আগে বাংলাদেশের কেউ অসুস্থ হলে বা মৃত্যুবরণ করলে, দল-মত নির্বিশেষে সবাই প্রার্থনা সমবেদনা বা দুঃখ প্রকাশ করতো। হউক সেই ঘোর বিরোধী বা চরম শত্রু! যখন থেকে গণজাগরণ মঞ্চ এর আর্বিভাব হলো তখন থেকে যেনো এই প্রথাটা উঠে গেছে। এখন কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে প্রায় সবাই (বেশির ভাগ মানুষ) হাসি ঠাট্টা বা ট্রল করে থাকে, এইতো কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পরে দেখলাম, কবি আল মাহমুদ এর মৃত্যুতে দেখলাম, আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতা নিয়ে দেখলাম অন লাইনে হাসি ঠাট্টা হয়েই যাচ্ছে। গত পরশু (০১ মার্চ ২০১৯) ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছেন কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ সত্যিই ওবায়দুল কাদের অসুস্থ আর এখানে কোন রাজনীতি নেই!
মানুষের অসুস্থ বা মৃত্যুতে হাসি ঠাট্টার এই প্রথাটা চালু বেশিদিনের নয় “যুদ্ধ অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা হলো, তা মেনে না নিয়ে কিছু লোক বা বাম ছাত্র আন্দোলনের কিছু ছাত্র শাহবাগে একটা চোট্ট আন্দোলনের সুত্রপাত গঠে ! সরকারও এই রায়ে অতোটা খুশি হয়নি সরকার নিজ উদ্যোগে তো আইন পরিবর্তন করতে পারে না, তখন জনমত সরকারের বিপক্ষে যেতে পারে, (লোক বলবে বিরোধী দলকে ধমন করার জন্য করছে) তাই লোক দেখানো একটা সমর্থন দরকার ছিলো আর তখনই সরকার সরাসরি গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থন দেয়া শুরু করে দেয়, গণজাগরণ মঞ্চের একটি চেহারা (যুদ্ধ অপরাধীরের বিচার করা হউক) এই চেহারায় মানুষের খুব ভালো লেগেছে এবং ওদের দাবীর সাথে প্রায় সবাই সমর্থন জাগাতে শুরু করলো এমন কি বিএনপিও ওদের সমর্থন দিলো । প্রথম দিকের ঐ চেহারা সাথে অন্য চেহারাটাও উন্মোচিত হতে লাগলো, জামায়াতকে অর্থ জোগান দেয়ার কারণ দেখিয়ে ইবনেসিনা, ইসলামিক ব্যাংক সহ ইসলামিক নামের সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলতে লাগলো ধীরে-ধীরে ওদের আসল চেহারাটা জনগণের সামনে প্রকাশ পেতে লাগলো সর্ব কথার এক কথায় এসে দাঁড়ালো “ওরা জামায়াত কিংবা ইসলামিক ব্যাংক নয় বরং ইসলামের বিরুদ্ধেই দাঁড়ালো” আর জনগণের সমর্থন হারাতে লাগলো আর এই দিকে সরকারের ওদের কাছে আর পাওয়ার কিছু ছিলো না বলে সরকারও দূরে সরে গেলো!
প্রথম গণজাগরণ মঞ্চেই কারো মৃত্যুতে (কাদের মোল্লার) উল্লাস করা শুরু হয়ে এখন তা এই পর্যায়ে এসে দাঁড়ালো। আজকের এই পরিবেশের জন্য গণজাগরণ মঞ্চকেই বেশির ভাগ দায়ী করা যেতে পারে। তারপর থেকে এই ভাতৃত্বের বন্ধন (কারো মৃত্যুতে উল্লাস নয় শোক) এই প্রথার বিলুপ্ত হয়ে মৃত্যুতে উল্লাস করা প্রথার মাধ্যমে বাংলাদেশ এক কালো আঁধারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
০৩ মার্চ ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ রাত ১:৩৮