'ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম- আমি মহাকাশ নিয়ে কাজ করছি। কী আছে মহাকাশে তা নিয়ে আমি সবসময়ই ভাবতাম। আমার ভাবনা কখনো কারো সাথে শেয়ার করতাম না। মনে মনে ভাবনাটাকে লালন করতাম। মাঝে মাঝে ভাবতাম আমার ভাবনা কি সত্যি সত্যিই বাসত্দব রূপ পাবে? এরকম ভাবনা থেকেই আমি ফিজিক্স ও এসট্রোনমি নিয়ে বর্তমানে আমেরিকাতে পড়াশোনা করছি।' এভাবেই শুরম্ন হয় মহত্তম স্বপ্নাভিমুখে অনন্যার যাত্রা। সে যাত্রা যেমন বন্ধুর তেমনি রোমাঞ্চকরও বটে। পুরো নাম তনিমা তাসনিম অনন্যা। জন্ম নরসিংদীতে। স্কুলে যেতে না যেতেই হঠাৎ একদিন টেলিভিশনে দেখলেন মঙ্গল গ্রহের ওপর একটি প্রতিবেদন। তখন থেকেই মাথায় ঢুকে যায় মহাকাশের চিনত্দা। 'কিভাবে এতকিছু সৃষ্টি হলো। কি আছে মহাশূন্যে ? এসব ভাবতে ভাবতে অনেক সময় চলে যেত। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি।' তখন থেকেই অনন্যা স্বপ্ন দেখতে শুরম্ন করেন মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। স্বপ্ন পূরণের আশায় কলেজজীবন পার করে ২০০৯ সালে চলে যান আমেরিকায়। ব্রায়ান মার কলেজে ২ বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হন ফিজিক্স ও এসট্রোনমি'র ওপর। এখন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে এক বছরের একটি কোর্স করছেন। এটি শেষ করে আবার আগের কলেজে চলে যাবেন আমেরিকার প্যানসিলভেনিয়াতে। অনন্যা চান নাসায় কাজ করতে। গত সামারে নাসা থেকে ৩ মাসের একটি ইন্টার্নশিপ করেছেন। এবারো নাসা থেকে অফার এসেছে। ২১ বছরের বাংলাদেশের একটি মেয়ে একা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করছে এবং নাসা থেকে ইন্টার্নশিপেরও সুযোগ পেয়েছে। এরপর তার লৰ্য হলো পড়াশোনা শেষ করে নাসায় যোগ দেয়া। কিভাবে নাসা থেকে ডাক এলো এ প্রশ্নের জবাবে অনন্যা জানান, বিগত পরীৰার ফলাফলসহ একটি রচনা লিখতে হয় এক হাজার শব্দের মধ্যে। কেন আমি নাসায় ইন্টার্নশিপ করতে চাই এবং এতে তাদের কি লাভ হবে। এই রচনার ওপর তারা সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে ডাকে। অনন্যা বাংলাদেশের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ও এবং এ লেবেল পাস করে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান আমেরিকার ব্রায়ান মার কলেজে। কলেজ জীবনে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার খোঁজ খবর নিজে নিজেই নেন। ৩ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে অনন্যা বড়। মা শামীম আরো জানান, মহাকাশ নিয়ে পড়ার ইচ্ছাতে তিনি কখনো বাধা দেননি বা একা বিদেশ যেতেও বাধা দেননি। তিনি চান তার মেয়ে মহাকাশবিজ্ঞানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করম্নক। বাবা এম এ কাইয়ুম মেয়ের স্বপ্ন বাসত্দবায়নে অটল রয়েছেন। অনন্যা জানান, একদম প্রথম অবস্থায় নতুন পরিবেশে গিয়ে একটু একটু খারাপ লাগত। কিন্তু কিছুদিন পরই তা ঠিক হয়ে যায়। এরপর পড়াশোনার চাপে মনও খারাপ হতো না। আমি নিজেই নিজের সব কাজ করি। তাতে পড়াশোনার কোনো ৰতি হয়নি।