০১.
০২.
আজকের সন্ধ্যাটা অন্যরকম সন্ধ্যা। আকাশ কিছুক্ষণ পর পর তার রূপ বদল করছে। মাঝে মাঝে মেঘলা হয়ে যাচ্ছে। আবার ক্ষণকাল পরেই মেঘ কেটে গিয়ে সমস্ত আকাশময় তারা ঝিকমিক করছে। কিছুক্ষণ হলো আকাশের তারাগুলোকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমরা ফার্মগেটের ওভারব্রিজের ওপর বসে আছি। আমরা মানে আমি আর জাকির। বেশ কিছুক্ষণ হলো তারা গুনছিলাম। একটা সেঞ্চুরিও করে ফেলেছি। হঠাৎ করে পুরো আকাশটা মেঘে ঢেকে গেল।
পকেটে হাত দিয়ে ছবিটার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নিলাম। আসার সময় জরিনা খালা বুয়ার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়েছিলেন যেন খুঁজে পেতে একটু হলেও সুবিধা হয়। ছবিটা দেখে প্রথমেই যেটা মনে হলো তা হলো, বুয়া আর ফিরবে না। কারণ, এতক্ষণ থেকে মনে মনে যে সূত্রটা খুঁজছিলাম, তা হঠাৎ করেই হাতে পেয়ে গেলাম। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। পাজেরোতে বসা মহিলার চেহারা আর বুয়ার চেহারায় একবিন্দুও অমিল নেই। আর পাজেরোতে বসে ঘুরছে বলেই বুয়া কাজে আসছে না দেড় মাস। ঐ মহিলাই যে কাজের বুয়া তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তবে একটা বিষয় পরিস্কার হচ্ছিল না, আমি বুয়ার জন্য কী করেছি তা বোধগম্য হচ্ছি না। তাকে খুঁজতে এই সমস্যারও সমাধান পেয়ে গেলাম। ঘন্টা দেড়েক পরিশ্রমের পরে বুয়ার একটা ঠিকানা পেয়ে গেলাম। ছুটলাম বেড়িবাঁধের কাছাকাছি এক বস্তির উদ্দেশ্যে, ওখান থেকে নতুন সূত্র ধরে গেলাম টাউন হল বাজার, তারপর সেখান থেকে আদাবরের আরেক বস্তিতে। ওখানেও তাকে পেলাম না। যদিও পাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না, তবুও সন্ধান দরকার। সেখানে এক মহিলা জানালো, ‘লাইলীর মা লটারীতে ষাট লক্ষ টাকা পেয়েছে। সে আর বস্তিতে থাকে না, তবে কোথায় থাকে তা তারা জানে না।’ ঠিক তখনি মনে হলো, বুয়াকে কোন একদিন একটা লটারীর টিকেট দিয়েছিলাম, ওটাই হয়তো ভাগ্য খুলে দিয়েছে।
“তুমি একটা জিনিয়াস”, জাকির বললো।
“কেন রে জিনিয়াসের কী দেখছিল?”
“এই যে আমি এক মাস ঘুরেও বুয়াকে খুঁজে পেলাম না, আর তুমি এক ঘন্টার মধ্যেই বুয়ার নাড়ি-নক্ষত্র বের করে ফেললে।”
“এ আর এমন কী, তুই খুঁজে পেতি যদি মন দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করতি। ঠিক বলিনি?”
“কিছুটা ঠিক, পুরোটা নয়।”
“যদি তোকে বলা হতো, লাইলীর মা নয়, লীনাকে খুঁজের বের কর; তাহলে তো তোর এক ঘন্টাও লাগতো না। ঠিক না?”
“তুমি লীনার কথা জানলে কিভাবে?”
“গাধার মতো কথা বলবি না। আমি তো আরও অনেক কিছু জানি। শুনবি?”
“না, থাক” জাকির মুখ গোমরা করে ফেললো।
“কি রে তোর মন খারাপ হলো কেন? লীনার কথা বলে তোর মন খারাপ করে দিলাম।”
“হু।”
“বলতো লীনা এখন কী করছে?”
“ও এখন, লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করছে। জানো, ওর লাইব্রেরির যতগুলো বই আছে সবগুলোই ও পড়ে শেষ করেছে। প্রায় দেড় হাজার বই আছে ওর। এত পড়ে না মেয়েটা কী বলবো! আর পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলবে- চা। ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার।”
জাকিরের মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। আরো একটু ভাল করা যায়। বললাম, চল চা খেয়ে আসি।
“চল” বলেই লাফ দিয়ে দাঁড়ালো জাকির।
এক কাপ করে চা শেষ, দ্বিতীয় কাপের অর্ডার দিয়েছি। এখানে চা’টা চমৎকার বানায়। মজার ব্যাপার হলো, দোকানের মালিকের নামও জাকির। সবাই জাকিরের দোকান বলেই চেনে। জাকিরের দোকানে চা পাওয়া যায়, আর পাওয়া যায় বিস্কুট। কিন্তু এখানে কেউ বিস্কুট খায় না, সবাই শুধু চা খায় এবং এক কাপ নয় দু’কাপ চা পরপর। জাকিরের দিকে তাকালাম, ও আবারো মন খারাপ করে বসে আছে । পাশের দেয়ালে কয়েকটা সিনেমার পোষ্টার লাগানো। ঐদিকেই তাকিয়ে আছে জাকির। এখানে এলে সিনেমার পোষ্টারগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। তবে আজ খুঁটিয়ে দেখছে বলে মনে হচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে, মন খারাপ। ইদানিং মন খারাপ রোগটা ভালই ধরেছে তাহলে। বললাম, আবারো, মন খারাপ করেছিস কেন রে?
জাকির কিছু বললো না। বললাম, বলে ফেল। মনের দুঃখ অন্যকে বললে দুঃখ কমে যায়। আমার সঙ্গে তোর দুঃখগুলো শেয়ার কর।
“তোমার সঙ্গে দুঃখ শেয়ার করা যাবে না। তোমার নাম যদি জাকির হতো, তবে দুঃখ শেয়ার করতে হতো না, নিজেই বুঝতে।”
“নাম নিয়ে তোর আবার কী হলো?”
“যেদিকেই যাই দেখি জাকির নামের কেউ না কেউ আছে। শুধু তাই নয়, ঐ নাম বেশিরভাগই হোটেলের বয় কিংবা থার্ডক্লাশ কর্মচারীদের হয়। দেখা যাবে নামের জন্য ভার্সিটি থেকে পাশ করেও আমাকে থার্ডক্লাশ চাকরি করতে হবে!”
“এই হলো তোর সমস্যা? কখনো ভেবেছিস নামি-দামি কেউ এই নামের আছে কি না?”
“হু।”
“ওস্তাদ জাকির হোসেনের নাম শুনেছিস?”
“জাকির হোসেনের তো অভাব নেই। পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে, এই শহরে এ নামের অন্তত কয়েক হাজার মানুষ আছে। যাদের বেশিরভাগই-”
ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, যাদের বেশিরভাগই গাধা! ওস্তাদ জাকির হোসেনের নাম শুনিসনি?”
“হু শুনেছি।”
“ভেবে দেখ, এই নামের কত বড় একজন শিল্পী আছে।”
“ভেবে দেখলাম, কিন্তু উনারা তো শতকরা একজনেরও অনেক কম! বাকি প্রায় একশত জন কোথায় যাবে? মাঝে মাঝে মনে হয়, আরেকবার আকিকা করি।”
“দেরি কিসের কালই করে ফেল। কিন্তু আকিকায় কী নাম রাখবি?”
“সেটা তো ভেবে দেখিনি।”
“শোন নাম কোনো সমস্যা না। নামে খুব বেশি কিছু এসে যায় না। এসব হাবিযাবি বাদ দে তো এখন।”
“দিলাম।”
“আমি আজ আর তোদের বাাসায় যাচ্ছি না। তুই চলে যা। খালাকে গিয়ে বুয়ার ঘটনা খুলে বলবি। চল তোকে এগিয়ে দিই। হেঁটে যাবি তো?”
“হু।”
আমরা উঠে পড়লাম। জাকির প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেছে। বললাম, আমি দিচ্ছি।
জাকির ভ্রুকুঁচকে আমার দিকে তাকালো। বললো, তোমার তো পাঞ্জাবির পকেট নেই, টাকা আসবে কোত্থেকে?
“পাঞ্জাবির পকেট নেই তো কী হয়েছে, প্যান্টের তো পকেট রয়েছে। একবারো কি মনে করে দেখেছিস প্যান্ট পড়েছি না পাজামা?”
“তাই তো! কিন্তু তুমি তো কখনো পকেটওয়ালা প্যান্ট পড়না!”
“আজ পড়েছি।”
চার কাপ চায়ের বিল দিয়ে মহাসড়কে নেমে পড়লাম।
রাস্তায় প্রচণ্ড ভীড়। ফার্মগেটে জ্যাম লেগেছে। বিরাট লাইন। এই জ্যাম ছুটতে নির্ঘাত ঘন্টা দেড়েক লেগে যাবে। রাস্তার ওপাশে একটা ছোট-খাট জটলা দেখা যাচ্ছে। জটলার আয়তন ধিরে ধিরে বেড়ে যাচ্ছে। সেই জটলায় নিজেকে সামিল করতে ইচ্ছে হলো। রাস্তা পাড় হয়ে ওপাশে যাওয়াটা এখন মোটামুটি একটা মুশকিল কাজ। তবুও জাকিরের হাতটা খপ করে ধরে রিক্সা-সিএনজির ফাঁকে রাস্তা পেরোলাম। রাস্তা এপাড়ে এসে জাকির বললো, হঠাৎ রাস্তা পাড় হলে কেন?
এ প্রশ্নটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু কেন যেন উত্তর দিতে ইচ্ছা করলো না। উত্তর না পেয়ে ও বুঝলো প্রশ্নটা হাজারবার করলেও আমি উত্তর দেবো না। কাজেই ও চুপ করে গেল।
জটলার আয়তন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। অনেক কষ্টে ভেতরে মাথা গলিয়ে দেখা গেল, একজন মানুষকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। লোকটাকে দেখেই চিনতে পারলাম। যেভাবে ভেতরে ঢুকেছিলাম ঠিক সেভাবেই বেরিয়ে পড়লাম। জাকির জটলার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বললো, কী হয়েছে?
“গণপিটুনি দিচ্ছে।”
“কাকে?”
“এক পকেটমারকে।”
“পকেটমার!”
“হ্যাঁ। গুলিস্তানে একবার আমার পকেটমারার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সেই থেকে ওকে চিনি। কিন্তু হাত তো এতদিনে পেকে যাবার কথা!” একটু দম নিয়ে আবার বললাম, লোকটাকে বাঁচানো যায় কি না দেখি।
“পকেটমারকে বাাঁচাবে, কিভাবে?”
একটা প্ল্যান মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেলো, ওকে বুঝিয়ে দিলাম। ও জটলার ভেতরে ঢুকে গেল। এতক্ষণে হয়তো দু’চারটা মারও দিয়ে দিয়েছে।
এবার আমি একটু গম্ভীর ভাব টেনে ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। ভিকটিমের কাছে পৌঁছালাম। দু’হাত উপরে তুললাম, অনেকটা নেতাদের মতো। বললাম, কী হয়েছে এখানে? মারামরি কেন?
“একজন পকেটমার ধরা পড়েছে”, একটা মোট কণ্ঠ বললো।
“ভাল কথা। তবে পকেটমার কিনা যাচাই করে দেখেছেন?”
“আমি নিজের চোখে দেখেছি।” বললো মোটা কণ্ঠ।
“আরেকবার দেখুন না যাচাই করে” আগের চেয়েও ভারী কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলাম।
“আপনি কে?” নতুন একটা কণ্ঠ ভেসে এলো। খুবই পরিচিত কণ্ঠ, জাকিরের।
বললাম, আমি ডিবি’র লোক।
“আপনার আইডি কার্ড দেখি” মোটা কণ্ঠে বিরক্ত।
“সঙ্গে কার্ড নেই। ছদ্মবেশে আইডি কার্ড রাখার নিয়ে নেই।” এবার কেউ কোনো কথা বললো না। পকেটমার ব্যাটা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোণ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ও হয়তো ভাবছে, ‘পুলিশের হাতে ধরা খাওয়ার চেয়ে মার খাওয়া ভাল! সুযোগ পেলেই দে দৌড়!’ ওর দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে বললাম, একে ধরুন, আমি সিএনজিতে তুলে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন বললো, এই লোকটাকে পকেট মারের সাথি মনে হচ্ছে। এর হাতে ছেড়ে না দিয়ে একেও ধোলাই দিই।
আমি হঠাৎ চমকে গেলাম। এখন যদি প্ল্যান মত কাজ না হয়, তাহলে আমিও ফেঁসে যাব। আর ফেঁসে গেলেই মহাবিপদের সামনাসামনি হতে হবে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আপনারা সিএনজি ঠিক করে দিন। প্রয়োজনে কেউ একজন আমার সাথে চলুন।
প্রথমের সেই কণ্ঠটা মনে হলো আমার কথা বিশ্বাস করেছে, বললো, আমি সিএনজি ঠিক করছি।
এবার বললাম, কে যাবেন আমার সাথে?
কেউ কিছু বলার আগেই জাকির বললো, আমি যাব। জাকিরের দিকে তাকালাম, ও একহাতে পকেটমারের কলার ধরে আছে। আরেক হাত মুঠো পাকিয়ে আছে, যেন সুযোগ পেলেই ঘুষি বসিয়ে দেবে।
ভীড় ঠেলে আমরা তিনজন বেরিয়ে আসছি। মনে মনে বললাম, যাক প্ল্যানটা তাহলে কাজে দিয়েছে। এখন এ ব্যাটাকে একটু ভয় দেখাতে হবে।
সেই মোটা কণ্ঠস্বর লোকটা সিএনজির কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমি সুমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
হাত মেলালাম কিন্তু নাম বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না। এখন যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে পড়া যায় ততই ভাল। সিএনজিতে উঠে বললাম, থ্যাংক ইউ। আপনার সাহায্য না পেলে হয়তো এ ব্যাটাকে থানায় নেয়া সহজ হতো না।
সুমন কৃতজ্ঞ চোখে আমার দিকে তাকালো। সিএনজি ছেড়ে দিয়েছে। পেছনে না তাকিয়েই মনে হলো, পুরো জটলাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সিএনজির তিনসিটের মাঝেখানে পকেটমার বসেছে, আমরা দু’জন দু’পাশে। বললাম, তোর নাম কী?
“জামিল।”
“আসল নাম বল।”
“সালাম।”
“মিথ্যা কথা বলবি না, আসল নাম বল। দু’চারটা রোলারের গুঁতা খেলে সব কথা বেরিয়ে আসবে।”
“এইটাই আসল নাম স্যার।”
“আমরা দু’জনই ডিবির লোক। আমাদের সামনে মিথ্যা বলবি না। চোখ দেখলেই সত্য মিথ্যা বলে দিতে পারি।”
সালামের মুখটা ভয়ে এতটুকু হয়ে গেল। ও জাকিরের দিকে তাকালো একবার, জাকির হ্যাঁ সূচন মাথা নাড়লো। সালাম বললো, স্যার সত্য কইতাছি। আমার নাম সালাম।
“মানিব্যাগটা দেখি, যেটা মেরেছিস।”
“স্যার আমি পকেটমার না,” কাঁদো কাঁদো মুখে সালাম বললো।
গলার স্বর খানিকটা খাদে নামিয়ে বললাম, তুই যেমন বললি তুই পকেটমার না, তেমনি আমরাও পুলিশের লোক না। আমরাও তোর মতো পকেটমার।
সালাম অবাক চোখে আমাদের দিকে তাকালো। শুধু অবাক নয় বলা যায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে এক্ষুণি। জাকির বললো, কত টাকা মেরেছিস বল, আমরা আমাদের ভাগ নিয়ে তো ছেড়ে দেবো।
লক্ষ্য করলাম, সিএনজির ড্রাইভার আড় চোখে পেছনে তাকালো। ওর দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে সুমন নামের ছেলেটা ওকে ঠিক করেই পাঠিয়েছে দেখতে যে, আমরা সত্যিই ডিবির লোক কিনা। ও হয়তো আমাদের কথাবার্তার শুরুতে ভেবেছিল, আমরা ঠিকই পুলিশের লোক। কিন্তু এখন ওর আশায় গুড়েবালি।
সালাম কোত্থেকে যেন কিছু টাকা বের করলো। বললো, গুইনা দেখি নাই। মানিব্যাগ ফালায় দিছি। গুনা দেওয়ার আগেই আমারে ধইরা ফালাইলো। ব্যাটারা কেমনে যে বুইঝা ফালাইলো! আপনেরা মাইরের হাত থাইকা বাঁচাইলেন।
টাকাগুলো হিসাব করে বললো, চৌদ্দশো সাতান্ন টাকা।
চারশো পঁচাশি টাকা ভাগে পাওয়া যাবে। খুব একটা কম নয়। তবে আপাতত এই চিন্তাটাকে বাতিল করে দিয়ে বললাম, সিএনজির ভাড়াটা দিয়ে বাকি টাকা ভাগ করে নেবো কি বলিস রে সালাম?
সালাম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। সিএনজি ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললাম, ড্রাইভার সাহেব, ফার্মগেট থেকে রমনা থানা কত নেবা?
আমার কথায় সালাম চমকে গেলো। সিএনজির ড্রাইভারও বোধহয় চমকে গেলো। কারণ, আমি ঘনঘন রূপ বদল করছি। ড্রাইভার কিছু বললো না। আমি বললাম, সালাম টাকাগুলো দে। আমরা সত্যিই পুলিশের লোক।
সালাম কথা না বাড়িয়ে মুখ কালো করে আমার দিকে টাকাগুলো বাড়িয়ে দিল।
রমনা থানার সামনের নেমে সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। তারপর সিএনজিটা চলে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। জাকির সালামের হাত ধরে আছে। এখন সালাম দৌড়ে ভেগে যাবার চিন্তা করবে না। কারণ আশে পাশে কয়েকটা কন্সটেবল দাঁড়িয়ে আছে। সবার সঙ্গে পেরে উঠবে না। গেটের সামনে থেকে একটু সরে এসে বললাম, সালাম এর আগে কখনো ধরা খেয়েছিস পুলিশের হাতে?
“না, স্যার” এবার সালাম সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললো।
জাকির খুব উপভোগ করছে ঘটনাটা। সালামের কান্নাটা ওকে প্রভাবিত করলো। ও বললো, হিমু ভাই একে ছেড়ে দিলে হয় না? বেচারা!
“তুই যখন বলছিস ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু সালাম বলে দিচ্ছি, এরপর যদি আমাদের হাতে ধরা পড়িস, তবে তোকে মার্ডার কেসের আসামি বানাবো। সাবধান।”
“জীবনে আর পকেট মারুম না স্যার।”
“কান ধরে উঠবোস কর।”
সালাম কথাটা শুনলো কিন্তু বুঝতে সময় নিল। আমি আবার বললাম, কী হলো, কথা কানে যায় না? দশবার কান ধরে উঠবোস কর আর বল, কখনো পকেটমারবো না।
এবার কথা মতো কাজ হলো। সালাম কান ধরে দশটা বৈঠক দিল। অবশিষ্ট টাকাটা ওর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, এবার ভাগ।
জাকির যোগ করলো, হিমু ভাইয়ের মতি গতি পাল্টে গেলে আবার বিপদে পড়বি। সোজাসুজি হাজতে, সাথে মানবাধিকার আইনে মামলা।
সালাম একসেকে- সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলো। জাকির বললো, জব্বর খেল দেখানে হিমু ভাই।
“আরে ধুর এটা কিছু না। তাছাড়া তুই না থাকলে তো হতো না। চল এবার যাই। এখানে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। হাজতে রাত কাটাতে ভাল লাগে না।”
(চলবে)
ছবি: গুগল মামা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩