ডিঙ্গি নৌকা(প্রথম কিস্তি)
ডিঙ্গি নৌকা (২য় কিস্তি)
।।৪।।
একটা লম্বা দীর্ঘ নিশ্বাস নাইমা আসে নদর আলীর। সে মুখে কোন উত্তর করেনা। মেনোকা জানে এর কোন উত্তর নদর আলী দিতে পারবেনা। তবুও প্রশ্ন কইরা সময় পার করা আর কি? জল যেমন তেলের সাথে মিশেনা তেমনি জলের সাথে ডাঙ্গারও মিল হয় না। জল চিরকালই নিচের দিকে গড়ায়। ডাঙ্গা জলে টুই টুম্বর হয়, রুপ যৌবন ফিরায় কিন্তু জল ধারন কইরা রাখে না। এই নিয়মের কোন ব্যতিক্রম কোন কালেই ঘটে না।
দড়ির বাধনটা খুইলা দিয়া মেনোকা চইরটা টান দিয়া উঠায়া পিছন দিকে নৌকা ভাসান দেয়। একটু দক্ষিনে গিয়া পশ্চিম দিকে আগাইতে থাকে। নদর আলিরে ইশারা করে, ভিতরে বইসা থাকার জন্য। চইর দিয়া দুইটা ভর দেওয়ার পরই চইরটারে ছইয়ের উপরে রাইখা নৌকার মাথায় পা ঝুলাইয়া বইসা পড়লো মেনোকা। নৌকা এইবার আপন গতিতে চলতাছে। কিছুদুর যাওয়ার পর একটা নৌকার কাছা কাছি গিয়া ওই নৌকার মাথায় ধইরা ফেলায়। এই নৌকাটা একটু ধাক্কা খায় আর যে নৌকাটার ধরছিল সেইটা পশ্চিমে বাকা হইয়া গেছে। এরপর দুইটা নৌকাই থাইমা যায়। ভিতর থেইকা একটা মেয়েলি কন্ঠ জিগাইলো কেডা?
নিচু স্বরে মেনোকা উত্তর দেয়- মনষা আমি শঙ্খিনী। তোর লগে কেউ আছে?
হ আছে। এট্টু বয়....
এইবার অপেক্ষায় পালা। মনষা নতুন কাজ করে কিনা তা জানার অবকাশ নাই। এইটাই সেই নতুন মাইয়া কিনা তাও জানা নাই। এখন মেনোকা আর নদর দুইজনই মনষার জন্যে অপেক্ষা করতেছে। মুলত দুই জনই মনষার জন্য অপেক্ষায় রইছে কিন্তু তাদের চিন্তা ভাবনা প্রয়োজন আর উদ্দেশ্য ভিন্ন। জগতের সকলেই এমন। সকলের কাজের ধরন প্রায় এক রকম হইলেও পথ চলার গতি আলাদা, ভাবনা বাসনা, চিন্তা আলাদা। শুধু একই রকম বাতাস আর জলের গাহনে মুগ্ধ হয় এই টুকুই যা পার্থক্য।
বেশ কিছুক্ষন পরে ভিতর থেইকা মনষা ডাকলো, শঙ্খিনী আয়
মেনোকা নৌকা ছাইড়া মনষার নৌকায় ছোট্ট লাফ দেয়। দুইটা নৌকাই হালকা দুইলা উঠছে। তার নৌকার দড়িটা মনষার নৌকায় কাঠের সাথে বাইন্ধা ছইয়ের ভিতরে ঢুইকা পড়ে। ভিতরে দুইজনের কি কথা হইছে বাহির থেইকা শুনতে পাওয়া যায় না। এমনকি নদর আলী নিজেও কিছুই শুনতে পায় না। নদর আলীর মনটা খুশিতে ভইরা উঠল যখন দেখলো মেনোকা মনষারে নিয়া নৌকার ভিতরে চইলা আসছে। মনষার বয়স কত হবে তা নজর আলী ঠিক বুঝতে পারে না তবে মেনোকা বলছিল তার চাইতে কম। মাইয়াটা মেনোকার চাইতে শুকনা। গায়ের রং একটু বেশী ফর্সা মনে হইলো। এইসবের কিছুই তার মাথায় আসতেছে না, কেবলই নতুন একটা মাইয়া আসছে এই খুশিতে নদর শরীরের অস্থির উত্তেজনায় চিকন ঘাম দিয়া আসছে।
মনষা নদরের মুখোমুখি বইসা ঠিক তার মুখের দিকে তাকায়। হারিকেনের আলোতে মুখের উপর কপালের ঘামের রেখা চিক চিক কইরা উঠছে।
মনিষা মেনোকার চাইতে মুখ চটা। কি নদর বাবু। ঘামতাছেন কেন?
নদর একটু লজ্জা পায়। কই নাতো
নাতো কইলেই হইবো। আমি ঠিকই বুঝতে পারি। আমার নাম শুইনাই ঘামতাছেন দেখলেতো মইরাই যাইবেন। বইলাই এক টানে বুকের ওড়নার মত চাদরটা টান দিয়া ফালায়া দেয়। ধবধবে সাদা শরীরের উপরের কালো অর্ন্তবাস দেইখা ধক কইরা উঠে নদর। বার বার সামনে দিকে তাকানোর চেস্টা করতেছে কিন্তু তাকাইতে পারতেছেনা। মনষার নটিনি হাসি, বুকের আদল বুকের ভাজ সব কিছু দেইখা তার শরীরের ঘাম আরো বাইড়া গেছে।
কাছে আসেন নদর বাবু। বইলা মনিষা নিজেই তার কাছে আগায়া গেলো। মেনোকা তার পাশে বইসা মুচকি মুচকি হাসতেছে। নদরের গালে হাত বুলাইয়া জিগায় পছন্দ হইছে?
নদর লজ্জামাখা ভঙ্গিতে হাসে। মুখে কোন উত্তর করেনা। মেনোকা দেখলো নদর আলি ঘামে ভিজা চুব চুবা হয়া গেছে। যাও মনষার সাথে তার নৌকা চইলা যাও। তাও নদর আলী কোন উত্তর করেনা।
মনষার চোখে মুখে তখন নটিনী হাসি। তোর নাগর লজ্জা পাইছে। আসো নাগর কাছে আসো বইলা নদরকে জড়ায়া ধরে। নদর আলীর মনে হইলো, মনষা মেনোকার চাইতেও সুন্দরী। শুকনা হইলে মনষার শরীর মেনোকার চাইতেই নরোম আর তুলতুলে। নদর মনষার পিঠের দিকে হাত নিয়া বুকের সাথে চাপ দিয়া মনে হইলো মনষার তার বুকের সাথে মিশা যাইতেছে। মনষা যেন মেনোকার চাইতেও বেশী কোমল আর বেশী আন্তরিক। যদিও তাদের আন্তরিকতার পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা নদর আলীর নাই এইটাও সে জানেনা। সে মনে মনে মেনোকার প্রতি খুশিই হইলো লাগলো। অবশেষে মুখ খোলে নদর আলী।
তোমার এনাম কত সুন্দরী।
বাহ তুমিতো দেহি বানিজ্য ভাল বুজ নদর আলী। শুরুতেই আমার ইনাম নিয়া কথা তোল
ইনামতো দিতেই হবে। আগে থিকা জাইনা লইলাম। যদি টেকায় শর্ট পরে।
পড়বোনা। আইজ আমার সইয়ের ইচ্ছা পুরন করুম। তুমি নাকি আমার সইয়ের বান্ধা ভাতার। বহুদিন ধইরা নিয়মিত আইসো। সকলের চাইতে বেশী ইনাম দেও। তাই আইজ সই তোমারে খুশি করনের লাইগা আমারে আনছে। আইজকা তোমারে আনন্দ দিয়া মাইরা ফালামু নদর আলী।
খিল খিল কইরা হাইসা উঠে দুই জনই। সহজাত ভঙ্গিতে হাসে নদর আলী। সে মনিষা শরীরের উত্তাপ টের পাইতেছে। নরোম তুলতুলে শরীর। বুকের চাপ ছইড়া দিয়া হাত আগায়া যায়। হাত মাথা ঘাড় ছাড়াইয়া বুকের উপর আইসা থামে। হালকা চাপ দিতেই আরো জোরে হাসে মনষা। কি নদর আলী কেমন লাগে?
নদর আলী উত্তর করেনা হাত চালাইতে থাকে। পাশাপাশি বইসা থাকা দুইজনের মধ্যে মিল অমিল খুইজা বাহির করে। দুইজনেরইর বুক পেটের দিকে তাকায় নদর। আনন্দে উত্তেজনায় আতিশয্যে সে কেমন অতি মাত্রায় পুলকিত হইতে থাকে।
মেনোকা জিগায়, চুয়ানি চলবে নদর?
না
আর না কেন? আইজ তোমার আনন্দের দিন। একটু চুয়ানি না খাইলে মৌজ করবা কেমনে?
মেনোকা উইঠা গিয়া মনষার নৌকার ভিতর থিকা তিন গ্লাস চুয়ানি আর একটা পানির বোতল নিয়া আসে। একটা গ্লাস নিয়া মনষা নিজে চুমুক দিয়া নদরের মুখের দিকে আগায়া দেয়। মাস খানিকের পচা ভাতের পানির মত একটা ভয়ানক গন্ধ নদরের নাকে আইসা ধক কইরা ধাক্কা দেয়।
মেনোকা নদরের গ্লাসটা আগায়া দেয়। তিনজনই আস্তে আস্তে আয়েশ কইরা চুয়ানির গ্লাসে চুমুক বসায়। চুয়ানি শেষ হওয়ার আগেই নদরের মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করতে থাকে। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে। আবার শরীরেও কেমন জানি গরম লাগা শুরু করতেছে। মেনোকার কোলে শুইয়া পরে নদর। এক হাত মেনোকার পিঠ আর অন্য হাতে মনষার বুকের উপর। হাত দুইটা ক্রমশ অবশ হইয়া আসে। শার্টের বোতাম খোলা, বুকটা তখনও ঘামে ভিজে জবজবা হয়া আছে। মেনোকা হাত বুলায় তার বুকে, পেটে। হাত চইলা যায় লুঙ্গি ভাজে। খুট খুইলা দিয়া নিচের দিকে নামায়। তার সুখ দন্ডটি তখন আর আগের মত নাই। ডোরা সাপের মতন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হইয়া দুই উরতের মাঝখানে লুকায়া যাইতেছে। এক সময় নদর আলির নড়া চড়া বন্ধ হইয়া গেলো।
দুইজনই বার দুয়েক তারে ডাকা ডাকি কইরা কোন সাড়া পাইলোনা। নদর আলী অচেতন হইয়া গেছে। ধাক্কা দিয়া কোল থেইকা ফালায়া দেয় মেনোকা। নদর আলী কিছুই বুঝতে পারেনা। তার কোন নড়া চড়া নাই।
খবিশের বাচ্চা খবিশ। দুইটা মাস আমারে জ্বালায়া খাইছে। আমারে অন্য কাউরে নিতে দেয়না কিন্তু নিজে বন্ধু নিয়া আসে। তার জন্যি বাড়তি পয়সাও দেয়না।
নৌকার সামনে পা ঝুলাইয়া বইসা আছে মেনোকা আর মনষা বৈঠা চালায়া নৌকা নিয়া তিতাসের দিকে যাইতেছে। নৌকায় দুই পাশে পানি কাইটা যাওয়ার শব্দ আর ছন্দের তালে তালে মৃদু লয়ে বৈঠা পড়তেছে জলে জপ জপ কইরা। কোড্ডা রেল ব্রীজের নিচে আইসা একটা পিলার কাছে দাড়ায়। এই দিকটায় কোন জাইলা থাকেনা। ওরা সবাই থাকে বিলের পানিতে। এমন গভীর পানিতে মাছ ধরা পড়েনা। দক্ষিন পুর্ব কোণাকুণি আখাউড়া রেল জংশনের বাতি দেখা যাইতেছে। ওদিকে পত পত কইরা উড়তেছে কল্লা শহীদের মাঝারের নিশান গুলা। মাজারের উপরে একটা বড় বাতি আছে তার আলোতে নিশান উড়ার আলো আধারির খেলাটা বেশ সুন্দর দেখাইতাছে।
দুইজনই ভিতরে ঢুইকা নদর আলির অচেতন দেহটারে টাইনা ছই থিকা বাহির করে। মাথায় দিকটায় মেনোকা আর পায়ের কাছে মনিষা, দুইজন মিলা নদর আলীর দেহটারে টাইনা একবারে নৌকায় কানার কাছে নিয়া আসে। গায়ে শার্টের বোতাম খোলা। ছেছড়াইয়া আনাতে নদরের লুঙ্গি খুইলা ছইয়ের ভিতরে রয়া গেছে। মনিষা তার দিকে তাকায়া হাসে। নিথর নিরব অচেতন নদর আলী, অচেতন তার শরীর মন, এমনকি তার সুখ দন্ডটা টাকি মাছের মাথার চাইতেও ছোট হইয়া যেন গর্তের ভিতরে লুকাইতেছে।
ঝপ কইরা একটা শব্দ হয়। নদর আলীর অচেতন দেহটা ধীরে ধীরে তিতাসের জলে তলায়া যাইতেছে। তার জ্ঞান তখনো ফিরে নাই। আর ফিরছে কিনা তাও আমরা জানিনা। মেনোকা ছইয়ের ভিতর থিকা লুঙ্গিটা আইনা তিতাসের জলে ছুইড়া মারে।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯