সেদিন রাস্তা দিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলাম। কোন এক অজানা কারণে মনটা ভালো ছিলনা। সবকিছুতে হতাশ লাগছিলো। পাশেই সুন্দরী লীনাদের বাড়ী। একটু উঁকিও মারছিলাম। হঠাৎ মনটা ভালো হয়ে গেলো। লীনার দেখা পেলাম? না। একটা শ্রুতিমধুর গান শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো। কিন্ত ঠিক এই গানটা আমি বাসায়ও শুনেছিলাম, এতো ভালো লাগেনি। পরে বুঝতে পারলাম এই পার্থক্যের কারন স্পীকার বা সাউন্ডসিস্টেম।
স্পীকার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা ইলেকট্রিক সিগ্নালকে শব্দের তরঙ্গে পরিণত করে। এটি একটি পরিবর্তন করার যন্ত্র, যা শক্তির একরূপ থেকে আরেকরূপে পরিণত করে। স্পীকার কখনো একটি যন্ত্র অথবা অনেকগুলো যন্ত্র এবং ফিল্টারের সমম্বয়ে গঠিত হয়। তবে ভাল শব্দের একটি স্পীকারের জন্য অনেকগুলো যন্ত্রকে একীভূত করা হয়,যাতে শব্দের তরঙ্গ বেশী হয়।
১৮৭৬ সালে প্রথম আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিস্কার করার উদ্দেশ্যে স্পীকার তৈরী করেন। এরপর আর্নেষ্ট সিমেন্স ১৮৭৭ সালে এবং নিকোলা টেসলা ১৮৮১ সালে এর উন্নতি সাধন করেন। ১৮৯৮ সালে হোরেস 'সংকুচিত-বায়ু" ভিত্তিক স্পীকার তৈরী করেন,কিন্ত তা তত সফলতা লাভ করেনি। আধুনিক কয়েল ভিত্তিক স্পীকার চেস্টার ডব্লিউ রাইচ এবং এডওয়ার্ড ডব্লিউ কেলল্যা ১৯২৪ সালে তৈরী করেন। এরপর এর সাথে ফিল্টার যুক্ত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে স্পীকার বর্তমান রূপ ধারন করে।
আমাদের দেশে যে দিন থেকে কম্পিউটার আমদানী শুরু হয়,প্রায় সে দিন থেকেই কম্পিউটারের অংশ হিসাবে স্পীকার আমদানী শুরু হয়। প্রথমে সবাই শুধু কম্পিউটারের সাথে স্পীকার ব্যবহার করতো। বর্তমানে এর ব্যবহার বহুবিধ। প্রায় সবার ঘরে ঘরে স্পীকার ব্যবহৃত হয়,কেউ টিভির সাত্থে,কেউ গেমস্ এর সাথে আবার কেউ ডিভিডির সাথে স্পীকার ব্যবহার করছে।
বাজারে বহুধরনের স্পীকার পাওয়া যায়, যেমনঃ শুধু দুই পিসের স্পীকার, ২:১ স্পীকার, ৫:১ স্পীকার, ইউএসবি স্পীকার, রিচার্জেবেল স্পীকার, ওয়্যারলেস স্পীকার, আবার কিছু স্পীকার আছে যা কর্ডলেস মাইক্রোফোন সংযুক্ত-এটা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিছু উচ্চ প্রযুক্তির ডিজিটাল ডলবিসাউন্ড সিস্টেম আছে। কিন্তু এই সিস্টেম থেকে পর্যাপ্ত ও শ্রুতিমধুর সাউন্ড পেতে হলে ডিভিডি এবং যে সিস্টেমে ডিভিডি চালানো হয়ে থাকে তাতেও ডলবি প্রযুক্তি থাকতে হবে।
আমাদের দেশে অনেক আইটি ফার্ম বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্পীকার বা সাউন্ড সিস্টেম বাজারজাত করে থাকে, যেমন ক্রিয়েটিভ, মাইক্রোল্যাব, সিজেসি, লজিটেক, কামাসনিক, এফ এন্ড ডি, এলটেক ল্যনসিং, সিনটেক্স, গোল্ডেন ফিল্ড ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে সিংহভাগ বাজার দখল করে আছে মাইক্রোল্যাব। স্পীকারের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এদের মধ্যে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিভ, মাইক্রোল্যাব, সিজেসি এবং লজিটেকের আমরা গ্যারান্টি বা বিক্রয়ত্তোর সেবা পেয়ে থাকি।