পূর্বকথা
আমি আর আমার স্কুলজীবনের দু'একজন কাছের বন্ধু। তখন তাও দু'একজন ছিল, এখন শুধু একজনই আছে, যারা কিনা কোনদিনই সভ্য হয়ে উঠতে পারলাম না। স্কুলের ক্লাসের ঝামেলা শেষ, এই.এচ.সি পরীক্ষার দৌড়ানি আর মডেল টেস্টের নামে ফাকিবাজি- বাউন্ডুলে জীবনের সাথে পরিচয়। সেইসময়ের কথা, মাথা ছোট ছিল কিন্তু সেই ছোট্ট মাথাটাই দুনিয়ার সব অসভ্যতায় সয়লাব - নাহলে কেন ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ তরুণীদের ঘনিষ্টতম দৃশ্যগুলো দেখার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসার বাইরে ঘুরবো? সেই সময়ের ছোট্ট ছেলেগুলোর শয়তানের আশির্বাদপুষ্ট চোখগুলো খুব একটা সংযম মানতে চাইতো না। বড়দের ঘেষাঘেষি করে বসে থাকা ফুটপাথে হাটতে হাটতে হাটতে হঠাৎ চোখ আটকে যেত আঠা লেগে আটকে যাওয়া ঠোটজোড়ায়, কখনোবা ফুটপাথে কখনো হুডতোলা রিকশায়।
ছোট মাথায় এতকিছু ঢুকতে চাইতো না। বরং উল্টো যৌবনের চাহিদা মেটানো যুগলদের অসভ্যের কাতারে ফেলে দিয়ে নিজেরা উপহাস করতাম ওদের নিয়ে। হাহাহা......এদের ঘরবাড়ি নাই......রাস্তাঘাটে কিস! বাড়িঘরে যে প্রেম ভালবাসা হয়না সেই মস্তিষ্ককে এটা বোঝাবে কে? আস্তে আস্তে অসভ্য ছেলেগুলো বড় হলো, এখন আর এসব দৃশ্যে খুব একটা চোখ তুলে তাকানো হয়না। বয়সের দোষে শারীরিক ভালোবাসা গ্রহনযোগ্য হয়ে গেছে বা "বড়দের ব্যাপার" গুলো চোখে সয়ে গেছে। তারপরও বেইলি রোডে হুডের আড়ালে আটকে পড়া ঠোট দেখলে ছোটবেলার অসভ্যপনা জেগে উঠতো আবার। হিন্দী ছবি দেখি না। ইংরেজি ছবি দেখা হয় বিস্তর - তাই কিসিং-সিন পানিভাত বলা যায়। তবুও বাঙালি ললন-ললনাদের আলিঙ্গন কিংবা চুম্বন - এটা কেন যেন চোখে বেশি লাগে। ছবিতে তো ওরা অভিনয় করে, ওটা যে অভিনয়ই সেটাও বোঝা যায় ভালোমতই। ছবিতে যত এডাল্ট দৃশ্য থাকবে, ছবির কাটতি তত বাড়বে। যেমন কোন কাহিনী না থাকার পরও রিডার ছবির প্রথম বিশ-পচিশ মিনিট মনে হয় অনেকেই দেখেছে। এত কিছু দেখতে দেখতে চোখ ট্যারা হয়ে যাওয়ার পরেও সামনাসামনি চুম্বনদৃশ্য দেখে হতভম্ব হওয়া কেন? হায়রে অসভ্য ছেলের দল, দুনিয়ার আর কেউ দোষ করলে সমস্যা নাই, শুধু বাঙালির ব্যাপারে যত আপত্তি!
উঠতি বয়সী পোলাপানদের "লাভমেকিং" এর আরেকটা ভালো জায়গা সিনেমাহল, এটা আবিষ্কার করলাম কলেজে পড়ার সময়। আমারই বা দোষ কি - সিনেমা হলে তো যাই না কখনো, বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্স হওয়ার পরে সিনেমা দেখার শখ মেটানোর খায়েশ জন্মালো। স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধবের গ্রুপটা বেশ ত্যাদোড় (হাতে-মুখে লাগাম নামের জিনিসটা কখনৈ লাগানোর প্রয়োজন পড়েনাই


আমার মত অসভ্য ছেলেমেয়েদের চোখে সন্ধ্যাবেলায় টিএসসি'র পাশের ফুটপাথে ঘেষাঘেষি করা যুগলদের প্রেম ভালোবাসা যতই উপভোগ্য হোক না কেন, সেটা অন্যদের চোখে কেমন লাগে সেটা মনেহয় একটু ভাবা দরকার। ঐ এলাকায় বাচ্চাকাচ্চাদের অনেক স্কুল কলেজ আছে। বাচ্চা বলেই তারা যে সূর্য ডুবে গেলে আর বাসা থেকে বের হবে না এমন না। টিভির মায়া ফেলে ফুসফুস ভরে একটু বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে ঘরের বাইরে না বেরোলেও, আধুনিক মায়েদের আদরের আতিশয্যে আটটা সাবজেক্টের জন্য আটটা টিউটরের কাছে পড়ার জন্য এরা দৌড়ের ওপরে থাকে। এসব বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর চোখে পাবলিক-প্লেসে প্রেম ভালোবাসার নামে অসভ্যতা কিভাবে ঠেকবে সেটা কেউ চিন্তা করে কি? হাতে হাত ধরে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা সবসময়ই সুন্দর, কিন্তু সৌজন্যতার তোয়াক্কা না করে প্রেমের নামে অসভ্যতা, পাবলিক প্লেসে চুমু কিংবা শরীরের যেখানে সেখানে হাতের অবাধ বিচরণ - এসব নোংরামী কোন যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য? ছোট ছোট চোখগুলোর কাছে এদৃশ্য কিভাবে আসে সেটা বড়দের মাথায় ঢোকার কথা নয়। পার্কে ঘুরতে যাওয়া ছোট্ট ছেলেটা কিংবা মেয়েটার মাথায় এই দ্বশ্যগুলো স্থায়ী না হলেও, বেশ বড় একটা সময়ের জন্য ঢুকে যাবে না?
হ্যা, একসময় এটাই কালচার মনে হবে ওদের কাছে! পাবলিক ভার্সিটির কথা বললাম, উত্তর দক্ষিণের নামী দামী প্রাইভেট ভার্সিটর দিকে চোখ তোলার সাহস নাই। ভার্সিটি একটা উদাহরণ মাত্র, এই বয়সটায় ছেলেমেয়েগুলো কাছে আসার অনেক সুযোগ পায়, তবে কলেজে বা স্কুলে পড়া পোস্ট-মর্ডার্ন ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এটাকে কালচার মনে হওয়া অবাস্তব না।
আমি মানুষটা বেকুব, তাই প্রগতিশীল কিছু দেখলেই গলা শুকিয়ে পানির পিপাসা পেয়ে যায়। পাবলিক প্লেসে কাছের মানুষটার সাথে ঘনিষ্ট হওয়াটা কি এতই জরূরী? এটা আমাদের মত অসভ্যের মাথায় ঢুকবেনা। তবে জ্যাম হয়ে যাওয়া মাথাটায় এটা কেন জানি মনে হয়, যে কাজটা নিজের জন্য অনেক বেশি উপভোগ্য, সেটার মজা নেওয়ার আগে পাশের লোকটার মূল্যবোধের মর্যাদা দেওয়া উচিত। পাশের দেশটার কালচার আর আমাদের কালচার এক নাও হতে পারে! নিজে যেটাকে ভাবছি প্রগতিশীলতা, এডভান্সড, সেটা আশেপাশের অন্য কারো কাছে পুরোপুরি অসভ্যতা মনেও হতে পারে। এতই ভালবাসা? শরীর না মানলে তার জন্য ভালো জায়গা আছে, সেখানে যাওনা কেন? সবার সামনে নিজেদের এক্সপোজ করার মত মানসিকতা কি উন্মাদনা নয়? প্রগতিশীলতার ক্ষেতা পুড়ি! মেকাপ, ব্রেকআপ যে আজকাল কথায় কথায়, কারণ টা কি? প্রেম যদি সত্যিকার অর্থেই হয়, সেটার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। সবার সামনে গার্লফ্রেন্ডের ঠোটে ঠোট সেটে দেওয়া বা বয়ফ্রেন্ডের কাধে ঝুলে পড়ার নামে শো-অফ যে কয়দিন টিকে সবার জানা আছে!
এতটুকু পড়ার পর কে কি ভাবছে একটু বোঝার চেষ্টা করি! যারা এখনও পড়ছে তারা মোটামোটি নিশ্চিত আমার মাথায় থার্মোমিটার ধরলে সেটা ফেটেফুটে যাবে, আর অনেকে অবশ্য প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজে পেয়ে মাইনাস দিয়ে চলে গেছে। যাইহোক, কষ্টকরে এই অসভ্যপনা যারা পড়েই ফেলেছেন, আরেকটু পড়েন। পূর্বকথা এখানেই শেষ, এখন এবারের ঈদের কাহিনী! পোস্ট শেষ করার পর আমার ধারণার সাথে সহমত কয়েকজন হলেও হতে পারেন!
বুড়া ব্যাটার নাম জানিনা, ধইরা নেন কলিমুদ্দি। হেয় মুরগি ভাইজা বেচে, সেই দোকানে (কলিমুদ্দীর ফ্রায়েড চিকেন

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৪