somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আতঙ্ক : প্রতিদিন যেভাবে যায়

১৪ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক আগে ঝড় হয়েছিল, বিদ্যুৎ নিভে গেছে ঝড়ের প্রথম ফুৎকারেই
অন্ধকার আর বীভৎস গরম
ল্যাপটপের দম ফুরোবার আগে অন্ধকার হাতড়ে কিছুই খুঁজে না পেয়ে শুধু হতাশার সাথে মল্লযুদ্ধ করি। ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি অগুনতি অস্ফুট রাশি নিউরনে কিলবিল করে; লিখবার মতো একরত্তি ধৈর্য্য অবশিষ্ট নাই আমাদের তল্লাটে
ধুঁকধুঁক বুক বরাবর তাক-করা অদৃশ্য নলের মুখে ঘুমিয়ে পড়লাম
ঘুম নয়, ঘুমোবার ভান করি
এমন অসময়ে কেউ কি ঘুমোতে পারে?
দোয়া করবেন যাতে এ গরমের ভেতরও একটা ভালো ঘুম হয়
ভালো একটা স্বপ্ন দেখি
ঘুমে থাকা সময়ে যেন বিদ্যুৎ চলে আসে
সবচাইতে বড় কথা, ঘুম থেকে যেন আবার জেগে উঠি
আমাদের কোনোকিছুরই তো নিশ্চয়তা নাই

যে ছেলেটা সকালে ঘর থেকে বের হলো, যে মেয়েটা, যে বাবা, জননী, কর্মজীবী মানুষগুলো, তাঁরা কেউ জানেন না ঠিক ঠিক গন্তব্যে পৌঁছুবেন কিনা, নীড়ের পাখির মতো ঠিকঠাক ঘরে ফেরা হবে কিনা সন্ধ্যার আগে-ভাগে

দুরন্ত যৌবনে ছেলেকে কি আটকে রাখা যায় ঘরে? মাঝে মাঝে সবান্ধব উধাও হয়ে যায় ওরা, যৌবনের ধর্মের মতো; চারদিকে গণপিটুনিতে নিরীহ যুবকের হত্যা, মানুষকে পিটিয়ে মারার দৃশ্য উপভোগ করতে বর্বর মানুষের কৌতূহলী ভিড়, নিরপরাধী মেধাবী ছাত্রের সারা গায়ে পুলিশের নির্মম প্রহার, চাপাতির ঘায়ে কুপিয়ে ফালি ফালি করা পা ও পৃষ্ঠদেশ, মিথ্যা মামলা, দুর্বিষহ হয়রানি; যেভাবে খাদে পড়ে ৪৪টি তরতাজা কচি প্রাণ ঘাতক ড্রাইভারের হাতে বলি হয়, ট্র্যাকের চাকায় বিকট শব্দে মাথা ফেটে মগজ ছিটকে পড়ে পিচগলা পথে; হায়, ছেলেটি ঘরে ফিরছে না কেন? কাঁপতে থাকে বুক- হয়তো বেপরোয়া পুলিশ কিংবা নিষ্ঠুর গ্রামবাসীর পাশবিক হাতে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা গেছে আমার যক্ষের ধন

ছোটো ভাইটা বাড়ির সামনের রাস্তায় চিহ্নিত খুনির হাতে মুহূর্তে ডেডবডি হয়ে গেলো কিনা, কে জানে কখন চোখের পলকে বোনের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুমণির বুক ঝাঁঝরা করে উড়ে গেলো সন্ত্রাসের বুলেট; মেয়েটা কি স্কুল থেকে ফিরলো? দশ মিনিট দেরি হলেই দুরুদুরু করে বুক- অপহরণ ও গণধর্ষণের পর নৃশংস শিরোচ্ছেদ- কতো স্বাভাবিক নিয়মে ইদানীং এসব অহরহ ঘটে যায়

গৃহিণী ইলেকট্রিক শক খেলো না তো জরাজীর্ণ ঘরে- ছোটো ছেলে ছাদের কিনারে ঘোরাঘুরি করে- অফিসে মন বসাবো কীভাবে যখন এতোসব অলুক্ষণে ভাবনায় সারা সময় ত্রস্ত থাকি- এ বুঝি আরেকটা দুঃসংবাদ নিয়ে কেউ দৌড়ে এলো

- কাল সকালে চাকরিটা থাকবে তো?

এভাবে নিত্য তাড়া করে দুরন্ত এক ষাঁড়, অলঙ্ঘ্য আতঙ্ক যার নাম;
প্রতিটি পঞ্চবর্ষে মহান উৎসবের ভেতর যাঁদেরকে বরণ করি অতিশয় স্বস্তির আশ্বাসে, তাঁরা এ শ্বাপদ ষাঁড়ের শিং ও পা ভেঙে গুঁড়ো করে আমাদের জীবনে এনে দেবেন আরাধ্য সুখ ও শান্তি-
হায়, তাঁরা গালভরা হাসিতে 'কম' সেবনের নসিয়ত বয়ান করেন,
চশমার রঙিন কাঁচে দেখেন এ দেশের জীর্ণ, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটও বিলকুল ঠিকঠাক,
আইন-শৃঙ্খলা আগেকার যে-কোনো সময়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর;
হাজার হাজর প্রাণঘাতের পরও সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাসে তাঁরা বলেন
বেজায় সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন, আর পরীক্ষা ছাড়া ১০ হাজার ঘাতকের হাতে তুলে দেন মানুষ খুনের লাইসেন্স, আরো ২৫ হাজারের জন্য দাবি তোলেন;
হায়, তাঁরা নিজেরাই কতো ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম, ভেবে ভেবে অসহায় অন্তরে নিয়ত খুন হতে থাকি!

ভীষণ আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে আরো একটা দিন যদি যায়, কতোই না ভাগ্য!

২৫ এপ্রিল ২০০৯/ ১৪ আগস্ট ২০১১

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×