চার দেয়ালে বন্দী এ জীবন। প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুম থেকে ওঠা, নাস্তা করা, কিছুক্ষন পত্রিকা নিয়ে বসে থাকা। এরপর জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে পরা। সব কাজ শেষে দিন ফুরালে বাড়ি ফেরা। এরপর ফ্রেস হয়ে নাস্তা করা, কিছু কাজ বাকি পরে থাকলে তা শেষ করা। রাতে কিছুক্ষন টিভি দেখা এবং প্রেয়সীর সাথে মিষ্টি আলাপ করা। এরপর ঘুমে চোখের পাতা লেগে এলে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। পরদিন আবার ঘুম থেকে উঠে একই ভাবে দিন পাড় করে দেওয়া। হয়তো মাঝে মাঝে চার দেয়ালের বাইরেও যাওয়া হয়। কিন্তু চোখের পলক ফেলতেই তা শেষ হয়ে যায়।
পিচঢালা পথে আকাশ পানে তাকিয়ে আমার অবিরাম হেটে চলা। আকাশকে আমার বড়ই ভালো লাগে। কিন্তু এতো বাড়ি ঘরের ভিরে আকাশটাও মাঝে মাঝে দেখা হয়ে ওঠে না।
আকাশটা আজকাল কেমন যেন দূষিত হয়ে পরেছে। ওর ভিতরে কেমন যেন একাটা হাহাকার ভাব টের পাই। যেন আমার সাথে রাগ করে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
এতো রাগ কিসের তোর?
অনেক বার প্রশ্ন করেছি তাকে। কিন্তু একবারও উত্তর দিল না। আকাশের অভিমান যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।
মাঝে মাঝে মনে হয় আকাশের মনটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছে। নইলে মানুষের এতো দুঃখ-কষ্ট, এতো অধপতন, নির্বিচারে হত্যা, চুরি-ডাকাতি, খুন, ধর্ষন, নৈতিকতার অবক্ষয় দেখে আমার আকাশটা ঠিকই কাঁদতো।
আবার মানুষকে নির্মল আনন্দ দেওয়ার জন্যও মাঝে মাঝে সুখের অশ্রু বর্ষন করতো।
কিন্তু আকাশের মনটা ঠিক যেন পথর নয়। মাঝে মাঝে কান্না আটকে রাখতে না পেরে হটাৎ হটাৎ করে ঠিকই কেঁদে ওঠে।
আগে দূষিত-বিষাক্ত বাতাসে হাটতে আমার ভালো লাগতো না। এখন সবকিছুই কেমন যেন গা-সহা হয়ে গিয়েছে। নিকোটিন, যানবাহনের বিষাক্ত ধোয়া মিশ্রিত বাতাসে হাটতে এখন আর মন্দ লাগে না।
তবে রাতের আকাশে চাঁদটার কোন পরিবর্তন হয় নি। চাঁদ এখনও তার অতুলনীয় সৌন্দর্য নিয়ে আকাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
রাতে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু ওর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই চাঁদের সৌন্দর্যও কেমন যেন ফিকে ফিকে লাগে। সাথে সাথে ওকে ফোন দিয়ে বললাম,
“জানো?
মুগ্ধ নয়নে আমি দেখছি আকাশকে, আমি দেখছি রাতের আকাশে জ্বলে থাকা চাঁদকে।
কিন্তু চাঁদের সৌন্দর্যও আজ তোমার সামনে ফিকে পরে যাচ্ছে।”
মাঝে মাঝে সবুজ দেখার জন্য বুকটা কুকড়ে ওঠে। কিন্তু সবুজ পাই কোথায়?
ইচ্ছে করে শিশির ভেজা মাঠে খালি পায়ে হাটতে। মাঠে শুয়ে একদৃষ্টিকে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে। আকাশের বিশালতা দেখে মুগ্ধ হতে।
ইচ্ছে করে নির্জন নদীর তীরে একা একা বসে থাকতে। নদীর বুকে ঢিল ছুড়বো আর রবি ঠাকুরের গান গাইবো।
“এতো দিন যে বসে ছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে,
দেখা পেলেম ফাল্গুনে।”
কতো বছর হয়ে গেল নদীর বুকে সাতার কাটা হয় না, খোলা মাঠে দৌড়ানো হয় না, গাছ থেকে আম পেড়ে খাওয়া হয় না, বরফপানি-কানামাছি, ছোয়াছুয়ি খেলা হয় না। দাদুর হাতের পান খাওয়া হয় না, দাদার সাথে নামাজ পড়তে যাওয়া হয় না। আজ কেন জানি এ সবকিছুই একসাথে করতে ইচ্ছে করছে।
....
.........
................
.......................
...................................ধুর মোবাইলটা বেজে উঠলো। আরএকটু ঘুমাতে পারলে মন্দ হতো না। স্বপ্নটা আরএকটু দেখতে ইচ্ছে করছিল। আবার সেই ব্যস্ত যান্ত্রিক জীবন আর আমার অবিরাম পথচলা। এইতো জীবন।