একুশের বইমেলায় বাংলা একাডেমিতে সবাই বই কিনতে যায়। সপ্তাহের পাচদিন বড়দের থাকলেও শিশুদের জন্য দুইদিন সকালে খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের কে নিয়ে সব বাবা-মা-ই বই মেলাতে যায় । অন্তত দুই –একটি বই কিনে দেয় যেন পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। আমরা কি কখনো আমাদের বাসার গৃহকর্মীকে কোন বই কিনে দিয়েছি? ঘরের ছোট শিশুটিকে যখন বই মেলায় নিয়ে যাই তখন কি শিশু গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে বই কিনে দিয়েছি ? এসব প্রশ্নের উত্তর ’না হতে পারে। আবার ব্যতিক্রমও দেখা যায়
শুক্রবার বই কিনতে আসে পুরনো ঢাকা থেকে আসা এক গৃহকর্মী শিশু। যেহেতু শিশুদের জন্য সপ্তাহের দুইদিন সকালে খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই শিশু গৃহকমী কে বই কিনে দিতে নিয়ে আসেন এক গৃহকর্ত্রী। গৃহকর্ত্রীর সাথে তার মেয়েও আসেন বই কিনতে । দুইশিশু মিলে ইচ্ছেমত মেলা ঘুরে ঘুরে দেখে আর বই কেনে। সেই গৃহকর্মীর নাম শিরিন। বয়স ১১ হবে। শুক্রবার বইমেলায় আসবে বলে সকাল থেকে আসার প্রস্তুতি চলে। মেলায় ঢুকেই প্রথমে একটু ফাস্টফুড খেয়ে নেয়। তারপর স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে থাক্ ে। পছন্দ করে বই কিনে ৪টি। কিধরনের বই পড়তে ভাল লাগে এপ্রশ্নের উত্তরে গৃহকর্মী শিরিন জানায় ,সে রাজা-রানী ও পরীর গল্পের বই বেশি পছন্দ করে। তাই বেছে বেছে তাই কিনেছে।
এবয়সে কেন শিরিন ঢাকায় চলে এলো এ প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, গ্রামে থাকাকালে সারাদিন টেলিভিশন দেখতো । আশেপাশের লোকজন শিরিনের মাকে বলে যে এত টিভি দেখলে মেয়ে নস্ট হয়ে যাবে । তাই শিরিনকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে তার মা। ময়মনসিংয়ের ত্রিশাল থানাধীন বসবাসকারী শিরিনের বাবা একজন দিনমজুর শ্রমিক। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে শিরিন তৃতীয়। গৃহকত্রীূ তাকে নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করেন। তাই নিজের মেয়ের সাথে তাকেও মেলায় নিয়ে আসেন বই কিনে দেয়ার জন্য। গৃহকর্ত্রী সোহেলী জানান, শিরিনের গানের গলাও ভালো। মাঝে মাঝে গানও গায়। সারাদিন কি কাজ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আমার ছোট ছেলের সাথে সারাদিন খেলা করে। শিরিনের লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ। গ্রামের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। পড়ালেখা ছাড়াও গান ,কবিত ও খেলাধূলাতেও পুরস্কার পেয়েছে। গত ২ মাস ধরে ঢাকায় চলে আসলেও পড়ার প্রতি একটুকও আগ্রহ কমেনি। যথারীতি সকাল ৭ টায় বই নিয়ে ডাইনিং টেবিলে একা একা পড়তে বসে। বাসায় তার উপযুক্ত পড়ার বই প্রচুর রয়েছে। তাই সে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে পড়তে। শিরিন জানায় , সে আবারও স্কুলে ভর্তি হবে,পড়ালেখা করবে। তার ভাষায় ,আপনারা এত পড়ালেখা করছেন আমারেওতো এতো পড়তে হইবো আপনাদের মত। পড়ালেখা না করলে মানুষ দাম দিত না।’
আমরা যদি প্রত্যেকে গৃহকর্মীর প্রতি একটু যতœবান হই তাহলে সমাজে নির্যাতনের চিত্র অনেকটাই কমে যাবে। তাদেরকে কাজের ফাকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা উচিত। আপনি যদি বই মেলায় বই কিনতে আসেন তাহলে অন্তত একটি বই আপনার গৃহকর্মীর জন্য কিনুন। আপনার সন্তান তার কাছে।