পেশাদার সন্ত্রাসী কেস্টর ট্রয়। এফ.বি.আই স্পেশাল এজেন্ট সিন আর্চার তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কারণ এক বছর আগে ট্রয় তাকে খুন করতে যেয়ে দূর্ভাগ্যবশত তার শিশুপুত্রকে খুন করে। সেথেকে আর্চার তাকে ধরার জন্য পাগল হয়ে আছে। হঠাৎ একদিন এফ.বি.আই খবর পেল ট্রয়ের ভাই পোলাক্স ল্যাক্স এয়ারপোর্টে একটি প্লেন ভাড়া করছে। আর্চার জানত যে পোলাক্স তার ভাই কেস্টর ট্রয় ছাড়া আকাশে উড়বে না। তাই সে এফ.বি.আই -এর জয়েন্ট টীমের সাথে যোগ দিল ট্রয়কে ধরার জন্য এবং দূর্ভাগ্যক্রমে প্লেনটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। পোলাক্স এফ বি আই কতৃক ধৃত হয়, আর ট্রয় অজ্ঞান হয়ে "কোমা"য় চলে যায়। কিন্তু ট্রয় "কোমা"য় যাওয়ার আগে আর্চারকে একটি বোমার কথা বলে যায়, যার বিস্ফোরণে লস্-এঞ্জেলস্ ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও আর্চার বোমাটি বিস্ফোরণের সময়টা জানত, কিন্তু বোমাটি কোথায় আছে এ সম্পর্কে জানত না। একমাত্র ট্রয়ের ভাই পোলাক্স এটি জানত। তখন আর্চারের নেতৃত্বে একটি গোপন মিশন শুরু হয়, যে মিশনে আর্চারের মুখায়বে ট্রয়ের মুখায়ব সার্জিকেলের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় এবং আর্চার ট্রয় সেজে জেলে যায়, যেখানে পোলাক্স বন্দী অবস্থায় আছে। এভাবে আর্চার পোলাক্সের কাছ থেকে বোমাটি কোথায় আছে তা জানতে পারে। এদিকে হঠাৎ ট্রয় "কোমা" থেকে জেগে উঠে এবং সব জানতে পারে। তখন সে তার লোকদের দিয়ে সেই ডাক্তারকে কিডন্যাপ করে, যে ডাক্তার আর্চারের মুখায়ব স্থাপন করেছিল। এবার ট্রয়ও তার মুখায়বে আর্চারের মুখায়ব স্থাপন করতে বাধ্য করে সেই ডাক্তারকে, এরপর ট্রয় আর্চার সেজে তার অপকর্ম শুরু করে।
এভাবে কাহিনী এগিয়ে যায়। এটা হল বিখ্যাত হলিউড ছবি"ফেস অফ"এর কাহিনীর একটা অংশ।
বিশ্বে প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুখায়ব প্রতিস্থাপন হয় স্পেনে। ২০১০ সালের ২০শে মার্চ ৩০জন স্পেনিস ডাক্তার মিলে এই দুঃসাহসিক কাজটি করেন। বিভিন্ন কারণে মুখায়ব প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়। ট্রমা, আগুন,বিভিন্ন রোগ অথবা জন্মগত মুখায়ব বিকৃতির কারণে এর প্রতিস্থাপন দরকার হয়। ২০০২সালে প্রথম রয়েল ফ্রি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রফেসর পিটার বার্টলার এই ধারনাটি দেন। তখন এনিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। সাধারণত রোগীর পিঠ,নিতম্ব অথবা উরু থেকে চামড়া নিয়ে কমপক্ষে ৫০টি অপারেশনের মাধ্যমে এ কাজটি সমাধা করা হয়। অপরদিকে মুখায়ব সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে না গেলে সে মুখায়ব পুনরায় স্থাপন করা যায়। এক্ষেত্রে সন্ধীপ কাউর নামের ৯বছরের ভারতীয় মেয়ের মুখায়ব নিজের মুখে পুনরায় স্থাপন বিশ্বে প্রথম। ১৯৯৪সালে এমেয়েটি শস্যমাড়াই যন্ত্রে চুলের মাধ্যমে নিজের মুখায়ব হারায়, সাথে সাথে তার পিতামাতা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় এবং তার মুখায়বটি প্লাষ্টিকের ব্যাগে করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সার্জন সফলভাবে তার মুখায়বটি আবার যথাস্থানে স্থাপন করতে সমর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্টে ডালাস ওয়াইনস প্রথম ব্যক্তি যার ২০১১সালের মার্চে মুখায়ব প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালে এক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় ওয়াইনস তার মুখায়ব হারায় এবং অন্ধ হয়ে যায়।
আমাদের দেশে এই পূর্ণাঙ্গ মুখায়ব প্রতিস্থাপন সম্ভব না হলেও মুখোশের ব্যবহার হয়। এই মুখোশের ব্যবহার আবার ভিন্ন। এক্ষেত্রে স্থায়ী মুখোশ ব্যবহার করা হয় না, কারণ স্থায়ী মুখোশ পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু আমাদের বার বার পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। এই জন্য অস্থায়ী মুখোশ ব্যবহার করা হয়। এই মুখোশের ধরনও ভিন্ন। এই মুখোশ পরিধান করলে কথা এবং চরিত্র পরিবর্তন হয়ে যায়। এইগুলো আবার ব্যবহার করে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিজনেরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। কি রাজনীতিবিদ, কি শিক্ষক, কি বুদ্ধিজীবি সব শ্রেণীর। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে ওনাদের মুখোশও পরিবর্তন হয়ে যায়। ওনাদের কি এতটুকু দেশপ্রেম নেই? শুধু নিজের স্বার্থই বড়? নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাই বড়? সাধারণ জনগণ এখন অনেক কিছুই বুঝে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে সবই রেকর্ড করা থাকে। দুই বছর আগে কি বলেছেন, এখন কি বলছেন, দুই বছর পর কি বলবেন- এই সবের পার্থক্য সাধারণ জনগণ করতে পারে। সুতারাং সময় এসে গেছে স্থায়ী মুখোশ পরার, না হলে অন্ধকারে হারানোর সম্ভাবনাই বেশী।