এই পোস্ট টি পড়বার জন্য আপনার এই পোস্টটি পড়া বাধ্যতামূলক। কারন একটি প্রশ্নের আবর্তে এই লেখার উৎপত্তি।
একটা ক্ষুধার্ত গাধাকে দুটো খড়ের গাদার মাঝখানে দাড় করিয়ে দেয়া হলো। গাদা দুটো যেটা দেখতে সম্পূর্ন একই রকম, প্রতিসাম্য এবং সব দিক থেকেই একটা একটার জমজ এবং দুটো গাদাই গাধা থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত। এখন দূর থেকে দাড়িয়ে দেখতে হবে কোন গাদা থেকে গাধাটা খড় খাবে। গাদা দুটো পরম প্রতিসাম্য হওয়াতে গাধার মানসপটে একটা দ্বন্ধের সৃষ্টি হবে কোনটা তার ক্ষুধা মেটাবে। তার চেয়ে বড় কথা দুটো সমান দূরত্বে হওয়ায় গাধাটাকে হেটে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বন্ধে থাকবে। গাধাটা নিজের গাধামী মার্কা নির্বুদ্ধিতায় পড়ে অবশেষে না খেয়ে মারা যায়, তাই না?
লিবনিজ সাহেব যদিও মৃত্যুর ব্যাপারে জোড়ালো আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন এইটা কোনো ধাঁধাঁ হইলো? গাধাটা একটা র্যান্ডম গাদা থেকেই খড় খাবে। বাকিটার দিকে তাকাবে না। গাধার জন্য ধাঁধাঁ হিসেবে চিন্তা করাটাই এ্যাবসার্ড। মাঝে মাঝে শপিং এ বেগুন কিনতে গিয়ে ২ ঘন্টা পায়ে হেটে জাঙ্গিয়া কিনে আনি আমি। এবং বাসায় এসে চিন্তা করি প্যান্টের চেয়ে আমার জাইঙ্গা আর মুজার সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে। তার মানে আমি কি এই ধাঁধাঁটার গাধা?
বিজ্ঞানী নিউটনের সাথে এই লিবনিজের সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিলো। লিবনিজের অভিযোগ তার ক্যালকুলাসের ধারনা নিউটন নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নিউটন রয়েল সোসাইটির চ্যায়ারম্যান হওয়ায় তার ক্ষমতার কাছে বেশ অসহায় ছিলেন। তাই তিনি একটু অন্যভাবে এগুলেন।
বিজ্ঞানী নিউটন জড়তার সুত্রে বলা আছে বাইরে থেকে কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকে। সুতরাং, কোন বস্তুর উপর নিট বলের পরিমাণ শূন্য হলে, বস্তুর ভরকেন্দ্র হয় স্থির নয়তো সমবেগে গতিশীল থাকবে। এই সুত্রানুসারে সময় ও স্থান (space, time) একটা পরমতম স্বাধীন সত্বা। এর অর্থ হলো ঈশ্বর নামক সত্বাকে অস্তিত্বশীল হতে হলে তাকে সময় ও কাল এ দুটো মাত্রার মধ্যেই অস্তিত্বশীল হতে হবে। কিন্তু লিবনিজ তাতে বাধ সাধলেন কারন ঈশ্বরের কাজ হলো অস্তিত্বশীল হওয়া এবং সৃষ্টি করা এবং তাই যদি হয় তাহলে তার সাথে সময় ও স্থানের স হঅস্তিত্বশীল হওয়া একটা দ্বন্ধের জন্ম নেয়। যেমন ধরা যাক ঈশ্বর একটা মহাবিশ্ব তৈরী করবেন এমন একটা স্থানে যেটা এর আগেই তৈরী হয়ে রয়েছে। এখন কথা হলো মহাবিশ্বটা রাখবেন কোথায়। এই মহাবিশ্বকে তো কোনো না কোনো পয়েন্টে রাখতে হবে। যেহেতু পরম স্থান আগে থেকেই অস্তিত্বশীল হয়ে আছে তাই ঈশ্বরের কাছে এই স্থানিক মাত্রার সকল পয়েন্ট একই। তাহলে সে কিভাবে এক পয়েন্ট রেখে আরেক পয়েন্টে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবেন অথবা যদি তিনি কোনো পয়েন্টে মহাবিশ্ব তৈরীই করেন তাহলে তার পেছনে যুক্তিটা কি? ঈশ্বর কি খামখেয়ালী করতে পারেন? তিনি তো যুক্তির পরম। তাকে তো অযৌক্তিক, খাম খেয়ালী হওয়াটা সাজে না।
সময়ের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি দেয়া যায়। যদি ঈশ্বরের সাথে সাথে সময়ের সহঅস্তিত্ব থেকে থাকে তাহলে ঈশ্বরকে একটা সময়ের নির্দিষ্ট কোনো পয়েন্ট বেছে নিতে হবে। নিউটনের মতানুসারে ঈশ্বরকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার জন্য একটা মুহুর্তকে বেছে নিতে হবে। যদি কোনো নির্দিস্ট সময়ে তাকে মহাবিশ্ব সৃষ্টিই করতে হয় তাহলে তার ৩ সেকেন্ড আগে বা এক হাজার বছর পর বা অন্য কোনো সময়ে সৃষ্টি করলে কি সমস্যা? ঈশ্বর এমন খাম খেয়ালী বা হুট করে কোনো কারন ছাড়া কাজ করতে পারেন না। যদি আমরা সৌরজগতের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো সূর্যের কাছে আলো ও তাপ দেয়া। এবং সেই আলো ও তাপে পুরো সৌরজগত চলছে ঠিক ঠাক মতো। বিশেষ করে গ্রাভিটি। এখানে আরেকটা সূর্য্যের প্রয়োজন নেই। যদি আরেকটা সূর্য থাকতো তাহলে সেটা অতিরিক্ত এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। আবার এই পৃথিবীতে "আপনি" শুধু একজনই। আপনার যে স্বতন্ত্রতা এবং বৈশিষ্ট্য তা দিয়ে কিন্তু চলে যাচ্ছে। তারজন্য আরেকটা "আপনি" পৃথিবীতে পাবেন না এবং হবেও না।
এ থেকে লিবনিজ দুটো সূত্র দিলেন। প্রথম সূত্রানুসারে ঈশ্বর পর্যাপ্ত কারন বা উদ্দেশ্য ছাড়া কিছুই করেন না। যেহেতু ঈশ্বর সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, তাহলে সকল সৃষ্টির নিশ্চয়ই কোনো কারন বা উদ্দেশ্য আছে। এবং এই তত্বের সবচেয়ে বড় কাহিনী হলো সময় ও স্থান যার মানে দাড়ায় যে ঈশ্বর কোনো কিছুই খাম খেয়ালী বা উদ্দেশ্যহীনভাবে কিছু করেন না এবং সবকিছুই তাদের নির্দিস্ট বৈশিস্ট্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরী হয়েছে। আর দ্বিতীয় সুত্রানুসারে ঈশ্বর কখনোই একটা কাজ দুবার করেন না। এবং এই দ্বিতীয় সুত্রটি হলো প্রথম সূত্রটির ফলাফল।
এখন ওপরে বর্নিত গাধার জায়গায় ক্ষুধার্ত ঈশ্বরকে বসিয়ে দেন এবং দেখতে থাকুন কোন খড়ের গাদাটা সে খায়.... ইজেন্ট ইট ফানি?
লিবনিজের প্রায় দুইশ বছর পর আইন্সটাইন তার আপেক্ষিক তত্ব দিয়ে স্থান সময়ের যে সংযোগ সেটা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং তার কয়েক দশক পর আবিস্কার হয় মহা বিস্ফোরন তত্ব বা বিগ ব্যাং। এরপর পদার্থবিজ্ঞান বহু পথ পাড়ি দিয়েছে, অনেক জানা অজানা জিনিস আবিস্কার হয়েছে, অনেক কিছু আবিস্কার হবার অপেক্ষায় কিন্তু যে প্রশ্নটা খুব বেশী সবাইকে নাড়া দেয় সেটা হলো এই বিগ ব্যাং এর আগে কি ছিলো?
একদল বলে নিশ্চয়ই ঈশ্বর ছিলো আরেক দল তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু কি ছিলো সেটা এখনো কেউ সুস্পস্টভাবে বলতে পারছে না।
দর্শন শাস্ত্র এই প্রশ্নের উত্তর নিজের মতো করে ভাবে। লিবনিজ মারা যাবার অর্ধ যুগেরও বেশী সময় পর ইমানুয়েল কান্টের আবির্ভাব এবং তিনি লিবিনিজ, হুমে, ওফের উপর ভিত্তি করে একটা বই লিখলেন বাস্তবিক বিচারবুদ্ধির সমালোচক বা ক্রিটিক অব প্রাকটিক্যাল রিজনিং। এই বইতে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন মহাবিস্ফোরন বা এই মহাবিশ্বের শুরুতে কি ছিলো। এটার উত্তর দেবার জন্য একটা পন্থা বেছে নিলেন সেটা হলো পারস্পরিক অসঙ্গতির মাধ্যমে প্রমান। প্রথম দিকে তিনি প্রমানের চেস্টা করলেন এই মহাবিশ্বের অবশ্যই একটা সূচনা আছে। তারপর আবার দেখাতে চেস্টা করলেন এই মহাবিশ্বের কোনো সূচনা নেই। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিলো যে আমরা সত্যিকারভাবে এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে অক্ষম। কেন?
যদি আপনি খ্রিস্টান হন তাহলে বিশ্বাস করবেন যে মহাবিশ্ব সৃস্টির আগের শুধু ছিলো কিছু শব্দ "লেট দেয়ার বি লাইট"। আর যদি আপনি বিজ্ঞানী হন তাহলে আপনি বিশ্বাস করবেন মহাবিস্ফোরনে। দুভাবেই ধারনা করা যায় যে কিছু একটা ঘটেছিলো এর আগে: ঈশ্বর ভাবলেন যে এখন এই কথাটা বলা যায় অথবা কোয়ান্টাম ইনফ্লেশন ঘটেছে। এখন এর আগে সত্যি কি ঘটেছিলো এটা নিয়ে ভাবতে যান তাহলে আপনি মহা বিস্ফোরন টা ভুলে যান অথবা এর আগে কি ঘটেছিলো সেটা ভুলে যান, শুধু ভাবুন শুরুর ব্যাপারটা। ভাবতে কি শুরু করেছেন? আপনি চিন্তা শুরু করার আগে কি কিছু ঘটেছিলো?
যদি উত্তর হয় "হ্যা": শুরুর আগে কি কিছু ঘটেছিলো? আপনি ভুল করছেন? আপনি শুরুটা দিয়ে শুরু করুন
যদি উত্তর হয় "না": আপনি চিন্তা শুরু করার এক সেকেন্ড আগে কি ঘটেছিলো? আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন সেটা মূখ্য বিষয় নয়। আপনি যদি কিছু "না" ও বলেন, তাহলে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে শুরুর আগে একটা এক সেকেন্ড ছিলো। আপনি আবারও ভুল করছেন। আপনি "শুরু" নিয়েই ভাবুন শুধু।
কান্টের পয়েন্ট ছিলো: শুরু নিয়ে ভাবনা শুরু করবার যে চিন্তা সেটা আসলে মূখ্য নয়: কারন আপনি এটা ভুল ভাবে করছেন। আপনি যে ধারনা নিয়ে ভাবছেন সেটা শুধু মাত্র নির্দিস্ট কিছু সত্বা যেমন চন্দ্র তারা সূর্য পৃথিবী থেকে সবকিছু, যেমন মহাবিশ্ব, জন্য প্রযোজ্য এবং এটা কাজ করবে না, সবসময়ই ব্যার্থ হবেন। আমরাই আমাদের জানার সীমাকে নির্ধারিত করেছি। এর বাইরে আমরা কিছু জানতে পারবো না।
একটু সোজা ভাবে বলি, আপনি যখনই বলছেন "শুরু", তাহলে তার আগে কি আছে সেটার প্রশ্ন কিভাবে করছেন? তাহলে যে "শুরু" পয়েন্টটা নিয়ে কথা বলছেন সেটা তো আর শুরু থাকলো না। তেমনি সময়ের যাত্রা বা যে বিন্দু থেকে শুরু করেছে তার আগে কি আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করলে তো সেটারও একটা সময় চলে আসছে। তাহলে সময়ের যাত্রা কথাটা কিভাবে খাটছে? আপনি নিজের পয়েন্টকেই নিজে অবান্তর বানিয়ে দিচ্ছেন?
এখন দর্শন নিয়ে আপনি যতই ঘাটতে থাকেন আপনি নিজের প্রশ্নের কাছেই নিজে পরাজিত হবেন এবং মহাবিস্ফোরনের আগে কি ছিলো সেটা নিয়ে প্রশ্ন করাটাই অবান্তর হয়ে যায়।
তবে এটা ঠিক এই মহাবিশ্বে কারন ছাড়া কিছুই ঘটে না। যাকে আমরা কার্যকারন বা কজালিটি বলি। ধরা যাক একটা বাসায় আগুন ধরেছে এটা হলো ফলাফল কারন হিসেবে সে বাসায় কেউ কেরোসিন দিয়ে দেয়াশলাই জ্বালিয়ে দিয়েছে। এখন কথা হলো কেউ যদি কেরোসিন দিয়ে দেয়াশলাই না জ্বালাতো তাহলে সে বাসায় আগুন লাগতো না। তাই না? দর্শনের স্বর্নযুগের পথ শেষ করে যখন গনিতবিদ ও পদার্থবিদগন সব উঠে পড়ে লাগলেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনের জন্য তখন দর্শনের এই যে বিগ ব্যাং এর আগে বা মহাবিশ্বের শুরু নিয়ে কথা না বলতে পারার অপারগতা সেটার জট খুলতে। আপেক্ষিক তত্বের স্থান ও কালের যে সংযোগ আমাদের সামনে ফুটে ওঠে, মিনকোওস্কি নামের একজন পদার্থবিদ ও গনিতজ্ঞ শুরু করলেন তার মতো করে স্থানিক তিন মাত্রার সাথে সময়কে মাত্রা ধরে তাদেরকে এক সাথে করতে। আমি এটা নিয়ে বিশেষ আলোচনা করবো না কারন এই আলোচনাটা স্টিফেন হকিং তার ব্রীফ হিস্টোরী অব টাইমে বেশ সুন্দর ভাবে করেছেন। আমি শুধু কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরবো সেটা হলো মিনকোওস্কি স্থানিক তিন মাত্রাকে বক্রাকারে নিয়ে সময়ের মাত্রার সাথে যুক্ত করে একটা রেফারেন্স পয়েন্ট ধরেছিলেন। আইন্সটাইন সে মডেল সামনে রেখে কার্যকারনকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন প্রতিক্রিয়া কখনো অতীতের কোনো নির্দিস্ট ঘটনার কার্যকারন ছাড়া। একইভাবে কোনো কার্যকারনের প্রতিক্রিয়া সম্ভব না তার ভবিষ্যতের ক্ষেত্র এর বাইরে। এর মানে হলো কোনো ঘটনার ফলাফল আলোর গতির চেয়ে বেশী বেগে ঘটতে পারে না অথবা সময়ের বিপরীতে হতে পারে না (এর মানে হলো ফলাফল আগে পাওয়া যাবে ঘটনার ঘটার পূর্বে)। এটা আমাদের বাস্তবিক জগতের অলঙ্ঘনীয় দর্শন হিসেবেই কাজ করে
সমস্যা দেখা দিলো যখন কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মাধ্যমে সবাই পরমানুর ভেতরে থাকা পার্টিক্যাল গুলোকে আরো সূক্ষ্মভাবে জানার শুরু করলো। ইলেক্ট্রন কিরকম আচরন করে যেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখা গেলো শ্রোয়েডিঙ্গার সাহেব বিড়ালের জন্ম মৃত্যু নিয়ে একটা অদ্ভুত ধাঁধাঁ দিয়ে বসলেন। এটা অনুসারে রেডিয়েশন গান তাক করা বিড়ালটি একই সময়ে মৃত এবং জীবিত দুটো অবস্থাতেই আছে। সে হিসেবে আলো যাকে আমরা ফোটন হিসেবে চিনি তার দুটো রূপ একই সময়ে সেটা হলো সে কনিকার মতো আচরন করবে আর তরঙ্গের মত আচরন করবে। এখন আপনি দুটো গামা রশ্মির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে একটা ইলেক্ট্রন ও আরেকটি পজিট্রন তৈরী করলেন। দেখা গেলো বোরের তত্ব অনুসারে ইলেক্ট্রনের স্পিন যদি উর্ধ্বমুখী হয় তাহলে পজিট্রনের হবার কথা নিম্নমুখী। এখন আপনি যদি এই ইলেক্ট্রন আর পজিট্রনকে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বে রাখেন এবং ইলেক্ট্রনের স্পিন বা ঘূর্নন উর্ধ্বমুখীকে নিম্নমূখী করেন তাহলে সমসাময়িকভাবে পজিট্রনের নিম্নমূখী ঘূর্নন একই সময়ে পাল্টে উর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে। সমস্যা হলো আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি অনুসারে কোনো কিছুই, এমনকি কজালিটিও আলোর চেয়ে দ্রূতগতিতে চলতে পারেনা। যদি তাই হয় তাহলে দেখা যাবে ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা অতীতের কোনো প্রতিক্রিয়ার ফল যেটা অসম্ভব। কিন্তু ইলেক্ট্রন পজিট্রনের ঘূর্ননের দিক পরিবর্তন সেই কজালিটির নিয়মটি ভঙ্গ করছে। এখানে আমাদের বাস্তবিক জীবনের দর্শন কাজ করছে না।
তার মানে দেখা যাচ্ছে কোয়ান্টাম স্কেলে দর্শন অকার্যকর। তাই কেউ যদি কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কথা মাথায় রেখে জিজ্ঞেস করে এই মহাবিস্ফোরন বা বিগ ব্যাং এর আগে কি ছিলো তখন আপনি শুরুর শুরু বা সময়ের শুরু আগে কি ছিলো এই দার্শনিক ডাইলেমার কথা বলে তাকে রুখে দিতে পারেন না। অন্তত কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিজে এই প্রশ্নের উত্তর এখনো প্রমানিত ভাবে না দিতে পারলেও সে সম্পর্কে আলোচনা করার পথ এখনো উন্মুক্ত রেখেছে।
স্বভাবতই আমাদের মেটা স্ট্যবল ইউনিভার্স যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে কোনো বড় রকম অঘটন ছাড়াই এর পেছনে যে প্রতিষ্ঠিত যুক্তি দাঁড় করানো গিয়েছে সেটা হলো ক্যাওয়াটিক ইনফ্লেশন যার মানে হলো আমরা যে বিগ ব্যাং বা ইনফ্লেশনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বকে পেয়েছি এরকম আরো ব হু ইনফ্লেশন ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে। এই যুক্তির পেছনে বেশ কিছু পর্যবেক্ষন কাজ করে যার একটা হলো হিগস কনিকার ভর যেটা বেশ শক্ত ভাবেই আমাদের মহাবিশ্বকে মেটা স্ট্যাবল তুলে ধরে। আরেকটি হলো সিএমবি পর্যবেক্ষনে বাবল ইউনিভার্সের উপস্থিতি।
(ছবি দেওয়া গেলো না, মনে হয় আমার কমেন্ট ব্যানের সাথে ছবি আপলোডও ব্যান করা হয়েছে)।
এই পর্যবেক্ষনে এটা প্রতীয়মান হয় যে আমাদের এই মহাবিশ্বের মধ্যেই আগামীর ছোট ছোট মহাবিশ্ব তৈরী হচ্ছে যেটা মূলত মাল্টিভার্স তত্বকে জোড়ালো করে তোলে।
আরেকটি তত্ব এখনো বাজারে আছে সেটা হলো আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব অন্য কোনো মহাবিশ্বের ভেতরে থাকা ব্লাক হোলের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। স্বভাবতই আমরা জানি যে ব্লাক হোল সকল কিছু শুষে নিজের কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্য কোথাও হোয়াইট হোলের অস্তিত্ব বিদ্যমান যার মাধ্যমে ব্লাক হোল তার শুষে নিয়ে পদার্থ সমূহ নিঃসরন করে। আমাদের মহাবিশ্বর তারই পরিনতি। আর যদি সেটাই হয় তাহলে আমরা এই মহাবিশ্বের কিনারা কখনো ছুতে পারবো না কারন আমরা ব্লাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন কখনো অতিক্রম করতে পারবো না। এই তত্ব টেস্ট করতে হলে আমাদের মহাবিশ্বকে একটা ক্লোজ সিস্টেম হতে হবে। মহাবিশ্ব সাধারনত তিন রকমের হতে পারে: বদ্ধ,উন্মুক্ত ও সমতল। বদ্ধ হলে আপনি যদি মহাবিশ্বকে কোনোভাবে চলতে শুরু করে কিনারা ছুতে চান তাহলে আপনি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছেন আবার সেখানে ফিরে আসবেন। উন্মুক্ত হলে দুটো আলোর রশ্মি সমান্তরাল ভাবে নিঃসরিত হলে তারা একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। সমতল হলে তারা অনন্তকাল সমান্তরাল ভাবেই চলবে।
আরেকটি মডেলে দেখা যায় মহাবিশ্ব সম্প্রসারন হতে হতে একসময় নিজের দিকে টানতে শুরু করে এমনভাবে এক বিন্দুতে মিলিত হবে যে আবারও আগের মতো বিস্ফোরন দেখা দিবে। এটাকে বিগ ক্রাঞ্চ বলে। এবং এই মডেল অনুসারে এরকম বিগ ক্রাঞ্চ অনন্তসময় ধরেই চলছে।
***এখন কথা হলো তাহলে সবকিছুর পূর্বে ঈশ্বরের অস্তিত্ব দিলে কেমন হয়। সেক্ষেত্রে গতপর্বে গোডেলের যে ঈশ্বরের প্রমানের তত্ব দিয়েছিলাম সেটার ভুল প্রমান করি।
তার লজিকের একটাই প্রধান ভুল সেটা হলো সার্কুলার রিজনিং ফ্যালাসী। এর মানে হলো সে মহাবিশ্বকে একটা ক্লোজ সিস্টেম ধরে নিয়ে নিজের অনুসিদ্ধান্ত সমূহকে নিজের অনুসিদ্ধান্ত দিয়েই প্রমান করছেন। কিন্তু তিনি তার অনুসিদ্ধান্তের নিজস্ব সঠিকতার কোনো প্রমান হাজির করেননি।
এটা অনেকটা এমন যে কোরান মহান সত্য গ্রন্থ কারন এটা কোরানেই বলা আছে। এটাই হলো সার্কুলার রিজনিং লজিক্যাল ফ্যালাসী।
*** এখন আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে সেটা হলো যদি আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এরকম পৌনঃপুনিক প্রগমনিক ধারার ফল হিসেবেই ধরে নেয়া হয়, তাহলে এসবের মূলে কি ছিলো?
যদিও এটা খুব জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়, তবে গানিতিক ভাবে বেশ কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এটা বিস্তারিত না লিখে তার চেয়ে বরং একটা পুরোনো ভিডিও দেই যেটা আমার অনেক প্রিয় একটা ভিডিও। এখানে সে হিন্টস পেতে পারেন।
ফুড ফর থট..............
হ্যাপী ব্লগিং!
রেফারেন্স:
১) বুড়িদানের গাধার উইকি পেজ
২) ইমানুয়েল কান্টের ক্রিটিক অব পিওর রিজনিং
৩) কজালিটি ভেঙ্গের পড়ার ওপর একটা জার্নাল