজেই একটু এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলেন। ‘এ কী, শরীরে এতো জ্বর কেন?’ বলে বুকের বোতাম খুলে হাত ঢুকিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপলেন। ভাবী জানেন না আমার বুকে তখন কী ঝড়। আমি মোলায়েম ভাবে বাম হাত বাড়িয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরলে ভাবী বলেন, ‘কী বাচ্চা পোলাপানরে বাবা, এতো অল্পতেই ভাইঙ্গা পড়ন লাগে? হাঁইটা আসলেন কেমনে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, শক্ত কইরা ধইরা দাঁড়ান। খাটের এই কিনারটায় শুয়ে পড়ুন। আমি বালতি নিয়ে আসছি মাথা ধুয়াইয়া দিতে।’ আমি চিৎ হয়ে সটান শুয়ে আছি। ভাবী আমার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছেন। শান্ত শরীরের তখন কোনো উত্তাপ বা উত্তেজনা নেই; চোখ দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। আমি যখন সাত-আট বছরের বালক, জ্বর হলে আমার মা এভাবে খাটিয়ায় শুইয়ে আমার মাথায় পানি ঢালতো। আমি অনুভব করলাম, ৩০ বছর আগে মৃত্যুবরণকারিণী আমার মা অদৃশ্য থেকে নেমে এসে আমার মাথায় পানি ঢালছে। ‘হইছে ভাবী, আর না।’ বলেই আমি শোয়া থেকে উঠে পড়ে মাথা মুছে ভাবীকে বলি, ভাবী, আমার মাথায় একটু হাত রাখুন তো। ‘কী হইছে’ বলে ভাবী তার ডান হাতটা আমার মাথায় রেখে আলতো করে চুলে বিলি কাটেন, আমি চোখ বন্ধ করে তার পেটের মধ্যে মাথা লুকোই- দ্রুত ছুটে চলছে এক টগবগে ঘোড়া- দীর্ঘ কদম ফেলে- অনেক দূরের পথ পেরিয়ে নির্জন এক বৃক্ষের তলায় আমার মা জননী মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি ৩ বছরের শিশুর মতো লাফ দিয়ে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।


ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সত্যিই জ্বর উঠেছে। ভাবী আর শাহজাহান আমার পাশে বসে কথা বলছে। আমি উঠে বসতেই দুজনে আমার দিকে ফিরে তাকায়। ‘একটা প্যারাসিটামল খাবি?’ শাহজাহান এ কথা বলতে বলতে হাত দিয়ে আমার গায়ের তাপমাত্রা দেখে। আমি এক লাফে খাট থেকে নেমে হড়হড় করে দরজা খুলে নিচে নেমে এসে একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডে চলে যাই। পেছন থেকে বহুদূর অব্দি শুনতে পেলাম শাহজাহান ডাকছে, ‘আরে ঐ ছ্যামড়া, শোন শোন, এই জ্বরের মধ্যে কেওই এইভাবে যায়?.....’


পরিশিষ্ট:

১। আমার ফেইসবুক ইনবক্সে দুটো মেসেজ:

ব্লগার এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল বর্ণা: ভাইয়া, আমার কথা মনে হয় ভুলে গেছেন। ব্যথা পেলাম।

ব্লগার প্যারিসঃ oh hello viyya, i want to say that i liked your article taroka songlap, or what is its name? sorry, i forgot. however, i want to convey you special thanks for not mentioning my name any where in that article. okay viyya, stay cool and connected. bye bye

২। একদিন দুপুরে শাহজাহান ভাবীর ফোন। ‘আপনে তো সেরা লেখক হইয়া গেছেন?’ ‘কী বলেন?’ ‘যে বই আপনে লেখছেন, আপনার দোস্তের ছাত্রীরা তা পইড়া পাগল হইয়া গেছে। এই বই কবে ছাপবেন ওরা জানতে চাইছে।’ ‘খুব ভালো লাগতেছে। এতো আনন্দ জীবনে পাই নাই যে মেয়েরা আমার বই পছন্দ করতেছে। আপনি পড়েন নাই?’ ‘নারে ভাই, আমার পড়ার সময় কই?’

৩। বেশ কিছুদিন আর শাহজাহানের ওখানে যাওয়া হয় নি। একদিন সন্ধ্যায় শাহজাহানের ফোন পাই। ওর গলা ভার। ‘এইসব কী আবোল তাবোল লিখছস? লিখছস তো লিখছস পাণ্ডুলিপি ফালাইয়া গেছস আমার ছাত্রীগো কাছে।’ এবার আমার আসল মজাটা বুঝতে পারি। মনে মনে বলি, আমি যা লিখি তার সবই তো সত্য, সত্য বই মিথ্যা লিখি না। এবার তুমি তোমার ছাত্রীদেরকে সামলাও। ওদের কাছে গিয়ে বলো, তুমি জীবনেও ঐ কাজ করো নাই, মহান লেখক সোনাবীজ যা লিখেছে, তার সর্বৈব মিথ্যা লিখেছে।

গল্পটা যেভাবে শেষ হয়

আপনি ব্লগীয় নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন। অপরাপর ব্লগারদের ব্যাপারে উসকানিমূলক ও অবমাননাকর বক্তব্য সম্পন্ন আর্টিকেল লিখে পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন, যা দ্বারা ব্লগারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আপনাকে এভরিহোয়্যারইন ব্লগ থেকে ব্যান করা হলো।

- ব্লগ কর্তৃপক্ষ



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫০
৪৫৬ বার পঠিত
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হল কোন উদ্দেশ্যে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৯

আমার ধারণা চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য। ভালো উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। চিন্ময় ব্রহ্মচারীর কথা বার্তা আমার ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অসমাপিকা, ২২শ অধ্যায়

লিখেছেন মেহবুবা, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬


২১ অধ্যায়: Click This Link

তোমাকে বলেছিলাম
----নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
"তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিন্দুরা কেন ভারতে যায়?

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩২



দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২
×