সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার খুব খুব প্রিয় একজন ঔপন্যাসিক ছিলেন। উনার "একা এবং কয়েকজন" এই উপন্যাসটা আমি এখনো পড়ি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সবচেয়ে সেরা উপন্যাস কি ? আমার মতে অবশ্যই "প্রথম আলো"।
বৃহত্তর ত্রিপুরার সমাজ জীবন, ১৯০০ সালেও যে ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র কিশোর মাণিক্যের পশ্রয়ে ত্রিপুরায় প্রকাশ্যে সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে বিধবা হিন্দু মেয়েদের কে আগুণে পুড়িয়ে মারত ব্রাক্ষণরা এই কথা গুলি মহান ঔপন্যাসিক
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহসিকতার সাথে খুব স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন উনার "প্রথম আলো" উপন্যাসে। আবার সেই সাথে বিশ্বকবি রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করতে যে অনেক বারই ত্রিপুরার মহারাজের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরায় ছুটে গিয়েছিলেন তাও খুব চমত্কার ভাবে উনি উনার "প্রথম আলো" উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। যদিও আমাদের কলকাতার দাদা বাবুরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রণাথ ঠাকুরের জীবনী আলোচনায় ত্রিপুরার রাজপরিবারের বদান্যতার কথা বলতে একদম ভুলে যান।
"প্রথম আলো" উপন্যাসের ন্যায় বাংলা সাহিত্যে এরকম ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস খুব কমই আছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “একা এবং কয়েকজন” উপন্যাসটিতে বেদের একেশ্বরবাদের কথা উনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন। পুরা বেদে যে কোথাও মূর্তি পূজার কথা উল্লেখ নাই এই কথাটাও উনি বেশ সাহসিকতার সাথে উনার "একা এবং কয়েকজন" উপন্যাসে উল্লেখ করেছেন। সূর্য আমার খুব খুব প্রিয় একজন চরিত্র। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে সূর্যের ভুমিকা আমাদের সবার মনে থাকবে। উনার একেশ্বরবাদ প্রিয়তার জন্য শিবসেনা বজরংগী ভারতের এইসব জংগী দল উনাকে অনেক বার হুমকি দিয়েছিল। মূলত একজন কবি হিসাবে সাহিত্য জগতে উনার পথ চলা শুরু হলেও পরবর্তীতে উনি একজন সফল ঔপন্যাসিক হিসাবে সমগ্র বাঙ্গালীর হৃদয়ে সারাজীবন থাকবেন। রোমান্টিকতা কি জিনিস, একটা ছেলে একটা মেয়েকে কত তীব্র ভাবে ভালবাসতে পারে মানব জীবনের এইসব সূক্ষাতিসূক্ষ ব্যাপার গুলি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উনার প্রায় সকল উপন্যাসেই নিখুত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই আজও ঈন্দ্রাণীর কথা ভেবে আমার মন খারাপ হলে আমি বিকাল বেলায় সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ থেকে অরন্যের দিনরাত্রি, বৃত্তের বাইরে, ভালবাসার দুঃখ, যুবক যুবতীরা, রুপালী মানবী কে আমার ঘরে নিয়ে আসি। জীবনের ১ম পর্যায়ে চরম দারিদ্রতার সাথে কাটলেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ জীবনটা কেটেছে চরম ঐশ্বর্য্যের মাঝে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের স্বাদকে কেউ পুরাপুরী ভাবে আস্বাদন করতে পারবেনা যদি না সে হুমায়ন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায় এই ত্রয়ী ব্যক্তিদের উপন্যাস গুলি না পড়ে।