।।১।।
বিগত কয়েক বছর ধইরা বর্ষা বেশ দেরীতে আসে। এক সময় ঋতু হিসাব কইরা আষাঢ়ের মেঘের ঢল, পানির উদ্দাম নৃত্য চলতো। এখন সেই সব দিন পুরাতন হইয়া গেছে। শ্রাবন শেষ কইরা ভাদ্র মাসে আইসাও ঝুম ঝুম শব্দে আকাশ আন্ধার কইরা বৃস্টি নামে। সময়ে অসময়ে কারণে অকারণে, মুষল ধারে কখনো ছেড়া ছেড়া। মনে হয় খেলতে গিয়া আহত শিশুটার মত কিছু ক্ষন পর পর একটু একটু কান্নার ঢেউ তুলে। চোখের কোনায় এক ফোটা জল কিছু দুর নাইমা আটকাইয়া থাকে। দিন গুলাও সেই রকম একদিকে জল অন্যদিকে কাদা। মাথার উপরের আকাশে ঝলমলে রোদ আবার কোথায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির তুষ। আকাশের গায়ে দলা দলা মেঘ বাতাসের সাথে মিতালী কইরা বিষন্ন হইয়া বিক্ষিপ্ত উড়াউড়ি করে। বাতাস কিংবা মেঘ উভয়েরই গতির ধরন বুঝা বেশ মুশকিল।
ভাদ্র মাসের শুরুতেও তিতাস নদী তার যৌবন ধইরা রাখে। নদীর দুই পার ছাপাইয়া কুড়ুলিয়ার বিল ফুইলা ফাইপা যুবতী নারীর গর্ভবতী পেটের মতন ঢাউস হইয়া উঠে। বিল আর নদী তখন আলাদা কইরা চিনবার কোন উপায় থাকেনা। নদীর উপরে শয়ে শয়ে পাল তোলা নৌকা বাতাসের সাথে মিতালি কইরা জলের উপর নাচন দেখায়। কোনটা খরম কল্লা শহীদের ঘাট হইতে বি বাড়ীয়া আনন্দ বাজার ঘাটের দিকে ছুটে। কোনটা পাট বোঝাই কইরা অজানা হইতে আসে আবার অজানায় হারাইয়া যায় আবার কোন কোন নৌকা ঠায় দাড়াইয়া থাকে। সকাল হইতে বিকাল এমনকি রাত মধ্য রাত অব্দি। কোন কোন নৌকা সারারাতও থাকে। এই গুলা আসলে মাছ ধরার নৌকা। পোয়াতি নদীর জলের ভিতরে লাখ লাখ কোটি কোটি মাছের পয়দা হয়। সেই মাছ গুলা তাদের চলন বলন গতিপথ বদলায়। পানির নিচের এই চলন জেলেরা ঠিকই বুঝতে পারে। তাই তারা দলে দলে নৌকা আর জাল নিয়া জলে ভাসান দেয়।
মাত্র কিছু দিন আগে খরমপুর কল্লা শহীদের মাঝারের ওরশ শেষ হইছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান হইতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। ওরশকে কেন্দ্র কইরা খরম হাই স্কুল মাঠে মেলা বসে যেইটা চলে একমাসেরও বেশী সময় ধইরা। এইখানে নানান জায়গার নানান কিসিমের মানুষ নানান কিসিমের জিনিস নিয়া মেলার পসরা সাজায়। মাঝারের ভক্তকুলের পাশাপাশি মেলাতেও মানুষের ঢল নামে। হাজার হাজার মানুষের ঢল। কেউ কেউ মনে করে এই খানে লাখো মানুষের সমাগম হয়। আখাউড়া বাজার হইতে শুরু কইরা খরমপুর দুর্গাপুর লোকে লোকারন্য হয়া উঠে। খরমপুর মাঝার ঘাটে নোঙ্গর ফেলায় শ’য়ে শ’য়ে নৌকা। কোসা নাও, ডিঙ্গি নাও, পাল তোলা ছইওয়ালা এমনি অসংখ্য নাও। প্রতিটি নৌকা যখন ঘাটে ভিড়ে তার আগেই তার আগমনী বানী টের পাওয়া যায়। নৌকার ভিতরে বাহিরে মানুষে ঠাসাঠাসি। নারী পুরুষ শিশু সমস্বরে সবাই গান আর বাদ্যের তালে তালে ঘাটে নৌকা ভিড়ায়। তাদের কেউ ভক্ত, কেউ ব্যবসায়ী আবার কেউ কেউ আসেন কৌতুহল বশত ভ্রমনের উদ্দেশ্যে।
এর বাইরেও আরেকদল নৌকা এই কুড়ুলিয়ার বিল আর তিতাসের জলে ভাসে। তারা ঘাটে নৌকা ভিড়ায় না। এরা রেললাইনের কাছাকাছি পাড় হইতে একটু দুরে, নয়তো চান্দিনা গ্রামের আশে পাশে অবস্থান করে। এরা হইলো বাইদা। সময়ের বিবর্তনের বাইদা পরিবার গুলার অবস্থা ক্রমশই খারাপ হইতেছে। তবুও তারা তাদের পুরানো পেশা ছাড়েনা। কেউ কেউ হয়ত ছাড়ছে কিন্তু বেশীর ভাগই ছাড়তে পারেনা কারন তারা অশিক্ষিত, ফলে অন্য পেশায় যাওয়ার পথ নাই, অন্য কোন কাজ জানেনা বইলা আর কেউ কেউ ছাড়েনা পুর্বপুরুষের ঐতিহ্য মনে কইরা।
স্বজাতীর চাইতে অন্যরা মনে হয় একটু বেশী সুন্দর। এই বেদেনীরা কারো কারো কাছে সুন্দর হইয়া ধরা দেয়। এদের পেটে ভাত, পাছায় কাপড় না থাকলেও এদের গালে টোল আছে, কোমরে বিছা আছে, চলনে নটিনি ভাব আছে হাসিতে যাদু আছে আর নাকের লোলক আছেই। এই সবের টানে একদল দঙ্গল ছেলে পুলে কখনো মধ্য বয়সি পুরুষরাও বেদেনি মাইয়া গুলার পিছু নেয়। সব বেদেনি দেখতে নটি মনে হইলেও সকলে নটি না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এদের কেউ কেউ নিজেরে নটি বানাইয়া নিছে।
সন্ধ্যার পর রেললাইনের ঘা ঘেইষা বেশ কিছু নৌকা দাড়ায়া থাকে। রেল লাইনের উপরে বিক্ষিপ্ত ভাবে আড্ডা দেয় এলাকার লোকজন। জলের উপর দিয়া আসা দখিনের খোলা উদ্দাম বাতাসের টানে বিকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী পুরুষ ছেলে মেয়ে নিয়া ভীড় জমায়। সন্ধ্যা ঘনাইয়া গেলে এরা যে যার মতন বাড়িতে ফিরা যায়। তবে সন্ধ্যা ঘনাইয়া যাওনের পরেও একদল লোক যায়না। এরা রেললাইনের ঢালে, ছোট ছোট গাছের আড়ালে দুই তিনজন মিলায়া আড্ডা দেয়। ততক্ষনে বেদেনি মাইয়া গুলা নৌকার দিকে ফিরতে শুরু করে। মাথা হইতে কোমর অব্দি ঝোলানে কাপড়ের পুটলা, হাতে দাত ছাড়া ফানখ সাপের বাক্স। কারো কারো কোমরে বাচ্চা ঝোলানোর খুতি। কেউ কেউ সেই চির চেনা পুরোদস্তুর বাইদানী। কেউ কেউ এখনো ঠিক মত রপ্ত করতে পারে নাই।
যৌবনের একটা ধর্ম আছে। নারী হোক সে পুরুষ। শিশুদের যেমন ছোট বেলায় দেখতে যেমন একই রকম লাগে, ঠিক যৌবনের নিজস্ব একটা রুপ আছে। নিজের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে ছাপাইয়া যৌবনের নিজের রুপটা প্রকাশ পায়। প্রকাশ পায় এদের চলনে বলবে, কথার উচ্চারনে, চোখের ইশারায়। এমনি আলাদা পরিচয় হইতে বাদ যায়না বাইদানী মাইয়াটাও। সাজে পোশাকে বাইদানী ভাব থাকলেও চলনে ঠিক যায় না। আবার পোশাকে গেলেও সেইখানেও একটা স্বাতন্ত্র বেশ ভাল ভাবেই বোঝা যায়। এই যাওয়ার একটা আকর্ষন আছে । একেক জনের কাছে একেক রকম। কেউ রুপে মুগ্ধ হয়। কেউ একটু আধটু খুনসুটি, এদের একটু নটি নটি ভাব আর আচরনেই সন্তুস্ট থাকে। আবার কেউ একটু গভীরে যাইতে চায়। নৌকার ছইয়ের ভিতর। যেখানে বাইদানী মাইয়াটা থাকে।
নৌকার নিচে জলের তলায় নৌকার সাথে জলের যে জলকেলী হয় তার দুলুনী উঠে ছইওয়ালা নৌকায়। সেই দোলা একটু আধটু লাগে নৌকার গায়ে আর বাকীটা বাইদানীর শরীরে। কেউ কেউ মনে করে বাইদানীরা সমতলে হাটলেও এমন কোমর দুলাইয়া আকাইয়া বাকাইয়া হেইলা দুইলা হাটে এর এইটাই কারন। তারা জন্মের পর হইতে পরবর্তী নতুন জন্মে অংশগ্রহন করা এবং জন্মকে ভ্রংশতায় রুপান্তর করা পর্যন্ত এই নৌকার দুলুনিতেই থাকে। কখনো মৃদু কখনো প্রবল। জীবনের আর কিছু পাক না না পাক নৌকার দুলুনি তাদের ভাগ্যে লেখাই থাকে।
বেদেনিদের মধ্যে যে সব মাইয়ারা নটি হয় তারা একাই একটা নৌকায় থাকে। তারা সাপ আর তাবিজের পুটলি নিয়া বাইরে যায়না। এদের নৌকায় এই গুলা থাকে ঠিকই কিন্তু তা কেবল মাত্র পুর্বপুরুষের নিয়ম রক্ষা করার তাগিদে। দিনের বেলায় পাড় হইতে দুরে চইড় বসাইয়া তাতে নৌকাডারে দড়ি দিয়া বাইন্ধা ঘুমায়া থাকে। দিন গড়াইয়া যখন রাইতের আন্ধার নামতে শুরু করে ততক্ষনে এদের ঘুম ভাঙ্গতে শুরু করে। গায়ে যত সম্ভব সুন্দর কাপড় পেচাইয়া মুখে হালকা পাতলা প্রসাধনী মাখাইয়া রাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ততক্ষনে সন্ধ্যা পার হইরা রাত নাইমা আসে।
।।২।।
চারিদিকে শুনশান নিরবতা। অতক্ষনে জলের উপরে থাকা নৌকা গুলারে আর পরিস্কার দেখা যাইতেছেনা। কিন্তু নৌকায় জ্বলা টিম টিমা হারিকেন গুলা দেখা যাইতেছে। কোন কোন বিশেষ অংশে দাড়াইয়া তাকাইলে মনে হবে জলের উপর কেউ আলো নিয়া মিছিল করতেছে। ছোট ছোট দ্বীপের মত বাড়ি গুলাতেই মাঝে মাঝে আলো জ্বলতে দেখা যায়। বৃষ্টিহীন আকাশের অন্ধকার রাইতের শুরুতে দ্বীপের বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে শুরু করে। কেউ কেউ একটু আগেই ফিরছে অথবা কেউ ফিরতেছে। এদের বেশীর ভাগই দিন মজুর, নয়তো জেলে। আবার কেউ কেউ একেক সময়ে একেক ধরনের কাজ করে। ঠিক সে কোন পেশায় জড়িত তা একবারেই বইলা দেওয়া সম্ভব না।
যারা বিকালের খোলা বাতাসে বেড়াইতে আসে তারা যে যার মতো ঘরে ফিরা গেছে। রেললাইনের পাশের গাছের আড়ালে কোনা কাঞ্চির ছেলে পেলে গুলা এখনো আছে। তাদের বাড়ি ফিরার টান নাই। তারা কখন বাড়ি ফিরে তা অনেকেই জানেনা। তাদের টান অন্য কোথাও। সন্ধ্যা নাইমা আন্ধার হওয়ার সাথে সাথে তাদের টানের কারণ বাহির হয়া আসে। একদিকে যেমন টানাটানি শুরু হয় তারাও টানাটানিতে সাড়া দিতে শুরু করে। অন্ধকারে কেউ কারো মুখ দেখেনা। কেউ কারো সাথে কথাও বলেনা কিন্তু সকলের টানের গতি একদিকেই থাকে, মনের অজান্তে অদৃশ্য কোন পরিচালকের হাতের ইশারায় তারা কোন প্রকার শৃংখলা না ভাইঙ্গাই চলতে পারে।
পুব পাশের নৌকাটা পাড়ের অনেকটা কাছাকাছি দাড়ায়া আছে। পাড়ের অতি কাছে হইলেও ইচ্ছা করলেই সেখানে যাওয়া যায়না। তবে এইখান থিকা কথা বার্তা বললে তা অনায়াস করা যায়। নৌকায় ছইয়ের পর্দাটা সইরা গেছে। একটা ছায়া মুর্তি মাথা নিচু কইরা বাহির হয়া আসছে। পার থিকা একজন কইলো,”আমি নদর।“ নৌকা থিকা কোন উত্তর আসলোনা। গলুয়ের উপর থিকা একটা চইর আগায়া আসলো। চইরের মাথায় নদর ধইরা টান দিতেই নৌকায় পাড়ের কাছাকাছি আগায়া আসছে। চইরটা ছাইড়া দিয়া এক লাফে নৌকায় উঠে নদর। ছায়ামুর্তির মাইয়াটা চইরটা ছইয়ের উপর রাইখা ছই ধইরা দাড়ায়া থাকে। লাফের কারনে নৌকায় একটা দুলুনি উঠে তাতে নদর বেশ দুইলা উঠে, সাথে সাথে ছই ধরতে গিয়া মাইয়াটার কাধে খপ কইরা ধইরা ফেলে। তাতে মাইয়াটা কোন প্রতিবাদ করেনা। সে মাথায় নিচু কইরা পর্দা সরাইয়া নৌকার ছইয়ের ভিতরে ঢুইকা পরে। পিছন পিছন নদরও ঢুকে ছইয়ের ভিতর।
দুই তিন জন শোয়ার মত ছোট একটা নৌকা। আদল দেখলে মনে হয় এইটা মুলত একটা ডিঙ্গি নৌকা ছিল। দিনরাত নৌকায় থাকতে হয় বইলা রোদ বৃস্টির হাত থিকা বাচার জন্য ছই লাগানো হইছে। নদরের বসতে কোন অসুবিধা না হইলেও ছইটাও বেশ নিচু। পিছনে ধাক্কা দিয়া বসা যায়না মাথা ছইয়ের উপরে আটকাইয়া যায়। অনেকটা মাঝা মাঝি জায়গায় মাইয়াটা তাদের চির চেনা ভঙ্গিতে বইসা পরে। নৌকার ভিতরটা নদরের পরিচিত তবুও স্বভাব সুলভ একবার চতুর্দিকে ঘুইরা তাকায়। মাইয়াটার পিছনে দুই তিনটা হাড়ি পাতিল তার সাথে ছোট্ট একটা এক মুখা মাটির চুলা। সাথে দু একটা ভাত খাওয়ার মেলামাইনের থালার উপর দুইটা চামচ রাখা। ডাইন পাশে একটা টাঙ্গানো দড়িতে একটা শাড়ি সাথে আরো কি সব কাপড় ঝুলানো আছে ঠিক বুঝা যাইতেছেনা। নদর যে পাশে হেলান দিয়া বসছে তার সম্মুখ থিকা একটু পিছনে দড়ি দিয়া বানানো একটা শিকা আছে। তাতে দুইটা সাপের বাক্স বাইন্ধা রাখা আছে। বাক্সটার উপরে একটা দুই মাথাওয়ালা বিন।
কি খবর শঙ্খিনী? নদর মুচকি হাসে
শঙ্খিনী মেনোকা। রাশভারী হইলেও বেশ আদুরে গলা মেইয়াটার।
হ বুঝলাম শঙ্খিনী মেনোকা। শঙ্খিনী হুনলেইতো আমার ভিতরে কেমন যেনো মুচড় মারে। আবার মেনোকা কওয়া লাগবে কেন?
অতদিন শঙ্খিনীর লগে থাইকাও তোমার ডর কাটলোনা। কিরাম পুরুষ তুমি।
তুমি জলের মানুষ। জাতি হাপের লগে তোমার বসবাস। আর আমি সমতলে ঘুইরা বেড়াই। ঢরটা ত আমারই বেশী।
কথাটা বেশ পছন্দ হয় মেনোকার। খিল খিল কইরা হাইসা উঠে । গালে টোল পড়া নটি নটি হাসি। নারী জানে ষোল কলা আর বেদেনী জানে আঠার কলা। কেউ কেউ বলে বেদেনীরা নটি হইয়া গেলে এরা কথায় কথায় ছলা করে, হাটার কদমে কদমে কলা করে। এদের ছলা কলা থিকা বাচনের পথ কারোই নাই। পৃথিবী জুইড়া যতরকম পুরুষ আছে সকল পুরুষের মনকে মোমের মতন গলায়া দেয়ার মতন ছলা কলা জানা আছে বেদেনি নটিদের।
মেনোকার বয়স মনে হয় ষোলর বেশী হবেনা। গায়ের রং হারিকেনের আলোতে ঠিক বুঝা যাইতেছেনা তবুও বোধ করি দেখতে ফর্সা না। একটু কালচে ধরনের। সারাদিন ছায়ায় থাকার কারনে রোদের কালসিটা ভাব নাই। এরা নিয়ম কইরা চুলে, মাথায়, গায়ে তেল মাখে। তাই কালচে ধরনের বসাই বাশের লাঠির উপরে তেল মাখলে যেমন চকচক কইরা উঠে মেনোকার হাত তেমনি চক চক কইরা উঠতেছে। নাদুস নুদুস বেশ স্বাস্থ্যবতী কিন্তু শরীরের কোথাও বাড়তি মেদ আছে বইলা মনে হয়না। আসলে এই বয়সের মাইয়াদের শরীরে চর্বি ভর করেনা। আর বেদেনীদেরতো নয়ই।
মেনোকার গায়ে হাতা কাটা একটা ব্লাউজ, কাধের কাছে সুই সুতার কাজ করা। পিছনে ঘাড়ের দিকে ব্লাউজের দুইটা ফিতা গিট মাইরা রাখছে। সামনের দিকে চারটা বোতাম মেনোকার বক্ষ সৌন্দর্যের সম্পদটারে নিরাপদে ধইরা রাখছে। ব্লাউজের সামনের দিকে একটু কোনাকুনি কাটা, বোতাম লাগানোর পর কাটা কোনাটা যেই খানে আইসা বুকের ভাজ শুরু হইছে ঠিক সেই খানেই শেষ হইছে। কাপড়টা একটু মোটা ধরনের। তার উপর সুই সুতার কাজ করা। নীল জমিনের উপর সাদা আর কালো সুতার কাজ। সামনের দিকে বেশ নানান রকমের কায়দা কইরা স্তনের আকৃতিতে ফুল তোলা আছে। মোটা কাপড়ের চাপে হউক আর অল্প বয়সের কারনেই হোক তার স্ফীত বুকের ভাড় বেশী মনে হইতেছেনা। তবে তা বেশ সুঢৌল বইলা মনে হইতেছে।
সুঢৌল বুকের নিচের অংশে যেখানে পেটের অংশ শুরু হওয়ার আগেই ব্লাউজের নিচের অংশ শেষ হয়া গেছে। নিচের পাইড় দেওয়া অংশে আলাদা কাপড়ের পট্টি লাগানো। মেনোকা একটু বাকা হইয়া বসলে একদিকে সেই পাইর একটু ভাজ হইয়া পেটের মাংসের ভিতরে ঢুকতে চায় অপর দিকে বুকের উপরের ভাজটা স্পস্ট হইয়া উঠে। শরীরে বাড়তি মেদ নাই বইলা পেটের মইধ্যে শরীরের কোন ভাঁজ পড়েনা। তবে নাভীর নিচের অংশ থেইকা ব্লাউজের শেষ অংশ অব্দি আড়াআড়ি রেখা ভাজ তৈরী করে। নদর আলি একবার বুকের দিকে আরেক বার পেটের হালকা ভাজের দিকে তাকায়।
পেটের ভাজের কারনে নাভীটা গোল না হইয়া মাঝে মাঝে হালকা আড়া আড়ি হইয়া উঠে। মেনোকা হাসলে তার পেটের ভাজের সাথে সাথে নাভীর আকারও পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনটাও নদর আলীর বেশ ভালা লাগে। বাম পা বিছাইয়া ডাইন পায়ের হাটু খাড়া কইরা দিয়া তার উপর কনুই ঠেকাইয়া ডাইন হাতের নখ কামড়ায় মেনোকা। ডাইন পা উচা করার কারনে পায়ে পরনের ঘাঘড়াটা একটু সইরা গেছে। হাটু থিকা উরতের কিছু অংশ দেখা যাইতাছে।
নৌকার কোনায় রাখা হারিকেনের আলোতে মেনোকার মুখ পেট হাটু নিচের উরতের অংশ বার বার নদর আলীর নজরে আসতাছে। মাঝারী সাইজের বসাই বাশের মতো সরু হাত দুইটার কব্জি থিকা কনুই অব্দি নানার রংয়ের চুড়ি মেনোকার নড়া চড়ার সাথে তালি মিলাইতে গিয়ে নিরবতা ভাইঙ্গা রিনিঝিনি শব্দে বাইঝা উঠতাছে
(চলবে)
ডিঙ্গি নৌকা(২য় কিস্তি)
ডিঙ্গি নৌকা( শেষ কিস্তি)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮