ক্লাস নাইন এ পড়ি তখন, এক ম্যাডামের ছেলের ক্যান্সার। তো তার জন্য ক্লাস টেন এর বড় ভাই রা ফিল্ম শো এর আয়োজন করলো। আমরা ছিলাম ভলান্টিয়ার। তো বেশ কয়েকদিন খুব খাটাখাটনি গেল, শো এর দিন বলতে গেলে জান আর দিতেসিল ই না... তাই শো চলাকালে ঠ্যাঙ্গের উপর পা তুইলা বইসা ছিলাম পাশে যে ক্লাস টেনের দুই বড় ভাই বসা তা আর খিয়াল করি নাই!!
এর পরেরদিন ক্লাস টেনের বড় ভাইদের বড় ভাই, বর্তমানে ছাত্রলিগের নেতা(এখনো ইন্টার পাশ করে নিয়া যদিও), আমাকে ডেকে পাঠাইলেন... একটু ঘাউড়ামি কইরা ফেলসিলাম, কারণ আমারো কি মামার জোর কম নাকি?
কিন্তু মামা তখন পাশে ছিল না, গণ-ধোলাই কেউ আটকাইতে পারে নাই...... মাইর ও খাইসিলাম রে ভাই
পরে অবশ্যি মামা আইসা তাদের ছাইড়া দেয় নাই কিন্তু যা খাওয়ার তো খাইয়া ই গেছিলাম...
ক্লাস সেভেন এ উঠার পর থেকেই দেখে আসছি আজকে এর গ্যাঞ্জাম, কালকে ওর গ্যাঞ্জাম... আজকে এই হলের বড় ভাই আসছে তো কালকে ঐ হলের বড় ভাই আসছে এরে মারতে... দেখতে ভালাই লাগতো তখন কিন্তু সত্য কথা বলতে কখনো কোন ভাই কে দেখি নাই জুনিয়রদের গায়ে হাত তুলতে। তারা আসতেন, ভদ্রভাবে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতেন... কিন্তু পোলাপান এর রক্ত হইল "গ্যাঞ্জাম" এর রক্ত এই রক্ত কি ঠান্ডা হবার নাকি???
কত গ্যাঞ্জাম যে দেখলাম ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত সব বলা যাইবো না আমারো তো সমাজে টিকে থাকা লাগবে...
কিন্তু সব গ্যাঞ্জামের মূল এ কিন্তু মেয়ে
এর গফ(GF) কে অমুক বলসে কিছু একটা... এর কি পাওয়ার কম, আবার অইদিকে কি অমুকের পাওয়ার কম?? নিজের গফ এর সামনে নিজের পাওয়ার দেখাইতে হবে না?? বড় ভাই ডাক...
আবার ধরেন সলিমুল্লাহ হলের মাঠে গেলাম ফুটবল খেলতে, আরেক গ্রুপ খেলতেসে। তারা দিবে না আমাদের খেলতে... আমাদের কি বড় ভাই নাই নাকি>?? ডাক বড় ভাই...
এই হইল গ্যাঞ্জামের বিষয়বস্তু
কলেজের উঠলাম... ভর্তি হইলাম সিটি কলেজে... ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ মাইর পিট তো দেশের বুকে এক কিংবদন্তির মত...
আজকাল কিন্তু রাইফেলস কলেজ আর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ ও কম যায় না মাইর পিটে
ক্লাস শুরু হবার পরেরদিন থেকেই মাইর পিট দেখা শুরু করসি
মাইর পিটের বিষয়বস্তু ছিল, ঢাকা কলেজের ৩ ছেলে কফি খাইতেসিল, অইখানে দাড়াইয়ে কেন সিটি কলেজের এক ছেলে কফি খাইলো?? মাইর কারে কয় রে বাবা...... ৬-৭দিন মাইর চললো সিটি কলেজের উপরে এই নিয়া...
কয়দিন যাইতে না যাইতেই আবার মাইর... এবার ঢাকা কলেজ-ধানমন্ডি আইডিয়াল এক জোট, সিটি কলেজ-রাইফেলস কলেজ এক জোট। কিন্তু কাহিনী হইল সিটি কলেজের পোলাপাইন মাইর খাইলে স্যার রা আগাইয়া আসবে না, কিন্তু মাইর দিতে গেলে ঠিকই নিরাপত্তা কমিটি আইডি টা নিয়ে যাবে
এরমধ্যে একদিন ঘটলো কি শুনেন, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের কিছু পোলাপান কলেজের ভিতরে ঢুকে সিটি কলেজের এক স্যার এর গায়ে হাত দিয়ে বসলো... ব্যাপারটা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এক চপেটাঘাত এবং শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সমাজের এক কলঙ্ক...
যাইহোক, সিটি কলেজের স্যর রা তাও শিক্ষার্থীদের কিছু করতে দিবে না... দেয় ও নাই...
এর কয়েকদিন পরের ঘটনা... সাইন্স ল্যাব মোর এ নামলাম বাস থেকে, ২৫/৩০ জন ছেলে দাঁড়ানো, কিছু ঢাকা কলেজের, কিছু যে কোন কলেজের খেয়াল ও করি নাই... নতুন কোন "গ্যাঞ্জাম" যে লাগসে তাও জানা ছিল না... বাস থেকে নেমে ছেলে গুলাকে ক্রস করবো এমন সময় তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন জিজ্ঞেষ করলো, "সিটি কলেজ?"... মাথা কাজ করে নাই, জবাব দিলাম "হ্যা"... অইখানেই কাজ শেষ... খালি ঘুষি খাইলাম পিঠে আর চড়-থাপ্পড় মাথায়... জীবনে দ্বিতীয় বারের মত মাইর খাইলাম...
দুঃখের বিষয় হচ্ছে ৩জন পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা টা পুরোটা দেখেন এবং চুপ করে থাকেন। এর চেয়ে বড় দুঃখের বিষয় সিটি কলেজের স্যার রাও রাস্তার এ পার থেকে বিষয় টি দেখেও চুপ করে থাকেন এভাবেই সিটী কলেজের পোলাপান মাইর খেয়ে যায়...
যাইহোক, আমাদের দেশ ই এমন, আমি নিজে দ্বিতীয়বার যেমন অকারণে মাইর খাইসি, সিটি কলেজের সবাই অকারণেই মাইর খায়... দেশের সব গ্যাঞ্জাম এই যারা মাইর খায় তারা অকারণেই খায় যারা গ্যাঞ্জাম লাগায় তারা তোঁ সময় থাকতেই কাইটা পরে
{ নিজের স্মৃতিকাতরতামূলক পোস্ট। ভাল না লাগলে নিজ দায়িত্ব মাফ করবেন সবাই }
-fajlupedia
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২১